মুফতী হাফিজুর রহমান
আট রাকাআতের পক্ষে লেখক মহোদয়দের সবচেয়ে শক্তিশালী (?) যুক্তিঅস্ত্র হলো, তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ একই নামায। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, তারা আট রাকাআতের সপক্ষে শক্তিশালী কোনো দলীল না পেয়েই এই
যু্ক্তির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। নতুবা এটা ধোপে টেকার মত কোনো যুক্তি নয়। কারণ, এই যে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদকে একাকার করে দেখানো হচ্ছে এর সপক্ষে কি কোনো হাদীস আছে? সাহাবী উক্তি? কিংবা তাবিয়ী উক্তি?
অন্য কোনো মাসে
শেষ নিশিথে দাঁড়িয়ে কেউ কি কোনো কালে বলেছে আমি তারাবীহ পড়ছি? রমাযান মাসে ইশার নামাযের
পরে তারাবীহতে দাঁড়িয়ে কেউ কি বলছে আমি তাহাজ্জুদ পড়ছি? দু’টি নামায এক হলে এ কথা
কেউ বলেননি কেন? প্রশ্ন হতে পারে একটি বিষয়ের দু’টি নাম হতে পারে। উত্তরে
আমরাও বলি একটি বিষয়ের দু’টি নাম হতে পারে; বরং দু’টি কেন দুয়ের অধিক নামও
হতে পারে। তবে তার জন্য শর্ত হলো, যে কোনো নামে যখন তখন সম্বোধন করা বিধিত থাকতে হবে। এক সময়
এক নাম অন্য সময় ভিন্ন নাম- এমনটি হলে এটা সে বিষয়ের একাধিক নাম হলো না।
তাহাজ্জুদের জায়গায় তারাবীহ, তারাবীহের জায়গায়
তাহাজ্জুদ বলার বৈধতা এবং অনুমোদন থাকলেই কেবল বলা যাবে দুটো একই
বিষয়। এবার আমরা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ শব্দ দু’টির আভিধানিক অর্থের দিকে
লক্ষ্য করি। অভিধান এবং পরিভাষা এ দুটো নামাযকে একই নামায হিসেবে
অভিহিত করে কি না?
নিম্নে বিখ্যাত কিছু আরবী
অভিধান গ্রন্থের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
তাহাজ্জুদ :
১. তাহাজ্জুদ অর্থ রাতে ঘুমানো, ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করা। তাহাজ্জুদ শব্দটি স্ববিরোধী অর্থবহ একটি শব্দ। (অর্থাৎ শব্দটি একই সাথে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার অর্থ প্রদান করে।) আলমুনাবী, আত্তাউকীফ আলা মুহিম্মাতিত তাআরিফ ১/২১১
২. তাহাজ্জুদ অর্থ : রাতে ঘুমানো, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। ইসমাইল বিন হাম্মাদ আলজাউহারী, আসসিহাহ ফিললুগাহ ২/২৪৩
৩. তাহাজ্জুদ অর্থ : রাতে ঘুমানোর পর জাগ্রত হওয়া। ড. জাউয়াদ আলী, আলমুফাসসাল ফি তারিখিল আরব ১২/৪২৪
৪. وتَهَجَّدَ القوم استيقظوا للصلاة তাহাজ্জাদাল কাউমু অর্থ মানুষ নামাযের জন্য জাগ্রত হয়েছে।- ইবনে মানযুর, লিসানুল আরব ৩/৪৩১
৫. তাহাজ্জুদ অর্থ : রাতে নিদ্রা যাওয়া, নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়া। সালাতুত তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নফল নামায আদায় করা।
صلاة التهجد: التنفل بعد النوم…
মুহাম্মদ কালআজী, মু’জামু লুগাতিল ফুকাহা ১/১৮১
তারাবীহ :
১. তারাবীহ অর্থ : রমাযান মাসে দশ সালামে বিশ রাকাআত নামায আদায় করা। তারাবীহকে তারাবীহ বলে নামকরণের কারণ হলো, মানুষ তারাবীহ নামাযের ভিতরে প্রত্যেক চার রাকাআত অন্তর বসে এবং বিশ্রাম গ্রহণ করে। (তারাবীহ এটা আরবী তারবীহাহ এর বহুবচন। তারবীহাহ অর্থ বিশ্রাম গ্রহণ করা।) মুহাম্মদ বিন আবুল ফাতহ আলহাম্বলী, আলমাতলা’ আলা আবওয়াবিল ফিকহ ১/৯৫
২. ‘আমি তাদের নিয়ে তারাবীহ নামায আদায় করেছি’ এখানে তারাবীহ শব্দটি তারবীহাহ এর বহুবচন। আবূ সাঈদ রাযি. থেকে বর্ণিত, প্রত্যেক চার রাকাআত অন্তর মুসল্লীরা বিশ্রাম গ্রহণ করে থাকে বলে তারবীহাহকে তারবীহাহ বলা হয়। আল্লামা মুতাররিযী, আলমুগরিব ২/৪০৯
৩. তারাবীহকে তারাবীহ নামে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ মুসল্লীরা প্রত্যেক চার রাকাআত অন্তর বিশ্রাম গ্রহণ করে থাকে। মুরতাযা আযযাবিদী, তাজুল আরুস ১/১৬০৪
৪. তারাবীহ এর একবচন হলো, তারবিহাহ। অর্থ, বিশ্রাম গ্রহণ করা জবপৎবধঃরড়হ। তারাবীহকে তারাবীহ নামে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ মুসল্লীরা প্রত্যেক চার রাকাআত অন্তর বিশ্রাম গ্রহণ করে থাকে। মুহাম্মদ কালআজী, মু’জামু লুগাতিল ফুকাহা ১/১২৭
৫. সালাতুত তারাবীহ অর্থ, রমাযান মাসে রাতে ইশার নামাযের পর বিশ রাকাআত নামায আদায় করা। মুহাম্মদ কালআজী, মু’জামু লুগাতিল ফুকাহা ১/১৭৫
উপরোক্ত অভিধানগুলোতে তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ এর স্পষ্ট সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে কোথাও তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহকে একাকার করে দেখানো হয়নি। উল্লেখ করার মত বিষয় হলো, তাহাজ্জুদের ধাতুগত অর্থই হলো, ঘুমানো বা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। এতে প্রতীয়মান হয়, তাহাজ্জুদের ব্যাপারটি ঘুমোত্তর সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।
কুরআন বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে তাহাজ্জুদ
তাহাজ্জুদের বিষয়টি সরাসরি পবিত্র কুরআনে কারীমে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামায আদয় করবে। এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।’ সূরা বানী ইসরাইল ৭৮
এবার লক্ষ্য করা যাক, মহান মুফাসসিরীনে কেরাম তথা কুরআন বিশেষজ্ঞগণ উপরোল্লিখিত আয়াতস্থিত তাহাজ্জুদের কি ব্যাখ্যা করেছেন।
১. তাহাজ্জুদের ব্যাপারে তিনটি উক্তি রয়েছে। (ক) নিদ্রা যাওয়া, এরপর নামায আদয় করা, এরপর আবার নিদ্রা যাওয়া, এরপর আবার নামায পড়া। (খ) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা (গ) ইশার নামাযের পর নামায আদায় করা। এগুলো হলো তাবিয়ীনে কেরামের বিভিন্ন উক্তি। সম্ভবত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু ঘুমাতেন এরপর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায পড়তেন এরপর আবার ঘুমাতেন এরপর আবার নামায আদায় করতেন তাই তাবিয়ীনে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের এ পদ্ধতির অনুসরণে ঘুমোত্তর নামাযকে তাহাজ্জুদ বলে অভিহিত করেছেন। যদি ব্যাপারটি একারণেই হয়ে থাকে তাহলে এটিই ঘনিষ্ঠ এবং যথোপযুক্ত অভিমত। ইবনুল আরাবী, আহকামুল কুরআন ৫/২৮৬
২. হাজ্জাজ বিন আমর আনসারী রাযি. বলেন, তোমাদের অনেকে ধারনা করে, শেষ রাত অবধি নামায পড়া হলেই তা তাহাজ্জুদ নামায হয়ে গেল। না ব্যাপারটি এমন নয়। বরং তাহাজ্জুদ হলো ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করা এরপর আবার ঘুমিয়ে তারপর নামায আদায় করা এরপর আবার ঘুমিয়ে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ নামায এমনি ছিল। আসওয়াদ এবং আলকামা রাযি. বলেন, তাহাজ্জুদ হলো, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করার নাম।- মু’জামে কাবীর তাবারানী, হাদীস ৩২১৬, মাজামাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৩৬১৬, হাইসামী রহ. বলেন, এর সনদ সহীহ এবং এ সনদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী। আবূ বাকার জাসসাস, আহকামুল কুরআন ৫/৩২
৩. তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। এখন এটা একটি নামাযের নাম হয়ে গেছে। কারণ এ নামাযের জন্য জাগ্রত হতে হয়। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাযের পারিভাষিক অর্থ হলো, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। আসওয়াদ, আলকামাহ এবং আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ রহ. তাহাজ্জুদের এ অর্থই করেছেন। এরপর কুরতুবী রহ. হাজ্জাজ বিন আমরের হাদীসটি উল্লেখ করেন। সুতরাং আয়াতের অর্থ হলো, রাতের একটা সময়ে নামাযের জন্য জাগ্রত হও। ইমাম কুরতুবী, আলজামি’ লিআহকামিল কুরআন ১০/৩০৮
৪. ইবনে জারীর, ইবনে মুনযির এবং মুহাম্মদ বিন নাসর আলকামা এবং আসওয়াদ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। ইমাম সুয়ূতী রহ., আদদুররুল মানসূর ৯/৭৬
৫. আয়াতটির অর্থ হলো, ঘুম থেকে জাগ্রত হও এবং নামায আদায় করো। মুফাসসিরীনে কেরাম বলেন, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া ব্যতীত তাহাজ্জুদের নামায হয় না। জনৈক আনসার সাহাবী সম্বন্ধে বর্ণিত হয়েছে, একদা তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলেন। তখন সে বলল, আজ আমি দেখবো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায আদায় করেন। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালেন। এরপর ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। এরপর মস্তক মোবারক আকাশ পানে উত্তোলন করলেন, এরপর সূরা আলে ইমরানের চারটি আয়াত পাঠ করলেন। এরপর হাত দ্বারা কোনো ইবাদত করার ইচ্ছা করলেন এবং একটি মিসওয়াক হাতে নিলেন। এরপর তা দ্বারা দাঁত মাজলেন। এরপর উযু করলেন এবং নামায পড়লেন। এরপর ঘুমালেন। এরপর আবার জাগ্রত হলেন এবং পূর্বোক্ত কাজগুলো আবার করলেন। উলামায়ে কেরাম মনে করেন এই নামাযই সেই তাহাজ্জুদের নামায যে নামায সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন।-সুনানে নাসয়ী কুবরা, হাদীস ১০১৩৯, আবূ ইসহাক নিশাপুরী, আলকাশফু ওয়াল বায়ান ৬/১২৩
৬. আয়াতটির অর্থ হলো, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আপনি নামাযের জন্য দ-ায়মান হোন। আর তাহাজ্জুদ অর্থ হলো, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা।-আবুল লাইস সামারকান্দী, বাহরুল উলূম ৩/২৩
৭. তাহাজ্জুদ ঐ নামাযকে বলা হয় যা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আদায় করা হয়। আলকামা, আসওয়াদ, ইবরাহীম নাখায়ী প্রমুখ তাহাজ্জুদের এ অর্থ করেছেন। আরবী ভাষায় তাহাজ্জুদের এ অর্থটিই প্রসিদ্ধ। তেমনিভাবে বিভিন্ন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। ইবনে আব্বাস, আয়িশা রাযি.সহ অন্যান্য সাহাবী থেকে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি যথাস্থানে সুবিস্তর আলোচিত হয়েছে। যাবতীয় প্রশংসা এবং অনুগ্রহ আল্লাহ তা’আলার জন্য। তবে হাসান বসরী রাযি. বলেন, তাহাজ্জুদ ঐ নামায যা ইশার নামাযের পর আদায় করা হয়। তার একথার মর্মার্থ হবে, ইশার নামাযের পর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যে নামায আদায় করা হয় তাই তাহাজ্জুদের নামায। তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১৫০
৮. অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামের মতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া ব্যতীত তাহাজ্জুদ নামায হয় না।-তাফসীরুল আ’কাম ১/৩৭২
৯. আয়াতটির অর্থ হলো, তুমি রাতের কিছু সময় নামাযের জন্য জাগ্রত হও। আলকামা রাযি.সহ অন্যান্য তাবিয়ীগণ বলেন, তাহাজ্জুদ হলো ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আদায় করার নামায। হাসান বসরী রাযি. বলেন, ঈশার শেষ সময়ের পরে যে নামায আদায় করা হয় তাই তাহাজ্জুদ।-আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মদ সা‘আলাবী, জাওয়াহিরুল হিসান ২/৩৫৫
১০. আয়াতটির অর্থ তুমি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামাযের জন্য দাঁড়াও। তাহাজ্জুদ অর্থই হলো, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা।-আলাউদ্দীন আলবাগদাদী, তাফসীরুল খাযিন ৪/১৭৪
১১. আল্লামা আযহারী রহ. বলেন, আরবী ভাষায় প্রসিদ্ধ মতানুসারে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে হাজিদ বলা হয়। এরপর আমরা দেখলাম, শরয়ী পরিভাষায় যে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করে তাকে ‘মুতাহাজ্জিদ’ বলা হয়। সুতরাং এখন একথা মেনে নেয়া আবশ্যক হয়ে গেল, ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায়কারী ব্যক্তিকে মুতাহাজ্জিদ করে নাম করণ করা হয়েছে নিজের ঘুমকে দূরীভূত করার কারণে। আমি বলি, এখানে আরো একটি সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হলো, মানুষ সাধের ঘুমকে পরিত্যাগ করে এবং নামাযের জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার কষ্টকে স্বীকার করে নেয় যাতে সে মৃত্যুকালীন ঘুমকে আনন্দময় করে তুলতে পারে। সুতরাং এই ঘুম পরিত্যাগের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু মৃত্যুকালীন স্বাচ্ছন্দ্যময় নিদ্রাজীবন লাভ করা তাই গভীর রাত্রের এই বিনিদ্র নামাযকে তাহাজ্জুদ করে নামকরণ করা হয়েছে। এখানে তাহাজ্জুদ নামকরণের তৃতীয় আরো একটি কারণ রয়েছে। আর তা হলো, হাজ্জাজ বিন আমর আনসারী রাযি. বলেন, তোমাদের অনেকে ধারণা করে, শেষ রাত অবধি নামায পড়া হলেই তা তাহাজ্জুদ নামায হয়ে গেল। না ব্যাপারটি এমন নয়। বরং তাহাজ্জুদ হলো ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করা এরপর আবার ঘুমিয়ে তারপর নামায আদায় করা এরপর আবার ঘুমিয়ে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাহাজ্জুদ নামায এমনি ছিল।-তাফসীরে রাযী ১০/১০৮
১২. তাহাজ্জুদকে তাহাজ্জুদ বলে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ এর মূল বিষয়টি হলো, ঘুমিয়ে যাওয়া এরপর জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা এরপর আবার ঘুমিয়ে যাওয়া এরপর আবার জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। সুতরাং তাহাজ্জুদ অর্থ হলো ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। যেমনটি ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং দাউদ আলাইহিস সালাম এর নামায। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচে প্রিয় রোযা দাউদ আ. এর রোযা এবং আল্লাহ তা‘লার নিকট প্রিয় নামায হলো, দাউদ আ. এর নামায। দাউদ আ. অর্ধ রাত্রি ঘুমাতেন এবং এক তৃতীয়াংশ রাত্রি নামায পড়তেন এরপর এক ষষ্ঠমাংশ রাত্রি ঘুমাতেন এবং তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন রোযাবিহীন থাকতেন। সাহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৯৬, নিযামুদ্দীন নিশাপুরী, তাফসীরু গারাইবিল কুরআন ৮/১৯৭
১৩. আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে বলেন, আপনি রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কুরআনের মাধ্যমে নামায আদায় করুন। আর তাহাজ্জুদ অর্থ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। হাজ্জাজ বিন আমর, আলকামা, আলআসওয়াদ, আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ রাযি. বলেন, তাহাজ্জুদ হলো ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আদায় করার নামায। হাসান বসরী রাযি. বলেন, তাহাজ্জুদ হলো, ঈশার শেষ সময়ের পর আদায় করা নামায। জনৈক আনসার সাহাবী সম্বন্ধে বর্ণিত হয়েছে, একদা তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক সফরে ছিলেন। তখন সে বলল, আজ আমি দেখবো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায আদায় করেন। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালেন। এরপর ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। এরপর মস্তক মোবারক আকাশ পানে উত্তোলন করলেন, এরপর সূরা আলে ইমরানের চারটি আয়াত পাঠ করলেন। এরপর হাদ দ্বারা কোনো ইবাদত করার ইচ্ছা করলেন এবং একটি মিসওয়াক হাতে নিলেন। এরপর তার দ্বারা দাঁত মাজলেন। এরপর উযু করলেন এরপর নামায পড়লেন। এরপর ঘুমালেন। এরপর আবার জাগ্রত হলেন এবং পূর্বোক্ত কাজগুলো আবার করলেন। উলামায়ে মনে করেন এই নামাযই সেই তাহাজ্জুদের নামায যে নামায সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন।-আবূ জা’ফর তাবারী, জামিউল বায়ান ৯/২৪৫-২৪৬
১৪. আয়াতটির অর্থ, আপনি রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায এবং কুরআন পাঠের মাধ্যমে আপনার প্রভুর উদ্দেশে তাহাজ্জুদ নামায আদায়কারী হোন।-মুহাম্মদ আলী সাবুনী, সফওয়াতুত তাফাসীর ২/১৩৮
১৫. প্রথম রাত্রে ঘুমিয়ে এরপর জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা হলো তাহাজ্জুদের নামায।-সাইয়িদ কুতুব শহীদ, ফি জিলালি কুরআন ৬৫/৫৫
তাহাজ্জুদ নামাযের সময়সীমা
১. আসওয়াদ রাযি. বলেন, আমি আয়িশা রাযি. কে জিজ্ঞেস করলাম, রাতের বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায কেমন ছিল। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাত্রে ঘুমাতেন এবং শেষ রাত্রে নামায আদায় করতেন। এরপর বিছানায় ফিরে আসতেন। যখন মুয়াজ্জিন আযান দিতো তখন দ্রুত উঠে যেতেন। যদি প্রয়োজন হতো তবে গোসল করে নিতেন। নতুবা উযু করে মসজিদে চলে যেতেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৬
২. ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হলো গভীর রজনীর নামায। মু’জামে তাবারানী কাবীর, হাদীস ১৬৯৫
৩. মাসরুক রাযি. বলেন, আমি আয়িশা রাযি. কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কখন নামায আদায় করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, যখন গভীর রজনীতে মোরগের ডাক শুনতেন তখন নামায আদায় করতেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৩২
৪. রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোলাম সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো এক সফরে ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সফরটি কষ্ট এবং দুর্দশার সফর। তোমাদের কেউ যখন বিতর নামায পড়বে তখন যেন সাথে আরো দুই রাকাআত পড়ে নেয়। যদি জাগ্রত হয় তবে তো ভাল কথা। নতুবা সে দুই রাকাআতই তার জন্য তাহাজ্জুদ হিসেবে গণ্য হবে।- সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১১০৬
হাদীসটির ব্যাখ্যায় আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেন, এ দু রাকাআত নামায হলো, ঘুমপূর্ব তাহাজ্জুদ। এটা তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত উলামায়ে কেরামের বক্তব্যের বিপরীত কোনো বক্তব্য নয়। কারণ এটা প্রকৃত অর্থে তাহাজ্জুদ নয়; রূপক অর্থে তাহাজ্জুদ।-আনওয়ার শাহ আলকাশমিরী, ফাইযুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী ৪/১
তারাবীহ নামাযের সময় সীমা
১. তারাবীহ নামাযের সময় হলো ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে শেষ রাত পর্যন্ত। কারণ তারাবীহ নামায ইশার নামাযের অনুগামী। তবে বিতর নামায ইশার নামাযের অনুগামী নয়। সুতরাং যদি অপবিত্রাবস্থায় ইশার নামায আদায় করা হয় আর তারাবীহ নামায পবিত্রাবস্থায় আদায় করা হয় তাহলে ইশার নামাযের সাথে সাথে তারাবীহ নামাযকেও দ্বিতীয়বার পড়তে হবে। বিতর দ্বিতীয়বার পড়তে হবে না।-আব্দুর রাহমান শাইখযাদাহ, মাজমাউল আনহুর ফি শারহি মুলতাকাল আবহুর ১/২০২
২. তারাবীহ নামাযের সময় হলো, ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। কারণ তারাবীহ নামায হলো, নফল নামায যা ইশার নামাযের পর সুন্নাত হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে। এবং এটাই সর্বাধিক সঠিক অভিমত।-খাসরু বিন কারামুয রুমী (৮৮৫ হি. ১৪৮০ খৃ.), দুরারুল হুক্কাম শারহু গুরারিল আহকাম ১/২৩৩
৩. তারাবীহ নামাযের সময় হলো ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত।-মুহাম্মদ বিন আবূ বাকার রাযী, তুহফাতুল মুলূক ১/৮১
৪. ইশার নামায সম্পন্ন করার পরই তারাবীহ নামাযের সময় আরম্ভ হয়।-আব্দুল কারীম রাফিয়ী, ফাতহুল আযীয ফি শারহিল ওয়াজীয ৭/১৫৯
৫. অধিকাংশ মাশায়েখে কেরামের অভিমত অনুসারে তারাবীহ নামাযের সময় হলো, ইশা এবং সুবহে সাদিকের মধ্যবর্তী সময়। কেউ যদি ইশার নামাযের পূর্বে তারাবীহ পড়ে তাহলে তারাবীহ নামায হবে না। তবে যদি বিতর নামাযের পরে পড়ে তাহলে আদায় হবে। কারণ তারাবীহ নামায হলো নফল নামায যা ইশার নামাযের পর সুন্নাত হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে। সুতরাং তারাবীহ নামাযটি ইশার নামায পরবর্তী সুন্নাত নামাযের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।-বুরহানুদ্দীন মাহমুদ বিন আহমদ, আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৮৪
৬. বিশুদ্ধ মতানুসারে তারাবীহ নামাযের সময় হলো ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে শেষ রাত পর্যন্ত। কারণ তারাবীহ নামায হলো নফল নামায যা ইশার নামাযের পর সুন্নাত হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে। হিদায়া কিতাবে এমনটিই রয়েছে।-আবূ বাকার ইবনে আলী যাবিদী, আলজাউহারাতুন নাইয়িরাহ ১/৩৯০
৭. রমাযান মাসে তারাবীহ এবং বিতর নামাযের সময় : রমাযান মাসে ইশার নামাযের পর বিতরের সাথে তারাবীহ নামাযটি আদায় করা হয়। অর্থাৎ ইমাম সাহেব মুসল্লীদের নিয়ে নামায আদায় করেন এবং বিতর নামায পড়েন। এ কারণে তারাবীহতে বিতর পড়া হয়।-মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ শানকিতী, শারহু যাদিল মুস্তানকি’ ৩/৪৭
৮. বিতর এবং তারাবীহের সময় হলো, ইশার নামাযের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। কারণ পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীগণ থেকে এমনটিই বর্ণনা করেছেন। এবং ইমাম আবূ দাউদ রহ.সহ অন্যান্য ইমামগণ বর্ণনা করেন, আল্লাহ একটি নামায দান করেছেন যা তোমাদের জন্য লাল উট থেকেও উত্তম। আর তা হলো বিতরের নামায। ঈশা থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত তোমাদের জন্য সময় সীমা বেধে দিয়েছেন। মাহামিলী রহ. বলেন, বিতরের নামাযের উৎকৃষ্ট সময় হলো, মধ্য রাত্রি অবধি সময়। কাযী আবুত তাইয়িব প্রমুখ বলেন, মধ্য রাত্রি অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। আর তারাবীহের উৎকৃষ্ট সময় তাই যা বিতরের সময় হিসেবে বলা হলো। যাকারিয়া আলআনসারী, আসনাল মাতালিব ৩/২০৩
৯. ইশার নামায শেষ হওয়ার পর থেকে তারাবীহ নামাযের সময় প্রবেশ করে। ইমাম বাগাবী রাযি. প্রমুখ এ কথা উল্লেখ করেছেন। এবং তা সুবহে সাদিক পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।-ইমাম নববী, কিতাবুল মাজমু’ ৪/৩২
১০. তারাবীহ নামাযের সময় ইশার নামাযের সুন্নতের পর বিতরের পূর্বে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। সুতরাং ঈশার নামাযের পূর্বে তারাবীহ নামায হবে না। যে ব্যক্তি ঈশার নামায পড়ে তারাবীহ পড়ল অতঃপর জানা গেল সে বিনা উযুতে ঈশার নামায পড়েছে তাহলে সে তারাবীহকে পুনরায় পড়বে। কারণ তারাবীহ নামায হলো, সুন্নাত নামায যা ফরয নামাযের পর প্রবর্তন করা হয়েছে। সুতরাং তারাবীহ নামায ঈশার সুন্নতের মত ফরযের পূর্বে শুদ্ধ হবে না।-ওয়াহবাহ যুহাইলী, আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ২/২৫
১১. ইবনে হাজর হাইতামী রহ. কে প্রশ্ন করা হলো, ইমাম হালিমী থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, ‘তারাবীহ নামাযের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হলো, তা রাতের এক চতুর্থাংশ অতিক্রম করার পর আদায় করবে। আর ঈশার পর শুরু সময়ে তারবীহ নামায আদায় করা অলস এবং সৌখিন প্রকৃতির লোকদের নব উদ্ভাবিত একটি পন্থা। এটা কোনো সুন্নাহসম্মত নামায নয়।…’ তো ইমাম হালিমী রহ. তারাবীহ বিষয়ে যা বললেন তা অন্যান্য ইমামের বক্তব্যের সমর্থক কি না? এবং তা কি নির্ভরযোগ্য? এবং তার বক্তব্য মতে যে ব্যক্তি রাতের শুরু ভাগে তারাবীহ নামাযের জামাত পেল তার জন্য কি জামাতের সওয়াব লাভের আশায় তখন তারাবীহ পড়া উত্তম হবে না কি সুন্নাহসম্মতভাবে পড়ার জন্য বিলম্বে পড়া উত্তম হবে? উত্তরে তিনি বললেন, মাসআলাটি ‘শরহুল উবাব’ গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
তো এ বক্তব্যে ঘোর আপত্তি রয়েছে। সহীহ বুখারীর বর্ণনা দ্বারা এ বক্তব্য ভুল হয়ে যায়। সহীহ বুখারীতে রয়েছে, উমর রাযি. এর শাসন আমলে উবাই রাযি. সাহাবীদের নিয়ে তারাবীহ পড়েছেন তারা ঘুমিয়ে যাওয়ার পূর্বে। এতে ইমাম হালিমীর বক্তব্যের বিপরীত মত যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়।
তারাবীহ নামাযের উৎকৃষ্ট প্রথম সময় হলো তাই যা বিতরের উৎকৃষ্ট সময়। আর তা হলো রাতের এক তৃতীয়াংশ সময়। … তিনি তার বক্তব্যের মানদ- বানিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামের কর্মদ্ধতিকে যে সাহাবায়ে কেরাম রাতের প্রথম এক চতুর্থাংশ ঘুমাতেন। এরপর দুই চতুর্থাংশ নামায পড়তেন। আর সহীহ বুখারীতে যে বর্ণনা রয়েছে তা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁরা ঘুমের পূর্বেই নামায পড়তেন। এতে হালিমী রহ. এর বক্তব্য খ-ন হয়ে যায়। তাছাড়া তার বক্তব্য অন্যান্য ইমামের বক্তব্যেরও বিপরীত। কারণ শাফিয়ী মাসলাকের ইমামগণ সময়ের ক্ষেত্রে তারাবীহ নামাযকে ঈশার নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন। আর এর বাহ্যিক অর্থ হলো, তারাবীহ নামাযকে শুরু সময়ে পড়া উত্তম। হালিমী রহ. অন্যান্য ইমামদের বিপরীত মত গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি ধারণা করেছেন, তিনি সাহাবায়ে কেরাম সম্বন্ধে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্য এবং যথার্থ। এ বর্ণনা যে শুদ্ধ নয় তা পূর্বে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং পূর্বে যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তাই যথার্থ। আর যদি শরুতে জামাতের সাথে তারাবীহ পড়া আর শেষ রাতে বিনা জামাতে তারাবীহ পড়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে জামাতের সাথে প্রথম রাত্রে তারাবীহ পড়াই উত্তম যদি জামাতের যাবতীয় বিধি ও শর্ত রক্ষা করা হয়। ইমাম ইবনে হাজর হাইতামী, আলফাতাওয়া আলকুবরা আলফিকহিয়্যাহ আলা মাযহাবিল ইমাম আশশাফিয়ী ২/৪৬-৪৭