নীল সাগরের তীরে (১)

মুফতি হাফিজুর রহমান


[অনুসন্ধিৎসা- মানুষের একটি মহৎ গুণ। জানার আগ্রহের সিঁড়ি বেয়ে মানুষ অনেক উঁচোয় উঠে যেতে পারে। এ অনুসন্ধিৎসার রয়েছে নানা সূত্র। নাক কান মুখসহ মানুষের প্রধান অঙ্গগুলো কম বেশের ব্যবধানে অনুসন্ধিৎসার একেকটি সূত্র। অনুসন্ধিৎসাকে যথাযথ রূপে পূর্ণতা দিতে হলে গণ্ডিবদ্ধতাকে দু পায় মাড়াতে হয়। পৃথিবীর খ্যাতিমানেরা অতি কাছের গণ্ডিরেখাকেও সযত্নে লঙ্ঘন করেছেন। সংকোচিত গণ্ডির মাঝে নিজেকে সপে দিলে তারা আজ পৃথিবীর মুখে মুখে উচ্চারিত হতেন না। শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলোতেও এ বিষয়টিতে সবিশেষ যত্ন দেখিয়েছে। অনুসন্ধিৎসাকে ষোলকলায় পূর্ণতা দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গণ্ডিবদ্ধতাকে ছিন্ন করতে যে জিনিস বা শব্দটিকে আমরা প্রয়োগ করি সেটা হলো সফর, ভ্রমণ কিংবা ট্যুর। বিনোদন ব্যবসাসহ নানা মানসিকতা নিয়ে মানুষ সফর করে। মানুষ, রুচি ভেদে এ মানসিকতায় ব্যবধান দেখা দেয়। যে সফরের সাথে অনুসন্ধিৎসা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে সেটাই শিক্ষাসফর। কখনো সখনো অনুসন্ধিৎসা কিংবা শিক্ষাকে মূল উপাদান বানিয়ে সফর করা হয় না। প্রাসঙ্গিকভাবে ও জিনিসটা এসে যায়। ওটা বস্তুত শিক্ষা সফর নয়। যখন বিনোদন তার মৌলিকত্ব হারিয়ে প্রাসঙ্গিকতায় গিয়ে দাঁড়াবে আর অনুসন্ধিৎসাটা হবে মূল প্রতিপাদ্য তখনি সেটা শিক্ষাসফর রূপে পরিগণিত হবে। শিক্ষা বা অনুসন্ধিৎসার রয়েছে বিধানিক, অবিধানিক নানা মাত্রিকতা। সবকিছু শিখতে নেই। সবকিছু জানতে নেই। সবকিছু জানার আগ্রহও জন্মাতে নেই। আমাদের জীবন সংবিধানে যেটা শেখার অনুমতি রয়েছে শুধু সেটাই শিখব, সেটাই জানব । এ সীমাবদ্ধতাকে ডিঙানো নীতিমানের কর্ম নয়। অনীতিমানেরাই কেবল গাঁট ছাড়া সীমানাহীন হতে পারে।

অনুসন্ধিৎসার এক ঝুড়ি আগ্রহ নিয়ে রাহমানিয়ার এক ঝাঁক অনুসন্ধিৎসু পাড়ি জমিয়েছিল সাগর পাড়ের সবুজ ভূমে। তারা তাদের তারুণ্যদীপ্ত অনুসন্ধিৎসা দিয়ে চাটগাঁয়ের মাটিকে খুঁটে খুঁটে দেখতে চেষ্টা করেছে। অনুসন্ধিৎসার আবেদনে কখনো এরা সাগর তীরের হাঁটু জলে পা ডুবিয়েছে। কখনো আকাশ ছোঁয়া পাহাড় চূড়ায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনোবা নারকেলের ঝিরঝিরে পাতার ছায়ায় ঠাঁই নিয়েছে। বক্ষ্যমান সফরপাতাটি এ অভিযাত্রারই একটি কাঁচা হাতের গোঁজামিল উপস্থাপনা। বস্তুত এ সফরনামাটির শব্দ সাজাতে গিয়ে তারুণ্য মানসিকতাকে ক্ষণিকের জন্যও দমানো যায় নি। সাথে শিক্ষার ঝুলিটিও তেমনভাবে পাশে ছিল না। তাই পাঠক দু এক পশলা অনুসন্ধিৎসার উপাদান পেলেও পেয়ে যেতে পারেন। তবে জাঁদরেল অনুসন্ধিৎসুদের জন্য হয়ত এখানে তেমন কিছু নেই। সফর ডেট সোমবার, ২৫.০১.’১০]

পেছন ফিরে দেখা

আমার চার পাশের সবুজ এ পৃথিবীটা একদিন ছিল না। ছিল না রহস্যঘেরা এ মহাজগত। জমাটবদ্ধ ধোঁয়া পিণ্ডের এক মহা বিস্ফোরণে এক সময় তৈরি হয় নিখিল এ বিশ্ব ভুবন। তারই একচিলতে মাটির আস্তর সবুজ এ পৃথিবী। এখানে এক কালে প্রাণের আবাস ছিল না। মহামহিমের কুশলী হাতে প্রথমে সৃজিত হয় অশরীরী জিন সমাজ। এরপর সময়ের পালাবদলে ধূলো কাদায় তৈরি হয় পৃথিবীর আদি মানুষটি। পৃথিবীর মাঠে ঘাটে মানুষের পদচারণা ধারা তখন থেকেই শুরু হয়।

অনন্ত এক মহাকাল ব্যাপী এ পৃথিবীতে আমি ছিলাম না। পৃথিবীর আলো বাতাসে ছিল না আমার অণু প্রমাণু। একসময় আমার উপকরণ তৈরি হয়। খাদ্য, রক্ত, জিনকোষ, জমাটরক্ত এবং মাংসপিণ্ডের পর্যায়গুলো পেরিয়ে আমি বেজায় ছোট্ট একটি অন্তঃসত্ত্ব বলে গণ্য হই। তখন আমার বাস নীরব নিস্তব্ধ রক্ত মাংসে গড়া ছোট্ট একটি কুঠরিতে। মুঠোয় মুঠোয় সময় পেরিয়ে শিশু শব্দ গায়ে মেখে একদিন বেরিয়ে আসি আলো বাতাসের এ পৃথিবীতে। ফুটফুটে শৈশব পেছনে ফেলে পা বাড়াই দুরন্ত কৈশোরে। উতল কৈশোরের পাঠ চুকিয়ে এখন জীবন যৌবনের বালিয়াড়ি প্রান্তরে আমি আমরা।

এক চিলতে মাটির উপরে পা দুটো জড়ো করে বসে আছি। স্কেল মাপে এক দেড় বর্গ ফুট হবে হয়তো। আরো কিছু জায়গা মিলে একটি কুঠরি। বেশ কটি কুঠরি গায়ে গায়ে লেগে আধো পাকা বাংলোর মতন দুচালা একটি ঘর। দুচালার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে এর নাম হয়েছে প্রতিষ্ঠান। আকাশ ছোঁয়া আরো কটা প্রাসাদ মিলে একটি মহল্লা কিংবা এলাকা। দু’ চারটে এলাকার দলবদ্ধ রূপ একটি ওয়ার্ড।-পল্লি-গায়ে পা বাড়ালে একটি ফর্দ বেড়ে ইউনিয়ন হবে। বালু সিমেন্টের এ গিজগিজে শহরে বাড়তি এ ফর্দটি নেই।- এক ঝাঁপি ওয়ার্ড মিলে নাম হয়েছে থানা কিংবা উপজেলা। আশ পাশের আরো কটা থানাকে জড়ো করে তার নাম করা হয়েছে জেলা। দু’চারটে জিলার সমন্বিত রূপ হলো বিভাগ।- দূর দেশে গেলে প্রদেশ নামের আরেকটি ফর্দ বেরোবে। আমরা ছোট; তাই আমাদের ওটা নেই। আমাদের ছোট্ট এ সীমানায় আমাদের দেশের নামটাই তো ধরে না। প্রদেশ রাখবো জায়গা কোথায়? -এমন ছ’ সাতটি বিভাগ নিয়ে আমাদের বাংলাদেশ।

এবার সীমানা পেরিয়ে আরো কটি দেশ পাশাপাশি হয়ে গঠিত হয়েছে একটি উপমহাদেশ।-উপমহাদেশ শব্দের ব্যবহারটা আর কোথাও আছে কি না জানি না।-এরূপ কটি উপমহাদেশ জড়ো হয়ে একটি মহাদেশের গড়ে উঠা। এভাবে সাতটি মহাদেশ মিলে মিশে আমাদের এ সবুজ পৃথিবী।

মহাশূন্যে আমাদের পৃথিবীটা নেহাত ছোট্ট একটি গ্রহ। ছোট বড় এগারোটি গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে আমাদের সৌরপরিবার। দিনের আলোয় দুচোখ মেলে যে আলোক বস্তুটি আমরা সূর্য নামে দেখি সেটা এতটুকু একটা তারকা বৈ কিছু নয়। এমন দশ হাজার কোটি সৌরজগত নিয়ে আমাদের ছায়াপথ। অসীম এ ছায়াপথের কোনো এক কোণে পড়ে আছে আমাদের ছোট্ট সৌরজগতটি। এরূপ আনুমানিক দশ কোটি ছায়াপথ নিয়ে আমাদের এ মহাবিশ্ব।

এ মহাজগতের বিশালতা কতটুকু? বোধ করি প্রশ্নটা যে কারো জন্যে অনধিকার চর্চা কিংবা অনবগতি প্রসূত বলে স্বীকৃত হবে। যদি কেউ বলে পৃথিবীতে কটা বালুকণা আছে? প্রশ্নকর্তার অভিধাটা আর বলছি না। তবে এ প্রশ্নটার একটা উত্তরকে সম্ভাবনার ডোরে গাঁথা গেলেও মহাজগতের বিশালতা সম্বন্ধে কোন কাউন্টিং করা যাবে না। কল্পনারাও এখানে বড় অসহায়। আর হিসাব বিজ্ঞান এ জায়গাটায় মুখ থুবড়ে পড়ে বারবার রক্তাক্ত হয়। যদি এক এর পরে শূন্য বসাতে আরম্ভ করি। এক সময় কালি ফুরিয়ে যাবে, কাগজ শেষ হয়ে যাবে; তবু মহাজগতিক এ বিশালতার ব্যাপ্তি শেষ হবে না।

মহাশূন্যের এ বিশালতা সম্বন্ধে সামান্য একটু ধারণা লাভের জন্যে বিজ্ঞানী সমাজ ‘আলোকবর্ষ’ শব্দটি তৈরী করেছেন। সেকেণ্ডে আলো এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল অতিক্রম করে। তো এক মিনিটে! এক ঘন্টায়!! একদিনে!!! এক সপ্তাহে!!!! এক মাসে!!!!! সবশেষে এক বছরে সে আলো কতটা সীমানা অতিক্রম করে!!!?!! এক বছরের এ দূরত্বটাই হলো আলোকবর্ষ। মহা এ বিশ্বজগতের ব্যাপ্তি এক দুশো কিংবা এক দু হাজার আলোকবর্ষ নয়। আরো বেশি। কত বেশি তা শুধু তিনিই জানেন যিনি তৈরী করেছেন এ বিশ্বজগত।

যদি আমার দুটো পাখা গজাত! যদি ডানা ঝাপটিয়ে কোন এক ছায়াপথের কিনারায় গিয়ে বসতে পারতাম!! তবে কি দেখতে পেতাম আমাদের এ সবুজ পৃথিবী। দুচোখের সীমানায় কি ভেসে উঠত আঁকা বাঁকা সে পাহাড়ি পথ। সাগর পাড়ের সারি সারি নারিকেল বীথিকা। ..যদি এমন হতো!

কোন ছায়াপথে কি আছে পাহাড়ি ঝরনা,  আঁকা বাঁকা গিরিপথ এবং আকাশছোঁয়া পাহাড় চূড়া। কোনো সৌরজগতে কি আছে সাগর নদী কিংবা বালু চিকচিকে সাগর পাড়। হয়তো বা আছে। বিজ্ঞানীদের পদরেখা আর কটা গ্রহেই বা পড়েছে। অজানা গ্রহগুলোতে হয়তো আছে সপ্তাশ্চর্যের চে’ বড় কিছু। সেসব কি আমরা দেখতে পাবো?

কোন ছায়া পথে যদি নির্মিত হতো কোটি গুণ উঁচু কোন বুর্জ খলিফা। তার প্রান্ত চূড়ায় চড়ে যদি দেখতে পেতাম মহাজগতের সবটুকু সুন্দর! শিবচরের কৃতি ছেলে ফজলুর রহমান (এফ আর খান) যদি পারত মহাজাগতিক এমন স্থাপনা গড়ে দিতে!

মানুষ বিজ্ঞানের রকেট ছুটিয়ে পারি জমাচ্ছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। অজানাকে জয় করতে জীবনের সবটুকু সাধনাকে বিলিয়ে দিচ্ছে। তবু মহামহিমের সৃষ্টির কতটুকুই বা তারা জানতে পেরেছে। তাইতো জগতখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন জীবনের বেলা ভূমিতে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে বলেছিল,  জ্ঞান সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে বালুকণা নিয়ে খেলা করেই জীবনটা শেষ হয়ে গেল; সমুদ্র জলে আর নামা হলো না!

মহাজগতের কোনো এক কোণে অসহায় পড়ে থাকা প্রমাণুর মত এ পৃথিবীর অধিবাসী আমরা। ছোট্ট এ পৃথিবীর অনেক কিছুই আমরা জানি না। সপ্তাশ্চর্যের কোন একটিও তো এ যাবৎ ছুঁয়ে দেখি নি। আরো কত কিছু যে লুকিয়ে আছে আমাদের অজানা জাম্বিলে তার হিসাব কে নেবে? ছোট্ট পৃথিবীর ছোট্ট দেশ আমার সবুজ বাংলাদেশ। এর কত কিছুই তো আমরা দেখি না, জানি না।

মানুষ বেড়াতে ভলোবাসে। উঠোন পেরিয়ে দু’পা বাড়াতে তার খুব ইচ্ছে করে। দু’দণ্ড ঘুরে বেরাতে মনটা উতালা হয়। অজানাকে জেনে আনন্দ পায়। অদেখা জিনিসের ছোঁয়া পেয়ে বিমুগ্ধ হয়। ঘুরে ঘুরে পৃথিবীর সুন্দরগুলোকে নেড়ে চেড়ে গভীর করে দেখতে চায়।

জীবনের অনেকগুলো পাতা ঝরে গেছে। দেখেছি অনেক কিছু। লব্ধ হয়েছে অনেক অভিজ্ঞতা। তবে দুর্গম গিরি পথ, আকাশ ছোঁয়া পাহাড়চূড়া, পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া অবিরল ঝরনা ধারা, সাগর পাড়ের ভেজা সৈকত, সমুদ্রের শো শো গর্জন, সাগর ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ গুঞ্জন, সাগর তীরের সারি সারি নারিকেল বীথিকা- এসব দেখা হয় নি দুচোখ মেলে। ঘুরে বেড়াবার এতটুকু সুযোগও হাতমুঠো হয় নি কখনো। হৃদয়ে স্বপ্ন ছিলো পাহাড়ি পৃথিবীটাকে হেঁটে দেখার। সে স্বপ্ন পাপড়ি মেলে সুবাস ছড়ায় নি অনেক দিন। দিনের সূর্য পাটে নেমেছে, দিগন্ত রেখা হারিয়ে গেছে, তবু রাতের আঁধার কেটে ভোর আসে নি। দিগন্ত রেখায় আলো ফুটে নি।

এক দিন ক্লান্ত দুপুরে বসে আছি দুচোখ মেলে। আমার চোখের সীমানায় একটি বেঞ্চি। তার উপর এক দুটো গ্রন্থ। একটি ডানা মেলা পাখির মত উন্মুক্ত হয়ে আছে। চোখ দুটো আমার ওতেই জুলজুল করছে। গভীর কী যেন পড়ছি। আচমকা দরজা ঠেলে এগিয়ে আসে একজন মানুষ। আনমনা ভেঙ্গে সাদা কাগজের গা থেকে চোখ দুটোকে উপরে তুলি। দেখি সহপাঠী মাহমূদ! ঠোটের কিনারায় এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে আমার কাছটায় এসে বসে। কথার ফাঁকে বেড়াতে যাবার সুন্দর একটা জিনিস আমার সামনে তুলে ধরে। আমি আনমনা ভেঙ্গে প্রকৃতিস্থ হতে চেষ্টা করি।গম্ভীরতা তখনো আমার চোখে মুখে ছলছল করছে। ভেবে পাই না কি বলব? চট করে হ্যা বলে ফেলতে সাহস পাচ্ছি না। একটি ভ্রমণযাত্রা মানে অনেক কিছু। এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ব্যাপার স্যাপার। মনে হল আমার চোখের সামনে এক টুকরো তেতুল ঝুলছে। ভেজা রসনাটি রসে চপচপ করছে। ওর দিকে হাত বাড়াবো কি বাড়াবো না দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগি। শেষে এক অজানা সাহসে অস্পষ্ট সম্মতিটা দিয়েই ফেলি। ভ্রমণ হবে সুন্দরবনে। মনে মনে বাঘ হরিণের দেশ দেখার আনন্দে উতালা হই। রাতের স্বপনে টাইগার কুমির আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। আর মুখ হা করে বলে, এসো এসো আমাদে দেশে এসো, তোমাদে মজা করে খাব। ভয়ে গা শিউরে উঠে। সময়ের ফাঁকে ফাঁকে কল্পনার সাম্পানে চড়ে ভেসে বেড়াই সুন্দরবনের আঁকা বাঁকা জলপথে। চোখের তারায় ভেসে উঠে সপ্নমাখা সুন্দরবন।

সহযাত্রীদের সীমানা বেড়ে চলে। সুন্দরবনের কথা মুখে মুখে গুঞ্জরিত হয়। এখানে ওখানে ছোট ছোট জটলায় প্রমোদ বিহারের ফিসফিসে শব্দ। এদিক ওদিকে বেশ সাড়া পড়ে যায়। এক দু’ করে দিনগুলো বহতা নদীর মত বয়ে চলে।

কদিন পর আমার মনে হয় পা দু’টি যেন ক্রমে পেছনে সরে যাচ্ছে। সাত পাঁচের ভাবনায় সমুখে এগুবার সাহস খুঁজে পাই না। কে যেন আমাকে পিছন দিকে টেনে চলছে অবিরাম। সুহৃদ মহমূদ মঝে মধ্যে এসে অমার আগ্রহের গতি সীমানা মেপে যায়। প্রথম দু একদিন উৎফুল্লমাখা হ্যাঁ জবাব দিয়ে মন জুড়িয়েছি। পরে একদিন মলিন হেসে বললাম, ভাই ! আমি যেতে পারছি না। আমার আগ্রহের দেয়ালে চিড় ধরেছে। কাঙ্ক্ষিত জবাব না পেয়ে সুহৃদ মাহমূদ মুখটাকে শুকনো করে চলে যায়।

বাবা চলে গেছেন কিছু দিন হলো। শোক তাপের ছাপ চিহ্ন এখনো শুকায় নি। এর উপর ছোট ভাইটা গাড়ীর চাপায় পড়ে ঘরপড়া হয়ে আছে। ওর পিছনে ছুটাছুটির শেষ নেই। বাড়িটা অগোছালো পড়ে আছে। ছুটিতে বাড়িতে অনেক কাজ। এ সময় আনন্দ ভ্রমণ! ভাবতেও কষ্ট হয়। দেহটা চলে গেলেও হৃদয়টা পড়ে থাকবে সবুজ গায়ের ঐ গৃহকোণে। বেরোবে না এক ফোঁটা আনন্দ হাসি। আগ পিছ মিলিয়ে আমি জায়গায় থেমে যাই। এতটুকু পা নাড়াবার সাহস হয় না।

একদিন রোদেলা ভোরে সতীর্থ মাহমূদের সাথে দেখা। চোখে মুখে রাজ্যের হাসি। কিছু বলার আগেই দু ঠোটের ফাঁক দিয়ে কটা শব্দ ছুড়ে দেয়; আমি আপনার সাথে আছি। আমি চোখ দুটো কপালে তুলে বলি, আরে! আপনি আমার সাথে ছিলেন না কবে। ব্যাপারটা খুলে বলুন। এবার মাহমূদ পাতলা গলায় বলে, সুন্দরবন যাওয়া হচ্ছে না। এখন ওখানে বনদস্যুদের বড় উৎপাত।

এক দিন শুকনো গাঙ্গে আবার জোয়ার আসে। ঝরা পাতার শূন্য ডালে গজিয়ে উঠে কচি সবুজের সুন্দর পাতা। প্রমোদ যাত্রা এবার সুন্দরবন ছেড়ে সিলেট অভিমুখে। আমার ভিতরে উঁকি দিয়ে উঠে চা বাগানের সবুজ স্বপ্ন। অনুভবের ডানা মেলে উড়ে যাই জাফলঙের পাথুরে ভূমে। আঁখি মেলে দেখি রাশি রাশি জামারায়ে যমযম।

অনিঃশেষ পাথরের বিশাল মজুদ এখানে। অবিরাম সরবরাহ করে চলছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তবু পাথরের শেষ নাহি হয়। চা বাগানের ছায়ায় ছায়ায় চষে বেড়াই আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ। হৃদয়ের আয়নায় ভেসে উঠে ভোলাগঞ্জ,  চরগ্রাম এবং তমাবিলের মন ছুঁয়ে দেয়া ছবিগুলো। কর্ণ কুহরে ধ্বনিত হয় মাজার পুঁজারী ছেচকা ফকিরদের হুক্কা হাওয়া শব্দগুলো। শাহ জলাল, শাহ পরাণ রহ. এর আহ শব্দগুলো যেন আমার হৃদয়ের তলদেশে গিয়ে ক্ষত রেখা সৃষ্টি করে দেয়। কল্পনার পাখা মেলে উড়ে বেড়াই সিলেটের আকাশে বাতাসে। দু চোখ ভরে দেখি স্বপ্নআঁকা ছবিগুলো।

মানুষের প্রকৃতি বড় বৈচিত্র্যময়। সুখের ছোঁয়া পেলে নিমিষেই ভুলে যায় পেছনের সব দুঃখ। আমিও ভুলে যাই আমার মাথার উপরে থাকা এক ঝাকি কষ্টের কথা। মনটাকে ঝরঝরে করে ছুটে যেতে ইচ্ছে হলো সীমান্ত ঘেষা সিলেট ভূমে।

কিন্তু দু’দিন পর সিলেটের আবেদন ফুরিয়ে য়ায। এবারের অভিযাত্রা উতাল পাতাল ঢেউয়ের দেশে। স্পটের ফর্দও বেড়ে যায়। প্রাথমিক তথ্য উপাত্তে অনুমিত হয় চট্টগ্রামের সৌন্দর্য্য বিবেচনায় সিলেটের মূল্যমান জিরো পয়েন্টে। তবে এ মানসূচক নির্ণয় সব দিক থেকে বিশুদ্ধ নয়। কিছু কিছু সৌন্দের্য্যে সিলেটের স্বাতন্ত্র্য অবশ্যই রয়েছে। নতুবা এমনি কি ভ্রমণস্পটে সিলেটের নাম উঠেছে? প্রতিটি ফুলের সৌন্দর্য্য সৌরভে ভিন্নতা রয়েছে। কম বেশ কিছু ব্যাপারে তো ব্যাবধান হতেই পারে।

সিলেটের আছে প্রাতিস্বিক ঐতিহ্য। মরক্কোর জগৎখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা যে নদীটিকে তার ভ্রমণ লিপিতে নীল দরিয়া নামে অভিহিত করেছেন সেটা সিলেটের সুরমা নদী। সুরমা বিধৌত সিলেট সম্বন্ধে আর্য পণ্ডিতরা বলত ‘শ্রীহট্ট মধ্যমা নাস্তে’। মানে সিলেট কোন মাধ্যম ধরনের জনপদ নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সুষমায় এটাকে তুলনা করা হয় ভূস্বর্গ কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের সাথে। বিশাল এ উপমহাদেশে শ্রী শব্দ যোগে গঠিত নামকরা মাত্র দুটি জনপদ রয়েছে। প্রথমটি শ্রীনগর আর দিত্বীয়টি ‘শ্রীহট্ট’ অর্থাৎ সিলেট। হিন্দু পণ্ডিতদের ব্যাখ্যায় যেখানে শ্রীর হাত পড়েছে সেটাই শ্রীহট্ট। আর মুসলিম ব্যাখ্যায় শেষ হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দর হাতে গড়া প্রাচীর ডিঙ্গানোর সময় শাহ জালাল রহ. বলেছিলেন ‘শিল হট’। মানে হে পাথর সরে যা। ইংরেজরা তাদের বানানে লিখত sylet । শেষ অবধি শাহ জালাল র. এর দেয়া সে নামেই বিশ্ব মাঝারে পরিচিতি লাভ করে সুন্দর এ জনপদটি। তবে এ তথ্যবৈষম্য নিয়ে আরো গবেষণা হতে পারে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর ‘হাকালুকি’ এশিয়ার নামকরা অথিতি পাখীদের অভয়ারণ্য ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’ আর এ উপমহাদেশের সব চেয়ে বড় গ্রাম ‘বানিয়াচং’ এ সিলেটেই অবস্থিত। এ জন্য জাত মানে, গর্ব গৌরবে, সৌন্দর্য্য মাধুর্যে সিলেটও পিছিয়ে নেই কোনো অংশে।

পূর্ব আকাশে সূর্য হাসে। আলো বিলিয়ে আবার হারিয়ে যায় আঁধার গহীনে। গাছে গাছে পাখি ডাকে। ঝিরঝিরে বাতাস বয়। বাগ বাগিচায় নানা ফুল ফুটে। দিন রাত বয়ে চলে আগের মত মহা কালের অবিরাম পথ চলায়। এক দু করে তুরাগ পাড়ের মহাসমারোহ শেষ হয়। যে যার মত ছুটে যায় আপন ঠিকানায়। আর আমি পা দুটোকে শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকি আপন জায়গায়। যেন দূর যাত্রার অনন্দঘন ঝড়ো হাওয়া আমাকে টলিয়ে না দেয়। সতীর্থরা ফিরে এলে ছুটে যাব মদারীপুর। সব গুছ গাছ। বাড়ীর সবাই জানে আমি আসছি। দিন তারিখও ঠিক।

মধ্য রাতের কোন এক প্রহরে শূন্য আয়তনটা ভরে যায়। মধুপাখিগুলো সমারোহ থেকে ফিরে এসেছে গভীর রাত করে। দূর পাল্লার সতীর্থরাও উপস্থিত। বাকিরা পৌঁছে যাবে যথাসময়ে। রাত পোহায়ে ভোর নেমেছে। আমি এক আধটু করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কী যেন একটা প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে আছি। হয়তোবা গোছানো জাতীয় কিছু হবে। চিকন করিডোর পথ বেয়ে থপ থপ করে হেঁটে যায় মাহমূদ ভাই। তখন জানালার ফাঁক গলিয়ে হাসি মুখে হালকা গলায় বলে যায়, তৈরী হোন তৈরী হোন। আমি ঝটিকা শব্দ দু’টোর আগা মাথা কিছুই অনুমান করতে পারি না। কিছু সময় পর হুড়মুড় করে আবার দৌঁড়ে আসে সে মানুষটি। শব্দ দু’টো তখনো আমার মাথায় দাপাদাপি করছে। ওর ছড়ানো কুয়াশা তখনো কাটে নি। মানুষটা তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে পুরাতন সে হাসিটার সাথে কিছুটা গাম্ভির্য মিশিয়ে বলে আসেন আসেন। আমি ভড়কে গেলাম। কোথাও কিছু হল না তো! কিন্তু সেটাও পরিস্কার নয়। কারণ তার চোখে মুখে লেগে আছে প্রচ্ছন্ন হাসির রেখা। এতটুকু অনুভূত হলো, আমার সামনে যে ব্যপারটি এসে দাঁড়াবে সেটা ফেলনা কিংবা গুরুত্বহীন কিছু নয়। এর চে বেশি কিছু বুঝার আমার সাধ্য হলো না। আচমকা তড়িৎকর্মা বনে যাওয়া এ মানুষটাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবো তারও  সুযোগ নেই। আর জিজ্ঞেস করে কত পার্সেন্ট লাভ হবে তার একটা খসড়া হিসাব আমার হাতে আগে ভাগেই প্রস্তুত হয়ে আছে। তাই অনর্থক শব্দ ব্যয় না করে আগ পিছ না ভেবে পিছনে পিছনে হন হন করে হাঁটতে হল। গুরফাতুল ইসতিরাহায় (প্রিন্সিপ্যালের বিশ্রাম কক্ষ) আমাকে ঢুকিয়ে দিয়ে ‘এই যে’ শব্দটি উচ্চারণ করেই মাহমূদ চম্পট। আমি ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘরে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দিরটার মত থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। যেন আমি ছাউনি চিড়ে সোজা আকাশ থেকে পড়লাম। লাল দালানের মুখশুকনো মানুষগুলোও এক আধটু সুযোগ হাতে পায়। আমার কপালে সেটুকুও জুটে নি। আমি যেন তাদের চে’ বড় কিছু করেছি। মাহমূদ মুরগীর ছানা খাওয়া উড়াল পঙ্খির মত আমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে এসে এখানে রেখে উড়ে চলে গেল দূর আকাশে। সামনে সুহৃদ আতাউল্লাহ। দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে। কিছুটা দূরে শুআইব খচমচ করে কী যেন গুছাচ্ছে। আমাকে নিয়ে কি হচ্ছে, হবে বুঝতে পারছি না। তবে অনুমান হলো, এভাবে আসামী করে আমাকে তুলে আনতে বলা হয় নি। এ টু জেট পুরোটাই মাহমূদের হাতে গড়া ষড় নয়; সপ্তযন্ত্র। এ মানুষটার মাথায় দুষ্টুমি গিজগিজ করে। সব সময় এক গাদা দুষ্টুমি মাথায় করে ঘুরে বেড়ায়। কিছু একটা পেলে ওর গা জুড়ে দুষ্টুমির রঙ চড়িয়ে দেয়।

আতাউল্লাহ হালকা করে হেসে বলল চলুন। এবার নাটকের অভিনয়টা পরিষ্কার হল। আমি আমার সে পুরনো না কে মুখে তুলে আনি একটু গাড় করেই। কারণ আমার সব গোছানো। আজ ছোট ভাইকে নিয়ে ভাইয়া ঢাকায় আসবেন। ডাক্তার দেখিয়ে রাতে তিন ভাই মিলে বাড়িতে যাবো। আতাউল্লার অনুরোধের রঙটা এবার আরেকটু গাঢ় হল। পাশ থেকে খচমচে ব্যস্ত শুআইবের অনুরোধ এসে জড়ো হয়। এ মানুষটা ঝরে পড়া পাপড়ি ছিল। অনুরোধের তুফানে আবার জায়গা মত এসে লেগে গেছে। এখন আমাকে নিজেদের কাতারে ভিড়ানোর জন্য অনুরোধের ঝড় তুলতে হাত মিলাচ্ছে। মনের অজান্তে আমার অনিচ্ছার দেয়ালে চিড় ধরে যায়। আমার ভেতরকার অনিচ্ছার শক্ত আবরণটা কেন যেন -বুঝি না- ফুটো বেলুনের মত চুপসে যেতে থাকে। গুছিয়ে রাখা অনিচ্ছার উপকরণগুলো ধূলো বালু হয়ে কোথায় যেন হু হু শব্দ করে উড়ে যেতে শুরু করে। ‘অনিচ্ছার আদলে গড়া দেয়াল যত কঠিনই হোক আনন্দ যাত্রার অভিঘাতে তা নিমিষেই বিচূর্ণ হয়ে যায়’ ব্যপারটা খুব উপলব্ধ হলো। কথা বাড়ানোর শক্তি পেলাম না। যেন সব অবস হয়ে আছে। কথার আঁচল খানা গুছিয়ে আস্তে করে বেরিয়ে আসি। মাথায় আমার এক আকাশ ভাবনা। ভাইয়াকে কি বলব। আম্মার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কি জবাব দেব। গভীর ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকি। ভিতরে সুখ শঙ্কার খুনসুটি হয়। সমতালে বয়ে চলে অন্যরকম এক রণধারা। সময়ের রঙ্গিন আবরণে আনন্দ বিজয় লালিমা ছড়ায়। মুঠোয় মুঠোয় সময়ের তালে প্রাপ্তির আনন্দ ঘনিভূত হয়।

আচমকা খোলা বাতায়ন বেয়ে মনটা বাড়ীর উঠোনে গিয়ে দাঁড়ালে হৃদয়ের মাঝখানটায় চিনচিনে ভাব অনুভূত হয়। আবার কল্পনার ডানা মেলে সাগর পাড়ের নারিকেল ছায়ায় পাড়ি জমালে ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকা চেহারাটি আলো ঝলমলে হয়ে উঠে। চোখমুখ জুড়ে আলোর ফোয়ারা বয়ে যায়।

কি পরে বেরুবো। মন্থিত পরিচ্ছেদ তো আলী ভাইয়ের ঘরে। দোকান মেলবে দশটায়। মাইক্রো ছেড়ে যাবে এখনি। গায়ে আমার দু তিন দিনের পুরনো জামা। দূর পাল্লার প্রমোদ বিহারে বেরুচ্ছি; ঝলমল করা কিছু না হলে কি হয়? সবার আপাদ-মস্তক ঝিলমিল করছে। মনটা একটু ব্যথিত হল। মানুষের যেমন হয়। ভাই আতাউল্লাহ বলল, এটা পরেই চলুন। আমার গায়ে কিছু না থাকলেও যেন আমাকে যেতে হবে। গায়ের জামা গায়ে রেখেই তৈরি হলাম। অবশ্য আমার জামার রঙ্গের একটা মহত্ত্ব ছিল। ধুলে যেমন না ধুলেও তেমন। নতুন পুরনোতে কোন প্রভেদ নেই। ব্যাপারটা ভেবে একটুখানি সান্ত্বনা পেলাম।

সাথে একটা ব্যাগ নিতে হবে এবং কিছু অনুষঙ্গ। তাই ব্যাগটা গুছাচ্ছি। এ সময় আতাউল্লাহ তাড়া করে বলে যায় সাথে ডয়েরীটিও নিয়েন। আমার মাথায় একটি জিজ্ঞাসা অঙ্কুরিত হয়। ডায়েরী? ডায়েরীর সাথে এ দূর যাত্রার যোজনা কিসের? খানিক পর কথাটার অর্থ খুঁজে পাই। ভ্রমণ গাঁথা লেখার সাথে এ ডায়েরীটার আলাদা একটা যোগসূত্র আছে।

আমি ছোট্ট এ জীবনে আঁকাবাঁকা অনেক পথ হেঁটেছি। স্বপ্ন ছিল সবগুলো পদরেখাকে ডায়েরীর সাদা পাতায় স্মৃতি করে রাখব। স্বপ্নের সবগুলো পাপড়ি প্রস্ফুটিত হয় নি। দু চারটে পাপড়ি মেলেছে হয়তো। আবার কিছু কিছু অর্ধাঙ্গ হয়ে অসহায় পড়ে আছে ডায়েরীর পাতায়। যেন দেখার কেউ নেই। তবে এগুলো ভ্রমণ বলতে যেটা বুঝি তেমন কিছু ছিল না। উপভ্রমণ কিংবা মিনি ভ্রমণ জাতীয় কিছু একটা বলা যেতে পারে। আমার জীবনে এটাই সর্বপ্রথম এবং সম্পূর্ণ ভ্রমণ অভিযাত্রা। এ ভ্রমণটাকে স্মৃতিময় করে রাখতে একটু ভিন্ন মাত্রা দিতে হবে। বিষয়টির দিকে নখ উঁচিয়ে গেল ভাই আতাউল্লাহ। র‌্যাক ঘেটে ডায়েরীটি খুঁজে বের করে ব্যাগের ভিতরে ঢুকালাম।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *