রাসূল সা. এর ছায়া ও তাঁর সৃষ্টিগত উপাদান প্রসঙ্গে বিতর্ক সংলাপ

মুফতী হাফিজুর রহমান

১ম :

হুজুর পাক (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না । সূর্যের আলোতেও না , চাদের কিরণেও না ।হাকীমে তিরমিযীনাওয়ারেদূর উসুল কিতাবে হযরত যাকওয়ান (রাঃ) থেকে এইবর্ণনাটি উপস্হাপন করেছেন । ‘নূর’ – হুজুর পাক (সাঃ) এর নাম মোবারকসমূহেরঅন্যতম নাম । নূরের কোন ছায়া হয় না ।  উম্মুল মোমেনিন হযরত আয়েশা (রাঃ)হতেবর্ণিত, “আমি এক রাত্রে সুই দিয়ে কিছূ সেলাই করছিলাম, তখন হঠাৎ করেআমার হাত থেকে সুইটা পড়েযায় । আমি ইহা খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না । তখন হুযুর (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন। সুইটা তখন উনার মুখের উজ্জ্বলতায় জ্বলজ্বল করছিলো ।” কুরআনে মহানবী (সাঃ) কে নূর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছেঃ এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, মহানবী (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না।

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ মহানবী (সাঃ)কে নূর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।  ‘হে আহলে কিতাবগণ ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমণ করেছেন । কিতাবেরযেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে,তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশকরেনএবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন । তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছেএবংএকটি সমুজ্জ্বল গ্রন্হ ।” (সূরা মায়েদা – ১৫) “হে নবী ! আমিআপনাকেসাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহরআদেশক্রমে তার দিকে আহ্বায়করূপেএবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে ।” (সূরা আল-আহযাব -৪৫/৪৬)

হাদিস থেকে বর্ণিতঃ  হাদিস-১/ সাঈয়েদিনা হাকিম তিরিমিযি উনারনাওয়ারিদূল উসুল গ্রন্হে, মহানবী (সাঃ) এর একজন নিকটতম সাহাবী সাঈয়েদিনাযাকওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ” মহানবী (সাঃ) এর ছায়া সূর্যেরআলোতে বা চাদের কিরণেও দেখা যেত না ।” 

হাসিদ২/ আল্লামা ইবনে আল-জাওযি উনার কিতাবূল-ওয়াফা গ্রন্হে মহানবী (সাঃ)চাচাত ভাই সাঈয়েদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ” নবী (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না, যখন উনি সূর্যের সামনে দাড়িয়ে থাকতেনতখনও নয় বরং উনার আলোর তীব্রতা সূর্যের আলোকে ম্লান করে দিত ; যখন কোনজ্বলন্ত আলোর সামনে বসে থাকতেন তখনও না বরং উনার বিকিরিত আলোর দীপ্তি অন্যআলো থেকে বেশী হত।”

হাসিদ৩/ ইমাম নাসাফি উনার তাফসীর মাদারিক গ্রন্হে মহানবী (সাঃ) এর জামাতউসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,” সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনারছায়াকে মাটিতে পড়তে দেননি যেন কোন মানুষ তা মাড়াতে পারে “

হাসিদ৪/ ইমাম জালালুদ্দিন সয়ূতি উনার কাসায়েসুল কোবরা গ্রন্হে ইবনেসাবা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ” এটা মহানবী (সাঃ) এর একটি স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্য ছিলো যে উনার ছায়া মাটিতে পড়ত না কারণ তিনি ‘নূর’ ছিলেন এবংযখন তিনি সূর্যের আলোতে হাটতেন তখন উনার ছায়া দেখা যেতনা ।” 

সূত্রঃ  ১. মাদরিজ উন নবুয়ত । শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) । 

২. মুক্কশাফাতূল ক্বুলুব -ইমাম গাজ্জ্বালী (রহঃ)

২য় :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো ছায়া ছিল না বলে যে কথাটিআপনি শুনেছেনতা সত্য নয়। বরং এ সংক্রান্ত যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তার সবইজাল এবং পরিত্যাজ্য।শায়খ ইবনে উসাইমিন রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো ছায়া ছিল নাবলে যেসব কথা বলা হয় তার সবই মিথ্যাএবং বানোয়াট।

আলকাউলুল মুফীদ ১/৬৮। এ বিষয়ে আরোবিস্তারিত জানতে দেখুন, মারকাযুদ্দাওয়া আলইসলামিয়া এর শিক্ষাসচিব,হাদীস শাস্ত্রের প্রাণপুরুষ শায়খআব্দুলমালেক দা.বা. এর নির্দেশনায় রচিত প্রচলিত জাল হাদীস (প্রথমপ্রকাশনা) ১৮৮।

১ম :

আপনার  এ হাদীসগুলর কোন সত্যতা নেই। এগুলো জাল হাদীস। সহিহ হাদিস দিয়ে প্রমাণ করুন।

২য় :

ভাই! আপনি হলেন বাদি। সুতরাং আপনাকেই বিশুদ্ধ এবং ত্রুটিমুক্তহাদীস এবংআসার (সাহাবী উক্তি) এর মাধ্যমে প্রমাণ করে দেখাতে হবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম এর ছায়া ছিল না। হাদীসের নামে যেসব বর্ণনা আপনি উল্লেখ করেছেনহাদীস শাস্ত্রবিদদের মতে তার একটিও শুদ্ধ নয়। অনুগ্রহপূর্বক একটি বিশুদ্ধহাদীস উপস্থাপন করুন।

১ম :

দয়া করে আমার উত্তরটি দেখুন এবং বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দেখুন। আর হ্য ইসলাম কোন মুরব্বি ও শিক্ষকের কথায় চলেনা; চলে হাদীস ও কুরআনের কথায়।তাই সহিহ হাদীস দিয়ে সাজিয়ে উত্তর দিবেন। এব্যপারে হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা গাজ্জালি (রহঃ) পর্যন্ত বলেছেন। তাই এটিমানা আমাদের জন্য জরুরি।

আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ

২য় :

ভাই ! আমাকে আপনার উত্তরটি পুনর্বার পাঠ করতে বলেছেন। আমি একবার পাঠ করেছি। আপনার নির্দেশনায় আমি আপনার প্রদত্ত উত্তরটি আরেকবার পাঠ করব। তবে মুহতারাম! একটু সময় দিতে হবে। আশা করি সময় দিবেন।

ভাই! আপনিআপনার ভূমিকা কথনে সুঁই প্রাপ্তি সংক্রান্ত যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন তার তো কোনোসূত্র উল্লেখ করেন নি। হাদীসটি কি সহীহ?বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারবেন হাদীসটি সহীহ? আমাদের বিশ্লেষণ মতে হাদীসটি সম্পূর্ণ জাল। মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসটিকে জাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ হাদীসটির সনদে মাসআদা ইবনে বাকারফারগানী নামক একজন রাবী আছেন। তিনি মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আবু আউন থেকে মিথ্যা হাদীসবর্ণনা করেন। দেখুন, আলআসারুল মারফুআহ ফিল আখবারিল মাউযুআহ ৪৫।

রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মুবারকের আলোতে যদি ঘর আলোকিত হয়ে গিয়ে থাকে তবে তো তাঁরগৃহে আলো-বাতির ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজন হতো না। তবে কি  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলো-বাতিব্যবহার করতেন না? উত্তরে কি বলবেন জানি না।

ভাই ! আপনি আপনার দাবির সপক্ষে প্রথম যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন আপনার উপস্থাপনায় হাদীসটি হলো “ ১/ সাঈয়েদিনা হাকিম তিরিমিযি উনারনাওয়ারিদূল উসুল গ্রন্হে, মহানবী (সাঃ) এর একজন নিকটতম সাহাবী সাঈয়েদিনাযাকওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ” মহানবী (সাঃ) এর ছায়া সূর্যেরআলোতে বা চাদের কিরণেও দেখা যেত না ।‍”  হাদীসটির আরবী পাঠ নিম্নরূপ :

اخرج الحكيم الترمذي عن ذكوان ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل في الشمس ولا في القمر

الخصائص الكبرى 1/122

হাকিম তিরমিযী বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসটি জাল। কারণ, প্রথমত হাদীসটির সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনে কাইস যাফরানী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। এ বর্ণনাকারীকে বিজ্ঞ রিজাল শাস্ত্রবিদ আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী এবং ইমাম আবু যুরআ রহ. মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন। আবু আলী সালেহ ইবনে মুহাম্মদ রহ. বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে কাইস যাফরানী হাদীস জাল করত। এ ছাড়াও তার সম্বন্ধে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম নাসায়ী রহ. প্রমুখ প্রখ্যাত হাদীস শাস্ত্রীয় মনীষীদের কঠোর উক্তি রয়েছে। দেখুন, তারীখে বাগদাদ ১০/২৫১, মীযানুল ই’তিদাল ২/৫৮৩, তাহযীবুত তাহযীব ৬/২৫৮।

দ্বিতীয়ত দীর্ঘ একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার নিকট জান্নাত উপস্থিত করা হয়েছিল। তাতে বিশাল বৃক্ষরাজি দেখতে পাই। যেগুলোর ছড়া ঝুঁকানো ছিল। তা থেকে কিছু নিতে চাইলে আমার প্রতি প্রত্যাদেশ জারি হলো, আপনি পিছনে সরে দাঁড়ান। আমি পিছনে সরে দাঁড়ালাম। তারপর আমার নিকট জাহান্নাম উপস্থিত করা হলো। যা আমার এবং তোমাদের সামনেই ছিল। এমনকি তার আগুনের আলোতে আমার ও তোমাদের ছায়া পর্যন্ত আমি দেখেছি। মুস্তাদরাকে হাকেম ৫/৬৪৮, হাদীস ৮৪৫৬।

অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, …রবিউল আউয়াল মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নব রা. এর নিকট গেলেন। ঘরে প্রবেশের প্রাক্কালে যয়নব রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছায়া দেখতে পান। তখন বলেলন, এতো কোনো পুরুষের ছায়া বলে মনে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আমার নিকট আসেন না। তাহলে এ ব্যক্তি কে? ইত্যবসরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন। মুসনাদে আহমদ ৭/৪৭৪, হাদীস ২৬২৫৩।
এ জাতীয় সহীহ হাদীসগুলো আপনার উপস্থাপিত সুঁই বিষয়ক হাদীসটির সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। সুতরাং উক্ত হাদীসটি পরিত্যাজ্য বিবেচিত হবে।

তৃতীয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোদে বা চাঁদের আলোতে সাহাবীদের সামনে পথে-ঘাটে জীবনে বহুবার চলা ফেরা ও উঠা বসা করেছেন। যদি রোদে বা চাঁদের আলোতে তাঁর ছায়া না-ই হতো তাহলে বিপুল সংখ্যক সাহাবীর মাধ্যমে তা বর্ণিত হতো। কারণ সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা বার্তা, চালচলন, আচার-ব্যবহার সবকিছু বর্ণনা করার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেষ্ট ছিলেন। অথচ ছায়া না থাকার ব্যাপারে কোনো সহীহ বর্ণানই পাওয়া যায় না। একজন সাহাবী থেকেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে তা বর্ণিত হয় নি। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, পূর্বোক্ত বর্ণনাটি সম্পূর্ণ মনগড়া।

উল্লেখ্য, আপনি লিখেছেন, ‘সাঈয়েদিনা হাকিম তিরিমিযি’।কিন্তুশুধু সইয়িদুনা লিখলে সাইয়িদুনা ই লিখতে হবে। এক্ষেত্রে সাইয়িদিনা বলা বা লেখা ব্যকরণগত দৃষ্টোকোণ থেকে ভুল। শব্দটি তিরিমিযী নয়; তিরমিযী। আপনি হাকিম তিরমিযীর গ্রন্থের নাম লিখেছেন ‘নাওয়ারিদূল উসুল’। গ্রন্থটির শুদ্ধ নাম হলো নাওয়াদিরুল উসুল। দ এর উপর দীর্ঘ উ কার দেওয়ার কোনোই যৌক্তিকতা নেই। 

আপনি দ্বিতীয় যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, তা হলো,‘হাসিদ২/ আল্লামা ইবনে আল-জাওযি উনার কিতাবূল-ওয়াফা গ্রন্হে মহানবী (সাঃ) চাচাত ভাই সাঈয়েদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ” নবী (সাঃ) এর কোন ছায়া ছিলো না, যখন উনি সূর্যের সামনে দাড়িয়ে থাকতেন তখনও নয় বরং উনার আলোর তীব্রতা সূর্যের আলোকে ম্লান করে দিত; যখন কোন জ্বলন্ত আলোর সামনে বসে থাকতেন তখনও না বরং উনার বিকিরিত আলোর দীপ্তি অন্য আলো থেকে বেশী হত ।‌’

আপনি ইবনুলজাওযী রহ. রচিত গ্রন্থ আলওয়াফা বি আহওয়ালিল মুস্তফা এর খণ্ড এবং পৃষ্ঠা নাম্বারউল্লেখ করেন নি। যা উদ্ধৃতি নিয়মের পরিপন্থী। ইবনুল জাওযী রহ. তাঁর এ সীরাতগ্রন্থটিতে অনেক জাল হাদীস এনেছেন। তার মধ্যে আলোচিত হাদীসটি অন্যতম। যদিও তিনিগ্রন্থটির ভূমিকায় বলেছেন, ‘আমি এ গ্রন্থে শুদ্ধ বর্ণনার সাথে মিথ্যা বর্ণনার সংমিশ্রণ করব না।’ (১/২২)।

কিন্তু তিনি তাঁর গ্রন্থের সব জায়গায় তার এ কথা রক্ষা করতে পারেন নি। তাইতাঁর গ্রন্থটির সম্পাদক ও টিকাকার আল আযহার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞ প্রফেসর শায়খমুহাম্মদ যুহরী নাজ্জার ১ নম্বর খণ্ডের ২২ নম্বর পৃষ্ঠার পাদটিকায় খুব আক্ষেপ করেবলেছেন, ‘হায়! যদি তিনি নিজের উপর আরোপিত এ শর্তটিকেরক্ষা করতেন! অনেক জায়গায় তিনি শুদ্ধ বর্ণনাকে মিথ্যা বর্ণনার সাথে মিশ্রিত করেফেলেছেন।’

গ্রন্থটিতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হরিণের কথোপকথন বিষয়ক হাদীসটি এনেছেন। ১/৫০৫। অথচ হাদীসটি রিজাল শাস্ত্রবিদদের ভাষ্য মতে জাল। ইমাম ইবনে কাসীর, সাখাবী রহ.সহ অনেক বিদগ্ধ মনীষীগণ হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন আলমাসনু’ ফি মা’রিফাতিল হাদীসিল মাওযু’ ১/৮০, আলমাকাসিদুল হাসানাহ ১/২৫৫

উপরন্তু আপনি হাদীসের রেফারেন্স এমন একটি গ্রন্থ থেকে দিয়েছেন যে গ্রন্থটি সিরাত বিষয়ক। এটা হাদীসের কোনো গ্রন্থ নয়। হাদীসের উদ্ধৃতি হাদীসের গ্রন্থ থেকেই দিতে হয়। এবং হাদীসের এমন গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স দিতে হবে যে গ্রন্থে গ্রন্থকার নিজস্ব সনদে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এটা হাদীস শাস্ত্রের একটি অন্যতম মূলনীতি। ইবনুলজাওযী রহ. নিজস্ব সনদে আলোচিত হাদীসটি উল্লেখ করেন নি। আমাদের বিশ্লেষণ মতে সেখানে হাদীসটির সূত্রপরম্পরা উল্লেখিত হয়নি। সুতরাং এটি হাদীসটির উদ্ধৃতিযোগ্য গ্রন্থনয়।

জেনে রাখা প্রয়োজন, ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন সে একটি হাদীস উল্লেখ করলেই তা সহীহ হয়েযায় না। হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য হাদীস সহীহ হওয়ার যাবতীয় শর্তগুলো উপস্থিত থাকতেহয়। এখন আপনি বলুন, আলোচিত হাদীসটিতে হাদীস হাসান বা সহীহহওয়ার যাবতীয় শর্তগুলো উপস্থিত আছে কি না? ইমাম আহমদ ইবনেহাম্বল জগত খ্যাত একজন মুহাদ্দিস। তিনি মুসনাদ শিরোনামে সুবিশাল গ্রন্থ লিখেগেছেন। কিন্তু সে গ্রন্থের সব হাদীসই কি সহীহ বা হাসান? সবহাদীসই কি গ্রহণযোগ্য? ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। সেখানেওপরিত্যাজ্য অনেক হাদীস চলে এসেছে। ব্যক্তি বড় কথা নয়; হাদীসটিসহীহ কি সহীহ নয়, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য কি গ্রহণযোগ্য নয়-এটাই মূল বিষয়।

আলোচিত হাদীসটিতে উল্লেখিত হয়েছে ‘উনার আলোর তীব্রতা সূর্যের আলোকে ম্লান করে দিত।’ব্যাপারটি যদি এমনই হয় তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরসূর্যের আলোতে ছায়া গ্রহণের প্রয়োজন ছিল না। অথচ সহীহ হাদীসে রয়েছে, রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যের আলোতে ছায়া গ্রহণ করেছেন। সহীহবুখারীর দীর্ঘ একটি হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরগায়ে রোদ লাগলে আবু বকর রা. অগ্রসর হয়ে নিজ চাদর দ্বারা তাঁকে ছায়া দানকরেন। সহীহ বুখারী ১/৫৫৫, হাদীস৩৯০৫

অন্য এক হাদীসে আছে, জাবের রা. বলেন, আমরা নজদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ময়দানে প্রচুর কাঁটাযুক্ত  বৃক্ষ ছিল। দুপুরে বিশ্রামের সময় হলে ছায়া গ্রহণের জন্য তিনি বৃক্ষের নিচে আশ্রয় নেন। সহীহ বুখারী ২/৫৯৩, হাদীস ৪১৩৫

এ ধরনের সহীহ হাদীসের সামনে হাদীস নামের আলোচিত বর্ণনাটির কি গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে?

আপনি তৃতীয় যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, তা হলো, ‘ইমাম নাসাফি উনার তাফসীর মাদারিক গ্রন্হে মহানবী (সাঃ) এর জামাত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,” সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনারছায়াকে মাটিতে পড়তে দেননি যেন কোন মানুষ তা মাড়াতে পারে।’

প্রথম কথা হলো, তাফসীর গ্রন্থ থেকে হাদীসের রেফারেন্স গ্রহণযোগ্য নয়। হাদীসের রেফারেন্স দিতে হলে সনদ তথা সূত্রপরম্পরাযুক্ত হদীস গ্রন্থের রেফারেন্স দিতে হবে। নতুবা তা ধোপে টিকবে না। হাদীস ব্যবহার করতে হলে হাদীসের ব্যকরণ মেনেই তা ব্যবহার করতে হবে। হাদীসের শাস্ত্রজ্ঞ মনীষীদের সাজেশন অনুসারেই হাদীসের লেন দেন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত নাসাফী রহ.তাঁর তাফসীর গ্রন্থে হাদীসটির সনদ উল্লেখ করেন নি। এছাড়া আরো অনেক গ্রন্থকারই হাদীসটিকে তাদের গ্রন্থে এনেছেন। কিন্তু সনদ উল্লেখ করেন নি। আর এটা স্বতঃস্বীকৃত বিষয়, সনদ বিহীন হাদীসের কোনোই গ্রহণযোগ্যতা নেই। আপনি একটি বিষয়কে প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। সুতরাং সনদসহ সহীহ হাদীসের রেফারেন্স দ্বারা বিষয়টা প্রমাণ করা আপনার দায়িত্ব। ইসলামী আইনের অন্যতম একটি মূল নীতি হলো, বাদী বা দাবিদারের জন্য অবশ্য কর্তব্য, তার দাবির সপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা। সুতরাং আপনাকে যৌক্তিক এবং বিশুদ্ধ হাদীসের মাধ্যমে যথাস্থান থেকে রেফারেন্স দিয়ে আপনার দাবির বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। বিষয়টি আমি প্রথমেই উল্লেখ করেছি।

আর একটি হাদীস সহীহ বা হাসান হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার জন্য প্রথমত হাদীসটির সনদ প্রয়োজন। এরপর সনদের মাঝে হাদীস সহীহ হওয়ার শর্তগুলো বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন। তবেই হাদীসটিকে প্রমাণযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।

ব্যক্তি যত বড়ই হোক তাঁর গ্রন্থে কোনো হাদীস উদ্ধৃত হওয়ার অর্থই হাদীসটি সহীহ হওয়া নয়। বরং হাদীসটির সনদ যাচাইপূর্বক বক্তব্যই হাদীসটির শুদ্ধাশুদ্ধির পরিচিত প্রদান করবে।

আরবী ভাষায়একটি প্রবাদ আছে  لكلفنرجال। অর্থাৎ প্রত্যেক শাস্ত্রের জন্য স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ রয়েছে। এ নীতিটি সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইমাম গাযালী রহ. (গাযযালী বলা বা লেখা ভুল। দেখুন আলআনসাব লিসসামআনী) অনেক বড় মাপের ব্যক্তি ছিলেন বটে। কিন্তু তিনি হাদীস শাস্ত্রেরব্যক্তি ছিলেন না। ইমাম গাযালী রহ. তাঁর মূল নীতি গ্রন্থ আলমানখুল ফি তা’লীকাতিলউসূল এর শেষ পৃষ্ঠায় (৩৭৪) বেশ স্পষ্ট করে বলেছেন হাদীসের ক্ষেত্রে হাদীসশাস্ত্রজ্ঞ মনীষীদের বক্তব্যই গ্রহণযোগ্য হবে।

চতুর্থ নাম্বারে আপনি যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন তা হলো, ‘ইমাম জালালুদ্দিন সয়ূতি উনার কাসায়েসুল কোবরা গ্রন্হে ইবনে সাবা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ” এটা মহানবী (সাঃ) এর একটি স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্য ছিলো যে উনার ছায়া মাটিতে পড়ত না কারণ তিনি ‘নূর’ ছিলেন এবং যখন তিনি সূর্যের আলোতে হাটতেন তখন উনার ছায়া দেখা যেতনা ।’

এ হাদীসটিও ইমাম সুয়ূতী রহ. সনদসহ উল্লেখ করেন নি। সুতরাং তা গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। ইমাম সুয়ূতী রহ. অনেক বড় ব্যক্তিত্ব হলেও তিনি হাদীস বর্ণানর ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল ছিলেন। ফলে তার হাদীসের গ্রন্থগুলোতে অনেক অগ্রহণযোগ্য এবং পরিত্যাজ্য হাদীসও চলে এসেছে। তাঁর আলজামিউস সাগীর এবং আলজামিউলকাবীর তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তাঁর এ গ্রন্থদ্বয়ে বেশ কিছু জাল হাদীস চলে এসেছে। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আহমদ আলগুমারী তাঁর আলমুগীর আলাল আহাদীসিল মাওযুআহ ফিল জামিয়িস সাগীর গ্রন্থে আলজামিউস সাগীর এর ৪৫৬ টি হাদীসকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ বিষয়ে আরো অনেক কিছু বলার আছে। সেদিকে আর অগ্রসর হচ্ছি না।

উল্লেখ্য, সুয়ূতী রহ. এর সীরাত গ্রন্থটির নাম হলো আলখাসায়িসুল কুবরা। আপনি যে নাম উল্লেখ করেছেন তা শুদ্ধ নয়।

ভই ! হৃদয়ে যথেষ্ট উদারতা ধারণ করি। গ্রহণযোগ্য এবং বিশুদ্ধ বর্ণনা পেলে আপনার দাবি মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনি আপনার উপস্থাপিত হাদীসগুলোকে সহীহ বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রের আলোকে সেগুলো কি করে সহীহ হয় অনুগ্রহপূর্বক আমাদেরকে জানাবেন।

ভাই! আপনি বলেছেন, ইসলাম কোনো মুরব্বী বা শিক্ষকের কথায় চলে না। ইসলাম চলে কুরআন হাদীস দ্বারা। আপনার এ মূল্যবান উক্তিতে আমি অতিশয় মুগ্ধ হয়েছি। আপনার এ বক্তব্যের আলোকে ইমাম গাযালী রাহ. কিছু বললেই তা আমাদের জন্য মানা জরুরী হয় না; তবে যদি তাঁর বক্তব্য কুরআন হাদীসের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় তবে সেটা মানা জরুরী হবে। তবে সেটা তাঁর কথা হিসেবে নয়; কুরআন হাদীসের বক্তব্য হিসেবে। আশা করি আপনার এ মূল্যবান উক্তির আলোকেই আমার বক্তব্যটি পাঠ করবেন।

ভাই! অনেক ভাল থাকুন। আপনার কারণে আমি সত্যিই উপকৃত হয়েছি। এজন্য আবার ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।

৩য় ২য়কে লক্ষ করে :

আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নুর মানেন??

২য় :

ভাই! রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নূর মানি। তবে সৃষ্টিগত ও গঠনগতদিক থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃশ্যমান নূর ছিলেন-এবিষয়টি কুরআন হাদীসের শক্তিশালী এবং বিশুদ্ধ দলীলের অভাবে মেনে নিতে পারিনা। যদিঅনুগ্রহপূর্বক বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে প্রমাণ করে দেখাতে পারেন তবেযথেষ্ট উদারতারপরাকাষ্ঠা দেখাতে সক্ষম হবো। বস্তুত রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসেরতৈরি? এ প্রশ্নের উত্তর জানার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন :

১. আল্লাহ তা‌‌‌‍‍‍আলা কয় শ্রেণীর জীবকেশরীয়তের বিধানাবলী পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন
২. তাদের সূচনা সৃষ্টির উপাদান কি ছিল
৩. সে উপাদানের ধাতুগত বৈশিষ্ট কি ছিল
৪. নূর শব্দের আভিধানিক ও ব্যবহারিক অর্থকি
৫. মান-মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠিকি

এর উত্তরে আমরা বলি,
 ১. আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণীর জীবকে শরীয়তের বিধানাবলী পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন ১.ফেরেশতা ২. জিন ৩. মানুষ।

২. ফেরেশতাসৃষ্টির উপাদান হলো নূর তথা আলো। জিন সৃষ্টির উপাদান হলোআগুন। মানুষ সৃষ্টিরউপাদান হলো মাটি। ত্রিসৃষ্টর গঠনগত এ উপাদানের কথাআলকুরআনে স্পষ্টভাবে একাধিকবারআলোচিত হয়েছে।

৩. আলো-আগুনের ধাতুগতবৈশিষ্ট হলো,এগুলোর দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং ভার নেই। এবংএগুলো ধরা ছোঁয়া যায়না। আর মাটির ধাতুগত বৈশিষ্ট্য হলো এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং ভারসবই আছে। এবংপঞ্চইন্দ্রীয় দ্বারা তা অনুভবও করা যায়। মানুষের মাঝে তার সৃষ্টিগতউপাদানের সবগুলো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান রয়েছে। তবেফেরেশতা এবং জিন সম্প্রদায়েরমাঝে তাদের সৃষ্টিগত উপাদানের মধ্য হতে দর্শনীয় বৈশিষ্টকে বিলুপ্ত করাহয়েছে।অবশিষ্ট বৈশিষ্টগুলো যথাযথভাবে বিদ্যমান রয়েছে।

৪. নূর একটিআরবী শব্দ। এর অর্থ আলো বাজ্যোতি। নূরের বিপরীতার্থক শব্দ হলো যুলমাহ।অর্থ অন্ধকার। আরবী ভাষায় নূর শব্দটিদৃশ্যমান আলো এবং রূপক ও অদৃশ্য আলোতথা জ্ঞান- উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যুলমাহশব্দটিও নূর শব্দের মত দৃশ্যমানআঁধার এবং রূপক আঁধার অর্থে ব্যবহৃত হয়। নূর-আলোর এদ্বিবিধ অর্থের ব্যবহারসম্বন্ধে কুরআন সুন্নাহে অসংখ্য বর্ণনা বিবৃতি বর্ণিত হয়েছে। নূর শব্দটিকোথায় কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা শব্দের প্রয়োগরীতি এবং পূর্বাপরবিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হবে। যে স্থানে নূর শব্দদ্বারাঅদৃশ্য নূর উদ্দেশ্য সেখানে দৃশ্য নূরের ব্যাখ্যা করা তেমনিভাবে যেখানেদৃশ্যনূর উদ্দেশ্য সেখানে অদৃশ্য নূরের ব্যাখ্যা করা অর্থগত বিকৃতি বৈকিছুই নয়।

৫. মান-মর্যাদা ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্যপ্রাপ্তির মাপকাঠি হলঅদৃশ্যমান নূর; দৃশ্যমান নূর নয়। সুতরাং রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামকে মাটির তৈরি বলা হলে তাঁর মর্যাদা হানি হবে আরফেরেশতাদেরকেনূরের তৈরি বলা হলে তাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে যাবে-ব্যাপারটি এমননয়। নতুবা জিন-ফেরেশতাদের মর্যাদা নবীদের মর্যাদার চেয়ে অনেক বেশি হত।

একথা সর্বজন বিদিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব সম্প্রদায়ের একজন ছিলেন এবং মানব মণ্ডলীর সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, হেনবী আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। ( সূরাকাহফ- ১১০) আর মানুষেরগঠনগত উপাদান হল মাটি। আলকুরআনে এ ব্যাপারটি বহুবার উল্লেখিতহয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টিতে মাটি বিনে অন্য কোনো উপাদান ব্যবহার করেছেন বলে কোথাও কোনো প্রমাণ নেই।

আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা নামের যে সম্প্রদায়কে নূরের উপাদানে সৃষ্টি করেছেন তাদের অস্তিত্বকে মানুষের পক্ষে পঞ্চ ইন্দ্রীয়েরমাধ্যমে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তাদের এ বৈশিষ্ট্যের সাথেতাদের সৃষ্টিগতউপাদানের সাযুজ্য বেশ লক্ষণীয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরেশতাকুলের মত নূরের সৃষ্ট হলে নূরের আবশ্যকীয় বৈশিষ্টের কারণে তাঁকে অন্তত ধরা ছোঁয়ার কোনো অবকাশ ছিল না।

অথচ এটা প্রমাণিত সত্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে ধরা-ছোয়াসহ মানবীয় যাবতীয় বৈশিষ্টইবিদ্যমান ছিল। এমনকি চাঁদ-সূর্যের আলোতেওরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিচ্ছায়া সৃষ্টি হত। অথচ মানবীয় এসব বৈশিষ্ট নূর তথা আলোকবৈশিষ্টের স্পষ্ট পরিপন্থী। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃশ্যমন নূরের সৃষ্ট ছিলেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মান-মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে অদৃশ্য নূরের কারণে। সৃষ্টিগত উপাদানের কারণে নয়।

আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরেরতৈরি বলে যেসববর্ণনা শোনা যায় তার সবই জাল। তবে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক,রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমাটির তৈরি বলে যদি তাঁর নবুওয়াত, রিসালাত কিংবা সুপ্রমাণিত কোনো শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করারসুযোগ গ্রহণ করাহয় অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নিজেদেরসমতাবিধানের উদ্দেশে কিংবা উপহাস ছলে এ কথা বলা হয় তবে তা স্পষ্ট কুফুরীহিসেবেপরিগণিত হবে। ( সূরা আরাফ ১২, সূরা কাহফ ১১০,প্রচলিত জাল হাদীস ১৯৭)

৩য় :

আপনিনিচের অয়াতগুলো পড়ুন… এখানে রাসূল (সা) কে নুর মানা আবশ্যক।

‘হে আহলেকিতাবগণ ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমণ করেছেন । কিতাবের যেসব বিষয়তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেকবিষয় মার্জনা করেন । তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটিসমুজ্জ্বলগ্রন্হ ।” (সূরা মায়েদা – ১৫) “হে নবী ! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তারদিকে আহ্বায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে ।” (সূরা আল-আহযাব -৪৫/৪৬)

২য় :

ভাই! আপনি আপনার উপস্থাপিত দুটি আয়াত পড়ে দেখতে বলেছেন। আমি আপনার কথা অনুযায়ি বেশ আগ্রহ নিয়ে তা পড়ে দেখেছি। এবং আরবী মূলপাঠও পড়ে দেখেছি। তবে তৃপ্ত হতে পারি নি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আপনার বিশ্বাস্য বিষয়টিকে আয়াতদ্বয় থেকে উদ্ধার করতে পারি নি। আপনি হয়তো আয়াতের নূর বা জ্যোতিকে দৃশ্যমান অর্থেই গ্রহণ করেছেন। কথা হলো, নূর শব্দটি কুরআন হাদীসের অসংখ্য জায়গায় বিবৃত হয়েছে। সব জায়গায়ই কি এর দ্বারা দৃশ্যমান জ্যোতি উদ্দেশ্য হবে? যদি সব জায়গায়ই দৃশ্যমান নূর বা জ্যোতি উদ্দেশ্য না হয় তাহলে এখানে দৃশ্যমান নূরই উদ্দেশ্য হবে- এ বাধ্যবাধকতার সূত্র কি?

ভাই‍! কুরআন হাদীসে বেশ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে আপনিও সহমত পোষণ করেন বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। কিন্তু রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দৃশ্যমান নূর উপাদানে সৃষ্টি করা হয়েছে এ ব্যাপারে অন্তত বিশুদ্ধ একটি হাদীস আমাদেরকে দেখান। যেখানে মতবৈচিত্র কিংবা ভিন্ন মত পোষণ করার কোনোই অবকাশ থাকবে না। যেমন মানুষ মাটির তৈরি- এক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণের কোনোই অবকাশ নেই। কুরআনের যে আয়াত আপনি উল্লেখ করেছেন সেখানে একাধিক ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রয়েছে। মুফাসসিরীনে কেরাম একাধিক ব্যাখ্যা করেছেন। মুফাসসিরীনে কেরামের এ অধিকারকে তো আর কেড়ে নেয়া যাবে না। ভাই! ধন্যবাদ। অনেক ভাল থাকুন।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *