শরীয়তের বিধান

প্রশ্ন : শরীয়তের বিধি বিধান কত প্রকার ও কি কি সংজ্ঞা ও বিধানসহ জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর : শরীয়তের বিধানসমূহ মোট আট শ্রেণীতে বিভক্ত।

১. ফরয

২. ওয়াজিব

৩. সুন্নত

৪. মুস্তাহাব

৫. হারাম

৬. মকরুহে তাহরিমী

৭. মকরুহে তানযিহী

৮. মুবাহ বা জায়েয

ফরযের সংজ্ঞা ও বিধান

ফরয আল্লাহ প্রদত্ত এমন বিধান যা সুনিশ্চিতরূপে অকাট্ট দলীলের আলোকে প্রমাণিত, যাতে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই। ফরয দুই প্রকার। যথা : ফরযে আইন ও ফরযে কিফায়া।

ফরযে আইন : যে বিধান পালন করা প্রতিটি সাবালকনর নারীর উপর সমভাবে অত্যাবশ্যক।

ফরযে কিফায়া : যে বিধান কতক লোক মিলে পালনকরলে তার দায় থেকে সকলেই মুক্তি লাভ করে। পক্ষান্তরে কেউ না পালন করলে সকলেই ফরযপরিত্যাগ করার দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়। কেউ ফরয বিধান পালন না করলে সে ফাসেক বলেবিবেচিত হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। আর ফরয অস্বীকার করলে কাফের হয়েযায়।

ওয়াজিবের সংজ্ঞা ও বিধান

যে বিধান সুনিশ্চিত দলীলের আলোকে প্রমাণিত নয়; বরং প্রবল ধারণাপ্রসূত দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত তাকে ওয়াজিব বলা হয়। কার্যত ওয়াজিব ফরয বিধানের মতই অবশ্য কর্তব্য। তবে এর অস্বীকারকারী কাফের সাব্যস্ত হবে না।

সুন্নতের সংজ্ঞা ও বিধান

যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কেরাম করেছেন, করতে বলেছেন কিংবা সমর্থন করেছেন তাকে সুন্নত বলা হয়। সুন্নত দুই প্রকার। যথা, ১. সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা সুন্নতে হুদা (অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত) ২. সুন্নতে গয়রে মুয়াক্কাদ বা সুন্নতে যায়েদা (সম্পূরক সুন্নত)

সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এর সংজ্ঞা ও বিধান

যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত করেছেন এবং বিনা কারণে পরিত্যাগ করেন নি তাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়। সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আমলগত দিক থেকে ওয়াজিবের মত। তবে ওয়াজিবের তুলনায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরিত্যাগের ক্ষেত্রে গুনাহের পরিমাণটা কম হবে। এবং কোনো কারণে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কাযা করতে হয় না।

সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ এর সংজ্ঞা ও বিধান

যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত করেন নি; বিনা কারণে কখনো কখনো পরিত্যাগও করেছেন তাকে সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়। সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদা পালন করলে পূণ্য হবে। তবে পরিত্যগ করলে কোনো গুনাহ নেই।

মুস্তাহাবের সংজ্ঞা ও বিধান

যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম কালেভদ্রে কখনো করেছেন তাকে মুস্তাহাব বলা হয়। এটা আদায় করলে সওয়াব লাভ হবে। না করলে কোনো অসুবিধা নেই। মুস্তাহাবকে মান্দুবও বলা হয়।

হারামের সংজ্ঞা ও বিধান

হারাম আল্লাহ প্রদত্ত এমন নিষিদ্ধ বিধান যা সুনিশ্চিতরূপে অকাট্ট দলীলের আলোকে প্রমাণিত, যাতে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই। কেউ যদি হারমকে হালাল মনে করে তবে সে কাফের হয়ে যাবে। আর বিনা কারণে কেউ হারাম কাজে রত হলে সে ফাসেক বলে বিবেচিত হবে এবং পরকালে শাস্তির উপযুক্ত হবে।

মাকরূহে তাহরিমীর সংজ্ঞা ও বিধান

যে নিষিদ্ধ বিধান সুনিশ্চিত দলীলের আলোকে প্রমাণিত নয়; বরং প্রবল ধারণাপ্রসূত দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত তাকে মাকরূহে তাহরিমী বলা হয়। কার্যত মকরুহে তাহরিমী হারাম বিধানের মতই অবশ্য পরিত্যাজ্য। তবে এর অস্বীকারকারী কাফের সাব্যস্ত হবে না। যদি কেউ বিনা কারণে মকরুহে তাহরিমী কাজে রত হয় তবে সে ফাসেক হিসেবে সাব্যস্ত হবে এবং পরকালে শাস্তির উপযুক্ত হবে।

মাকরূহে তানযিহীর সংজ্ঞা ও বিধান

আল্লাহ তা‘লা যে কাজ থেকে অনাবশ্যকভাবে নিবৃত্ত হওয়ার কামনা করেন তাকে মাকরূহে তানযিহী বলা হয়। মাকরূহে তানযিহী থেকে নিবৃত্ত হলে পূণ্য হবে। নিবৃত্ত না হলে গুনাহ হবে না।

মুবাহ এর সংজ্ঞা ও বিধান শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে অনুমোদিত কার্যক্রমকে মুবাহ বলা হয়। স্বাভাবিকভাবে এতে কোনো পূণ্য ও নেই গুনাহ ও নেই। তবে নিয়্যত ও উদ্দেশ্যের ব্যবধানে পূণ্য ও গুনাহ হয়ে থাকে।

– মু’জামুল মুস্তালাহাতিল ফিকহিয়্যা ৩/২০২,৩৪৩, কামুসুলফিকহ ৩/২৪৭,২৮৯, ৪/৪৫২, ৫/৮৯, ২৫৬, আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ১০/২০৫,২০৬, ৩২/৯৫, ২৫/২৭৫, মু’জামুল ফকীহ ৩১৯।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *