হাদীসের নামে অসত্য প্রচারণা : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিগূঢ় তত্ত্ব

মুফতী হাফিজুর রহমান

১৩ মে ২০১৮ তারিখে প্রিয়.কম ইসলাম বিভাগেএকটি লেখা ছেপেছে। লেখার শিরোনাম, ‘জেনে নিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিভিন্ন সময়ের কারণ’। লেখক, ভোরের জোনাকি। লেখাটি কিছুটা দীর্ঘ। তাইআলোচনার সুবিধার্থে পুরো লেখাটি তুলেদিচ্ছি।

‘ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির অন্যতম একটি নামাজ। আল্লাহ তায়ালা মেরাজের রাতে আমাদের নবীকে (সঃ) নিজের কাছে ডেকে নিয়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের আদেশ দেন। কিন্তু এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। কেন এই ভিন্ন সময়?
একদা আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) সাহাবীদের সঙ্গে বসে ছিলেন। হঠাৎ সেখানে একজন ইহুদি আসলেন। তিনি নবী করিম (সঃ) কে বললেন, ‘আপনাকে আমি একটি প্রশ্ন করব। যদি আপনি সঠিক জবাব দিতে পারেন তাহলে আমি মেনে নেব যে আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর নবী ছাড়া কোনো সাধারণ মানুষের জানা সম্ভব না।’

আমাদের নবী তাকে প্রশ্ন করতে বললেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হয়েছে এর নিগূঢ় তত্ত্ব কী?’

আমাদের নবী (সঃ) সেই প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘সূর্য যখন পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়ে অর্থাৎ, যোহরের সময় হয়। তখন প্রথম আসমানে একদল ফেরেস্তা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে লিপ্ত হয়। ঐ সময়ে সব আসমানের দরজা উন্মুক্ত হয় এবং মানুষ ও ফেরেশতাগণের সকল ইবাদত আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। এই সময়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে।

আসরের ওয়াক্তে শয়তান ধোকা দিয়ে হযরত আদমকে (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ ফল গন্ধম খাইয়েছিল; ঐ সময়ে নামাজের আদেশ হবার উদ্দেশ্য এই যে, উক্ত সময়ে নামাজ পড়লে শয়তান তাকে কোনোরূপ ধোকা দিতে সক্ষম হবে না। মাগরিবের ওয়াক্তে হযরত আদম (আঃ) –এর তওবা কবুল হয়েছিল। উক্ত সময়ে নামাজ পড়ে বান্দা আল্লাহ তায়ালার নিকট যে প্রার্থনা করবে, তাই কবুল হবে।

এশার ওয়াক্ত এমনি সময় যে, আমার পূর্ববর্তী যাবতীয় নবীগণের ও তাদের উম্মতগণের উপর এশার নামাজ ফরজ ছিল। এ নামাজ পড়লে যাবতীয় পয়গম্বরগণের উপর আদিষ্ট নামাজের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর ফজরের ওয়াক্তের মর্ম এই যে, যখন সূর্য উদিত হয়, তখন তা শয়তানের মাথার উপর উদিত হয়। সেই সময় কাফের –মুশরিকগণ তাদের দেব–দেবিকে উদ্দেশ্য করে শয়তানকে সেজদা করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আমার উম্মতগণকে এর পূর্বেই নামাজ পড়তে আদেশ করেছেন, যাতে আমরা কাফের –মুশরিকগণের অন্তর্ভুক্ত না হই।’

এটি শুনে সেই ইহুদি বললেন যে, ‘বুঝলাম ! আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী।’ এই বলে তিনি সদলবলে মুসলমান হয়ে গেলেন ।

আমরা নামাজের সময় হলে কেউ অলসতা করে, কেউ কাজের অজুহাতে নামাজ পড়তে গাফেলতি করি। এর ফলে অনেক সময় ওয়াক্ত চলে যায়। আমরা যদি ওয়াক্তমতো নামাজ না পড়ি তাহলে কখনোই এর পূর্ণ ফযিলত পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্যই নামাজের ৭টি আহকাম –এর একটি ‘ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া’। এ ছাড়াও নামাজ সঠিক সময়ে না পড়লে বা কাযা করলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত সঠিক সময়ে জামাতের সঙ্গে সহিহভাবে নামাজ আদায় করা।’

https://www.priyo.com/articles/know-five-reasons-for-the-different-time-of-prayer-201805131056/

হাদীসের নামে বিবৃত বর্ণনাটির আরবী পাঠ নিম্নরূপ :

بينما كان الرسول صلى الله عليه وسلم جالسا بين الأنصار والمهاجرين ، أتى إليه جماعة من اليهود ، فقالوا له : يا محمد ! إنا نسألك عن كلمات أعطاهن الله تعالى لموسى بن عمران ، لا يعطيها إلا لنبي مرسل أو لملك مقرب . فقال النبي صلى الله عليه وسلم : سلوا . فقالوا : يا محمد ! أخبرنا عن هذه الصلوات الخمس التي افترضها الله على أمتك ؟ فقال النبي عليه أفضل الصلاة والسلام : صلاة الفجر : فإن الشمس إذا طلعت تطلع بين قرني الشيطان ، ويسجد لها كل كافر من دون الله ، فما من مؤمن يصلي صلاة الفجر أربعين يوما في جماعة إلا أعطاه الله براءتين ، براءة من النار وبراءة النفاق . قالوا : صدقت يا محمد ! أما صلاة الظهر : فإنها الساعة التي تسعر فيها جهنم ، فما من مؤمن يصلي هذه الصلاة إلا حرم الله تعالى عليه لفحات جهنم يوم القيامة . أما صلاة العصر : فإنها الساعة التي أكل فيها آدم عليه السلام من الشجرة ، فما مؤمن يصلي هذه الصلاة إلا خرج من ذنوبه كيوم ولدته أمه . وأما صلاة المغرب : فإنها الساعة التي تاب فيها الله تعالى على آدم عليه السلام ، فما من مؤمن يصلي هذه الصلاة محتسبا ثم يسأل الله تعالى شيئا إلا أعطاه إياه . وأما صلاة العشاء : فإن للقبر ظلمة ، ويوم القيامة ظلمة ، فما من مؤمن مشى في ظلمة الليل إلى صلاة العتمة إلا حرم الله عليه وقود النار ، ويعطى نورا يجوز به على الصراط ، فإنها الصلاة التي صلاها المرسلون قبلي ، ثم تلا قوله تعالى : ( حافظوا على الصلوات والصلاة الوسطى ) وجزاكم الله كل خير عنا

হাদীসের নামে প্রচলিত এ বর্ণনাটি একটি জাল বর্ণনা। এ বর্ণনাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকেসম্পৃক্ত করা আদৌ বিধিত নয়। সূত্রভিত্তিক কোনো হাদীস গ্রন্থেই এ বর্ণনাটিরসন্ধান পাওয়া যায় না। যারা এটাকে বর্ণনা করেছেন তারা সূত্রবিহীন বর্ণনাকরেছেন। হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ মনীষীগণ এটাকে বানোয়াট বর্ণনা বলে অভিহিতকরেছেন।
বর্ণনাটি তাম্বীহুল গাফিলীননামক গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে। হাদীস শাস্ত্রের উলামায়ে কেরাম গ্রন্থটিকেঅপাংক্তেয় হাদীসের সূতিকাগার বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.তাঁর তালখীসুল ইগাসাহ গ্রন্থে গ্রন্থটির রচয়িতাকে ওই সকল গ্রন্থকারদেরশ্রেণীভুক্ত করেছেন যারা সহীহ যয়ীফের পার্থক্য বুঝে না, সূত্রপরম্পরায়বর্ণিত হাদীস সম্বন্ধে যাদের কোনো ধারনা নেই। ইমাম যাহাবী রহ. সিয়ারু আ’লামিন নুবালাগ্রন্থে উক্ত গ্রন্থকার সম্বন্ধে বলেন,তার হাতে অনেক জাল হাদীসেরপ্রচারণা হয়েছে। উপরন্তু বর্ণনাটিতে সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক অনেকবক্তব্য স্থান পেয়েছে। সারকথা, বর্ণনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ জাতীয় বর্ণনা লেখা, বলা এবং প্রচারকরা কোনো কিছুই বৈধ নয়।

https://islamqa.info/ar/99693

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *