নয়নজ্যোতি মুহাম্মাদ ﷺ

মুহাম্মাদ ইরফান জিয়া

পঞ্চম কিস্তি

নবীজীর হজ-উমরা

নবীজী হজ করেছেন মোট তিনবার। দু’বার হজ ফরজ হওয়ার আগে। একবার হজ ফরজ হওয়ার পর ।

বিদায় হজের দিন। নবীজী রওয়ানা করলেন। বের হওয়ার আগে নিজের চুল আঁচড়ে তেল দিলেন। সুগন্ধি ব্যবহার করলেন। এরপর যুল হুলাইফাতে  গিয়ে রাত্রি যাপন করলেন।

নবীজী বলেন, ‘রাতে আমার রবের পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক এলো। বললো, ‘এই পবিত্র উপত্যকায় সালাত আদায় করুন আর (সবাইকে) বলুন, হজের সাথে উমরাও আছে।

আল্লাহর এই আদেশ পেয়ে নবীজী হজ ও উমরার ইহরাম একত্রে বাঁধলেন।

রবিবার দিন। খুব সকাল। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উঁচু দিকে অবস্থিত কাদা নামক উপত্যকা হয়ে মক্কায় প্রবেশ করলেন। তাওয়াফে কুদুম আদায় করলেন। তিন তাওয়াফে রমল করলেন। বাকী চার তাওয়াফ স্বাভাবিকভাবে শেষ করলেন।

তাওয়াফ শেষ করে নবীজী সাফা মারওয়ার সাঈ সম্পন্ন করেন। এ সময় সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে আনেননি, তাদেরকে আদেশ করেন হজ পর্যন্ত সময়ের জন্যে হালাল হয়ে যেতে।

তাওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করে নবীজী হাজুন নামক স্থানে অবস্থান করেন।

(যিলহজ মাসের আট তারিখ) তারবিয়ার দিন নবীজী মিনায় যান। সেখানে যুহর, আসর, মাগরিব ও ঈশার নামায আদায় করে রাত্রি যাপন করেন। ফজর নামায আদায় করে সুর্যোদয়ের পর আরাফার দিকে রওয়ানা হলেন। নামিরা নামক স্থানে তাঁর তাঁবু খাটানো হলো। সূর্য হেলে যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। এরপর জনতার উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করে যুহর ও আসরের নামায আদায় করেন। আযান দেয়া হয় একবার। ইকামত দু’বার।

এরপর তাঁবুতে ফিরে এলেন। সূর্য ডোবা পর্যন্ত দু‘আ ও তাসবীহ-তাহলীলে লিপ্ত থাকলেন।

সূর্যাস্তের পর মুযদালিফায় চলে গেলেন। সেখানে রাত্রি যাপন করে ফজরের নামায আদায় করলেন। সকালের আকাশ আলোকিত হওয়া পর্যন্ত মাশআরে হারামে অপেক্ষা করলেন। এরপর সূর্যোদয়ের আগেই মিনায় চলে গেলেন। সেখানে জামারায়ে আকাবাতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন।

আইয়ামে তাশরীকের তিন দিনই নবীজী পায়ে হেঁটে তিনো জামারায় সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন। খাইফের সাথে লাগোয়া জামারা থেকে শুরু করতেন। এরপর যেতেন জামারায়ে উস্তায়। এ দু’টিতে দীর্ঘ দু‘আ করতেন। সবশেষে যেতেন জামারায়ে আকাবায়।

মিনায় আগমনের দিন নবীজী কুরবানী করে মক্কায় আসেন। কা’বা শরীফের তাওয়াফ করেন। জমজম পানির বিতরণ স্থলে এসে জমজম পান করেন। এরপর ফিরে যান মিনায়।

তৃতীয় দিন নবীজী মিনা থেকে রওয়ানা হয়ে মুহাস্সাব নামক স্থানে অবস্থান করেন এবং তানঈম নামক স্থান থেকে হযরত আয়িশা রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে উমরা করান।

এরপর সফরের (প্রস্তুতির) আদেশ দিয়ে নবীজী বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করেন। তাওয়াফ শেষে রওয়ানা হন মদীনার পানে।

নবীজীর উমরার সংখ্যা ছিলো চার। সবগুলোই হয়েছে যিলকদ মাসে।

টীকা:

  • সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৫৩৪।
  • সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১২১৮।
পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *