মুফতী হাফিজুর রহমান
আল্লাহ কোথায়? এটি একটি স্পর্শকাতর প্রশ্ন। এ জাতীয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে এবং ঘাটাঘাটি করতে পূর্বসূরি মনীষীগণ নিষেধ করেছেন। ইমাম মালেক রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলার আরশে ইস্তিওয়া এর বিষয়টি জ্ঞাত। তবে এর রূপরেখা, প্রকৃতি, ধরণ অজ্ঞাত। এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত। এ বিষয়ে ঈমান রাখা আবশ্যক। –তাবাকাতুল মুহাদ্দিসীন বি ইসবাহান ২/৪৯, আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা ২/৪৯৪
সুতরাং এ বিষয়ে অযথা কথনে লিপ্ত হওয়া কাম্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা আছেন এবং তিনি সবকিছু দেখছেন এবং তিনি আমাদের উপর ক্ষমতাবান- এগুলোই হলো আমাদের ঈমানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তিনি কোথায় আছেন, কোন অবস্থানে আছেন, কিভাবে আছেন- এগুলো আমাদের ঈমাদের মূল বিষয় নয়। তাই এ বিষয় নিয়ে অনর্থক বাকালাপে লিপ্ত হওয়া কিছুতেই উচিত নয়।
আল্লাহ তা‘আলা কোথায় আছেন? এটি বস্তুত আল-কুরআনের মুতাশাবিহ তথা রূপক ও দ্ব্যর্থবোধক আয়াতের অন্তর্গত একটি বিষয়। আমাদের পূর্ববর্তী বিদগ্ধ গবেষক মনীষীগণ এ ব্যাপারে অতি গবেষণা থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখেছেন। এ জাতীয় আয়াত সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তিনিই আপনার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে মুহকাম তথা সুদৃঢ় এবং সুস্পষ্ট। সেগুলোই এ কিতাবের মূল। আর অন্যগুলো হলো, মুতাশাবিহ তথা রূপক ও দ্ব্যর্থবোধক। যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফেতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি। এসবই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত হয়েছে। আর বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্য কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।’ সূরা আলে ইমরান ৭
সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যায় না গিয়ে কুরআন হাদীসের কয়েকটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি-
* ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন।’ সূরা হাদীদ ৪
* ‘আমি মানুষের গ্রীবস্থিত ধমনি অপেক্ষাও নিকটতর।’ সূরা ক্বাফ ১৬
* ‘তার কুরসী আকাশ ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত।’ সূরা বাকারা ২৫৫
* ‘পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন সেদিকই আল্লাহর দিক। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।’ সূরা বাকারা ১১৫
* ‘দয়াময় আরশে সমাসীন।’ সূরা তাহা ৫
* ‘মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী রাযি. বলেন, আমার একটি বাদী ছিল। সে উহুদ এবং জাওয়ানিয়া এলাকার নিকটে আমার বকরীর পাল চরাত। একদিন আমি জানতে পারলাম, আমার বকরীর পাল থেকে একটি বকরী নেকড়ে বাঘে নিয়ে গেছে। আমি একজন আদম সন্তান। তাই অন্যদের মত আমিও এ ঘটনায় দুঃখিত হলাম। আমি বাদীকে একটি চড় মারলাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ব্যাপারটি বললাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এ কাজটিকে বড় অন্যায় হিসেবে দেখলেন। তখন আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল! তবে কি আমি তাকে মুক্ত করে দিব না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে আসো। আমি বাদীকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? বাদিটি বলল, আকাশে। এরপর জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মুমিন।’ সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২২৭
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর প্রকৃত ব্যাখ্যা, সমন্বয় এবং সমাধান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। যদিও বিভিন্ন গ্রন্থে এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহই জানেন।