রাত্রিকালীন কতিপয় মাসনূন দু‘আ ও যিকির

মুফতী ইবরাহীম হাসান


দু‘আ মুমিনের হাতিয়ার। যিকির আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এমন বহু দু‘আ ও যিকির শিক্ষা দিয়ে গেছেন, যেগুলো নিয়মিত পাঠ করলে প্রত্যেক পাঠকারীকে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া-আখিরাতের সমূহ বিপদাপদ ও বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা করবেন এবং অফুরন্ত নিয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ দান করবেন। সে দু‘আ ও যিকির সমগ্র থেকে রাত্রিকালীন কতিপয় মাসনূন দু‘আ ও যিকির নিম্নে তুলে ধরা হল।

এক. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার করে পাঠ করে উভয় হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে শরীর মর্দন করা। এ নিয়মে রাতে ঘুমানোর পূর্বে শরীর মর্দন করা সুন্নাত। সূরা তিনটি নিম্নে উল্লেখ করা হল-

سورة الإخلاص : قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ. اللَّهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ.

سورة الفلق : قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ. مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ. وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ. وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ.

سورة الناس : قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ. مَلِكِ النَّاسِ. إِلَهِ النَّاسِ. مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ. الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ. مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ.

হাদীস : হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন রাত্রিবেলা যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন উভয় হাতের তিন কুলপাঠ করে ফুঁ দিতেন, অতঃপর চেহারা এবং যতটুকু সম্ভব আপন দেহ মর্দন করতেন। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫৭৪৮)

দুই. আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করা। আয়াতুল কুরসী-

اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ.

হাদীস :

শয্যা গ্রহণের সময় কেউ যদি আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার জন্য একজন মুহাফিয (রক্ষক) নিযুক্ত হয়ে যাবে। সকাল পর্যন্ত শয়তান আর তার কাছে আসতে পারবে না। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৩২৭৫)

তিন. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করা। আয়াত দু’টি হল-

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ. لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ.

হাদীস : হযরত আবূ মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করবে আয়াত দু’টি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫০০৭)

চার. ঘুমানোর পূর্বে সূরা কাফিরূন পাঠ করা। সূরা কাফিরূন-

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ. لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ. وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ. وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ. وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ. لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ.

হাদীস : হযরত নাওফাল রাযি. বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আগে সূরা কাফিরূন পড় এরপর ঘুমাও; কেননা সূরা কাফিরূন শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৫০৫৫)

পাঁচ. ঘুমানোর পূর্বে এই দু‘আটি পাঠ করা-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনারই নামে মৃত্যুবরণ করছি (ঘুমাচ্ছি) আর আপনারই নামে জীবিত হবো (ঘুম থেকে জাগ্রত হবো)।

হাদীস : হযরত হুযাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা যখন শয়ন করতেন হাতকে গালের নীচে রাখতেন অতঃপর বলতেন,

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا.

আবার যখন ঘুম থেকে উঠতেন তখন বলতেন,

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ.

(সহীহ বুখারী; হা.নং ৬৩১৪)

ছয়. ঘুমানোর পূর্বে এই দু‘আটি পাঠ করা-

اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার চেহারা আপনার নিকট সোপর্দ করলাম এবং আমার সকল বিষয় আপনার নিকট সোপর্দ করলাম এবং আমি আমার পৃষ্ঠ আপনার নিকট অর্পন করলাম আপনার রহমতের প্রত্যাশায় এবং আযাবের ভয়ে। আর আপনার রহমতের আশ্রয় ও নিরাপদ ছাড়া অন্য কোন আশ্রয়স্থল ও নিরাপদস্থল নেই। হে আল্লাহ! আপনার অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান আনলাম এবং আপনার প্রেরিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনলাম।

হাদীস : হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তুমি ঘুমাও তখন নামাজের উযুর ন্যায় উযূ করো অতঃপর ডান কাতে শয়ন করো। এরপর বলো,

اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ.

যদি এই রাতে তোমার মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে তুমি ইসলামের উপর মারা গেলে। এই দু‘আটি যেন তোমার সর্বশেষ কথা হয়। (সহীহ বুখারী;হা.নং ৬৩১৫)

সাত. ঘুমানোর পূর্বে বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নেয়া। অতঃপর নিম্নোক্ত দু‘আ পড়া-

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَاغْفِرْ لَهَا وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ.

অর্থ : হে আমার রব! আমি আমার শরীরকে আপনার নামে বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে বিছানা থেকে উঠাব। আপনি যদি ঘুমের মধ্যে আমার আত্মাকে উঠিয়ে নেন তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিন। আর যদি না উঠিয়ে নেন তাহলে তাকে আপনার নেক বান্দাদের মত হিফাযত করুন।

হাদীস : হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ বিছানায় আসে সে যেন কোন কাপড় দ্বারা বিছানা তিন বার ঝেড়ে নেয় এবং এ দু‘আ পাঠ করে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৬৩২০)

আট. ঘুমানোর পূর্বে ৩৩ বার سبحان الله ৩৩ বার الحمد لله এবং ৩৪ বার الله اكبر পাঠ করা।

হাদীস : হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত,

হযরত ফাতেমা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে একজন খাদেম চাইলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে ঐ জিনিস সম্পর্কে বলব না যা তোমার জন্য এর চেয়েও উত্তম হবে? তুমি নিদ্রা গ্রহণের সময় ৩৩ বার سبحان الله পড়বে, ৩৩ বার الحمد لله পড়বে এবং ৩৪ বার الله اكبر পড়বে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫৩৬২, সহীহ মুসলিম; হা.নং ৭০৯৪)

নয়. শোয়ার পর এই দু‘আটি ৩ বার পাঠ করা-

اللَّهُمَّ قِني عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبادَكَ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন যে দিন আপনার বান্দাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।

হাদীস : হযরত হাফসা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমনোর ইচ্ছা করতেন তখন ডান হাত গালের নিচে রাখতেন অতঃপর ৩ বার اللَّهُمَّ قِني عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبادَكَ পড়তেন। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৫০৪৫)

দশ. বিছানায় গিয়ে এই দু‘আটি পাঠ করা-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَآوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لاَ كَافِىَ لَهُ وَلاَ مُئْوِىَ.

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন এবং পান করিয়েছেন। আমাদেরকে রক্ষা করেছেন এবং আমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। অনেক মানুষ আছে যার কোন রক্ষাকারী নেই এবং আশ্রয় দানকারী নেই।

হাদীস : হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন তখন পড়তেন,

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَآوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لاَ كَافِىَ لَهُ وَلاَ مُئْوِىَ.

(সহীহ মুসলিম; হা.নং ৭০৬৯)

এগারো. বিছানায় গিয়ে এই দু‘আটি পাঠ করা-

اللَّهُمَّ خَلَقْتَ نَفْسِى وَأَنْتَ تَوَفَّاهَا لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا إِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا وَإِنْ أَمَتَّهَا فَاغْفِرْ لَهَا اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার আত্মাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনি তাকে মৃত্যু দিবেন। তার মরণ ও জীবন আপনারই জন্য। যদি আপনি তাকে জীবিত রাখেন তাহলে তাকে হিফাযত করুন। আর যদি তাকে মৃত্যু দেন তাহলে তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সুস্থতা কামনা করছি।

হাদীস :

হযরত ইবনে উমর রাযি. এক ব্যক্তিকে আদেশ দিলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন পড়বে,

اللَّهُمَّ خَلَقْتَ نَفْسِى وَأَنْتَ تَوَفَّاهَا لَكَ مَمَاتُهَا وَمَحْيَاهَا إِنْ أَحْيَيْتَهَا فَاحْفَظْهَا وَإِنْ أَمَتَّهَا فَاغْفِرْ لَهَا اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ.

ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এটা উমর রাযি. থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, উমরের চেয়ে উত্তম ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৭১২)

বারো. ডান কাতে শোয়ার পর এই দু‘আটি পাঠ করা-

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ، وَأَغْنِنَا مِنْ الْفَقْر.

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি সপ্ত আকাশ জমীন এবং মহা আরশের প্রতিপালক। আপনি আমাদের প্রতিপালক এবং সকল বস্তুর প্রতিপালক। আপনি বীজ এবং বীচি বিদির্ণকারী এবং আপনি তাওরাত, ইঞ্জিল এবং ফুরকান (কুরআন) অবতীর্ণকারী। আমি আপনার নিকট সকল বস্তু থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। সকল বস্তু আপনার পূর্ণ আয়ত্বাধীন। হে আল্লাহ! আপনি প্রথম, আপনার পূর্বে কোন কিছু নেই এবং আপনি শেষ, আপনার পরে কোন কিছু নেই এবং আপনি প্রকাশমান, আপনার উপর কোন কিছু নেই এবং আপনি গোপন, আপনার পরে কোন কিছু নেই। আপনি আমাদের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাদেরকে দারিদ্র থেকে মুক্ত করুন।

হাদীস : হযরত সুহাইল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আবূ সালেহ রহ. আমাদের আদেশ দিতেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুমানোর ইচ্ছা করে তখন সে যেন ডান কাতে শয়ন করে। অতঃপর পড়ে,

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ، وَأَغْنِنَا مِنْ الْفَقْر.

এবং তিনি এ হাদীসটি আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণনা করতেন। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৭১৩)

তেরো. শোয়ার সময় এ দু‘আটি পাঠ করা-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللَّهُمَّ أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ، اللَّهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ.

অর্থ : হে আল্লাহ!আমি আপনার মহা সম্মানিত সত্তা এবং আপনার পূর্ণাঙ্গ কালিমাসমূহের দ্বারা আপনার আয়ত্বাধীন সকল বস্তুর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষতি এবং গুনাহ দূর করেন। হে আল্লাহ! আপনার বাহিনী পরাস্ত হয় না, আপনার ওয়াদা ভঙ্গ হয় না এবং কোন চেষ্টাকারীর চেষ্টা ফলপ্রসু হয় না আপনার তাওফীক ব্যতীত। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি।

হাদীস : হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোয়ার সময় পড়তেন,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللَّهُمَّ أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ، اللَّهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ.

(সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৫০৫২)

চৌদ্দ. শোয়ার সময় বিছানায় গিয়ে এ দু‘আটি পড়া-

بِسْمِ اللَّهِ وَضَعْتُ جَنْبِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَأَخْسِئْ شَيْطَانِي، وَفُكَّ رِهَانِي، وَاجْعَلْنِي فِي النَّدِيِّ الْأَعْلَى.

অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আমার শরীর রাখলাম। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার শয়তানকে বিতাড়িত করে দিন, আমার দায়মুক্ত করে দিন এবং আমাকে বড় দানশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

হাদীস : হযরত আবুল আযহার আনমারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে ঘুমানোর বিছানায় যেতেন তখন পড়তেন,

بِسْمِ اللَّهِ وَضَعْتُ جَنْبِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَأَخْسِئْ شَيْطَانِي، وَفُكَّ رِهَانِي، وَاجْعَلْنِي فِي النَّدِيِّ الْأَعْلَى.

(সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৫০৫৬)

পনেরো. পবিত্র অবস্থায় বিছানায় শুয়ে ঘুম প্রভাব বিস্তার করা পর্যন্ত যিকির করা।

হাদীস : হযরত মু‘আয রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় বিছানায় শয়ন করে এবং ঘুম তার উপর প্রভাব বিস্তার করা পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে অতঃপর রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, আল্লাহ তা‘আলা সে দুনিয়া ও আখেরাতের যে কল্যাণই কামনা করবে আল্লাহ তা‘আলা তা তাকে দান করবেন। (সুনানে নাসায়ী কুবরা; হা.নং ১০৬৪১)

ষোলো. ঘুমানোর সময় এ দু‘আ পাঠ করা-

لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ باللَّهِ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَالله أَكْبَرُ.

হাদীস :

যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় নিম্নোক্ত দু‘আ পাঠ করবে,

لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ باللَّهِ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَالله أَكْبَرُ.

তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও গুনাহ সমুদ্রের ফেনা সম হয়। (সুনানে নাসায়ী কুবরা; হা.নং ১০৬৪৭)

সতেরো. ঘুমানোর পূর্বে সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা যুমার তিলাওয়াত করা।

হাদীস : হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্র্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা যুমার পাঠ না করে ঘুমাতেন না। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ২৯২০)

আঠারো. ঘুমানোর পূর্বে সূরা মুল্ক এবং সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদাহ তিলাওয়াত করা।

হাদীস : হযরত জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা মুলক এবং সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদাহ তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। (সুনানে তিরমিযী;হা.নং ২৮৯২)

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *