মুহাম্মাদ ইরফান জিয়া
দ্বিতীয় কিস্তি
[ধরার বুকে চাঁদের আলো]
হস্তী বাহিনীর ঘটনার বছর রবিউল আউয়াল মাস।(১) এ মাসের সোমবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন। তারিখটি কেউ বলেছেন, দুই। কেউ বলেছেন, তিন। কেউ আবার বারো বলেছেন। এছাড়া আরো কিছু মতামত রয়েছে।
নবীজীর মা তাঁকে আইয়ামে তাশরীকে গর্ভধারণ করেন। জামরায়ে উস্তার কাছাকাছি স্থানে।(২) এ ব্যাপারে ভিন্নমতও রয়েছে।
নবীজীর জন্মের রাত। পারস্য সম্রাট কিসরার প্রাসাদটি হঠাৎ দুলে উঠলো। এর শব্দে গুঞ্জরিত হলো সব। ভেঙ্গে পড়লো সে প্রাসাদ থেকে চৌদ্দটি অলিন্দ।
পারস্যের (অগ্নিমন্দিরে প্রজ্জ্বলিত) আগুন। হাজার বছর ধরে যেটি বিরামহীন জ্বলছিলো। সেটিও নিভে গেলো। শুকিয়ে গেলো সাওয়া হ্রদ।(৩)
[দুধের শিশু মুহাম্মাদ]
হালিমা বিনতে আবি যুআইব হুযালি। নবীজীকে দুধ পান করিয়েছেন। তাঁর কাছে অবস্থানকালেই নবীজীর বক্ষবিদারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে বের করে আনা হয়েছে অকল্যাণের অংশ। তারপর সেটা হিকমত ও ঈমানের মাধ্যমে পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে।(৪)
হালিমা রাযি. ছাড়াও শিশু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুধ পান করিয়েছেন আবু লাহাবের দাসী সুওয়াইবা আসলামি।
(মায়ের মৃত্যুর পর) শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালন করেছেন উম্মে আইমান। নবীজী নিজ পিতার মিরাসসূত্রে উম্মে আইমানের মালিক হয়েছিলেন।
বড় হয়ে উম্মে আইমানকে মুক্ত করে দিয়েছেন নবীজী। তাকে বিবাহ দিয়েছেন যায়দ ইবনু হারেসার সাথে।
টীকা:
(১) পাঁচশত একাত্তর ঈসায়ী সনের ফেব্রুয়ারীর শেষ কিংবা মার্চ মাসের প্রথমভাগে হাবশার সম্রাটের পক্ষ থেকে নিযুক্ত ইয়ামানের গভর্নর আবরাহা কা’বাকে ধ্বংস করতে মক্কায় আসে। তার সাথে ছিলো ষাটহাজার অস্ত্র এবং বেশ কয়েকটি হাতি। আল্লাহ তা‘আলা এ বাহিনীকে হাতি সমেত পাখির ঝাঁক থেকে নিক্ষিপ্ত কংকরের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেন। তখন ছিলো মুহাররম মাস। এ ঘটনার দু’মাসের মধ্যেই রবিউল মাসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন। -আর রাহীকুল মাখতুম: ৫১।
(২) জামারায়ে উস্তা, হাজীগণ যে তিনটি স্থানে পাথর নিক্ষেপ করে থাকেন সেগুলোর মাঝেরটি। মা আমিনার পিত্রালয় ছিলো জামারায়ে উস্তার কাছে। -টীকা, নুরুল উয়ুন ফী তালখীসি সীরাতিল আমীনিল মামুন।
(৩) দালায়েলুন নবুওয়াহ, ১/১৭৪।)শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. -এ বর্ণনাকে সনদের বিচারে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। -আল মাসনু’ ফি মা’রিফাতিল হাদীসিল মাওযু’ পৃষ্ঠা:১৮।
(৪) সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৪৩১, বা-বুল ইসরা বিরাসুলিল্লাহ।