বরেণ্যদের সময়-সচেতনতা

মুফতী হাফিজুর রহমান

১. ইবনে জারীর রহ. এর শিষ্য কাযি আহমদ বিন কামেল শাজারী রহ. ইবনে জারীর রহ. এর সময় বিন্যাসের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ইবনে জারীর রহ. ভোরের আহার শেষে শক্ত মোটা শীতল কাপড় গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়তেন। এর পর ঘুম হতে উঠে নিজ কুঠরিতে নামাজ আদায় করতেন। এর পর আসর পর্যন্ত লেখালেখি করতেন। এরপর ঘর হতে বের হয়ে আসর নামাজ আদায় করতেন। এরপর আগত সাধারণ মানুষের জন্য সময় দিতেন। তাদের পড়াতেন এবং পড়া শুনতেন। এভাবে মাগরিব পর্যন্ত চলত। এরপর ফিকহ ফাতাওয়ার অধ্যয়ন অধ্যাপনার জন্য বসে যেতেন। এধারা ইশার নামাযের সর্ব শেষ সময় পর্যন্ত চলত। এরপর নিজ রুমে প্রবেশ করতেন।

এভাবে তিনি দিন রাত্রির সময়গুলোকে দীন ধর্ম নিজ এবং মানুষের স্বার্থে ভাগ করে নিতেন। শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবুগুদ্দাহ রহ. প্রণীত কীমাতুযযামান ইনদাল উলামা-৭৯

২. বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ আল মুস্তাদরাক এর গ্রন্থকার আবু আব্দুল্লাহ আলহাকেম নিশাপুরী রহ. বলেন এক শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে আমি হাকেম শহীদ রহ. এর শ্রুতি লিখন মজলিসে উপস্থিত হলাম। ইতিমধ্যে আমীর আবু আলী ইবনে আবু বাকার আগমন করলেন। এবং বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। হাকেম শহীদ রহ. নিজ আসন হতে এতটুকু ও নড়লেন না। বরং তাকে ছাপড়া ঘরের দরজা হতে বিদায় দিলেন। এবং বললেন আমীর সাহেব! আপনি আজকের মত চলে যান। আজকের এদিনটি আপনার জন্য নয়। প্রাগুক্ত-৮৩

৩. কাজী মুহাম্মদ বিন দাউদী রহ. বলেন, আমি ইবনে শাহীন রহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন আমি হিসেব করে দেখেছি এযাবৎ আমি যে পরিমাণ দোয়াত কালি ক্রয় করেছি তার মোট মূল্য হল সাত শত দিরহাম (যার বর্তমান বাজার মূল্য হল ২৬২৫০০ টাকা)। প্রাগুক্ত-৮৬

৪. আম্মার বিন রজা রহ. বলেন আমি উবাইদ আইয়াশ রহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন আমি ত্রিশ বছর যাবৎ রাতের খাবার নিজ হাতে তুলে খাই নি। আমার সহোদরা বোন আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন। আর আমি হাদীস লিখতাম। প্রাগুক্ত-৬৩

৫. সুজা বিন মাখলাদ রহ. বলেন আমি ইমাম আবু ইউসুফ রহ.কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমার ছেলের ইন্তেকাল হয়ে গেলে তার দাফন কাফনে আমি উপস্থিত হই নি। এর দায় দায়িত্ব সব আমার আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর উপর ছেড়ে দিয়েছি। এভয়ে যে যাতে ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে এমন কোন বিষয় ছুটে না যায় যা না পাওয়ার দুঃখ আমার কোন দিন ঘুচবে না। প্রাগুক্ত- ৫৮

৬. মুহাম্মদ বিন সালামা রহ. বলেন ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান রহ. রাত্রকে তিন ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগে বিশেষ প্রয়োজন হলে ঘুমাতেন। এক ভাগে নামাজ পড়তেন। আর এক ভাগে অধ্যয়ন করতেন।

তিনি সচরচর রাতে ঘুমাতেন না। একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হল আপনি রাতে ঘুমান না কেন? তিনি বললেন আমি কি ভাবে ঘুমাব? অথচ আমাদের উপর ভরসা করে মুসলমানের আঁখি যুগল ঘুমিয়ে থাকে। তারা বলে আমাদের কোন সমস্য হলে তাদের কাছে যাব। তারা সমাধান করে দিবেন। সুতরাং আমরা যদি ঘুমাই তবে তো দীন নিঃশেষ হয়ে যাবে। প্রাগুক্ত-৪৮

৭. ইমাম হাসান বসরী রহ. বলেন হে আদম সন্তান! তুমি হলে অনেক গুলো দিনের সমন্বিত রূপ। যখন তোমার থেকে একটি দিন চলে যাবে তখন মনে করবে তোমার একটি অঙ্গ চলে গেল। প্রাগুক্ত-৪৮

8. কুম্মী রহ. বর্ণনা করেন, ইবনুল জাউযী রহ. যেসব কলম দিয়ে হাদীস লিখতেন তার ছাঁটগুলো একত্রিত করা হল। তো দেখা গেল তা ছোট খাট একটা স্তুপে পরিণত হয়ে গেছে। তখন ইবনুল জাউযী রহ. ওয়াসিয়ত করলেন, তার ইন্তেকালের পর যে পানি দ্বারা তাকে গোসল দেয়া হবে তা যেন একলমেরমর ছাঁট দিয়ে গরম করা হয়। তার ওয়াসিয়ত মত তার ইন্তেকালের পর সে কলমের ছাঁট দিয়েই পানি গরম করা হয়। তাতে পানি গরম হয়ে আরো কিছু ছাঁট থেকে যায়। প্রাগুক্ত-১০৮

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *