মুফতী মাহমূদুল আমীন
মনে হয় ভবনটি কাঁপছে,
তাইতো! ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। ভাই! সবাই ইস্তিগফার পড়তে থাকি। আস্তাগফিরুল্লাহা রব্বী মিন কুল্লি যাম্বিউ ওয়া আতূবু ইলাইহ্, ওয়ালা-হাউলা ওয়ালা-কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। চলছে ভূমির কম্পন, সে সাথে চলছে উলামায়ে কেরামের দু‘আ ও ইস্তিগফারের গুঞ্জরণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই যমীন স্থির হলো, সবাই আল্লাহর শোকর আদায় করলেন।
বিগত এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখে যখন ভূমিকম্প হলো, তখন নারায়ণগঞ্জ আমলা পাড়া মাদরাসার বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় উলামায়ে কেরামের একটি মজলিস চলছিল, এই অধমও সেই মজলিসে হাজির ছিল। উল্লেখিত বিবরণ সে মজলিসেরই। উদ্বিগ্ন মানুষগুলো যখন ভবন থেকে হুড়মুড়িয়ে নিচে নেমে আসছিলো, আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেকে আহত হচ্ছিল তখন উলামায়ে কেরাম কায়মনোবাক্যে ইস্তিগফার করছিলেন। শুধু নিজের চিন্তা নয়; গোটা উম্মাহর জন্য আল্লাহর দরবারে বিনীত দু‘আয় রত ছিলেন।
মূলত ইদানীং মাঝে মাঝেই পৃথিবীটা কেঁপে উঠছে। আমাদের সবুজ বাংলার সবুজ ভূমিও প্রকম্পিত হচ্ছে বারবার। আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির। এখন প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্প কেন হয়? এর থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়? এ ব্যাপারে আমাদের করণীয়-ই বা কি? বক্ষমান নিবন্ধটি অনুসন্ধিৎসু হৃদয়ের এ প্রশ্নত্রয়েরই একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর।
ভূমিকম্প কেন হয়?
ভূমিকম্পসহ পৃথিবীর নানা বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো মানুষের পাপাচার। মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
অর্থ : স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রুম’- ৪১)
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
অর্থ : তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা শুরা- ৩০)
হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. ভূমিকম্পের কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে লিখেছেন,
ইবনু আবিদ্ দুনয়া বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. এর নিকট ভূমিকম্পের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। উত্তরে তিনি বললেন, যখন মানুষ বৈধ কাজের ন্যায় নির্ভীকভাবে ব্যভিচার করে, মদ পান করে এবং বাদ্য বাজায়, তখন আসমানে আল্লাহ তা‘আলার আত্মমর্যাদায় বাঁধে, তখন তিনি যমীনকে নির্দেশ দেন যে, তাদেরকে প্রকম্পিত করো। (হাকীমুল হযরত আশরাফ আলী থানবী, ইসলাহী নেসাব [জাযাউল আ‘মাল]; পৃষ্ঠা ২৯৯)
হযরত সফিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এর খেলাফত কালে একবার মদীনায় ভূমিকম্প শুরু হলো। এমনকি খাটগুলোও নড়তে লাগলো। …অতঃপর উমর রাযি. লোকদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই এই ভূমিকম্প তোমরাই সংঘটিত করেছো (তোমাদের কৃতকর্মের কারণে হয়েছে)। তোমরা ভূমিকম্পকে ত্বরান্বিত করেছো। আবার যদি মদীনায় ভূমিকম্প হয় তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। (সুনানে কুবরা বাইহাকী; হা.নং ৬৬০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা.নং ৮৪২১, বর্ণনাটির সনদ সহীহ)। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, হযরত উমর রাযি. বলেছেন, আবার যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে আমাকে আর মদীনায় পাবে না।
হযরত কাতাদা রহ. সূরা বনী ইসরাঈল-এর ৫৯ নং আয়াত وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا (অর্থ) আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করে থাকি- এর তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যা দ্বারা ইচ্ছে করেন বান্দাকে ভয় দেখান, যাতে তারা সতর্ক হয়, উপদেশ গ্রহণ করে এবং ফিরে আসে। …হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. কুফায় থাকাকালীন একবার সেখানে ভূমিকম্প হলো। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের রব চাচ্ছেন যে, তোমরা বিশুদ্ধ তওবার মাধ্যমে তাঁকে সন্তুষ্ট কর, সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার লক্ষ্যে তোমরা খালেস তওবা করে নাও। (জামিউল বয়ান লিআবি জা‘ফর আতত্ববারী ৯/২০১)
ভূমিকম্প ইত্যাদির কারণ সম্পর্কে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
মানুষ যখন গনীমতকে নিজের সম্পদ মনে করবে (রাষ্ট্রের সম্পদকে কুক্ষিগত করবে), আমানতকে গনীমত মনে করবে, যাকাতকে ঋণ মনে করবে, দুনিয়ার জন্য ইলম শিখবে, পুরুষ তার বিবির অনুগত ও মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুকে কাছে টানবে আর পিতাকে দূরে ঠেলে দেবে, মসজিদ সমূহে আওয়াজ অনেক জোরে জোরে হবে, ফাসেকরা গোত্রের নেতৃত্ব দেবে, সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি জাতির প্রধান হবে, মানুষ কারো অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাকে সম্মান করবে, গান-বাদ্য ব্যাপক হবে, মদ পান করা হবে, এই উম্মতের শেষভাগ প্রথমাংশকে অভিশাপ দেবে তখন তুমি প্রচণ্ড ঝঞ্ঝা বায়ূ, ভূমিধস, ভূমিকম্প, বিকৃতি, প্রস্তর বর্ষণ এবং ছিন্ন মালার দানার ন্যায় কিয়ামতের নিদর্শনাবলী অনবরত প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষা করো। (সূনানে তিরমিযী; হা.নং ২২১১)
এ প্রসঙ্গে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ইলম উঠে যাবে, যামানা কাছাকাছি হয়ে যাবে (এক বছরকে এক মাসের মতো মনে হবে), অধিক হারে ভূমিকম্প হবে, ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং খুন-খারাবী বেড়ে যাবে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৬৭০৪)
উপরোক্ত আয়াত, হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের উক্তি দ্বারা সুষ্পষ্টরূপে বুঝে আসে যে, মানুষের গুনাহই হলো ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার প্রধান কারণ এবং ভূমিকম্প কিয়ামতের একটি অন্যতম নিদর্শন।
আমাদের করণীয়
১. ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার আগে
ভূমিকম্পের মত প্রলয়ংকারী বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে তওবা করতে হবে। গান-বাদ্যসহ যাবতীয় গুনাহ বর্জণ করতে হবে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্র যেন গুণাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয় এর জন্য সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেকেরই সচেষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের রাষ্ট্রের সম্মানিত কর্ণধারগণের দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি। তারা নিজেরা যেমন গুনাহমুক্ত তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করবেন অনুরূপ রাষ্ট্রীয়ভাবে গুনাহমুক্ত অনাবিল দেশ গড়ার পদক্ষেপ নেবেন। আমাদের এ দেশ, এ দেশের সাড়ে ষোল কোটি মানুষ, কোটি কোটি জানা-অজানা প্রাণী, সবুজ প্রকৃতি সব কিছু হিফাযতের যিম্মাদার তাঁরা। তাঁদের অবহেলা ও উদাসিনতায় এদের কোনো ক্ষতি হলে রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ তা‘আলার ইনসাফী আদালতে তারা গ্রেফতার হয়ে যাবেন। (আল্লাহ সবাইকে হিফাযত করুন, আমীন।) আমাদের আকাক্সক্ষা, হযরত উমর রাযি. ভূমিকম্প রোধে পাপাচারের বিরুদ্ধে যেমন বজ্রকঠিন হয়েছিলেন আমাদের দায়িত্ববানগণও তেমন হবেন। তাঁরা সৃষ্টির প্রতি দরদী হবেন, পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় অন্তরে ধারণ করবেন এবং আজকে ভূমিকম্প ঝুঁকির এই চরম আতঙ্কের মুহূর্তে গোটা দেশবাসী যেন খালেস দিলে তওবা-ইস্তিগফার করে, সে মর্মে রাষ্ট্রীয়ভাবে ফরমান জারী করবেন। হাকীমুল উম্মত আশরাফী থানবী রহ. লিখেছেন,
একবার হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বিভিন্ন শহরে হুকুমনামা লিখে পাঠালেন, যার বিষয়বস্তু ছিলো এই-
হামদ ও সালাতের পর বক্তব্য এই যে, ভূমিকম্প আল্লাহর ক্রোধের আলামত। আমি সব শহরে লিখে পাঠাচ্ছি যে, অমুক মাসের অমুক তারিখে (দু‘আ ও কান্না-কাটির উদ্দেশ্যে) ময়দানে বের হবে। যাদের টাকা-পয়সা আছে তারা দান-খয়রাতও করবে। (হাকীমুল হযরত আশরাফ আলী থানবী, ইসলাহী নেসাব [জাযাউল আ‘মাল]; পৃষ্ঠা ৩০০)
আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় ভূমিকম্পের সম্ভব্য ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য নানা করণীয় প্রচার করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু আফসোস হয় যখন দেখি করণীয়’র এ লম্বা তালিকায় ভূমিকম্পের প্রকৃত কারণ ও তার প্রতিকার সর্ম্পকে একটি বাক্যও নেই, এটা কি দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা বা উদাসিনতার ফল, না আমাদের দুর্ভাগ্য তা আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। সারকথা, আমাদের প্রত্যেককে খালেস দিলে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে, নফল নামায, তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে গোটা দেশ ও দেশবাসীর হিফাযতের জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে কায়মনোবাক্যে দু‘আ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে আমাদের নেতৃবর্গকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
২. ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সময়
(আল্লাহ না করুন) যদি কখোনো ভূমিকম্প শুরু হয়েই যায় তাহলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়াতে কোনো দোষ নেই, তবে তামাশা দেখা বা অধিক আতঙ্কিত হয়ে হা-হুতাশ করা কোনোটাই সমীচিন নয়। আর তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া তো জায়েযই নেই। মনে রাখতে হবে আমরা সেই জাতি যারা ইয়ারমুকের ময়দানে অন্তিম মুহূর্তেও নিজে পানি পান না করে অন্য ভাইকে পানি পান করাতে বলেছিলো।
তবে এ সময়ের সুন্নত আমল হলো যিনি ভূমিকম্প দিয়েছেন সেই মহান মালিক আল্লাহ তা‘আলার দিকে মনোনিবেশ করা। নামায, ইস্তিগফার ও দু‘আ-দুরূদের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধানলে চোখের পানি ঢেলে দেয়া। হাদীস শরীফে এসেছে হযরত হুযাইফা রাযি. বর্ণনা করেন,
হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে নামায পড়তেন। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ১৩২১)
অপর এক হাদীসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইস্তিগফারকে অপরিহার্য করে নেয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রত্যেক সংকট থেকে মুক্তি দান করেন, প্রত্যেক বিপদ থেকে উদ্ধার করেন এবং অকল্পনীয় স্থান থেকে তাকে রিযিক দান করেন। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ১৫২০)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদাপদের সময় এই দু‘আ করতেন,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ.
(সহীহ মুসলিম; হা.নং ৭০৯৭)
৩. ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পরে
সর্বাস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহর তা‘আলার ব্যাপারে অভিযোগ-বাক্য ব্যবহার না করা। হযরত সা’দ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুমিনের বিষয়টি বড়ই চমৎকার যখন সে কোনো ভালো অবস্থার সম্মুখীন হয় তখন আল্লাহর প্রশংসা করে ও শুকরিয়া আদায় করে। আর যখন কোন বিপদাপদে নিপতিত হয় তখনও আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে ও র্ধৈর্য ধারণ করে, ফলে মুমিনের সর্বাবস্থায় নেকী হাসিল হয়। (সুনানে নাসায়ী; হা.নং ১০৯০৬)
স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাও এমন ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন যারা প্রত্যেক বিপদাপদে ইন্না-লিল্লাহ… পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে,إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহ্র জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো)। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্র অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হিদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা বাকারা’- ১৫৫-১৫৭)
ভূমিকম্পে অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে মুমিনের কর্তব্য তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া, জান-মাল দিয়ে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা, চাই সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো। বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির সহায়তা করার গুরুত্ব ও ফযীলত কুরআন হাদীসের পাতায় পাতায় বিদ্যমান। আমি এ বিষয়ে ছোট্ট একখানা হাদীস পেশ করেই আলোচনার ইতি টানছি। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষ যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে ততক্ষণ স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তার সাহয্য করতে থাকেন। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ৭০২৮)
উপসংহার
ভূমিকম্প ইত্যাদি দুর্যোগ মূলত মানুষের কৃতকর্মের ফল। এজন্য সময় থাকতেই রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব, ছোটো-বড়ো সবার তওবা করা উচিত। শুধু দুনিয়ার দুর্যোগ থেকে বাঁচতেই নয় বরং পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের মহাদুর্যোগ জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচার জন্যও আমাদের তওবা করা আবশ্যক। ইহকালীন বিপদের চূড়ান্ত পরিণতি হলো মৃত্যু, যা একদিন সবাইকে অবশ্যই বরণ করতে হবে। কিন্তু পরকালিন জীবনের মৃত্যু নেই।
বেঈমান নাফরমানরা যখন জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনের তীব্র দহন, বিভৎস আজদাহার বিষালো দংশন, গলগ্রহ কন্টকবৃক্ষ ভক্ষণ ও টগবগে ফুটন্ত পানি পানসহ অসহনীয় সব শাস্তি সহ্য করতে পারবে না, তখন চিৎকার করে করে মৃত্যু কামনা করবে, কিন্তু মৃত্যু তখন সোনার হরিণ, এর নাগাল পাওয়া যাবে না আর। অনন্ত অসীম কাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে তো জ্বলতেই থাকবে… বিষধর সাঁপের দংশনে দংশিত হবে তো হতেই থাকবে… (নাউযুবিল্লাহ)। আসুন, আমরা সময় থাকতেই সতর্ক হই। মহান আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করি। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল প্রকার গুনাহ ছেড়ে দিয়ে উভয় জাহানের সকল বিপদ থেকে নিরাপদ হই। হয়ে যাই এই আয়াতের জীবন্তছবি,
আর যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, অবশ্য অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জান্নাত। (‘সূরা নাযিয়াত’- ৪০-৪১)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুনিয়া আখিরাতের সকল বিপদ থেকে নিরাপদ রাখুন, আমীন।
তথ্যসূত্র : ১. কুরআনুল কারীম,২. সুনানে তিরমিযী, ৩. সহীহ বুখারী, ৪. সুনানে আবু দাউদ, ৫. সহীহ মুসলিম, ৬. সুনানে নাসায়ী, ৭. ইমাম বাইহাকী রহ., সুনানে কুবরা, ৮. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৯. আবু জা’ফর আতত্ববারী, জামিউল বায়ান, ১০. হাকীমুল হযরত আশরাফ আলী থানবী, ইসলাহী নেসাব।