প্রতিটি ভাষা আল্লাহ তা‘আলার মহান এক নিদর্শন। প্রতিটি ভাষার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা রয়েছে। ভাষার বৈচিত্র্যে মানবজাতির মাঝে ভিন্ন এক আবেগ ও সুখানুভূতি তৈরি হয়। ফলে ভাষা হয়ে ওঠে মানবজাতির আবেগ-উচ্ছ্বাস ও ভাব-বিনিময়ের পরম বন্ধু। বিপরীতে ভাষা কারো জন্য শোষণের হাতিয়ার। জাতির উত্থান-পতনে ভাষা চরম প্রভাবক যন্ত্র। ভাষা যদি সাহিত্য ও অলঙ্কারপূর্ণ হয় তাহলে তা মানব মনকে বেশি আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে। সাহিত্যের মাধুরী দিয়ে মানুষের মন সহজে জয় করা যায়। সাহিত্যের শৈল্পিক যাদুতে নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও দর্শন মানবহৃদয়ে অধিক ক্রিয়াশীল হয়।
পৃথিবীতে যারা আগ্রাসন চালিয়েছে তারা প্রথমে ভাষা ও সাহিত্যকে আঘাত করেছে, তারপর নিজ চিন্তা-চেতনা, দর্শন-মতবাদ ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছে। বর্তমানে বাতিলপন্থী লোকজন ইসলামকে ঘায়েল করার জন্য ভাষা ও সাহিত্যকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। সাহিত্যের চোরাবালিতে ইসলাম বিদ্ধেষীরা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার নোংরা কাজ করে যাচ্ছে। এসব বাতিলের মোকাবেলায় ইসলামকে সমুন্নত করার জন্য বর্তমানে ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মা’হাদুল বুহুসিল ইসলামিয়া’ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত ভাষা ও সাহিত্যের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষার্থী যোগ্য আলেম হওয়ার পাশাপাশি যাতে ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে ওঠে, সেজন্য গঠন করা হয়েছে ‘তাদরীবুত ত্বলাবা’ নামে স্বতন্ত্র তাদরীব বা প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা। তার অধীনে শিক্ষার্থীরা লেখালেখি ও বক্তৃতা অনুশীলন করে থাকে। তাদরীব কর্তৃপক্ষ তাদেরকে যোগ্য করে তুলতে বদ্ধপরিকর। এজন্য সময়ে সময়ে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য সৃজনশীল নানা আয়োজন করে থাকে। তন্মধ্যে অন্যতম হলোÑ সাহিত্যচর্চায় প্রতিভা বিকাশের জন্য দেয়ালিকা প্রকাশ।
মাদরাসা মহলে সাহিত্যচর্চায় দেয়ালিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে ছাত্রদের আগ্রহ-উদ্দীপনা ও আবেগ-উচ্ছ্বাস জড়িয়ে থাকে। ছাত্রদের আগ্রহ-উদ্দীপনা সঠিক কাজে লাগাতে মা’হাদ বিগত বছর থেকে ‘মানারুস সাবীল’ ও ‘আলোর পথ’ নামে- পৃথক দু’টি আরবী-বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ শুরু করেছে।
দেয়ালিকা দু’টি ছাত্রদের ছোটগল্প, প্রবন্ধ, রোজনামচা, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি ও কবিতাকানন ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়। নবীন লেখকদের বাছাইকৃত লেখাগুলো সম্পাদনার মাধ্যমে এতে প্রকাশ হয়। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রদের লেখাগুলো সংগ্রহ করে দায়িত্বশীল ছাত্রদের সম্পাদনায় প্রকাশ হয়। ব্যাকরণগত ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সাহিত্যমান যাচাই ছাত্ররাই করে থাকে। পুরো দেয়ালিকার অক্ষরবিন্যাস, অঙ্গসজ্জা ও প্রচ্ছদ প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ ছাত্ররা করে থাকে। বিষয়ের সাথে উপযুক্ত শিরোনাম ও প্রচ্ছদ নির্বাচনে ছাত্রদের সৃজনশীলতা ফুটে ওঠে।
এবারও সেই আঙ্গিকে ‘মানারুস সাবীল’ ও ‘আলোর পথ’ শিরোনামে দু’টি দেয়ালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে ছাত্রদের বাঁছাইকৃত ও সম্পাদিত ছোটগল্প, রোজনামচা, ভ্রমণকাহিনি, শিক্ষণীয় রচনা ও কবিতা স্থান পেয়েছে। মাত্র কয়েক দিনে ছাত্ররা শৈল্পিক কারুকার্য দিয়ে সুন্দর একটি দেয়ালিকা প্রকাশ করেছে। তাদের সুন্দর হস্তলিপি ও হাতের চিত্তাকর্ষক অঙ্কনে দেয়ালিকা হয়ে উঠেছে চমকপ্রদ ও অসাধারণ। দেয়লিকা দু’টির যদিও এখন সূচনাকাল, তবুও ভাষা ও সাহিত্যমানের কিঞ্চিত ছোঁয়ায় হয়ে ওঠছে প্রাণবন্ত। ছাত্রদের সাবলীল বর্ণনা, সুন্দর হস্তলিপি ও চিত্তাকর্ষক অঙ্কন পাঠককে মুগ্ধ ও বিমোহিত করে তুলছে। অল্প ক’দিনে দেয়ালিকা দু’টি সবার মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এ দেয়ালিকা লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চায় নবীন কলমযোদ্ধাদের পাথেয় হয়ে ওঠেছে।
দেয়ালিকায় লেখালেখির প্রতি তাদের আগ্রহ উদ্দীপনা সাহিত্যচর্চায় অনেক দূর এগিয়ে নিবে। চেষ্টা-সাধনা ও সঠিক পরিচর্যা অব্যাহত থাকলে তারা হবে যামানার ফররুখ, রুমী ও কাজী নজরুল। একঝাঁক তুর্কি তরুণদের বিস্ময়কর প্রতিভায় পৃথিবীতে তখন সুস্থ জ্ঞানের মশাল জ¦লবে। সাহিত্যে আলেমদের সরব পদচারণায় দ্বীন ও ইসলাম সমুন্নত হবে। কুরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যায় মানুষজন উপকৃত হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মা’হাদে দেয়ালিকার সূচনা হয়।
সূচনা থেকেই দেয়ালিকা তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। সাহিত্যমান ও ব্যাকরণে ত্রুটিমুক্ত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। ইনশাআল্লাহ এই দেয়ালিকা লেখালেখির জগতে নবজাগরণ সৃষ্টি করবে এবং সাহিত্যাঙ্গনে আদর্শ ও অনুসরণীয় হয়ে ওঠবে।
আল্লাহ তা‘আলা দেয়ালিকা দু’টিকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাওফীক দান করুন। পাশাপাশি নবীন লেখকদের কলমকে শানিত করুন এবং দ্বীনী কাজে সহায়ক হিসেবে কবুল করুন। আমিন।