মা’হাদ প্রতিবেদন
একজন আলেমের মৃ্ত্যুতে পৃথিবীর হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ ঘটে । একজন আলেমের মৃত্যু মানে একটি পৃথিবীর মৃত্যু। আমরা বারবারই এমন বেদনার সম্মুখীন হচ্ছি। হারাচ্ছি আমাদের অভিভাবক তুল্য অনেক আলেমে দ্বীনকে ।
উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, নিভৃতচারী এক মহাসাধক, হযরত মাওলানা মুহাদ্দিস সাহেব হুযুর (রহ.) এর বড় জামাতা হযরত মাওলানা হাশমাতুল্লাহ সাহেবও গত ১৯ মার্চ ২০২১ ঈসায়ী তারিখে এ তালিকায় নাম লিখিয়ে আল্লাহর দরবারে চলে গেলেন।
মাওলানা হাশমাতুল্লাহ সাহেবের বড় ছেলে মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাহেব প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই মুহাম্মাদপুরের বসিলায় অবস্থিত মা’হাদুল বুহুসিল ইসলামিয়ার মজলিসে শূরার অন্যতম রুকন হিসেবে আছেন। সে সূত্রে মা’হাদের সাথে ছিলো হযরতের গভীর রুহানী রিশতা।
২০১৪ সালে স্ট্রোক করার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মাওলানা হাশমাতুল্লাহ সাহেব। একেবারেই শয্যাশায়ী ছিলেন। বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। তবে কথা বার্তা বলতে পারতেন। গত ২২ জানুয়ারীর পর অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় মুমূর্ষু হয়ে পড়েন। কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ১৯/০৩/২১ ঈসায়ী মোতাবেক ০৪/০৮/৪২ হিজরী রোজ শুক্রবারে পৃথিবী ছেড়ে মাওলায়ে হাকীকীর দরবারে হাযিরা দিতে চলে যান। হযরতের বড় ছেলে হযরত মাওলানা মুফতী আহমাদুল্লাহ সাহেব দা.বা. -এর ইমামতিতে পরদিন সকাল ৮ টায় তাঁর জানাযা হয়। জানাযা শেষে নিজ গ্রামেই হযরতকে দাফন করা হয়।
আল্লাহ তাআলা হযরতকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু মাকাম নসীব করুন। তাঁর কবরকে নূর দ্বারা ভরে দিন। আমীন।
জন্ম ও শিক্ষা:
হযরত মাওলানা হাশমাতুল্লাহ সাহেব রহ. গত শতাব্দীর চতুর্থ দশকের শুরুর দিকে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানার, দক্ষিন দীঘলদী নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা চাঁদপুরের কচুয়াতে সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকার তৎকালীন শীর্ষ ইসলামী বিদ্যাপীঠ বড় কাটারা মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন।
দীনী খেদমত:
উস্তাদগন হযরতের আমল আখলাক ও দ্বীনি খেদমতের যওক-শওক দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বড় কাটারা মাদরাসাতেই মুদারিরস হিসেবে রেখে দেন। সেখানে তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর যাবৎ দরস তাদরীসের সাথে লেগে থাকেন। নিজ শায়েখের পরামশক্রর্মে বড় কাটারা থেকে বিদায় নিয়ে মতলব দক্ষিন মুন্সির হাটে রিয়াজুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসাটি দীঘ ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে দ্বীনের মারকাজ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। মাদরাসাটিতে বর্তমানে মিশকাত জামা‘আত পর্যন্ত চালু আছে। এরপর তিনি নিজ গ্রাম দক্ষিণ দিঘলদীতে মিফতাহুল উলুম নামে আরো একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত মাদরাসায় জামাআতে কাফিয়া পর্যন্ত চালু ছিল। তবে বর্তমানে সেখানে শুধু হিফজ বিভাগ চালু আছে। এছাড়াও তিনি আরো অনেক দীনী খেদমতের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সন্তান সন্ততি
হযরত মাওলানা হাশমাতুল্লাহ সাহেব মৃত্যুকালীন ৫ ছেলে, ১ মেয়ে সহ নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। হযরতের বড় ছেলে হযরত পাহারপুরী হযুরের অন্যতম খলীফা হযরত মাওলানা মুফতী আহমাদুল্লাহ সাহেব দা.বা. ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়ার মুহাদ্দিস। ২য় ছেলে মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ সাহেব দা.বা. জামিআ ইসলামিয়া ঢাকা (আকবর কমপ্লেক্স)-এ মুহদ্দিস কাজে নিয়োজিত আছেন। ৩য় ছেলে মাওলানা উবাইদুল্লাহ সাহেব দা.বা. বাইতুল কুরআন মাদরাসা, উত্তরা, ঢাকা এর প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম। ৪র্থ ছেলে হযরত মাওলানা আতাউল্লাহ সাহেব দা.বা. ঢাকার আমিন বাজারে জামিআ মাদীনাতুল উলুম মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ৫ম ছেলে মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ সাহেব দা.বা. জামিআ ইসলামিয়া যমীরিয়া উত্তরখান -এ তাদরীসের খেদমতে নিয়োজিত আছেন। হযরতের একমাত্র জামাতা মাওলানা নজীর হুসাইন সাহেব দা.বা. ভিক্টোরিয়া মসজিদ মাদরাসায় খেদমতে আছেন। পাপাশি তিনি সূত্রাপুর থানা মসজিদের ইমাম।
হযরতের পরিবার কতই না মুবারক। নিজ সন্তানদেরকে হাফেজ-আলেম বানিয়ে তিনি পরকালের পুঁজি সঞ্চয় করেছেন। বর্তমানে তার পরিবারে ১৩ জন কুরআনের হাফেজ রয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর পরিবারকে সবরে জামীল করার তাউফিক দান করুন এবং সবাইকে দীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।
গ্রন্থনা: মৌলবী নাসীরুদ্দীন, ইফতা প্রথম বর্ষ
আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন