মুফতী হাফিজুর রহমান
বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা যত ধরনের রোগ-ব্যধি দিয়েছেন তা নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছেন। জাবের রাযি. সূত্রে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবধরনের ব্যধিরই প্রতিষেধক রয়েছে। যদি কেউ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পথ্য গ্রহণ করে তবে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সে আরোগ্য লাভ করবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮৭১।
তবে কিছু ব্যবস্থা আছে প্রত্যক্ষ; যথা, মধু, কালো জিরা, গাছ-গাছড়া প্রভৃতি এবং এ থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ। আবার কিছু ব্যবস্থা আছে পরোক্ষ; যথা হাদীসে বর্ণিত রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদ থেকে মুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন দুআ-দুরূদ। রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশে এসব উপায় গ্রহণ তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর আস্থার পরিপন্থী নয়; বরং হাদীসের ভাষ্যমতে এসব উপায় গ্রহণই নববী কর্মপন্থা হিসেবে পরিগণিত।
পক্ষান্তরে শর্ত সাপেক্ষে যদিও তাবীজ-কবচ গ্রহণের ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করা হয় তবে এ মাধ্যমটি গ্রহণ
করা উচিৎ নয়। কারণ :
১। এতে শিরকের মত মরণঘাতি ব্যধিতে
আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
২। যে হাদীসটির উদ্ধৃতিকে তাবীজ-কবচের
বৈধতার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তাতে ছোট ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এসব
উপায় গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর বড়দের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দু‘আটি পাঠের কথা বলা
হয়েছে।
৩। অধিকাংশ তাবিজের ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত
ও দুআ-দুরূদের মধ্যকার বর্ণমালার মানসংখ্যা লেখা হয় যা শরীয়তসম্মত নয়।
৪। তাবিজের মধ্যকার কুরআনের আয়াত ও
দুআ-দুরূদের যথাযথ মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
৫। বর্তমান সমাজে তাবিজ-কবচের প্রতি
মানুষের দুর্বলতা এতটা প্রবল যে, তারা বিপদাপদ ও রোগ-ব্যধি নিরাময়ের ক্ষেত্রে এ মাধ্যমকেই একমাত্র প্রভাবক
হিসেবে গণ্য করে থাকে।
৬। প্রচলিত তাবিজ-কবচে খাজা বাবা, পীর বাবাসহ নানা রকম
শরীয়ত গর্হিত শিরক-বিদআতের কথা লিখিত থাকে।
শিরক-বিদআতের এ ছিদ্রপথকে রুদ্ধ করার জন্যও তাবিজ-কবচের এ মাধ্যমকে পরিহার করা উচিৎ।
তাইতো মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ. বলেন, তাবীজ-কবচ করা জায়েয হলেও তা না করাই উত্তম। ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৮।
অন্যত্র তিনি বলেন, তাবীজ-কবচের কারণে যদি জনসাধারণের আকীদা-বিশ্বাসে ত্রুটি আসে তবে তাদের উপর এ উপায় গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে তাবীজ-কবচকে পরিহার করা সর্বাবস্থায় শ্রেয়। সুন্নাহসম্মত পন্থা এতটুকুই যে, দু‘আ ও আয়াত পাঠ করে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর শুধু দম করা হবে। ইমদাদুল আহকাম ১/৩৩০।
অতএব রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদের ক্ষেত্রে এ তাবীজ-কবচের পন্থা গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত মাসনূন দু‘আ পাঠ করা ও প্রত্যক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। এটাই নিরাপদ ও সহীহ পদ্ধতি। আর কুরআনের আয়াত, বিশুদ্ধ দুআ পড়ে যদি শরীয়তসম্মত পন্থায় ঝাড়ফুঁক করা হয় তাহলে তার অবকাশ রয়েছে।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০০, ফাতহুল বারী ১০/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৮, ইমদাদুল আহকাম ১/৩৩০, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২০/৬৩