অনুষ্ঠিত হলো মা’হাদের সবক উদ্বোধনী জলসা

২০২২ ঈসায়ী সনের মে মাস। ১৬ তারিখ, সোমবার। অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো মা’হাদের ১৪৪৩-৪৪ হিজরী শিক্ষাবর্ষের আনুষ্ঠানিক সবক উদ্বোধনী জলসা। অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১১টায়।

বরকত পরশিত এ জলসায় আগমন করেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরতুল আল্লাম মাওলানা হিদায়াতুল্লাহ (মুহাদ্দিস সাহেব) রহমাতুল্লাহি আলাইহির সুযোগ্য সাহেবযাদা, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার সম্মানিত মুহতামিম আল্লামা হিফজুর রহমান (মুমিনপুরী হুযূর) দামাত বারাকাতুহুম, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার শাইখে সানী হযরতুল আল্লাম মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক (মানিকগঞ্জী হুযূর) দামাত বারাকাতুহুম, মা’হাদের প্রধান মুফতী এবং জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার স্বনামধন্য মুহাদ্দিস হযরতুল আল্লাম মুফতী ইবরাহীম হাসান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম। আরো উপস্থিত ছিলেন মা’হাদের অন্যান্য আসাতিযায়ে কেরাম ও পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীলগণ।

জলসায় স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন মুফতী ইবরাহীম হাসান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম। শুরুতেই তিনি করোনার কারণে এ বছর শিক্ষাকার্যক্রম বিলম্বিত না হয়ে সময়মত আরম্ভ হওয়ায় আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। অতঃপর মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন। তিনি বলেন-

আমাদের মাদারিসের কেন্দ্রবিন্দু হলো কুরআন ও হাদীস। আমরা যে উলূম শিখছি এর কিছু হলো علوم عالية আর কিছু হলো علوم آلية।

آلة  শব্দ থেকে آلية আর اعلى এর মূল অক্ষর থেকে عالية শব্দ দুটি উদ্গত হয়েছে। নিচের জামাআতে যারা রয়েছে তারা বেশিরভাগ علوم آلية পড়াশোনা করে। آلة অর্থ হলো উসীলা বা মাধ্যম। অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ পর্যন্ত পৌঁছার যে মাধ্যমগুলো রয়েছে সেগুলোকে علوم آلية বলে। আর মূল উলূম তথা علوم عالية হলো ছয়টি। (১) তাফসীর (২) হাদীস (৩) ফিকহ (৪) উসূলে তাফসীর (৫) উসূলে হাদীস (৬) উসূলে ফিকহ। তো এ ইলমগুলো শেখা ও শেখানোর উদ্দেশ্য হবে سعادة الدارين তথা উভয় জাহানের সৌভাগ্য অর্জন করা।

মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক সাহেব (মানিকগঞ্জী হুযূর) দামাত বারাকাতুহুম নসীহত পেশ করতে গিয়ে বলেন-

তা’লীম-তা‘আল্লুম তথা পঠন-পাঠনের সাথে নিরত থাকা সম্পর্কে থানবী রাহিমাহুল্লাহ বলতেন, এটি দুনিয়ার সর্বোত্তম শোগল। মানুষ যত ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হয়, যত ধরনের পেশায় যুক্ত হয় তন্মধ্যে সর্বোত্তম পেশা হলো, দ্বীন শেখা ও শেখানোর পেশা।

থানবী রাহিমাহুল্লাহ আরো বলতেন, ‘বর্তমান যামানায় যেসব মাদরাসার তা’লীম-তারবিয়াতের মান বেশি উন্নত নয়, সেগুলোও কাজের। এসব কওমী মাদরাসা আল্লাহর পক্ষ হতে এতবড় নেয়ামত, যার চেয়ে বড় নেয়ামতের কথা কল্পনাই করা যায় না। এসব মাদরাসায় বেকার পড়ে থাকাও কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ার চেয়ে লক্ষ-কোটি গুণ উত্তম। শতগুণ বা হাজার গুণ নয়; লক্ষ-কোটি গুণ উত্তম। কারণ মাদরাসার পরিবেশে যে ব্যক্তি পড়ে থাকে সে যত মেধাহীনই হোক না কেন, তার এই পড়ে থাকার বরকতে কক্ষনো সে ঈমানহারা হবে না’।

অতঃপর হুযূর মাদরাসায় আসতে পারার মতো মহান নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের প্রতি তাগিদ দেন এবং অকৃতজ্ঞতার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেন। হুযূর বলেন, শুকরিয়া আদায়ার্থে আমাদের করণীয় হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে উদ্দেশ্যে এখানে এনেছেন আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে সে উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করে যাবো। এতে যদি আমি তেমন মেধাবী না-ও হই তবু আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা এত পরিমাণে খেদমত নিতে পারেন যে বড় বড় উলামায়ে কেরাম আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকবেন।

হুযূরের বয়ান শেষ হলে হযরত মুমিনপুরী হুযূর দামাত বারাকাতুহুম নূরানী থেকে ইফতা সকল বিভাগের সবক ইফতিতাহ (উদ্বোধন) করেন। আনুষ্ঠানিক সবক উদ্বোধনের পর সবার পীড়াপীড়িতে হযরত কিছু নসীহত পেশ করেন। তিনি বলেন-

ইলম হাসিলের জন্য নিরন্তর সাধনা ও অব্যাহত চেষ্টা-প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের দলে থাকতে হলে আমাদেরকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। হযরত শামসুল হক ফরিদপুরী রাহিমাহুল্লাহ একবার গওহরডাঙ্গা মাদরাসার অফিস কক্ষে বসে ছিলেন। সামনেই দেখা যাচ্ছিলো সরিষা ক্ষেত। পুরো ক্ষেত জুড়ে সরিষা ফুল ফুটে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। তখন তিনি উপস্থিত অন্যান্য উলামায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন, এ চমৎকার দৃশ্য দেখা তখনই সম্ভব হয়েছে যখন এর পিছনে কিছু বীজ নিজেদেরকে বিলীন করে দিয়েছে। প্রথমে পানিতে ভিজেছে। পরে মাটিতে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। আমরাও যদি পৃথিবীর বুকে অবদান রাখতে চাই তাহলে ত্যাগের বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার সাথে সাথে ইখলাস তথা পরিশুদ্ধ নিয়্যতও প্রয়োজন। ইখলাস হলো আমলের রূহ। রূহবিহীন শরীর যেমন, ইখলাস বিহীন আমল তেমন।

সংক্ষিপ্ত নসীহতের পর মা’হাদের উত্তোরত্তর উন্নতির জন্য হযরত সবাইকে নিয়ে দু‘আ করেন। হযরতের দু‘আর মাধ্যমে বরকতময় এ জলসার পরিসমাপ্তি ঘটে।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *