বিসমিল্লাহ বনাম ৭৮৬

মুফতী হাফিজুর রহমান

৭৮৬ সখ্যাটি মূলত ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এর মধ্যকার আরবী বর্ণগুলোর মানসংখ্যা বা গাণিতিক মানের মোট যোগফল। এ সংখ্যাটিকে পূর্ণ বিসমিল্লাহ এর সাংকেতিক চিহ্ন বা সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আব্বাসী খিলাফত যুগে হিব্রু, সুরিয়ানী প্রভৃতি অনারবী ভাষার অনুকরণে আরবী বর্ণের গাণিতিক মানের উদ্ভব হয়। তবে ভারত উপমহাদেশে এ মানসংখ্যার ব্যাপক প্রচলন ঘটে। এ উপমহাদেশেই পূর্ণ বিসমিল্লাহ লেখার পরিবর্তে এর মান সংখ্যা ৭৮৬ লেখার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

সাহাবী-তাবিয়ী যুগে এ মানসংখ্যা নীতির প্রচলন ছিল না। আসলাফ বা ইমাম পর্যায়ের কোনো মনীষী ব্যক্তিত্ব থেকে এ ধরনের মানসংখ্যা ব্যবহারের রীতি পাওয়া যায় না। যদিও বিসমিল্লাহকে যত্রতত্র অমর্যাদাকর ব্যবহার থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে এ সাংকেতিক সংখ্যার উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু বিসমিল্লাহর এ জাতীয় ব্যবহার ইসলামী শরীয়তের রুচির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

কারণ এটি একটি কুরআনের পবিত্র আয়াত। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনকে আরবী বর্ণ এবং আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছেন। কোনো গাণিতিক ভাষায় অবতীর্ণ করেননি। তাই কুরআনের আয়াতকে কুরআনের ভাষায় লেখাই বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো বর্ণ বা সংখ্যায় লেখা আদৌ বিধিসম্মত নয়।

অন্যদিকে পূর্ণ বিসমিল্লাহ এর বিকল্প হিসেবে ৭৮৬ লেখা হলে কিংবা পাঠ করা হলে পূর্ণ বিসমিল্লাহ বা আয়াত পাঠের কোনোই পুণ্য  অর্জিত হবে না এবং পূর্ণ বিসমিল্লাহ পাঠের দায়িত্বও আদায় হবে না। এতে যদি কোনো পুণ্য বা দায়িত্বমুক্তি হত তবে পবিত্র কুরআনের গাণিতিক মান বের করে তা পাঠ করেই পূর্ণ কুরআন পাঠের পুণ্য আহরণ করা যেত।

আর পবিত্র কুরআনের পরিবর্তে সে মান সংখ্যাকে ঘরে ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হতো। তাছাড়া যেমনিভাবে পূর্ণ বিসমিল্লাহর বর্ণের গাণিতিক মান ৭৮৬ হয় তেমনিভাবে অন্য একটি আরবী বাক্যের গাণিতিক মানও ৭৮৬ হতে পারে। সে অন্য বাক্যটি বকা-ঝকা বা অশ্লীল বাক্যও হতে পারে। সে হিসেবে ৭৮৬ গাণিতিক মান দ্বারা নির্দিষ্টভাবে কেবল পূর্ণ বিসমিল্লাহই উদ্দেশ্য হয় না।

সুতরাং বিসমিল্লাহকে বিসমিল্লাহর জায়গায় রেখেই এর মর্যাদা নিশ্চিত করা উচিত। এর দেহ সৌষ্ঠব বিকৃত করে এর অস্পষ্ট সাংকেতিক সংখ্যা ব্যবহার মূলত এর অবমূল্যায়নের বার্তাই বহন করে। অতএব সার্বিক বিবেচনায় ৭৮৬ কে বিসমিল্লাহ বলে অভিহিত করা যায় না।

সূরা ইউসুফ ২, সূরা হিজর ৯, রদ্দুল মুহতার ৫/১৮, আলমাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ ১৪/১৯, ফাতহুল বারী ১০/২২৭

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *