মুহাম্মাদ ইরফান জিয়া
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তবে এখানে মুসলমানরা ছাড়াও হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য আরো কিছু ধর্মের লোক বসবাস করে। প্রত্যেক ধর্মের লোকদেরই আছে আলাদা ধর্মীয় কার্যক্রম ও উৎসব। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও এখানে নির্বিঘ্নেই তাদের উৎসব পালন করে থাকে। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসব পালন করাটা কোন অসুবিধার বিষয় নয়। বরং নিজস্ব গন্ডির মধ্যে অন্যান্য ধর্মের আচার-আচরণ পালন করতে দেয়া ইসলামেরও নীতি। কিন্তু বর্তমানে একটা শ্লোগান খুব জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ এই শ্লোগানটির ভেতর-বাহির নিয়ে যথেষ্ট বিশ্লেষণের অবকাশ আছে।
উদ্দেশ্য ও প্রয়োগক্ষেত্র
‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ -কথাটার বাহ্যিক অর্থ হলো, ‘ধর্মীয় দিক থেকে এক ধর্মের লোকের সাথে অন্য ধর্মের ভিন্নতা থাকলেও উৎসবের দিক দিয়ে সবাই এক। অর্থাৎ ধর্মের আচার-আচরণ সবাই নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী পালন করবে আর উৎসবগুলো সবাই একত্রে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পালন করবে। সে হিসেবে মুসলমানরা হিন্দুদের পূজায় শরীক হবে আর হিন্দুরা অংশ গ্রহণ করবে ঈদের নামাযে। বুদ্ধপূর্ণিমার দিনটা বৌদ্ধদের পাশাপাশি মুসলমানরাও উৎযাপন করবে।’
তবে বাইরের দিক ছাড়াও শ্লোগানটির ভেতরগত আরেকটি অর্থ আছে। সেটা হলো- অন্যান্য ধর্মের লোকেরা মুসলমানদের উৎসবে যোগ দিক আর না দিক; মুসলমানদের দায়িত্ব হলো সব ধর্মের উৎসবে যোগ দেয়া। প্রতি বছর পূজা বুদ্ধপূর্ণিমা বা বড়দিন এলে কথাটা খুব বেশি শোনা যায়। পূজা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের লোকেরা কথাটা বিভিন্নভাবে বলেন। সেসব অনুষ্ঠানে আগত রাজনৈতিক বক্তারাও কথাটা খুব গর্বের সাথে বলে থাকেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, এ শ্লোগানের প্রবক্তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘মুসলমানগণ’। অন্যান্য ধর্মলম্বীদের কার্যক্রম যাই হোক না কেন, মুসলমানরা যেন নিজ নিজ ধর্ম স্বস্থানে রেখে অন্য সব ধর্মের উৎসবে যোগদান করে; ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ ‘শ্লোগান দ্বারা মূলত এটাই উদ্দেশ্য।
মুসলমানদের জন্য ভিন্ন ধর্মের উৎসবে যোগ দেয়া বা তাদের উৎসবে আনন্দ প্রকাশ করা কিছুতেই বৈধ হতে পারে না। কারণ ধর্ম আর উৎসব একটাকে অন্যটা থেকে পৃথক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। অন্য ধর্মের উৎসবে একাত্মতা ঘোষণা করা মানে সে ধর্মের মাঝে নিজেকে একাকার করে দেয়া। বিষয়টা বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে ধর্মের সাথে উৎসবের সম্পর্কের বিষয়টা বুঝতে হবে।
ধর্মের সাথে উৎসবের সম্পর্ক
প্রত্যেক ধর্মের রীতিনীতির অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ হলো সে ধর্মের উৎসব। যেমন হিন্দুদের পূজা, যেখানে দেবতাদের আরাধনা করা হয়। সে হিসেবে সেটা হিন্দুদের একটা ধর্মীয় কাজ। আবার এই পূজাকেই ওরা বলে উৎসব। দূর্গাৎসব শব্দটা নিশ্চয়ই আপনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। এ বিষয়ে ইসলামের নীতি আরো মজবুত। ইসলাম সমর্থিত সকল উৎসবই ইবাদত। ইবাদত ছাড়া নিছক উৎসবের অনুমোদন ইসলামে নেই।
মদীনায় ইসলামপূর্বযুগে দু’টি উৎসব চালু ছিলো। নওরোজ ও মেহেরজান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে সে দু’টি উৎসব পালনের অনুমতি দেননি। বরং বিকল্প হিসেবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করতে বলেছেন। এই দু’টি উৎসবই ঈদের নামায আদায় করা প্রধান একটি কাজ। তাছাড়া ঈদুল ফিতরের আগে এক মাস রোজা রাখতে হয়। আর ঈদুল আযহাতে সক্ষম ব্যক্তিরা কুরবানী করে থাকেন। এমনকি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তাকে ঈদগাহে উপস্থিত হতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং বোঝা গেলো, ইসলামে নিছক কোন উৎসবের অস্তিত্ব নেই। এখানে সকল উৎসবই ধর্মীয় চেতনা সম্পন্ন।
অন্য ধর্মের উৎসবে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা
১. অন্য ধর্মের উৎসবসমূহে আল্লাহ তা‘আলার সাথে প্রতীমা ইত্যাদিকে শরীক করা হয় এবং প্রতিমা সমূহের পূজা করা হয়। অথচ ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ
‘আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না।’ সূরা নিসা, আয়াত: ৩৬
২. অন্য ধর্মের উৎসব সমূহে শরীক হওয়ার অর্থ হলো সেগুলোকে গ্রহণযোগ্য ধর্ম বলে স্বীকার করে নেয়া। অথচ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতেও সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫
৩.অন্য ধর্মের উৎসবে যোগ দেয়ার মাধ্যমে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করা হয়। অথচ যারা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে না তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করতে কঠোভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি নিজের বাবা-ভাইও যদি কাফের হয়, তবে তার সাথেও একই নীতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘হে ঈমানদারগন, তেমাদের পিতা ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের উপর কুফরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়, তবে তাদেরকে নিজেদের অভিবাবক বানিও না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিবাবক বানাবে, তারাই জালেম।’ সূরা তাওবা, আয়াত: ২৩
৪. এক বর্ণনায় খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন, اجتنبوا أعداء الله في عيدهم তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক। -আসসুনানুল কুবরা, হাদীস: ১৮৮৬২ ।
অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।’
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন
من بنى ببلاد الأعاجم وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.
অর্থাৎ যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে। -আসসুনানুল কুবরা, হাদীস: ১৫৫৬৩
সম্প্রীতি মানেই জগাখিচুড়ি নয়
অন্য ধর্মের উৎসবে যোগ দেয়ার বিষয়ে এসব স্পষ্ট বক্তব্য শুনে অনেকে হয়তো বলবেন, তাহলে ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্যগুলোর কী অর্থ হবে?
আসলে এসব প্রশ্নকারী অবুঝের মতো ধর্মের সাথে অধর্মকে গুলিয়ে ফেলেছেন। সব ধর্মের উৎসবকে একাকার করে ফেলাকে তারা সম্প্রীতি মনে করছেন। অথচ হাদীসে বার বার বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে,
خالفوا اليهود، خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ
‘ইয়াহুদী মুশরিকদের সাথে ভিন্নতা অবলম্বন করো।’
দেখুন, দশই মুহাররমে রোজা রাখা ইসলামে মুস্তাহাব। নবীযুগে দশই মুহাররমে ইয়াহুদীরাও রোজা রাখতো। তাদের সাথে যেন মিলে না যায় সে জন্যে রাসূল সা. দশই মুহাররমের আগের দিন বা পরে দিন আরো একটি রোজা রাখতে আদেশ করেছেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ৪/২৮৭, আল মাজলিসুল ইলমী, ইন্ডিয়া ।
যদি ভিন্ন ধর্মের সাথে উৎসবে শরীক হওয়ার মাধ্যমে সম্প্রীতি বজায় রাখার অনুমোদন থাকতো, তাহলে রাসূল সা. এই আদেশ করতেন না।
এমনিভাবে ইসলাম নামাযের আহবানের জন্যে নাসারাদের ঘণ্টা গ্রহণ না করে আযানের প্রচলন করেছে। অভিবাদনের জন্যে হাত উঠানোর প্রথাকে বাদ দিয়ে সালামের প্রচলন করেছে। সপ্তাহের পবিত্র দিন হিসেবে শনি রবি-কে গ্রহণ না করে জুমু‘আবারকে গ্রহণ করেছে।
এসব বিষয় থেকে এ কথা স্পষ্ট- সবকিছু একাকার করে ফেলার নাম সম্প্রীতি নয়। বরং সম্প্রীতির ক্ষেত্রে রয়েছে ইসলামের স্পষ্ট নির্দেশনা। এক ধর্মের সাধে অন্য ধর্মের সহবস্থানকে ইসলাম সমর্থন করে। প্রত্যেক ধর্মালম্বী যেন আপন আরাধনা স্বগণ্ডিতে নির্বিঘ্নে করতে পারে ইসলামে তার দিকনির্দেশনা রয়েছে। হযরত উমার রাযি. তার শাসনামলে ভিন্নধর্মালম্বীদের كنيسه কানীসা (উপাসনালয়) বনানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। নিজধর্মের আচার আচরণ পালন করার সুযোগ পাওয়া প্রত্যেক ধর্মলম্বীর অধিকার। সে অধিকার তাদেরকে যথাযথভাবে প্রদান করার নাম হলো সম্প্রীতি। আর সেখানে উপস্থিত হওয়া বাড়াবাড়ি এবং সম্পূর্নরূপে ইসলামী চেতনাবিরোধী।
এরচে’ বড় কথা হলো সম্প্রীতি রক্ষার ঠুনকো অজুহাতে অনেক আত্মমর্যাদাশূন্য মুসলিম ভিন্ন ধর্মের উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। অথচ ওরা কিন্তু কেউ আমাদের তারাবীহতে অংশগ্রহণ করছে না। রোজা রাখছে না বা ঈদের নামায পড়ছে না। আর কুরবানী করার তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমাদের পাশের দেশে তো রীতিমতো কুরবানীতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। গোমাতাকে রক্ষা করার নামে মুসলমানদের রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদের উৎসবের ব্যাপারে তাদের এই স্পষ্ট অবস্থানের পরও আমরা তাদের উৎসবে যোগদান না করলেই সম্প্রীতি বিনষ্টকারী হয়ে যাবো?
মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের সবক’টিতে ওরা শতভাগ অনুপস্থিত; আর উৎসবে সার্বজনীনতার এ শ্লোগান তুলে একতরফাভাবে আমাদেরকে ওদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বলা হচ্ছে। এটা তা খোদ এই শ্লোগানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রমাণ করছে যে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবা ’ শ্লোগানটি বাস্তবতা বিরোধী একটি শ্লোগান। পাশাপাশি এ চিত্রটি মুসলমানদের আত্মমর্যাদাবোধকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
ভিন্নধর্মের মানুষ যদি আমাদের উৎসবগুলোতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে; তারপরও তো আমাদের জন্য তাদের উৎসবে হাজির হওয়ার কোনো অবকাশ ছিলো না। কারণ, তাদের উৎসবগুলো শিরক ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উপস্থিত হওয়া বা তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করা মুসলমানদের জন্য কিছুতেই বৈধ নয়।
‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ বাক্যটা সবচে’ বেশি যারা ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও রয়েছেন। বর্তমানে তো অনেকে এর প্রয়োগও শুরু করে দিয়েছেন। পূজায় উপস্থিত হয়ে ঢোল-তবলা বাজিয়ে, সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে নিজেদেরকে অসম্প্রদায়িক বানানোর খুব চেষ্টা করছেন। তাদের প্রতি আমাদের নিবেদন হলো- কথাটাকে একটু পরিবর্তন করে যদি বলি, ‘রাজনৈতিক দল যার যার উৎসব সবার’ তাহলে কি তারা মানবেন? এক দলের বর্ষপূর্তিতে অন্যরা উৎসব করবেন? একদলের সভানেত্রীর জন্মদিনে অন্যেরা কেক কাটবেন?
বর্ষপূর্তি উদযাপন করা বা জন্মদিন পালন করা সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী, -সেটা ভিন্ন আলোচনা। এখানে কথা হচ্ছে- এক দলের বর্ষপূর্তিতে অন্য দলের আনন্দিত না হওয়ার চিরায়ত চিত্র এটাই প্রমাণ করছে যে, তারা নিজেদের দল থেকে উৎসবকে আলদা করে দেখতে পারছেন না। তাহলে ধর্মের চেয়ে উৎসবকে আলাদা করে দেখার দুঃসাহস তারা কিভাবে করেন?
বিষয় বুঝতে হয় বিশেষজ্ঞ থেকে
মূল সমস্যাটা তৈরী হয়েছে এখান থেকেই। যে কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে হলে সে বিষয়ের অভিজ্ঞদের শরণাপন্ন হতে হয়। বিশেষজ্ঞদের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর তাদের মতামতের প্রতি লক্ষ রেখে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে হয়। যদি মেনেও নিই যে, কথিত এই শ্লোগান যারা দিচ্ছেন তারা ভালো উদ্দেশ্যেই দিচ্ছেন, তবু ন্যুনতম ইনসাফের দাবী ছিলো এটাই- যেহেতু বক্তব্যটার সাথে ধর্ম শব্দটা যুক্ত আছে সে জন্যে এ বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ধর্মীয় ব্যক্তি তথা বিশেষজ্ঞ আলেমদের জিজ্ঞাসা করে নেয়া। কিন্তু তারা তা করেন নি। বরং স্বউদ্যোগে এটা বলছেন, প্রচার করছেন; ফলে অনেক মানুষ আজ বুঝে না বুঝে এ বাক্য আওড়াচ্ছে এবং ভ্রান্তিতে পতিত হচ্ছে।
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, বুঝে-না বুঝে যারাই এটা বলেন সবার প্রতি হৃদয়ের আহ্বান থাকলো- ‘দয়া করে অনুধাবনের চেষ্টা করুন, নিজের ঈমান বিনষ্টের পথে এগুবেন না! ধর্মীয় বিষয়গুলো বিশ্লেষণ ও বর্ণনার দায়িত্ব ধর্মীয় ব্যক্তিদের উপরই ছাড়ুন।’
সারকথা
১. ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ কথাটি সম্পূর্ণ শরীয়ত ও বাস্তবতা বিরোধী। এ কথা বলা ও বিশ্বাস করা কোন মুসলমানের কাজ হতে পারে না।
২. ভিন্ন ধর্মের উৎসবে যোগ দেয়া মুসলমানদের জন্য কিছুতেই বৈধ নয়।
৩. তাদের অনুষ্ঠানের সাথে একাত্মতা পোষণ করা বা শুভেচ্ছা জানানোও অবৈধ।
৪. মুসলিম প্রশাসক ভিন্ন-ধর্মের লোকদেরকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে রেখে স্বীয় ধর্মের উৎসব-আরাধনার সুযোগ করে দিতে পারেন। কিন্তু সেসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া বা সেসব অনুষ্ঠানকে সার্বজনীন বলে স্বীকৃতি দেয়া শরীয়তসম্মত নয়।
৫. যারা এতদিন এ শ্লোগানের পক্ষে কথা বলেছেন বা একে সঠিক মনে করেছেন তাদের উচিৎ এ মুহূর্তে তওবা করে নেয়া এবং ভবিষ্যতে ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাউফীক দান করেন। আমীন।