‘স্বাস্থ্য বাড়ানো ও কমানোর আমল’ ও কিছু কথা

মুফতী হাফিজুর রহমান

প্রথমে আমলটির সবটুকু বিবরণ পড়ে নেয়া যাক।

স্বাস্থ্য বাড়ানো এবং কমানোর আমল

উচ্চতা অনুযায়ী যাদের স্বাস্থ্য কম বা বেশি তাদের জন্য কুরআনী আমল প্রায় সেম। অর্থাৎ সামান্য একটু বেশ কম করে প্রায় একই আমল দ্বারা উভয়টা করতে হবে। যাদের স্বস্থ্য কম, ওজন বাড়াতে চান তারা যদি বিবাহিত হন তাহলে আল্লাহ পাকের নিম্নের দুটি গুণবাচক নাম পড়বেন। দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পড়বেন। এর বেশী পড়বেন না। কারণ এর দ্বারা যৌন শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। এ আমল অবিবাহিতরা কোন অবস্থাতেই করবেন না।

يَا مُقْسِطُ. يَا قَوِي
ইয়া মুকছিতু ইয়া ক্বাউয়্যু

আর যদি অবিবাহিত হন তাহলে নিম্নের দুটি গুণবাচক নাম পড়বেন। দৈনিক ২০/৩০ মিনিট পড়লে বেশী সময় লাগবে না আপনার স্বাস্থ্য উচ্চতা অনুযায়ী একুরেট হয়ে যাবে।

يا مقسط. يا باسط
ইয়া মুকসিতু ইয়া বাসিতু

এ আমল দ্বারা আপনার ওজন অটোমেটিক আপনার উচ্চতা অনুযায়ী যতটুকু দরকার ততটুকুই হবে। এক গ্রামও বেশী হবে না।

যারা স্বাস্থ্য কমাতে চান তাদের নিম্নের নিয়মে আমল করতে হবে।

يا مقسط يَا شَافِيْ
ইয়া মুকছিতু ইয়া শাফী

এ ইসিমটি রোযা রেখে বা একেবারে খালিপেটে পড়তে হবে। আসর নামাযের সময় হওয়ার পনের মিনিট পূর্বে পড়া শুরু করবেন। মাঝে আসর নামায। আসর নামাযের পর আরও পনের মিনিট এ ইসিম পড়বেন।

উক্ত নিয়মে পড়তে পারলে আপনার হাইট অনুযায়ী আপনার স্বাস্থ্য হয়ে যাবে। এক গ্রাম কমও হবে না বেশীও হবে না। যদি এভাবে পড়তে না পারেন তাহলে খালিপেটে যে কোন সময় পড়তে পারেন। এ আমলের জন্য খালিপেট শর্ত।

সতর্কতা : এ আমল শুরু করার পর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বিরতী দিবেন।

উপরোক্ত আমলটি কে কখন উদ্ভাবন করেছে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। তবে এ কথা সত্য, এর সাথে কুরআন সুন্নাহর কোনো সম্পর্ক নেই। উপরোক্ত আমলের বাস্তব ফল হয় কি হয় না তারও কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কারো থেকে শোনা যায়নি। কাকতালীয়ভাবে যদি কেউ এ আমল করে বর্ণিত ফল পেয়ে থাকেন সেটা নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ব্যাপার। এর সাথে ইসলামী শরীয়তের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আসমাউল হুসনা তথা আল্লাহর সুন্দর নাম বিষয়ে হাদীসে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু সে নামের এ ধরনের কার্যকারিতা সম্বন্ধে কোনো বর্ণনা হাদীস গ্রন্থগুলোতে পাওয়া যায় না। সুতরাং কথিত উপরোক্ত আমলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তদানুযায়ী আমল করা ইসলামী শরীয়ত সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়।

মকসুদুল মোমেনিন, নেয়ামুল কুরআন ও সহীহ ওয়াযীফা জাতীয় অপাঙক্তেয় গ্রন্থগুলোতে এ জাতীয় অনেক আমলের সন্ধান পাওয়া যায়। এ জাতীয় আমলের পেছনে সময় ব্যয় না করে কুরআন সুন্নাহ সম্মত আমলিক পন্থা করাই বাঞ্ছনীয়।

বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা যত ধরনের রোগ-ব্যধি ও সমস্যা দিয়েছেন তা নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছেন। জাবের রাযি. সূত্রে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবধরনের ব্যধিরই প্রতিষেধক রয়েছে। যদি কেউ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পথ্য গ্রহণ করে তবে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সে আরোগ্য লাভ করবে।- সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮৭১

তবে কিছু ব্যবস্থা আছে প্রত্যক্ষ; যথা, মধু, কালো জিরা, গাছ-গাছড়া প্রভৃতি এবং এ থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ। আবার কিছু ব্যবস্থা আছে পরোক্ষ; যথা হাদীসে বর্ণিত রোগ-ব্যধি, বিপদাপদ ও সমস্যা-সঙ্কট থেকে মুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন দু‘আ-দুরূদ। রোগ-ব্যধি, বিপদাপদ ও দৈহিক সমস্যা থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশে এসব উপায় গ্রহণ করা হাদীসের ভাষ্যমতে নববী কর্মপন্থা হিসেবে পরিগণিত।

অতএব রোগ-ব্যধি, বিপদাপদ ও সমস্যা-সঙ্কটের ক্ষেত্রে এ জাতীয় অনিশ্চিত ও অনির্ভরযোগ্য পন্থা গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন মাসনূন দু‘আ পাঠ করা ও প্রত্যক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। এটাই নিরাপদ ও সহীহ পদ্ধতি।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *