মুফতী হাফিজুর রহমান
ইসলামী শরীয়তে স্ত্রীর উপর যেমন স্বামীর কিছু অধিকার রয়েছে তেমনিভাবে স্বামীর উপরও স্ত্রীর কিছু অধিকার রয়েছে। এ অধিকার পালনে যদি উভয়ই সচেষ্ট এবং যত্নবান হয় তাহলে সংসার সুখময় হতে বাধ্য। তবে অধিকার আদায়ে তুলনামূলক স্বামীকেই বেশি যত্নশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ নারীদের কিছু সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা রয়েছে। অধিকার আদায়ে স্বামী সচেতন না হলে সে দুর্বলতাগুলো আরো প্রকট হয়ে উঠে।
বস্তুত সাংসারিক জীবনকে পারস্পারিক সমঝোতা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে পরিচালনা করাই হলো ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনা। একক সিদ্ধান্তে সংসার পরিচালনা করতে গেলে অনধিকার চর্চা এবং অধিকার আদায়ে উদাসীনতার মত অযাচিত ও অবিধানিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুতরাং প্রবাস যাপনের ক্ষেত্রেও স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা ও তার সন্তোষজনক অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক। কারণ চার-মাস অন্তর স্বামীর নৈকট্য লাভ করা স্ত্রীর অন্যতম অধিকার। এর কারণ হলো, যুবতী স্ত্রীরা সাধারণত চার-পাঁচ মাসের বেশি নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না।
যায়েদ বিন আলমাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে উমর রাযি. জনগণের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রহরী বেশে বের হলেন। এক বাড়ির পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় ঘর থেকে নারী কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেলেন। ঘরের ভিতরে এক মহিলা কবিতা আবৃত্তি করছিল। কবিতার অর্থ : ‘রজনি দীর্ঘ হয়েছে এবং তার এক পার্শ কৃষ্ণ বর্ণ ধারন করেছে। এদিকে দীর্ঘ দিন যাবত আমার বন্ধু আমার কাছে নেই যে তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করবো। আল্লাহর শপথ! যদি এক আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে এ খাটের চার পাশ নড়ে উঠত।’
যখন ভোর হলো উমর রাযি. রাতের কবিতা আবৃত্তি কারিণী মহিলাকে ডেকে পাঠালেন। মহিলা রাজ দরবারে এসে উপস্থিত হলে উমর রাযি. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি গত রাতে এ জাতীয় কবিতা আবৃত্তি করেছিলে? মহিলা বলল, হ্যাঁ। উমর রাযি. বললেন, কেন? উত্তরে মহিলা বলল, দীর্ঘ দিন যাবত আমার স্বামী জিহাদের ময়দানে আছে। উমর রাযি. একথা শুনে একজন মহিলাকে তার সাথে পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেন, তার স্বামী আসা পর্যন্ত তুমি তার সাথে থাকবে।
এদিকে উমর রাযি. ঐ মহিলার স্বামীর নিকট ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়ে শাহী ফরমান প্রেরণ করে দিলেন। এরপর তিনি তার কন্যা হাফসা রাযি. এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? হাফসা রাযি. বললেন, আব্বা আপনার মত ব্যক্তি আমার মত মানুষের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে? তখন উমর রাযি. বললেন, প্রজাদের স্বার্থ রক্ষার ইচ্ছা যদি না হতো তবে আমি তোমার নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন করতাম না। তখন হাফসা রাযি. বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে।
এরপর থেকে উমর রাযি. চার মাস অন্তর তার মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।
সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, হাদীস ২৪৬৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১২৫৯৪
এজন্য ইসলামী শরীয়তের বিধান হলো, বিবাহ করে যুবতী স্ত্রী রেখে দীর্ঘ দিনের জন্য বিদেশ-বিভূইয়ে যাবে না। তবে যদি স্ত্রী মন থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশ যাত্রার সন্তোষজনক অনুমতি প্রদান করে এবং এ দীর্ঘ সময়ে স্ত্রী নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারবে বলে প্রবল ধারণা হয় কেবল তখনই দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশে গমন করতে পারবে।
সারকথা, একজন স্বামী তার স্ত্রী থেকে ৪ মাস দূরে থাকতে পারবে। এর বেশি সময় দূরে থাকতে হলে স্ত্রীর সন্তোষজনক অনুমোদন প্রয়োজন হবে। আর স্বামী স্ত্রীর সাথে ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে আপনা আপনি তালাক হয়ে যায় না। তবে স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখা বৈধ আছে। আর সন্তোষজনক অনুমতি ব্যতীত ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে গুনা হবে।
সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, হাদীস ২৪৬৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১২৫৯৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৩৪৬৫, আদ-দুররুল মুখতার ৪/১৪৪, রদ্দুল মুহতার ৪/৩৮০, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২৯/৪৮