ইসলামী উত্তরাধিকার আইন : একজন গবেষকের পর্যালোচনা ও বাস্তবতা

মুফতী হাফিজুর রহমান


নতুন দিগন্ত। শিল্প সাহিত্য বিষয়ক একটি বাম ঘরানার পত্রিকা। তিন মাস অন্তর প্রকাশিত হয়। কাগজটির ২০১২ এর অক্টোবর- ডিসেম্বর সংখ্যায় নবীন গবেষক জনাব জিসান হাসান সাহেব একটি নিবন্ধ লিখেন। নিবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘কোরআনের উত্তরাধিকার আইনের পর্যালোচনা’।

একটি চিরাচরিত নিয়ম হলো, যিনি যে শাস্ত্রের নন তিনি ঐ শাস্ত্র সম্বন্ধে কথা বলতে গেলে ভুল করবেন। এজন্য নিজের সীমানা ডিঙ্গিয়ে অন্যের সীমানা নিয়ে মাথা ঘামানোকে অভিজ্ঞ মহল যৌক্তিক মনে করেন না। তাছাড়া এসব ক্ষেত্রে মতাদর্শিক একটি বিষয় মাত্রাহীনভাবে কাজ করে। কেউ যদি বিশেষ কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী হন তবে তিনি যে শাস্ত্রেই পা ফেলেন সেখানেই তার মতবাদটাকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন। এতে ভুল ত্রুটি হতে পারে কি না, এর পরিণতিতে তার জ্ঞান গভীরতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলে কি না- এজাতীয় ব্যাপারগুলো তিনি সামনে রাখতে ভুলে যান।

জনাব জিসান হাসান সাহেবের ক্ষেত্রে বোধ হয় এমন একটি ব্যাপারই ঘটেছে। তার নিবন্ধটি পড়ে উপলব্ধি হল তিনি ইসলামী আইন বিষয়ক কোন পণ্ডিতজন নন। সে হিসেবে ইসলামী আইন বিষয়ে পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে তাকে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়ার বড্ড প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জিসান সাহেব বোধ হয় এ পরিচয়টুকু দিতে সক্ষম হননি।

এ পর্যায়ে আমরা জিসান সাহেব কৃত পর্যালোচনার উপর আরেকটু পর্যালোচনা করতে চেষ্টা করবো।

লেখক মহোদয় তার নিবন্ধটি শুরু করেছেন এভাবে,

ইসলাম বিষয়ে প্রচলিত ধারণাগুলোর মাঝে একটি হলো এটা প্রথাসিদ্ধ একটা ইসলামী আইন ব্যবস্থা (শরিয়া) বিধিবদ্ধ করেছে যেখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বেলায় পুরুষের অর্ধেক ভাগ দিয়ে নারীদের প্রতি বৈষম্য করেছে। আদতে কিন্তু এসব প্রথাগত আইন বিষয়ে কুরআনের অবস্থা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে; কোরআনের আলোচ্য আয়তগুলো পর্যালোচনা করার মধ্য দিয়ে প্রথাগত ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধস্তন অবস্থান ন্যায্য কি না সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

লেখক মহোদয় এ কথা বলে বুঝাতে চান (১) বর্তমান প্রচলিত উত্তরাধিকার আইনটি নিছক একটি ধারণা মাত্র। এটা নিশ্চিত কুরআনী কোন আইন নয়। (২) এ আইনের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। (৩) এটা মূলত একটা প্রথাগত আইন। এ আইনের পেছনে মৌলিক কোন ভিত্তি নেই। মানুষ নিজেদের মতো করে আইনটি তৈরি করে নিয়েছে। প্রথাগত শব্দটি এ কথাগুলোর স্পষ্ট প্রতিনিধিত্ব করে।

জনাব জিসান সাহেব যেহেতু ‘এ আইন বিষয়ে কুরআনের অবস্থান নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে’ এ বিবেচনা বোধ থেকে কথাগুলো বলেছেন; এজন্য তার বিশ্বাস নিয়ে আমরা বিরূপ মন্তব্য করতে পারি না। তবে তিনি যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেছেন তা কতটা মজবুতসই আমরা বিশ্লেষণ করে দেখতে চেষ্টা করবো।

লেখক মহোদয় এরপর বর্তমান প্রচলিত ইসলামী আইন সমর্থক দুটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। নিবন্ধকার বলেন,

উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা যথেষ্ট পরিষ্কার বলে মনে হয় এবং উত্তরাধিকার আইনের ভিত্তি হিসেবে এদেরকেই প্রথাগত ইসলামী আইনের মাজহাবগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ব্যবস্থাটিও রয়েছে যে কুরআন সকল মুসলমানকে তার ইচ্ছাপত্র বা অসিয়তের মাধ্যমে সম্পদের উত্তরাধিকার সুনির্দিষ্টকরণ করে দেয়ার জন্য হুকুম করেছে।

এরপর ইচ্ছাপত্র সংক্রান্ত আয়াতটি (‘সূরা বাকারা’- ১৮০) উল্লেখ করেছেন। তবে অর্থ করার ক্ষেত্রে হালকা একটু বিপত্তি ঘটে গেছে। বিপত্তিটা তেমন বড় আকারের নয়। সামান্য আগ পিছনের বিপত্তি হয়েছে। সম্ভবত লেখকের অনিচ্ছা কিংবা অজান্তে এমনটি ঘটে গেছে। তবে যেহেতু এটা কুরআনের অনুবাদ সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরী ছিল। বিপত্তিটাকে হলকা বলেছি লেখক মহোদয়ের সম্মানের খাতিরে। নতুবা কুরআন বিষয়ক কোনো ভুলকে হালকা বলার অবকাশ আছে কি না সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পণ্ডিতজনেরাই বলবেন।

এরপর গবেষক মহোদয় অসিয়তের গুরুত্ব বোঝাতে এর সাক্ষী সংযোগ আয়াতটি (‘সূরা মায়িদা’- ১০৬) উল্লেখ করেছেন। এরপর জনাব জিসান সাহেব বলেন

তো এবার প্রশ্ন দাঁড়ায় উত্তরাধিকার প্রশ্নে কুরআনের অবস্থান তাহলে কি? উত্তরাধিকার কি সুনির্দিষ্টকৃত সূত্র মোতাবেক হবে যেখানে নারী পাবে অর্ধেক, নাকি ব্যক্তির নির্ধারিত একটা ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী, যেখানে সুনির্দিষ্ট সূত্র কার্যকর না? এই দু বিকল্পের মাঝে একটা অবশ্যম্ভাবী দ্বন্দ্ব আছে। এ বৈপরীত্যের মীমাংসা করতে হলে উত্তরাধিকার বিষয়ক কুরআনের আয়াতগুলো কোন প্রেক্ষাপটে নাজেল হয়েছিল সেদিকে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন। ইচ্ছাপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তির ব্যক্তিগত বন্দোবস্তের সমর্থন করা আয়াতগুলো সম্ভবত মদীনা পর্বের শুরুর দিকে আবির্ভূত হয়েছিল। যখন নবীকে মদীনার আদি মুসলিম সম্প্রদায় কিভাবে পরিচালিত হবে তার মৌল নিয়মসমূহ প্রবর্তন করতে বলা হয়েছিল। যা হোক, আরো বেশি বিস্তারিত উত্তরাধিকার আইনের নীতি উহুদ যুদ্ধের পর নাজেল হল, এই যুদ্ধে বহুসংখ্যক মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন; এদের অনেকেই ইচ্ছাপত্র রেখে যেতে পারেননি। এমনটিই বাস্তবতা হবার কথা। এর ফলে অনেক দাবিদারের উপস্থিতিতে তাদের সম্পদ নিয়ে কি করা হবে, সে বিষয়ে একটা গোলযোগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হল।

জনাব জিসান সাহেব! বর্তমান প্রচলিত ইসলামী উত্তরাধিকার বিষয়ক আয়াতটি অবতীর্ণের যে প্রেক্ষাপট আপনি উল্লেখ করেছেন সেটাই কি মূলত আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার মূল উপলক্ষ? হাদীসের আলোকে আমরা ব্যাপারটি যাচাই করে দেখি। জাবের রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

একদা সা‘দ বিন রবী রাযি. এর পতিœ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসূল! এ হলো সা‘দ বিন রবীর দুটি কন্যা। ওদের বাবা আপনার সাথে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। আর ওদের চাচা ওদের বাবার রেখে যাওয়া অর্থ সম্পত্তি সব নিয়ে নিয়েছে। ওদের কোনো সম্পত্তি দেয়নি। আল্লাহর রাসূল! এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন? আল্লাহর শপথ করে বলছি ওদের সম্পদ না হলে ওদের কখনো বিবাহ দেয়া যাবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে ফয়সালা করে দিবেন। বর্ণনারী বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই ‘সুরা নিসা’ (আয়াত- ১১) এর উত্তরাধিকার বিষয়ক আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আয়াতটি অবতীর্ণ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন মহিলা এবং তার বিবাদিকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে আসো। দুজন উপস্থিত হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়ে দুটির চাচাকে বললেন, তাদের দুইজনকে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দিয়ে দাও। আর ওদের মাকে এক অষ্টমাংশ। এরপর যা অবশিষ্ট থাকবে তা তুমি পাবে। (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৮৯১)

হাদীসে আয়াতটির প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে। এখানে তো অসিয়ত করে যেতে পারা না পারা সংক্রান্ত কোন আলোচনা নেই। তবে কি এ ব্যাখ্যাটা আপনি নিজেই করলেন? এমন ব্যাখ্যা এ যাবৎ কোনো ইসলামী পণ্ডিত করেছেন বলে তো আমাদের জানা নেই। আচ্ছা না হয় তর্কের খাতিরে আপনার ব্যাখ্যাটি ক্ষণিকের জন্য মেনে নিলাম। তবে লক্ষণীয় হল, আপনার এ ব্যাখ্যাটি মেনে নিলে আমাদের মানতে হবে বাহ্যত পারস্পারিক বিরোধপূর্ণ আয়াত দুটির মাঝে রহিত হওয়া না হওয়ার মত কোন কিছু ঘটেনি। তবে আসুন আমরা আরেকবার হাদীসের পাতাগুলোতে চোখ বুলাই। আমর বিন খারেজা রাযি. বলেন,

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তৃতা করছিলেন। বক্তৃতার মাঝে তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক স্বত্তাধিকারী ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য স্বত্তাধিকার বুঝিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং এখন থেকে আর কোনো উত্তরাধিকারী ব্যক্তির নামে কোনো ধরনের অসিয়ত কিংবা ইচ্ছাপত্র লেখা চলবে না। (সুনানে নাসায়ী; হা.নং ৩৬৪৩)

অন্য এক হাদীসে ইবনে আব্বাস রাযি. অসিয়ত বিষয়ক আয়াতটি উল্লেখ করার পর বলেন,

পূর্বে অসিয়তের বিধান এভাবেই ছিল। শেষে মিরাস সংক্রান্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার ফলে অসিয়ত বিষয়ক আয়াতটি রহিত হয়ে যায়। (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২৮৬৯)

এরূপ মাতা-পিতার জন্য অসিয়তের বিধান রহিত হয়ে যাওয়া এবং উত্তরাধিকারী ব্যক্তিদের জন্য অসিয়ত বৈধ না হওয়া সংক্রান্ত ভুরি ভুরি বর্ণনা হাদীসের কিতাবগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

জনাব জিসান সাহেব! কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা আপনি আমি করলে তো হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের যে ব্যাখ্যা করেছেন সেটাই প্রকৃত ব্যাখ্যা। এর বিপরীত ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। এখনো কি বলবেন এখানে রহিত টহিত কিছু হয়নি? জিসান সাহেব! সামনে আগালে কিন্তু আপনার ঈমানের উপর আঘাত এসে যাবে।

লেখক মহোদয় সামনে গিয়ে বলেন,

শরিয়াহ আইনের প্রথাগত ধারা সাধারণভাবে ধরে নেয় যে কুরআনের আগেকার ইচ্ছাপত্র বানানোর আদেশ পরবর্তী কালের এ উত্তরাধিকার সূত্রের দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। (এ বিষয়টিকে ফিকহ শাস্ত্রবিদরা ‘নাকশ’ বা রহিতকরণ হিসেবে অভিহিত করেন।)

হ্যা, অবশ্যই। উত্তরাধিকারীদের জন্য কুরআনের আগেকার ইচ্ছাপত্র বানানোর আদেশ পরবর্তী কালের এই উত্তরাধিকার সূত্রের দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। এটাকে ফিকহ শাস্ত্রবিদগণ রহিত করণ হিসেবে অভিহিত করেন বলেই রহিত হয়ে যায়নি। আয়াতকে রহিত করার অধিকার কারো নেই। কোনো ফিকহ শাস্ত্রবিদের অধিকার নেই কোনো আয়াতকে রহিত করার। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কোনো আয়াতকে রহিত করতে পারেন না। এ রহিত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

আমি কোনো আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃতি করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জানো না? আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান। (‘সূরা বাকারা’- ১০৭)

অন্যদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম। অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না। এটা খোদাভীরুদের জন্য অবশ্যই একটা উপদেশ। (‘সূরা হাক্কাহ’- ৪৪-৪৮)

সুতরাং কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহ বিনে আর কারো পরিবর্তনের অধিকার নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু আল্লাহ তা‘আলার ভাষ্যকর হিসেবে রহিতকরণের বিষয়টি উম্মতকে জানিয়ে দেন।

জনাব জিসান সাহেব একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘নাকশ’। কোনো কালে কোনো অভিধানকর্তা নাকশের অর্থ রহিতকরণ করেছেন কি না- আমাদের জানা নেই। অন্যের বিষয় নিয়ে কলম ধরলে চরম লজ্জাজনক হোচট খেতে হয় এবং শত মানুষের হাসির খোরাকে পরিণত হতে হয় তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ এ শব্দটির ব্যবহার।

জনাব জিসান সাহেব আরো বলেন,

কিন্তু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটি হল, কেন আমরা উত্তরাধিকার আইনের একগুচ্ছ বিধি আকড়ে ধরে থাকব (কাকতালীয়ভাবে যেগুলো পুরুষের অনুকূলে) যেখানে এগুলো নাজেল হয়েছিল বড় আকারের একটি বিপর্যয়ের (ওহুদে অনেক মুসলমানের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু) ফলশ্রুতিতে জরুরী ব্যবস্থা হিসেবে?

এ প্রশ্নের উত্তর হল, ইসলাম কোনো বহু আইনী ব্যবস্থার নাম নয়। এখানে সর্ব ক্ষেত্রে আইন একটিই হয়। একাধিক নয়। সুতরাং ইসলামী উত্তরাধিকার গুচ্ছ একটিই। আপনি যে এর দু গুচ্ছ জাতীয় ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চান – এটা আপনার বুঝার ভুল। ভুলটা হয়তো আপন মতাদর্শের কাছে পরাস্ত হয়ে ইচ্ছায় করছেন নতুবা অনিচ্ছায় করছেন। এটা যেহেতু মানব রচিত কোনো আইন নয় তাই এ আইনে কোন দ্বিত্ব ঘটবে না। যদি নিজেকে মুসলমান বলতে চান তবে এ অলঙ্ঘনীয় বিধান আপনাকে মানতে হবে। ঈমানের গণ্ডি হতে বের হয়ে যাওয়া ছাড়া একে অস্বীকার করার কোন জো নেই।

নিবন্ধের শেষে জনাব জিসান সাহেব বলেন,

… কুরআনের আয়াতগুলোর এমন একটা ব্যাখ্যা আজকের দিনে গ্রহণ করা হলে নারী পুরুষের বৈষম্যÑভিত্তিক উত্তরাধিকার আইনের আর কোনো সর্বজনীন প্রয়োগ ঘটবে না, এটা ইতিমধ্যে কিছু মুসলিম দেশে অনুশীলিত হচ্ছে।

জনাব জিসান সাহেব! কোনো মুসলিম দেশ ইসলামী বিধানের মানদ- কিংবা সূতিকাগার নয়। কোনো মুসলিম দেশের জারি করা আইন ইসলামী আইন হয়ে যায় না।

সারকথা, রহিতকরণ বিষয়টি কোনো নবাবিষ্কৃত নয়। এটা ইসলামের শুরু যুগকার বিষয়। এর মেয়াদকাল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশা পর্যন্তই সীমিত ছিল। এক সময় নামাযে কথা বলা বৈধ ছিল, পরে তা রহিত হয়ে যায়। এক সময় মদ পান বৈধ ছিল, পরে তা রহিত হয়ে যায়। এভাবে ধীরে ধীরে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার রূপ লাভ করে। সে দিক বিবেচনয় একসময় মাতা-পিতাসহ উত্তরাধিকারীদের জন্য সম্পদের অসিয়ত করে যাওয়া বৈধ ছিল। কিন্তু পরে তা রহিত হয়ে যায়। এখন আর সে রহিত আইন ব্যবহার কিংবা প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। যারা এর বিপরীত মত পোষণ করবেন তাদের বিনীত অনুরোধের স্বরে বলব এ বিষয়ে চূড়ান্ত জ্ঞান অর্জন করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। পরিশেষে জনাব জিসান হাসান সাহেবকে বলবো আপনার মন যদি পরিস্কার থাকে কিংবা সদিচ্ছা থাকে তবে এতটুকুতেই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি বলেন আমি হাদীস মানি না তবে তো আর আপনার সাথে বিতর্ক হবে না। যদি হাদীস না মানার পক্ষে যুক্তি প্রমাণ নিয়ে উপস্থিত হন তবে অন্য অবসরে আমরা নতুন করে আপনার সাথে বিতর্ক করার সুযোগ পাবো। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সব ক্ষেত্রে আন্তরিক হওয়ার তাওফীক দান করুন।

তথ্যসূত্র : ১. কুরআনুল কারীম, ২. সুনানে নাসায়ী, ৩. সুনানে আবু দাউদ, ৪. নতুন দিগন্ত

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *