আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম মসজিদই নির্মাণ করেছেন এবং মসজিদকে মানবজাতির জন্য বরকত, হেদায়েতের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়েছিলো তা মক্কায়, সেটি বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য দিশারী’। সূরা আলে ইমরান: ৯৬।
একবার যে জমিতে মসজিদ স্থাপিত হয়; কেয়ামত পর্যন্ত সে জমি মসজিদ হিসাবেই পরিগণিত হয়। অন্যকোনো উদ্দেশ্যে সে জমি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আল্লাহর ঘর অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ কুফরী শক্তির আগ্রাসনে বারবার জর্জরিত হয়েছে। অনেক মসজিদকে তারা নিশ্চিহ্ন করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। অনেক মসজিদকে বিজাতীয় উপাসনালয়, সিনেমা হল ও নানাবিধ অশ্লীল কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত করেছে। আজো অনেক মসজিদ কুফরী শক্তির হাতে বন্দি হয়ে রোনাজারী করছে। তবে আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবানীতে কিছু মজলুম মসজিদ আবারো ফিরে এসেছে মসজিরূপে। মুখর হয়েছে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে। ধন্য হয়েছে মুসল্লীদের বিনয়াবনত সিজদায়।
এধরনের কিছু মসজিদ নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক আয়োজনের আজকে থাকছে প্রথম পর্ব।
মসজিদে আমর ইবনুল আস রা., দিময়াত (দামিয়েটা), মিশর
নবী রাসূলগণের স্মৃতি বিজড়িত কুরআনের শহর মিশর। মিশরীয় সভ্যতার এ পবিত্র ভূমি ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় বহুবার হাতবদল হয়েছে। সুদীর্ঘ কাল পর পবিত্র এ মিশরীয় ভূমি মুসলিম বাহিনীর করতলগত হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর খেলাফত কালে উমর ইবনুল আস রা. ২০ হিজরী মোতাবেক ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন শক্তিকে পরাজিত করে মিশর বিজয় করেন। এরপর তিনি যথাক্রমে ১৮ হিজরী সনে মসজিদ সাদাত কুরাইশ ও ২০ হিজরীর রমাযানে পূর্ণ মিশরকে বিজয়ের পর বৃহৎ পরিসরে মিশরের তৎকালীন রাজধানী ফিসতাতে (বর্তমানে কায়রো) মসজিদে আমর ইবনুল আস (কায়রো) নির্মাণ করেন।
এরপর ২১ হিজরী মোতাবেক ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রা. ভূমধ্য সাগর তীরবর্তী শহর দামিয়েটায় (দিময়াত) আরো একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি মিশরের দ্বিতীয় মসজিদে আমর ইবনুল আস নামে পরিচিত। মসজিদটি এখন মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ হিসেবে পরিচিত।
খেলাফত ব্যবস্থার সুদীর্ঘ শাসনকালে মিশর বারবার বহির্শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে দামিয়েটাস্থ এ মসজিদে আমর ইবনুল আসকে একাধিক বার খ্রিস্টান উপাসনালয়ের ভাগ্য বরণ করতে হয়। ১২১৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমের তৎকালীন শাসক জ্যান ডি ব্রিয়ান মিশরের দামিয়েটা শহর দখল করে নেয়। এবং ন্যাক্কারজনকভাবে দ্বিতীয় মসজিদে আমর ইবনুল আসকে গির্জায় রূপান্তরিত করে। কিন্তু ১২২১ খ্রিস্টাব্দে যখন ক্রুসেডার বাহিনী বাধ্য হয়ে দামিয়েটা ছেড়ে চলে যায় তখন আবার এটিকে মসজিদরূপে ফিরিয়ে আনা হয়। ১২৪৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের নবম লুইস দামিয়েটায় আবার আক্রমণ করে দখল করে নেয়। এবং মসজিদটিকে বড় ধরনের খ্রিস্ট গির্জা ক্যাথাড্রালে রূপান্তরিত করে। তবে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে ফরাসীরা পরাজিত হলে মসজিদে আমর ইবনুল আস তার আসল রূপ ফিরে পায়।