মুহাম্মাদ ইরফান জিয়া
তৃতীয় কিস্তি
[মায়ের আঁচলে এতিম নবী]
নবীজী মায়ের গর্ভে থাকতেই ইন্তেকাল করেন তার প্রিয়তম পিতা। তবে কেউ কেউ বলেছেন, এসময় নবীজী ছিলেন দু’মাসের নবজাতক। প্রিয় পিতার ইন্তেকালের সময় নবীজী সাত মাস অথবা আটাশ মাসের শিশু ছিলেন বলেও বর্ণনা রয়েছে।(১)
নবীজী তখন চার বছরের শিশু। ইন্তেকাল করেন তাঁর প্রিয়তমা মা। কারো কারো মতে এ সময়ে নবীজীর বয়স ছিলো ছয়।(২)
[মাতাপিতাহীন বেড়ে ওঠা]
স্নেহময়ী মাতার ইন্তেকালের পর নবীজীর লালন পালনের দায়িত্ব নেন তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব। জীবনের আট বছর দু’মাস দশ দিন পেরুতেই দাদা আব্দুল মুত্তালিব ইন্তেকাল করেন। এবার দায়িত্ব নেন চাচা আবু তালিব।
[সিরিয়ার পথে…]
বারো বছর দু’মাস দশ দিনের কিশোর নবী চাচার সাথে সিরিয়ায় উদ্দেশে রওয়ানা করেন। বসরায় যাত্রা বিরতি ঘটে। নবীজীকে লক্ষ করেন এক পাদ্রী। নাম বাহীরা। বালক নবীর মধ্যে খুঁজে পান তিনি কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য। কাছে এসে তাঁর হাত ধরেন। বলেন, ‘এইতো রাব্বুল আলামীনের পয়গম্বর। যাঁকে আল্লাহ তা‘আলা সকল জগতের জন্যে রহমত হিসেবে প্রেরণ করবেন। তোমরা যখন গিরিপথ ধরে এগিয়ে আসছিলে; গাছ-গাছালি, পাথররাজি সিজদায় লুটিয়ে পড়ছিলো। শুধু একজন নবীর জন্যেই এরা সিজদায় অবনত হতে পারে। আমরা আমাদের কিতাবে এঁর উল্লেখ পেয়েছি। পূর্বসূরীদের বর্ণনার মাধ্যমে আমাদের কাছে তিনি সুপরিচিত।’
হৃদয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে পাদ্রী আবু তালেবকে বললেন, ‘আপনি যদি তাকে সিরিয়ায় নিয়ে যান; ইয়াহুদীরা নিশ্চিতভাবে তাকে হত্যা করে ফেলবে।’
বালক নবীর প্রাণ আশঙ্কায় আবু তালেব সাথে সাথে তাঁকে ফেরৎ পাঠালেন।(৩)
[আবারও সিরিয়ায়]
খাদীজা রাযি. কে বিয়ে করার আগে। নবীজী দ্বিতীয়বার সিরিয়ায় সফর করেন। সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন খাদীজা রাযি.-এর গোলাম মাইসারা। এবারের সফর ছিলো ব্যবসায়িক সফর। নবীজী খাদীজা রাযি. -এর ব্যবসায়ের দায়িত্ব নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা করেন।
সিরিয়ায় পৌঁছে তিনি একটি গাছের নিচে যাত্রাবিরতি করেন। জায়গাটা ছিলো এক পাদ্রীর উপাসনালয়ের কাছাকাছি। নবীজীকে দেখে পাদ্রী বললেন, ‘এ গাছের নিচে নবী ছাড়া অন্য কেউ কখনো বসেনি।’(৪)
সফরসঙ্গী মাইসারা (এ সফরের ব্যাপারে) বলেন, ‘মধ্যাহ্ণের উত্তাপ যখন খুব বেড়ে যেতো; দেখতাম, দু’জন ফেরেশতা আকাশ থেকে নেমে এসে তাঁকে ছায়া দিচ্ছে।
এ সফর থেকে ফেরার পরই নবীজী খাদীজা রাযি. কে বিয়ে করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিলো পঁচিশ বছর দু’মাস দশদিন।(৫) এ ব্যাপারে অন্যমতও আছে।
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে নবীজী কা’বার পুনঃনির্মাণে উপস্থিত থাকেন। এ সময় তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদকে পুনঃস্থাপন করেন।(৬)
টীকা:
(১) পিতার ইন্তেকালের সময় নবীজীর বয়সের ব্যাপারে প্রথম মতটিই অগ্রগণ্য। ইমাম মুহাম্মাদ সালেহী শামী তাঁর সীরাতের কিতাবে এ মতটি উল্লেখ করার পর বলেন, ‘ইবনু ইসহাক রহ. এমতটিকে দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন। যাহাবী রহ. এটাকে সহীহ বলেছেন। ইবনে কাসীর রহ. এ মতটিকে প্রসিদ্ধ বলেছেন। ইবনুল জাওযী রহ. বলেছেন অধিকাংশ সীরাত বিশেষজ্ঞের মত এটাই।’ -সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ: ১/৩৯৮।
(২) দ্বিতীয় মতটিই অধিক প্রসিদ্ধ। ইবনে হিশাম রহ. তাঁর কিতাবে ইবনে ইসহাক রহ. থেকে এ মতটিই উল্লেখ করেছেন। -আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লিবনি হিশাম: ১/১২৬।
(৩) সুনানে তিরমিযী: বা-বু মা জা-আ ফী বাদয়ি ওয়াহয়িন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
(৪) সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ: ২/২৮।
(৫) দালায়েলুন নবুওয়াহ: বা-বু মা জা-আ ফী তাযাউজি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বি খাদিজা।
(৬) দালায়েলুন নবুওয়াহ: বা-বু মা জা-আ ফী বিনায়িল কা’বা।