ওয়াহিদুজ্জামান, দ্বিতীয় বর্ষ
৩রা জুন ২০১৩ খ্রি.
বিদায়। শব্দটি বড় বিষাদময়। বড়ই বেদনা বিধুর। পৃথিবীতে কেউ চিরদিন থাকে না। সবাইকেই চলে যেতে হয় একদিন। মা’হাদকে বিদায় জানাতে হবে এও ছিল চির সত্য। তাই বলে এত গতিময় বেগে ফুরিয়ে যাবে দু-দু’টি বছর? কখনো ভাবনায় আসেনি। এই তো সেদিনÑযখন ফরম হাতে ছুটাছুটি করছিলামÑদু’টি বছর থাকতে হবে ভেবে মাথায় হাত উঠে গিয়েছিল। এত দীর্ঘ সময়! শেষ হবে কবে? পলকে পলকে দু-দু’টি বছর পানির মত ফুরিয়ে গেল। বিদায়ের কষাঘাতে হৃদয়টা আজ ক্ষত বিক্ষত। বিদায় বন্দরে দাঁড়িয়ে আজ আমরা অশ্রুসজল নয়নে। বিদায় জাহাজ দোল খাচ্ছে বিদায় সাগরের উত্তাল তরঙ্গে। আমাদের এই বিদায় যাত্রা রোখা যাবে না কভু। বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমরা চলে যাবো। কিন্তু মা’হাদ থেকে কি হাতে ফিরে যাচ্ছি আমরা। মা’হাদকে বা কি দিয়ে যাচ্ছি। মা’হাদ থেকে আমরা যা
পেয়েছি তার সংখ্যায়ন আমাদেরজানা নেই। এর সংখ্যা ঘাটা হলে মা’হাদের অবদানকে ছোট করে দেখা হয়ে যাবে। তবুও একটা বিষয়ে কথা বলার লোভ সংবরণ করতেপারছি না। মা’হাদ আমাদেরকে বর্তমান বিশ্বটাকে চিনতে শিখিয়েছে। যে সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানেরসীমানা ছিল বেজায় সীমিত। এক্ষেত্রে যার অবদান সবচেয়ে বেশী তিনি হলেন আমাদের প্রিয় আনিসস্যার। তবে দীর্ঘ এ দু’বছরে স্যারকে যেভাবে জানার প্রয়োজন ছিল সেভাবে আমরা জানতে পারিনি। কিন্তু অবদানেরকথা সত্যিই ভোলার নয়। মা’হাদের এ দু’বছরে সবচেয়ে বড় অনুভূতিগুলো হলো, (১) তাখাসসুস বোধ। দাওরায়েহাদীস সমাপ্ত করার পর তাখাসসুস হলো ইলম জ্ঞানের আদিগন্ত এক বিস্তীর্ণ ভূমি। আর না হোকদ্বীনী ইলমের সীমাহীন বিস্তৃত পরিধি ও গভীর উপলব্ধির জন্য তাখাসসুসে হাঁটাহাঁটির প্রয়োজনীয়তাঅপরিসিম। এ অঙ্গন সম্বন্ধে অবগতি না হলে দ্বীনী ইলমের সুবিশাল বিস্তীর্ণ ভূমি সম্পর্কেঅন্ধকারে থেকে যেতাম। মা’হাদের অনুকম্পায় আল্লাহ আমাকে সে অন্ধকার থেকে নিস্কৃতি দিয়েছেন। (২) মা’হাদ পরিচালনা কমিটিতেযেসব নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগী ও হৃদয়বান উলামায়ে কেরাম রয়েছেন তাদের ত্যাগ ও উদারতা সত্যিইপ্রবাদতুল্য। ছোট মুখে তাদের প্রসংশা করে তাদের অবদানকে ছোট করতে চাই না। তাদের নিঃস্বার্থত্যাগের বিনিময় আল্লাহ তা‘আলা দান করবেন। দু’হাত তুলে দু‘আ করি আল্লাহ যেন তাদের এ দ্বীনী সেবার যথোপযুক্ত বিনিময় দান করেন। (৩) আমাদেরউস্তাদ মহোদয়গণ আমাদের জন্য যেই শ্রম সাধনা করেছেন অভাগা আমরা তার মূল্যায়ন করতে পারিনি।তারা আমাদের মায়া-মমতা ও স্নেহের ছায়ায় রেখে দ্বীনী জ্ঞানের সুধা পান করিয়েছেন। তাদেরঅকৃত্রিম স্নেহময় আশ্রয়ে থেকে দু’টি বছর পার করে দিলাম। তাদের সীমাহীন চেষ্টা সাধনার ফলে আমরা দু’টি বছর পার করেবিদায়ের দারপ্রান্তে এসে উপীনত হয়েছি। তাদের জন্য দু‘আ প্রার্থনা ছাড়াআমাদের আর কোন সম্বল নেই। আল্লাহ তা‘আলা যেন দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম বিনিময় দান করেন। সবশেষে বলি, মা’হাদ আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছে। কিন্তু মা’হাদকে আমরা কিছুই দিতেপারিনি। আমাদের কাছে মা’হাদের যা পাওয়ার ছিল তা কিছুই পূরণ করতে পারিনি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন মা’হাদের সুনাম সুখ্যাতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেন।