কুরআন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওৎপ্রোতভাবে জড়িত আবশ্যকীয় দুটি পর্ব। একটি বাদে আরেকটির চিন্তা অকল্পনীয়। তবুও পবিত্র কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আলাদা কিছু চিত্রায়ণ এসেছে। আমরা পবিত্র কুরআনের ভাষায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ক কিছু চিত্র দেখার চেষ্টা করবো। আমরা এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে শিরোনামকেন্দ্রিক কুরআনের আয়াত-প্রবচনগুলোই তুলে দিবো। আগ্রহী কোনো পাঠক আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা জানতে অনুপ্রাণিত হলে তাকে আমরা হাদীস ও তাফসীর গ্রন্থের দ্বারস্থ হতে বিনীত অনুরোধ করবো।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত পর্ব
রিসালাত মানে যা প্রেরিত হয়, চিঠিপত্র, পুস্তিকা। শরয়ী পরিভাষায় যেসব বিষয় প্রচারের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন তাই রিসালাত। আর রাসূল মানে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত ও বার্তাবাহক। এ বিষয়টি নিয়ে পবিত্র কুরআনে একাধিক আয়াত-প্রবচন এসেছে।
১। বলো, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই; তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যুদান করেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আনয়ন করো আল্লাহর প্রতি, তাঁর বার্তাবাহক দৃশ্যমান অক্ষরজ্ঞানশুন্য নবীর প্রতি যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনয়ন করে। এবং তোমরা তাঁকে অনুসরণ করো, যাতে তোমরা সঠিক পথপ্রাপ্ত হও। -সূরা আ’রাফ; আয়াত ১৫৮।
২। মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পরম সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সেজদায় অবনত দেখবে। -সূরা ফাতহ; আয়াত ২৯।
৩। মুহাম্মাদ একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছে। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১৪৪।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণকীর্তন
১। তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়। এবং সে মনগড়া কোনো কথাও বলে না। এ কুরআন তো ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে। তাঁকে শিক্ষা দান করে অত্যন্ত শক্তিধর সহজাত শক্তি ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন সত্তা। যা সে দেখেছে সে ব্যাপারে তাঁর অন্তর মিথ্যা বলেনি। সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে বিতর্ক করবে? নিশ্চয়ই সে তাঁকে আরেকবার দেখেছিলো প্রান্তবর্তী বদরী বৃক্ষের নিকট, যার সন্নিকটে অবস্থিত বাসোদ্যান। তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি। দৃষ্টিও লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। সে তো তাঁর প্রতিপালকের মহান নির্দেশনাবলী দেখেছিলো। -সূরা নাজম; আয়াত ২-১৮।
২। তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি উন্মাদ নও। তোমার জন্য অবশ্যই রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। শীঘ্রই তুমি দেখবে এবং তারাও দেখবে তোমাদের মধ্যে কে বেকারগ্রস্থ। -সূরা ক্বলাম; আয়াত ২-৬।
৩। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের জন্য সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। -সূরা তাওবা; আয়াত ১২৮।
৪। আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি। -সুরা আম্বিয়া; আয়াত ১০৭।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষাদান ও শুদ্ধিকরণ কর্মসূচি
১। যেমন আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, যে আমার বাণীসমূহ তোমাদের নিকট পাঠ করে, তোমাদের পরিশুদ্ধ করে এবং কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেয় এবং সাথে তোমরা যা জানতে না তাও শিক্ষা দেয়। -সূরা বাকারা; আয়াত ১৫১।
২। আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাঁদের মধ্য হতে তাঁদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর বাণীসমূহ তাদের নিকট পাঠ করে, তাদের পরিশোধন করে এবং তাদেরকে কুরআন সুন্নাহ শিক্ষা দেয়। যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিলো। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১৬৪।
৩। তিনিই ওই পবিত্র সত্তা যিনি নিরক্ষরদের মধ্যে তাদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট তাঁর বাণীসমূহ আবৃত্তি করে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত। যদিও তারা ইতিপূর্বে ঘোর বিভ্রান্তিতে নিপতিত ছিলো। -সূরা জুমুআ; আয়াত ২।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্বের সীমারেখা
নিম্নোক্ত আয়াতগুলো পবিত্র মক্কায় অবস্থানকালীন জীবন পরিধির সাথে সম্পৃক্ত। মদীনার জীবনে দীন প্রচারের সাথে যুদ্ধ জিহাদের মতো সময়োপযুগী বিষয়গুলোও যুক্ত হয়েছিলো। তাই এ আয়াতগুলোর বাহ্য বার্তা সমগ্র জীবনের সামগ্রিক অধ্যায়ের সাথে সব সময় সংশ্লিষ্ট হবে না।
১। প্রচার করাই কেবল রাসূলের কর্তব্য। আর তোমরা যা প্রকাশ করো ও গোপন করো আল্লাহ সে সম্বন্ধে জানেন। -সূরা মায়িদাহ; আয়াত ৯৯।
২। বলো, আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো। এরপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সেই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য করো তাহলে সঠিক পথ পেয়ে যাবে। আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া। -সূরা নূর; আয়াত ৫৪।
৩। যদি তোমরা (তাঁকে) মিথ্যাবাদী বলো তবে তো তোমাদের পূর্ববর্তীরাও (নবীদেরকে) মিথ্যবাদী বলেছিলো। আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া। -সূরা আনকাবুত; আয়াত ১৮।
৪। তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমাকে তো আমি রক্ষক করে পাঠাইনি। তোমার কাজ তো কেবল বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া। -সূরা শূরা; আয়াত ৪৮।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মানুষ ছিলেন
১। বলো, আমি তো তোমাদের মতো একজন মানুষই। আমার উপর প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎ কর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাহ পালনে কাউকেও শরিক না করে। -সূরা কাহফ; আয়াত ১১০।
২। বলো, আমি তো তোমাদের মতো একজন মানুষই। আমার উপর প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব তোমরা তাঁরই পথ দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করো এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। দুর্ভোগ অংশীবাদীদের জন্য। -সূরা হা-মীম সাজদাহ; আয়াত ৬।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককর্তা
১। বলো, হে মানুষ! আমি তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী। -সূরা হাজ্জ; আয়াত ৪৯।
২। হে নবী! আমি তো তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লহর নিকট রয়েছে মহাঅনুগ্রহ। -সূরা আহযাব; আয়াত ৪৫-৪৭।
৩। আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। -সূরা সাবা; আয়াত ২৮।
৪। তুমি একজন সতর্ককারী মাত্র। আমি তো তোমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোনো সম্প্রদায় নেই যাদের নিকট সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি। -সূরা ফাতির; আয়াত ২৩-২৪।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বোত্তম আদর্শ
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য তো আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। -সূরা আহযাব; আয়াত ২১।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী
মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নয়; বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। -সূরা আহযাব; আয়াত ৪০।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সরল পথপ্রদর্শক
এভাবে আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি আমার নির্দেশ। তুমি জানতে না কিতাব কি এবং ঈমান কি! পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। তুমি তো কেবল সরল পথ প্রদর্শণ করো। -সূরা শূরা; আয়াত ৫২।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনে ইসলামকে বিজয় করার জন্য সত্য ধর্মসহ প্রেরিত হয়েছিলেন
১। তিনি পবিত্র ঐ সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন অপরাপর সকল দীনের উপর একে বিজয় করার জন্য। -সূরা ফাতহ; আয়াত ২৮।
২। তিনি পবিত্র ঐ সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন অপরাপর সকল দীনের উপর একে বিজয় করার জন্য। যদিও মুশরিকগণ তা অপসন্দ করে। -সূরা ফাতহ; আয়াত ২৮।
ইয়াহুদী খ্রিস্টানরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজেদের পুত্রের মতো চিনে
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে চিনে যেরূপ তারা তাদের পুত্রদেরকে চিনে। এবং তাদের একদল জেনে শুনে সত্য গোপন করে থাকে। -সূরা বাকারা; আয়াত ১৪৬, সূরা আনআম; আয়াত ২০।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনগড়া কথা বলেন না
তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়। এবং সে মনগড়া কোনো কথাও বলে না। এ কুরআন তো ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে। -সূরা নাজম; আয়াত ৩-৪।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে ঈসা আ. এর সুসংবাদ প্রদান
স্মরণ করো, মারইয়াম তনয় ঈসা বলেছিলো, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে আমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমার পর আহমাদ নামে যে রাসূল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা। -সূরা সাফ; আয়াত ৬।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল একজন উপদেশদাতা
অতএব তুমি উপদেশ দাও। তুমি তো একজন উপদেশদাতা। তুমি তাদের কর্ম নিয়ন্ত্রক নও। -সূরা গাশিয়া; আয়াত ২১-২২।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্টদাতার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি
১। তাদের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে সে তো কর্ণপাতকারী। বলো তাঁর কান তোমাদের জন্য যা মঙ্গল তাই শুনে। আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্যে যারা মুমিন সে তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। -সূরা তাওবা; আয়াত ৬১।
২। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া সঙ্গত নয়। -সূরা আহযাব; আয়াত ৫৩।
মুমিনদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে করণীয় আচরণের রূপরেখা
হেম মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোনো বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সর্বস্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে তোমরা উচ্চস্বরে কথা বলো তাঁর সাথে সেরূপ কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। যারা আল্লাহর রাসূলের সম্মুখে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। যারা ঘরের বাহির থেকে তোমাকে ডাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ। -সূরা হুজুরাত; আয়াত ১-৪।
মুমিনদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুকরণ না করা সঙ্গত নয়
মদীনাবাসী ও তার পার্শবর্তী মরুবাসীর জন্য সঙ্গত নয় আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পেছনে থেকে যাওয়া এবং তাঁর জীবন অপেক্ষা তাদের নিজেদের জীবনকে প্রিয় জ্ঞান করা। কারণ আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি এবং ক্ষুধায় ক্লিষ্ট হওয়া এবং কাফেরদের ক্রোধ উদ্রেক করা এবং শত্রুদের কাছ থেকে কিছু প্রাপ্ত হওয়া তাদের সৎকর্মরূপে গণ্য হয়। -সূরা তাওবা; আয়াত ১২০।
নবী গৃহে প্রবেশের ব্যাপারে মুমিনদের দিকনির্দেশনা
হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে ভোজনের জন্য নবীগৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমাদের আহবান করা হলে তোমরা প্রবেশ করো। এবং ভোজন শেষ বের হয়ে এসো। তোমরা কথাবার্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়ো না। কারণ তোমাদের এ আচরণ নবীকে পীড়া দেয়। সে তোমাদের উঠিয়ে দিতে সংকোচবোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংবোচবোধ করেন না। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া সঙ্গত নয়। -সূরা আহযাব; আয়াত ৫৩।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াত পূর্ব পিতৃহীন জীবন
তিনি কি তোমাকে পিতৃহীন অবস্থায় পাননি এরপর তোমাকে আশ্রয় দান করেননি? তিনি তোমাকে পেলেন পথ সম্বন্ধে অনবহিত, অতঃপর তিনি পথের দিশা দিলেন। তিনি তোমাকে পেলেন নিঃস্ব অবস্থায়, অতঃপর অভাবমুক্ত করলেন। -সূরা যুহা; আয়াত ৬-৮।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সাথে দীর্ঘ একটা সময় জীবন যাপন করেছেন
আল্লাহ যদি চাইতেন তবে আমিও তোমাদের এ (কুরআন) আবৃত্তি করতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করতেন না। আমি তো ইতিপূর্বে তোমাদের মাঝে জীবনের দীর্ঘ একটা সময় অবস্থান করেছি। তবুও কি তোমরা বুঝতে পারো না? -সূরা ইউনুস; আয়াত ১৬।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্ষ বিদারণ
আমি কি তোমার কল্যাণে তোমার বক্ষ প্রশস্ত করে দেইনি? আমি অপসারণ করেছি তোমার ভার, যা ছিলো তোমার জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক। আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি। -সূরা ইনশিরাহ; আয়াত ১-৪।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর প্রত্যাদেশ সূচনাকালের বক্তব্য
১। পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে সংযুক্ত রক্তপিণ্ড থেকে। পাঠ করো। আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানতো না। -সূরা আলাক; আয়াত ১-৫।
২। হে বস্ত্রাচ্ছদিত! উঠো, আর সতর্ক করো। এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। পৌত্তালিকতা পরিহার করে চলো। অধিক পাওয়ার আশায় দান করো না। এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করো। -সূরা মুদ্দাসসির; আয়াত ১-৭।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াহ পর্ব
১। অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছো তা প্রকাশ্যে প্রচার করো এবং মুশরিকদের উপেক্ষা করো। আমিই যথেষ্ট বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে। -সূরা হিজর; আয়াত ৯৪-৯৫।
২। তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও। -সূরা শুআরা; আয়াত ২১৪।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলার মৃদু শাসন
১। দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোনো নবীর জন্য সঙ্গত নয়। তোমরা কামনা করো পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ চান পরলোকের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, পরাজ্ঞাময়। আল্লাহর পূর্ববিধান না থাকলে তোমরা যা করেছো তাজ্জন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হতো। -সূরা আনফাল; আয়াত ৬৭-৬৮।
২। সে ভ্রুকুঞ্চিত করলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো। কারণ তার নিকট অন্ধ লোকটি এসেছে। তুমি কেমন করে জানবে- সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করতো। ফলে উপদেশ তার উপকারে আসতো। পক্ষান্তরে যে পরোয়া করে না তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছো। অথচ সে পরিশুদ্ধ না হলে তোমার কোনো দায়িত্ব নেই। অন্যদিকে যে শঙ্কচিত্ত হয়ে তোমার নিকট ছুটে আসলো তুমি তাকে উপেক্ষা করলে। না এটা ঠিক নয়। ইটা তো উপদেশবাণী। -সূরা আবাসা; আয়াত ১-১১।
৩। স্মরণ করো, আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছো, তুমি তাকে বলছিলে, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো। তুমি তোমার অন্তরে যা গোপন করছো আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন। তুমি লোকভয় করছিলে। অথচ আল্লাহকেই ভয় করা তোমার পক্ষে অধিকতর সঙ্গত। -সূরা আহযাব; আয়াত ৩৭।
৪। সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতো। আমি অবশ্যই তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই যে তাকে রক্ষা করতে পারে। -সূরা হাক্কাহ; আয়াত ৪৪-৪৭।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমুখে জিন সম্প্রদায়
১। স্মরণ করো, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিলো। যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হলো, তখন তারা বললো, চুপ করে শ্রবণ করো। যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হলো, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেলো সতর্ককারীরূপে। -সূরা আহকাফ; আয়াত ২৯।
২। বলো, আমার উপর প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সাথে কোনো শরীক স্থির করবো না। -সূরা জিন; আয়াত ১-৩।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঊর্ধ্বাকাশে গমন
১। পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নির্দেশ দেখানোর জন্য। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। -সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ১।
২। নিশ্চয় সে তাকে (জিবরীল আ.) আরেকবার দেখেছিলো প্রান্তবর্তী বদরী বৃক্ষের নিকটে, যার নিকট অবস্থিত বাসোদ্যান। যখন বৃক্ষটি যদ্দ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্দ্বারা ছিলো আচ্ছাদিত। তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি। দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিলো। -সূরা নাজম; আয়াত ১৩-১৮।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হত্যা ষড়যন্ত ও দেশত্যাগ
১। স্মরণ করো, কাফেররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। -সূরা আনফাল; আয়াত ৩০।
২। যদি তোমরা তাকে সাহায্য না করো তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফেররা তাকে বহিষ্কার করেছিলো এবং সে ছিলো দুজনের দ্বিতীয় জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলো; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিলো বিষণ্ন হয়ো না আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখোনি। এবং তিনি কাফেরদের কথাকে হেয় করে দিয়েছেন। আল্লাহর কথাই সর্বোপরি এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, পরাজ্ঞময়। -সূরা তাওবা; আয়াত ৪০।
বদর প্রান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১। বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছিলেন। স্মরণ করো, যখন তুমি মুমিনগণকে বলছিলে, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত তিন সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সহায়তা করবেন? হ্যাঁ, নিশ্চয়, যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং সাবধান হয়ে চলো তবে তারা দ্রুত গতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ সহস্র চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১২৩-১২৫।
২। স্মরণ করো, তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকটপ্রান্তে এবং তারা ছিলো দূরপ্রান্তে। আর উষ্ট্রারোহী দল ছিলো তোমাদের অপেক্ষা নিম্নভূমিতে। যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত করতে চাইতে তবে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটতো। কিন্তু যা ঘটার ছিলো আল্লাহ তা সম্পন্ন করলেন, যাতে যে ধ্বংস হবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট হবার পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর জীবিত থাকে। আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সবর্জ্ঞ। সরণ করো, আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় অল্প। যিদ তোমাকে দেখাতেন, তারা সংখ্যায় অধিক তবে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং যুদ্ধ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। আর তিনি অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে বিশেষভাবে অবহিত। স্মরণ করো, তোমরা যখন পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্পসংখ্যক দেখিয়েছিলেন এবং তোমাদেরকে তাদের দৃষ্টিতে স্বল্পসংখ্যক দেখিয়েছিলেন যা ঘটার ছিলো তা সম্পন্ন করার জন্য। সমস্ত বিষয় আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। -সূরা আনফাল; আয়াত ৪২-৪৪।
ওহুদ প্রান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১। স্মরণ করো, যখন তুমি তোমার পরিজনবর্গের নিকট হতে প্রত্যুষে বের হয়ে যুদ্ধের জন্য মুমিনগণকে ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করছিলে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। স্মরণ করো, যখন তোমাদের মধ্যে দু দলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিলো। অথচ আল্লাহ উভয়ের বন্ধু ছিলেন। আল্লাহর উপরই যেন মুমিনগণ নির্ভর করে। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১২১-১২২।
২। যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলো সেদিন তোমাদের উপর যে বিপর্যয় ঘটেছিলো তা আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে। এবং এটা মুমিনগণকে জানার জন্য এবং মুনাফেকদের জানার জন্য। আর তাদেরকে বলা হয়েছিলো, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো অথবা প্রতিরোধ করো। তারা বলেছিলো যদি যুদ্ধ জানতাম তবে নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করতাম। সেদিন তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীর নিকটতর ছিলো। যা তাদের অন্তরে নেই তাই তারা মুখে বলে। তারা যা গোপন করে আল্লাহ তা বিশেষভাবে জানেন। যারা ঘরে বসে রইলো এবং তাদের ভাইদের সম্বন্ধে বললো, তারা আমাদের কথামত চললে নিহত হতো না তাদেরকে বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো তবে নিজেদেরকে মৃত্যু হতে রক্ষা করো। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১৬৬-১৬৮।
হুনাইন প্রান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহ তোমাদেরকে তো সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনাইন যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিলো তোমাদের সংখ্যাধিক্য। কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিলো। পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট হতে তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করেন যা তোমরা দেখতে পাওনি। এবং তিনি কাফেরদের শাস্তি প্রদান করেন। এটাই কাফেরদের কর্মফল। -সূরা তাওবা; আয়াত ২৫-২৬।
খন্দক যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হে মু’মিনগণ ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলেন ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এক বাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা করো আল্লাহ্ তার সম্বন্ধে সম্যক দ্রষ্টা। যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের উপরের দিক ও নিচের দিক হতে, তোমাদের চক্ষু বিস্ফারিত হইয়াছিল, তোমাদের প্রাণ হইয়া পড়েছিল কণ্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ্ সম্বন্ধে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে। তখন মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল। আর স্মরণ কর, মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ছিল ব্যাধি, তারা বলছিল, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়। আর তাদের একদল বলেছিল, হে ইয়াস্রিববাসী! এখানে তোমাদের কোন স্থান নেই। তোমরা ফিরে চল এবং তাদের মধ্যে একদল নবীর নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত; অথচ সেগুলো অরক্ষিত ছিল না, আসলে পলায়ন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। যদি বিভিন্ন দিক থেকে তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের প্রবেশ ঘটত, অতঃপর তাদেরকে বিদ্রোহের জন্য প্ররোচিত করা হতো, তবে তারা অবশ্য তাই করে বসতো, তারা এতে কালবিলম্ব করত না। এরা তো পূর্বেই আল্লাহ্র সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহ্র সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার সম্বন্ধে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে। বল, তোমাদের কোন লাভ হবে না যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন কর, তবে সে ক্ষেত্রে তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেওয়া হবে। বল, কে তোমাদেরকে আল্লাহ্ হতে রক্ষা করবে, যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন অথবা তিনি যদি তোমাদেরকে অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন, তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? তারা আল্লাহ্ ব্যতীত নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আল্লাহ্ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে কারা বাধাদানকারী এবং কারা তাদের ভ্রাতৃবর্গকে বলে, আমাদের সঙ্গে আস। উহারা অল্পই যুদ্ধে অংশ নেয় -তোমাদের ব্যাপারে কৃপণতাবশত। আর যখন ভীতি আসে তখন তুমি দেখিবে, মৃত্যুভয়ে মূর্চ্ছাতুর ব্যক্তির মত চক্ষু উল্টিয়ে তারা তোমার দিকে তাকায়। কিন্তু যখন ভয় চলে যায় তখন তারা ধনের লালসায় তোমাদেরকে তীক্ষ্ণ ভাষায় বিদ্ধ করে। তারা ঈমান আনেনি, এজন্য আল্লাহ্ তাদের কার্যাবলী নিষ্ফল করেছেন এবং আল্লাহ্র পক্ষে এটা সহজ। তারা মনে করে, সম্মিলিত বাহিনী চলে যায়নি। যদি সম্মিলিত বাহিনী আবার এসে পড়ে, তখন তারা কামনা করবে যে, ভাল হতো যদি তারা যাযাবর মরুবাসীদের সঙ্গে থেকে তোমাদের সংবাদ নিতো! তারা তোমাদের সঙ্গে অবস্থান করলেও তারা যুদ্ধ অল্পই করতো। তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য তো রাসূলুল্লাহ্র মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। মুমিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল, তখন তারা বলে উঠল, এটা তো তাই, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেলো। মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহ্র সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। কারণ আল্লাহ্ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তাঁর ইচ্ছা হলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা তাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ্ কাফিরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন, তারা কোন কল্যাণ লাভ করেনি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট; আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী। কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ হতে অবতরণ করালেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন; এখন তোমরা তাদের কতককে হত্যা করছো এবং কতককে করছো বন্দী। আর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন তাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা এখনও পদার্পণ করনি। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। -সূরা আহযাব; আয়াত ৯-২৭।
জিহাদলব্ধ সম্পদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও প্রাপ্তি ছিলো
আর জেনে রেখো, যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করো তার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর, রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, পিতৃহীনদের, দরিদ্রদের, মুসাফিরদের। -সূরা আনফাল; আয়াত ৪১।
ইফকের ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুশ্চিন্তা মুক্তি
যারা এ অপবাদ রচনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল; একে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এটা তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর; তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তার জন্য আছে মহাশাস্তি। যখন তোমরা এটা শুনলে তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীগণ আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করলো না এবং বলল না, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ! তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সে কারণে তারা আল্লাহ্র নিকট মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে, তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তজ্জন্য মহাশাস্তি অবশ্যই তোমাদেরকে স্পর্শ করিত। স্মরণ করো যখন তোমরা মুখে মুখে এটা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা একে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে, যদিও আল্লাহ্র নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয়। এবং তোমরা যখন এটা শ্রবণ করলে তখন কেন বললে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়; আল্লাহ্ পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ! আল্লাহ্ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি মুমিন হও তবে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ্ জানেন, তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না এবং আল্লাহ্ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। -সূরা নূর; আয়াত ১১-২০।
জিহার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক নারীর বাদানুবাদ
আল্লাহ্ অবশ্যই শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সঙ্গে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহ্র নিকটও ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ্ তোমাদের কথোপকথন শোনেন, আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। -সূরা মুজাদালাহ; আয়াত ১।
হালাল বস্তু বর্জন না করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর নির্দেশনা
হে নবী ! আল্লাহ্ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ কেন? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছো ; আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ্ তোমাদের কসম হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ্ তোমাদের কর্মবিধায়ক, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। স্মরণ কর – নবী তার স্ত্রীদের একজনকে গোপনে একটি কথা বলেছিল। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল এবং আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন নবী এই বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করল এবং কিছু অব্যক্ত রাখল। যখন নবী তা তার সেই স্ত্রীকে জানাল তখন সে বললো, কে আপনাকে এটা অবহিত করল? নবী বলল, আমাকে অবহিত করেছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত। যদি তোমরা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন কর তবে ভাল, কারণ তোমাদের হৃদয় তো ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পোষকতা কর তবে জেনে রেখো, আল্লাহ্ তাঁর বন্ধু এবং জিব্রাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণও, তা ছাড়া অন্যান্য ফিরিশ্তাও তার সাহায্যকারী। -সূরা তাহরীম; আয়াত ১-৪।
ইয়াহুদী খ্রিস্টানগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সন্তুষ্ট হবে না
ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা তোমার প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করো। বল, আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ। জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো তবে আল্লাহ্র বিপক্ষে তোমার কোন অভিভাবক থাকবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। -সূরা বাকার; আয়াত ১২০।
মূর্তিপূঁজকদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ বার্তা
অবশ্য মু’মিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহূদী ও মুশরিকদেরকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখিবে। -সূরা মায়িদা; আয়াত ৮২।
রাসূলের অনুকরণের মাঝেই আল্লাহর ভালোবাসা নিহিত
বল, তোমরা যদি আল্লাহ্ কে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসিবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ৩১।