মুফতী হাফিজুর রহমান
পূর্বকথা
শিরোনামকৃত প্রশ্নটি বাহ্যত একটি অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্ন । এমন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা তৈরি হবার কথা ছিলো না। কারণ প্রশিদ্ধতম ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাস ও জীবনী গ্রন্থগুলোতে হযরত আয়িশা রা. এর স্বাভাবিক মৃত্যুর কথাই আলোচিত হয়েছে। এসব সূত্রগুলোতে ইঙ্গিতগত দিক থেকেও আয়িশা রা. এর হত্যাকাণ্ড বিষয়ক অসত্য তথ্যটি স্থান পায় নি। কিন্তু শিয়াদের দু একটি গ্রন্থে ভিত্তি ও সূত্রহীনভাবে আয়িশা রা. এর স্বাভাবিক মৃত্যুকে মুখরোচক হত্যাগল্পাকারে পরিবেশন করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে শিয়ারা অনলাইনে প্রচার প্রচারণায়ও অংশ নিচ্ছে। আরবী সাইটগুলোতে যেমন এ অসত্য গল্পের প্রচারণা দেখা যায় তদ্রূপ বাংলা ভাষায়ও এর ছিটেফোটা প্রচারণা লক্ষগোচর হয়। গল্পটিতে হত্যাকাণ্ডের প্রধানতম ব্যক্তি হিসেবে হযরত মুয়াবিয়া রা. এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এ জায়গাটিতে এসে শিয়ারা আয়িশা রা. এর ব্যাপারে বেশ দরদী সেজে বসে আছেন। অথচ তারা আয়িশা রা.কে সুস্পষ্ট ভাষায় জাহান্নামী ও ব্যভিচারিণী বলতেও সামান্যতম কুণ্ঠিত হয় না। মুয়াবিয়া রা. কে দোষী সাব্যস্ত করতে তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত। শিয়াদের বৈশিষ্ট হলো, তারা বিচ্ছিন্ন সূত্র নির্ভর তথ্যের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করে। এমনকি মিথ্যুক ও খোদাদ্রোহী হিসেবে প্রশিদ্ধ ও পরিচিত বর্ণনাকারীদের বর্ণনার সহযোগিতায়ও তারা তথ্য সংকলন করে থাকে। আবু মাখনাফ, লুত বিন ইয়াহইয়া এবং হিশাম বিন মুহাম্মদের মতো সর্বসম্মত মিথ্যা দোষে দুষ্ট বর্ণনাকারীদের বর্ণনার উপর নির্ভর করেও তারা ইতিহাস রচনা করতে কুণ্ঠিত হয় না। আয়িশা রা. বিষয়ক হত্যাকাণ্ডের গল্পটি তাদের অসত্য গল্পেতিহাস রচনার বড় সড় একটি প্রমাণ। মুয়াবিয়া রা. এর ব্যাপারে শিয়াদের দ্বেষ-ক্ষোভ বেশ পুরোনা। শিয়া ঘরনার এ দ্বেষ-ক্ষোভ মূলধারার কিছু মুসলিম ভাইদের মাঝেও দ্রবিভূত হয়েছে। তারা অত্যোধিক ক্ষোভ ও দ্বেষবশত মুয়াবিয়া রা. এর নামটিকেও বিকৃত করে মাবিয়া নামে উপস্থাপন করে। হযরত আয়িশা রা. এর ব্যাপারে প্রচারিত অসত্য তথ্যটির পর্যালোচনার জন্যই মূলত অনাকাঙ্ক্ষিত এ আলোচনার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
শিয়াদের অবস্থান ও অসাধুতার ব্যাপারে মহান মনীষীদের বক্তব্য
১। ইমাম মালেক রহ.কে রাফিযী শিয়াদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাদের সাথে কথা বলো না, তাদের থেকে কোনো কিছু বর্ণনা করো না। কারণ তারা মিথ্যা বলে। মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ লিইবনে তাইমিয়া পৃ. ২৫, লিসানুল মীযান লিইবনে হাজার আসকালানী ১/৭, আততাম্বীহ ওয়াত তাহযীর মিনাশ শাররিল মুস্তাতীর ১/৬
২। ইমাম শাফী রাহ. বলেন, শিয়া রাফিযীদের থেকে চাক্ষুষ মিথ্যাবাদী আর কাউকে দেখি নি। মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ লিইবনে তাইমিয়া পৃ. ২৫, লিসানুল মীযান লিইবনে হাজার আসকালানী ১/৭, আততাম্বীহ ওয়াত তাহযীর মিনাশ শাররিল মুস্তাতীর ১/৬
৩। ইয়াযীদ বিন হারুন রহ. বলেন, বিদাতী রাবী যদি বিদাতের প্রতি আহবানকারী না হয় তাহলে তাদের থেকে হাদীস বর্ণনা করা যাবে। তবে রাফিযী শিয়াদের কাছ থেকে কখনো হাদীস বর্ণনা করা যাবে না। কারণ তারা মিথ্যাচার করে। লিসানুল মীযান লিইবনে হাজার আসকালানী ১/৭
৪। শারীক বিন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, আমি যাদের সাথে সাক্ষাত করি তাদের কাছ থেকেই হাদীস গ্রহণ করি। তবে শিয়া রাফিযীদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাদের থেকে আমি হাদীস বর্ণনা করি না। কারণ তারা মিথ্যা হাদীস রচনা করে এবং সেটাকে দীনী বিষয় বলে মনে করে। লিসানুল মীযান লিইবনে হাজার আসকালানী ১/৭
৫। আ’মাশ রহ বলেন, আমি এমন কিছু মানুষকে পেয়েছি যাদেরকে মানুষ মিথ্যাবাদী নামে পরিচয় দেয়। তারা হলো রাফিযী শিয়া। এটা তোমরা আলোচনা করো। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে তারা এ কথাও বলতে পারে যে আমরা আ’মাশকে জনৈক মহিলার সাথে দেখেছি। মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ লিইবনে তাইমিয়া পৃ. ২৫, আততাম্বীহ ওয়াত তাহযীর মিনাশ শাররিল মুস্তাতীর ১/৬
৬। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, হাদীস শাস্ত্রের সকল উলামায়ে কেরাম একমত যে রাফিযী শিয়ারা সবচেয়ে বেশি মিথ্যাবাদী। মিথ্যা বলা তাদের পুরোনো অভ্যাস। একারণেই ইসলামের বড় বড় ইমামগণ তাদের অত্যোধিক মিথ্যা বলার প্রবণতার ব্যাপারে সবিশেষ অবগত ছিলেন। মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ লিইবনে তাইমিয়া পৃ. ২৫, আততাম্বীহ ওয়াত তাহযীর মিনাশ শাররিল মুস্তাতীর ১/৬
৭। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বলেন, শিয়া সম্প্রদায় আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে সবেচেয়ে বেশি মিথ্যাচার করে। মাজমূউল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়া ২৭/১৭৫
৮। তালহা বিন মুসাররিফ রহ. বলেন, শিয়া রাফিযীদের মেয়েদেরকে বিবহা করো না। তাদের জবাই করা প্রাণীর গোশত আহার করো না। কারণ তারা হলো দীনত্যাগী-মুরতাদ। আলইবানাতুস সুগরা লিইবনে বাত্তাহ ১৬১, হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২
৯। ইমাম আওযায়ী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি আবুবকর সিদ্দী রা. কে গালমন্দ করে সে মুরতাদ ও ধর্মত্যাগী হয়ে যায়। আলইবানাতুস সুগরা লিইবনে বাত্তাহ ১৬১, শুবুহাতুর রাফিযাহ হাওলাস সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদ্দুহা ১/১৩১, শুবুহাতুন ওয়া আবাতীলু হাওলা মুআবিয়া ইবনি আবি সুফইয়ান ১/২৬, হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২
১০। ইমাম শা’বী রহ. বলেন, এসব শিয়া রাফিযীদের থেকে অধিক নির্বোধ আর কোনো সম্প্রদায়কে আমি দেখি নি। হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২
১১। ইমাম আব্দুর রাযযাক সানআনী রহ. বলেন, রাফিযী শিয়ারা কাফের। আলকামিল ফী যুআফাইর রিজাল লিইবনে আদী, ৫/৩১২, মীযানুল ই’তিদাল লিযযাহাবী ২/৬১৩, তারীখু মাদীনাতি দিমাশক লিইবনে আসাকির ৩৬/১৯০, হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২,
১২। যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামকে বকা দেয় তার ব্যাপারে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি মনে করি না যে সে ইসলামের উপর আছে। হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২
১৩। যে ব্যক্তি উসমান রা.কে বকা দেয় তার ব্যাপারে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, সে তো যিন্দীক। হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২
১৪। কাযী ইয়ায রহ. রাফিযী শিয়াদের ব্যাপারে বলেন, তারা অনেকগুলো কারণে কাফের। কারণ তারা পূর্ণ শরীয়তটাকেই বাতিল করে দিয়েছে। হিযবুল্লাহ আললুবনানী ফিল মীযান ২/২৩২
বস্তুত শিয়ারা তাকিয়া শিরোনামে দীন মনে করে মিথ্যা বলে থাকে। এ কারণেই তাদের বক্তব্য ও রচনাবলীতে মিথ্যার ছড়াছড়ি খুব বেশি।
আয়িশা রা. এর মৃত্যু বিষয়ে শিয়াদের অসত্য বক্তব্য ও পর্যালোচনা
শিয়াদের বক্তব্য ১ :
ক।
মুয়াবিয়া জনগণকে ইয়াযীদের হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য হুমকি দিচ্ছিলো। এ সংবাদ আয়িশা রা. এর কর্ণগোচর হলে তিনি গাধায় চড়ে তার কাছে চলে যান। গাধাটি মুয়াবিয়া রা. এর বিছানার উপর পেশাব করে মল ত্যাগ করে। মুয়াবিয়ার সম্মানের কোনো তোয়াক্কা করে নি। তখন মুয়াবিয়া বললেন, এ পাপিষ্ঠা নারীর কথা-বার্তা আর সহ্য হচ্ছে না। ফলে তার জন্য একজন খননকারীর ব্যবস্থ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. মুয়াবিয়া রা. এর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, উম্মে আমরকে নিয়ে গাধা গেলো। কিন্তু উম্মে আমর এবং গাধা কোনোটিই ফিরে এলো না। আসসিরাতুল মুস্তাকীম ৩/৭১
খ।
হযরত মুয়াবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ান একদিন রাতের খাবারের জন্য হযরত আয়েশা (রা.) কে নিমন্ত্রণ করেন । যে ঘরে খাবারর আয়োজন হয়েছিল ঠিক সেই খানে একটা সরু আকৃতির খাদ বা গর্ত খনন করান মূয়াবীয়া। আল্লামা ইবনে খালদুনের মতানুসারে ঐ গর্তটি ধারাল চাকু ও তলোয়ার দ্বারা পূর্ণ এবং অগ্রভাগ উপরের দিকে ছিল। গর্তটির উপর দিয়ে চিকন শুকনা কাঠের বাকল বিছিয়ে একটা কার্পেট দ্বারা আবৃত করা হয় যাতে ওখানে যে একটি গর্ত আছে সেটা বুঝা না যায়। হযরত আয়েশা (রা.) কে বসার জন্য একটা কাঠের চেয়ার দেয়া হয় এবং এমন ভাবে রাখা হয় যে, যখনি তিনি সেখানে বসলেন তখনি চেয়ারটি সেই গর্তে পড়ে যায়। যথারীতি খাবার গ্রহনের জন্য হযরত আয়েশা (রা.) সেই আসনটিতে বসা মাত্রই তিনি সেই গর্তে পড়ে যান। এতে তাঁর মাথা, থুথনী ও অনন্য স্থান প্রচণ্ড রক্তাত্ত হয়। শরীরের অনেক হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। সে সময়ই হযরত আয়েশা (রা.) এর করুন মৃত্যু হয় ।
https://www.youtube.com/watch?v=-3FTYapPrl8
পর্যালোচনা :
১। মুআবিয়া রা. আয়িশা রা.কে হত্যা করেছেন মর্মে উক্ত তথ্যটি আলী ইবনে ইউনুস নামক জনৈক শিয়া লেখক রচিত আসসিরাতুল মুসতাকীম ইলা মুস্তাহিক্কিত তাকদীম গ্রন্থ থেকে ছড়ানো হয়েছে। সেখানে উপরোক্ত তথ্যটির সাথে আরো একটি তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। তথ্যটিতে বলা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, যখন মুআবিয়া রা. তাঁর ছেলে ইয়াজিদের জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেন তখন আয়িশা রা. তাঁর এ কাজের বিরোধিতা করে বললেন, মহান ব্যক্তিগণ কি তাদের সন্তানদের জন্য বাইয়াত চেয়েছেন? মুয়াবিয়া রা. বললেন, না। আয়িশা রা. বললেন, তবে আপনি কার অনুসরণ করছেন? এতে মুয়াবিয়া রা. লজ্জা পান। ফলে মুয়াবিয়া রা. আয়িশা রা. এর জন্য গর্ত খনন করেন। আর আয়িশা রা. তাতে পড়ে মারা যান। আসসিরাতুল মুসতাকীম ইলা মুস্তাহিক্কিত তাকদীম ৩/১৭৫। ওখানে আলমাসালিত নামক গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে কথাটি বলা হয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের সূত্রপীঠিকা উল্লেখ করা হয় নি। আলমাসালিত তথা মাসালিতু কাওয়াসিব বা মাসালিতুন নাওয়াসিব কিংবা মাসালিতুল কাওয়াযিব এর লেখক হলো রশীদুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে আলী আলমাযিন্দারানী। তিনিও একজন কট্টর শিয়াপন্থী লেখক। আযযারীয়াহ ফী উসূলিল ফিকহিল ইমামী ১৯/১২৪
২। মিথ্যা এ তথ্যটি গিয়াসুদ্দীন ইবনে হুমামুদ্দীন হুসাইনী নামক শিয়া লেখক তার কিতাবু হাবীবিস সিয়ার নামক গ্রন্থ থেকে ছড়িয়েছে। সে তার এ গ্রন্থের ৪২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় তথ্যটি যুক্ত করেছে।
আলই’লাম বিমান ফি তারীখিল হিন্দি মিনাল আ’লাম গ্রন্থে রয়েছে, গিয়াসুদ্দীন ইবনে হুমামুদ্দীন হারাবী কিতাবু হাবীবিস সিয়ার গ্রন্থের রচয়িতা। তার আরেকটি গ্রন্থ হলো, খুলাসাতুল আখবার ফী আহওয়ালিল আখইয়ার। এ গ্রন্থটিতে সৃষ্টির সূচনা, আম্বিয়া, বিজ্ঞানী দার্শনিক, অনারব রাজা বাদশাহ, তাতারী, বনু উমাইয়া, বনু আব্বাস, চেঙ্গিসখা ও তাইমুরের বংশধরদের সম্পর্কিত আলোচনা স্থান পেয়েছে।
গ্রন্থটিতে তিনি এক দিকে মুয়াবিয়া রা. এর ব্যাপারে কুৎসা রটনা করেছেন অন্য দিকে চেঙ্গিসখার বংশধর, অনারব রাজা বাদশা ও তাতারীদেরকে আখইয়ার তখা সর্বোত্তম হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। http://www.riadalsona.com/play.php?catsmktba=10924
উপরন্তু একমাত্র শিয়া রচনা ছাড়া আর কোথাও এ জাতীয় তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায় না।
৩। বিকৃত তথ্যটিতে ইমাম ইবনে খালদুনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এসব স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে ইবনে খালদুন রহ. এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো খুবই নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, অনেক ইতিহাসবিদদের কথায় এমন এমন সংবাদ উঠে আসে যাতে সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে নিন্দা, কটূক্তি বিদ্যমান থাকে। এদের অধিকাংশই প্রবৃত্তির দাস। ওসব ইতিহাসগত প্রমাদপূর্ণ তথ্য দ্বারা কাগজ কালো করা আদৌ উচিত নয়। তারীখে ইবনে খালদুন ২/১৮৮। অন্যদিকে ইবনে খালদুন রহ. মুয়াবিয়া রা.কে অত্যোধিক সম্মানজনক ভাষায় উপস্থাপন করতেন। মুয়াবিয়া রা. এর ব্যাপারে ইবনে খালদুন রাহ. বলেন, মুয়াবিয়া রা. এর রাজত্বকে খুলাফায়ে রাশিদীনের রাজত্বের সাথে সংযুক্ত করা উচিত। তারীখে ইবনে খালদুন ২/১৮৮। সুতরাং উক্ত বানোয়াট তথ্যটিতে ইবনে খালদুন রহ. এর নাম ব্যবহার সুস্পষ্ট মিথ্যাচারের নামান্তর। তিনি এ জাতীয় কোনো বর্ণনা তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বলে বলে আমরা দেখতে পাই নি। এসব শিয়াবাদের বানানো গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
শিয়াদের বক্তব্য ২ :
শিয়ারা বিদায়া নিহায়ার একটি বর্ণনা থেকে এ কথা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে মুয়াবিয়া রা. আয়িশা রা.কে হত্যা করেছে। এমনকি এ তথ্য প্রমাণে তারা তাহযীবুল কামালকেও ব্যবহার করতে চেষ্টা করে।
পর্যালোচনা :
ইমাম ইবনে কাসীর রহ. কৃত আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ও ইমাম মিযযী রহ. কৃত তাহযীবুল কামালে আয়িশা রা. এর হত্যাকাণ্ড বিষয়ক কোনো বক্তব্য নেই। বস্তুত তাহযীবুল কমালে উদ্ধৃত বর্ণনাটি হলো, বলা হয়, আয়িশা রা. ৫৮ হিজরী ১৭ রমাযান মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন। তিনি তাঁকে রাতের বেলা দাফন করতে বলে গিয়েছিলেন। ফলে তাঁকে বিতর নামাযের পরে মাকবারাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। আবু হুরায়রা রা. তাঁর জানাযা নামায পড়ান। তাঁর কবরে পাঁচ জন নামেন। তারা হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা., উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রা., কাসেম বিন মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর রা., আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবুবকর রা.। তাহযীবুল কামাল ৩৫/২৩৫।
প্রথমত অজ্ঞাত ক্রিয়া সূত্রে বর্ণনাটি উল্লিখিত হয়েছে। এতে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য বা বিধান প্রমাণিত হয় না। বিদায়া নিহায়াতেও এভাবে বর্ণনাটি উল্লিখিত হয়েছে। সেখানে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয় নি; বরং ঐতিহাসিক বর্ণনার মতো করে সূত্রবিহীন উল্লেখ করা হয়েছে। উপরন্তু ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহ. বলেন,…আয়িশা রা. এর গোলাম যাকওয়ান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এসে আয়িশা রা. এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি আয়িশা রা. এর কাছে অনুমতি আনতে গেলাম। তখন সেখানে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র আব্দুল্লাহ রা. উপস্থিত ছিলেন। আমি গিয়ে বললাম, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আপনার কাছে আসার অনুমতি চাচ্ছে। তখন ভাহিতজা আব্দুল্লাহ রা. আয়িশা রা. এর উপর অধোমুখী হয়ে বললেন, এই যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। আয়িশা রা. তখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত। তখন আয়িশা রা. বললেন, রাখো ইবনে আব্বাসের কথা। তখন আব্দুল্লাহ রা. বললেন, আম্মু! ইবনে আব্বাস রা. আপনার সর্বোত্তম সন্তানদের মধ্যে অন্যতম। তিনি আপনাকে সালাম বলেছেন এবং আপনাকে বিদায় দিতে এসেছেন। তখন আয়িশা রা. বললেন, ইচ্ছে হলে আসতে দাও। আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমি তাকে প্রবেশ করতে দিলাম। তিনি আয়িশা রা. এর কাছে এসে বললেন, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আয়িশা রা. বললেন, কিসের সুসংবাদ গ্রহণ করবো। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামম এবং আপনার প্রিয়দের সাথে আপনার সাক্ষাতের মাঝে দেহ থেকে প্রাণ নির্গত হওয়া ছাড়া আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামম কাছে তাঁর সকল স্ত্রীদের মধ্য থেকে অধিক প্রিয় ছিলেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম জিনিসকেই ভালোবাসতেন। এবং সপ্তাকাশের উপর থেকে আপনার দোষমুক্তির বার্তা ঘোষিত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো মসজিদ নেই যেখানে রাত দিন সে দোষমুক্তি বিষয়ক আয়াত পঠিত হয় না। আবওয়া রজনীতে আপনার হার পড়ে গিয়েছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ঘরে সে হারের সন্ধান করেছিলেন। সকাল বলে দেখা গেলো পানি নেই। তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করলেন, তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। আপনার কারণে এতে সকল মানুষের জন্য অবকাশ তৈরি হয়। তখন আয়িশা রা. বললেন, হে ইবনে আব্বাস! এসব কথা রাখো। আল্লাহর শপথ! আমি চাই, যদি আমি এসব কিছু একেবারে ভুলে যেতাম। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৯৬। আয়িশা রা. এর এন্তেকাল ৫৮ হিজরী সনে হয়েছিলো। কেউ কেউ বলেন, এর এক বছর পূর্বে। কেউ কেউ বলেন, এর এক বছর পরে। তবে প্রসিদ্ধ হলো তিনি রমাযান মাসে ইন্তেকাল করেন। কেউ কেউ বলেন, শাওয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো আয়িশা রা. ২৭ রমাযান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এন্তেকাল করেন। তিনি ওয়াসিয়ত করে যান, মাকবারায়ে বাকীতে যেন তাকে রাতে দাফন করা হয়। বিতর নামাযের পর আবু হুরায়রা রা. তাঁর জানাযা নামায পড়ান। তাঁর কবরে পাঁচজন নেমেছিলো। তারা হলেন, যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা. এর দুই ছেলে আব্দুল্লাহ ও উরওয়া রা., তাঁর বোন আসমা বিনতে আবুবকর রা., তাঁর দুই ভ্রাতুষ্পুত্র কাসেম ও আব্দুল্লাহ এবং আরেক ভ্রাতুষ্পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবুবকর। তখন আয়িশা রা. এর বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো আঠারো বছর। আর হিজরতের বছর তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮ কিংবা ৯ বছর। আলবিদাইয়াহ ওয়ান নিহাইয়াহ ৪/৪৪৫।
তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, এসব বর্ণনার মাঝে আয়িশা রা. এর হত্যাকাণ্ড বিষয়ক কোনো বিবরণ নেই।
এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা মূলত জ্ঞানগত চরম অসাধুতার পরিচয় দিয়েছে। অথচ ইলমী স্বচ্ছতার দাবি হলো তথ্য ব্যবহারে সে বিশ্বস্ত হবে এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং বর্ণনাগুলোকে যাচাই বাছাই করে ব্যবহার করবে। রাতের জালানী সংগ্রাহকের মতো যা পাবে তাই গ্রহণ করবে না।
শিয়াদের বক্তব্য ৩ :
মুস্তাদরাকে হাকেম থেকে একটি বর্ণনা উল্লেখ করে তারা প্রমাণ করতে চায়, আয়িশা রা.কে হত্যা করা হয়েছে।
পর্যালোচনা :
মুস্তাদরাকে হাকেমে যে বর্ণনাটি রয়েছে, তা হলো, আয়িশা রা. মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিতর নামাযের পরে ইন্তেকাল করেন। ১৫ রমাযানের সে রাতেই মাকবারাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়। আবু হুরায়রা রা. তাঁর জানাযা নামায পড়ান। তখন মারওয়ান অনুপস্থিত ছিলো। আবু হুরায়রা রা. তার প্রতিনিধি হিসেবে জানাযা পড়ান। মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নম্বর ৬৭১৫
বর্ণনাটির সূত্রের মাঝে আব্দুল্লাহ ইবনে মুআবিয়া নামক একজন রাবী আছে। ইমাম বুখারী রহ. তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। ইমাম নাসায়ী রহ. তাকে যয়ীফ বলেছেন। আর যদি বর্ণনাটি সূত্রগত দিক থেকে সহীহও হয় তবে তাতে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা বিষয়ে কোনো আলোচনা বা তদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি কোনো ইঙ্গিতও নেই।
শিয়াদের বক্তব্য ৪ :
আততাবাকাতুল কুবরার কিছু বর্ণনা থেকেও তারা প্রমাণ করতে চায়, আয়িশা রা.কে হত্যা করা হয়েছে।
পর্যালোচনা:
তাবাকাতে ইবনে সাদে আয়িশা রা. এর মৃত্যু বিষয়ে যেসব বর্ণনা রয়েছে তা হলো, আয়িশা রা. ৫৮ হিজরীর ১৭ রমাযান দিবাগত রাতে বিতর নামাযের পর ইন্তেকাল করেন। তিনি নির্দেশ দিয়ে যান, তাঁকে যেন রাতে দাফন করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, আয়িশা রা. এর জানাযায় প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। রাতে এতো মানুষের সমাগম ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখি নি। মহিলাদের মহা সমাগম দেখে ঈদের দিন বলে ভ্রম হচ্ছিলো। আবু হুরায়রা রা. আয়িশা রা. এর জানাযা নামায পড়ান। তাঁর ওয়াসিয়ত অনুযায়ী তাঁকে মাকবারায়ে বাকীতে সমাহিত করা হয়। তাবাকাতে ইবনে সাদ ৮/৭৬,৭৭।
আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, তাহযীবুল কামাল, মুস্তাদরাকে হাকেমসহ অন্যান্য ইতিহাস ও সিয়ার গ্রন্থে যা কিছু রয়েছে তাই তাবাকাতে ইবনে সাদে রয়েছে। এখানে আয়িশা রা. এর ব্যাপারে হত্যাষড়যন্ত্র বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই। এমনকি তদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি কোনো ইঙ্গিতও নেই।
শিয়াদের বক্তব্য ৫ :
আ’মাশ রা. বলেছেন (?), মুআবিয়ার চেয়ে নির্লজ্জ আর কাউকে কি তোমরা দেখেছো? সে ৭০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। তার মধ্যে আম্মার, খুযাইমাহ……. আয়িশা ও আবু হাসসান রয়েছে। আসসিরাতুল মুসতাকীম ৩/৪৭
পর্যালোচনা:
আ’মাশ রহ. এর নামে ছড়ানো এ তথ্যটিকে ব্যাপক অনুসন্ধান করা হয়েছে। শিয়া রচিত দু একটি গ্রন্থ ব্যতীত অন্য কোনো হাদীস, ইতিহাস ও জীবনী গ্রন্থে বক্তব্যটির সন্ধান পাওয়া যায় নি। পূর্বে শিয়াদের মিথ্যাচারের ব্যাপারে পূর্বসূরি মনীষীদের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে শিয়া মিথ্যাচারের ব্যাপারে ইমাম আ’মাশ রহ. এর বক্তব্যও উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেন, আমি এমন কিছু মানুষকে পেয়েছি যাদেরকে মানুষ মিথ্যাবাদী নামে পরিচিত করেছে। তারা হলো রাফিযী শিয়া। এটা তোমরা আলোচনা করো। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে তারা এ কথাও বলতে পারে যে আমরা আ’মাশকে জনৈক মহিলার সাথে দেখেছি। মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ লিইবনে তাইমিয়া পৃ. ২৫, আততাম্বীহ ওয়াত তাহযীর মিনাশ শাররিল মুস্তাতীর ১/৬। সুতরাং উক্ত তথ্যটি যে ইমাম আ’মাশ রহ. এর নামে শিয়াদের মিথ্যাচার তাতে সন্দেহ থাকার কথা নয়।
এই যদি হয় শিয়া বর্ণনার অবস্থা তবে কি করে তা দ্বারা আয়িশা রা. এর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রমাণিত হয়? মুস্তাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, আয়িশা রা. তাঁকে রাতে দাফন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশনার কারণ ছিলো, যাতে জানাযা বিলম্ব না হয়। অথচ শিয়ারা এখানে মিথ্যা তথ্য উদ্ধার করে বলছে, যেহেতু তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে তাই রাতে দাফন করা হয়েছে এবং এতে যেন তাঁর কবর অজ্ঞাত থাকে। সত্যিই যদি আয়িশা রা.কে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়ে থাকতো তবে বিষয়টি তখন গোপন থাকার কথা ছিলো না। তাবিয়ী ও তাবিয়ীদের অসংখ্য আসার ও বর্ণনায় সিয়ার ও হাদীসের কিতাবগুলো ভরপুর হয়ে আছে। তদ্রূপ অসংখ্য ইতিহাসের কিতাবেও তাঁদের বক্তব্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু একমাত্র শিয়া রচনা ছাড়া আর কোথাও আয়িশা রা. সংশ্লিষ্ট এমন উদ্ভট তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায় না।
হযরত আয়িশা রা. এর মৃত্যু সম্পর্কিত শিয়া তথ্যটি কয়েকটি কারণে অসত্য ও বানোয়াট
১। আয়িশা রা. স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি নিহত হন নি। এটা উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত মত। কাসিম বিন মুহাম্মাদ বলেন, যখন আয়িশা রা. মুমূর্ষু অবস্থার সম্মুখীন হন তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আসলেন। এবং বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. এর পরে সত্য অগ্রগামিতার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তারিখুল ইসলাম লিযযাহাবী ৪/২৪৯, তাহযীবুল কামাল ১২/৩৮৬, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ২/১৯২, আততাবাকাতুল কুবরা ৮/৭৮
২। মুয়াবিয়া এবং আয়িশা রা. মাঝে ভালো সম্পর্ক ছিলো। এ সম্পর্কটি ভালোবাসা, হৃদ্যতা, ন্যায়পরায়নতা এবং উম্মুল মুমিনীনের অধিকার সচেতনতার পর্যায়ে উন্নীত ছিলো। মুয়াবিয়া রা. আয়িশা রা. এর সাথে সাক্ষাতে যেতেন। তাঁর খোঁজ খবর নিতেন। তার সাথে কথা বার্তা বলতেন এবং তাঁর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মধুর এ সম্পর্ক অটুট ছিলো। উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, মুয়াবিয়া রা. আয়িশা রা. এর নিকট চিঠি লেখলেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিয়ে একটি উপদেশপত্র পাঠান। অনেক বেশি উপদেশ দিয়েন না। আয়িশা রা. প্রতিউত্তরে লিখলেন, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। পরকথা হলো, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষকে অসুন্তষ্ট করে হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসুন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করে তাকে আল্লাহ মানুষের উপর ন্যাস্ত করে দেন। আসসালামু আলাইকা। সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৪
৩। উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফইয়ান রা. আয়িশা রা. এর নিকট এক লক্ষ দিরহাম পাঠালেন। আমি নিজে সে দিরহাম অসহায়দের মাঝে বণ্টন করি। আয়িশা রা. সেখান থেকে এক দিরহামও রাখেন নি। সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ২/১৮৬, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৬৭৪৫
৪। আব্দুর রহমান ইবনুল কাসেম রা. থেকে বর্ণিত, একদা মুয়াবিয়া রা. আয়িশা রা. কে কাপড়, মুদ্রা ও আরো কিছু উপহার সামগ্রী দিলেন। যখন আয়িশা রা. বেরিয়ে গেলেন এবং উপহার সামগ্রী দেখলেন তখন কেঁদে দিয়ে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো পান নি। এরপর এগুলোকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তা থেকে কিছুই তার কাছে ছিলো না। হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/৪৮
৫। আবু আলকামা তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, তার মা বলেন, একদা মুয়াবিয়া রা. মদীনায় এসে আয়িশা রা.কে এ মর্মে চিঠি পাঠালেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোটা চাদর ও চুল আমার নিকট প্রেরণ করুন। আয়িশা রা. সেগুলোকে আমার মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলেন। মুয়াবিয়া রা. সেগুলো গ্রহণ করলেন এবং চাদর পরিধান করলেন। আর চুল মুবারক পানি দ্বারা ধৌত করে তা পান করলেন এবং নিজের শরীরে ঢেলে নিলেন। তারীখুল ইসলাম লিযযাহাবী ৪/৩১১
সারকথা আয়িশা রা. স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু শিয়া সম্প্রদায় বলে থাকে, মুআবিয়া রা. তাঁকে হত্যা করেছে। এ তথ্যটি নিতান্তই প্রমাদপূর্ণ ও বানোয়াট। শিয়া সম্প্রদায় মিথ্যা তথ্য সরবরাহে বেশ পারঙ্গম। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, শিয়া সম্প্রদায় আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে সবেচেয়ে বেশি মিথ্যাচার করে। মাজমূউল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়া ২৭/১৭৫
মূলধারার মুসলিমদের মাঝেও শিয়া বর্ণনার অনুপ্রবেশ ঘটেছে
মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী রহ. উর্দু ভাষায় তারীখুল ইসলাম নামে তিন খণ্ডে দীর্ঘ একটি ইসলামিক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইতিহাস গ্রন্থটিতে তিনি আয়িশা রা. এর মৃত্যু সম্বন্ধে একটি তথ্য উদ্ধৃত করেছেন। তথ্যটি শিয়া ইতিহাস আশ্রিত তথ্যের খণ্ডিত রূপ। আয়িশা রা. এর তিরোধান বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ৫৮ হিজরীতে উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. ইন্তেকাল করে জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত হন। তিনি মারওয়ানের বিরুদ্ধাচরণ করতেন। কারণ তার কার্যক্রম ভালো ছিলো না। মারওয়ান একদিন নিমন্ত্রণের নামে কৌশলে ডেকে নিয়ে একটি গর্তে ফেলে দিয়েছিলেন। যে গর্তটিতে সে উন্মুক্ত তরবারী, খঞ্জর ইত্যাদি রেখে দিয়েছিলো। তিনি অতিশয় দুর্বল ও বয়োবৃদ্ধা ছিলেন। গর্তে ফেলে দেয়ার কারণে তিনি আহত হন। সে ক্ষতের ব্যথায়ই তাঁর ইন্তেকাল হয়।-তারীখুল ইসলাম, মাওলানা আকবর শাহ খান নজীবাবাদী ২/৪৩ মূল উর্দু, যাকারিয়া বুকডিপো, দেওবন্দ, সাহারানপুর, ইউপি
বস্তুত ইতিহাস বা ইসলামী ইতিহাসের নামে বর্তমানে কলেজ ভার্সিটিগুলোতেও শিয়া আশ্রিত অসত্য তথ্য পাঠ করানো হয়। যাতে প্রকৃত ইতিহাস চরমভাবে কলঙ্কিত হয়েছে। ইতিহাসের এসব চোরাবালি বিষয়ক নিগূঢ় তথ্য ও তত্ত্ব গোলাম আহমাদ মোর্তজা সাহেবের ইতিহাস বিষয়ক বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থগুলোর পাতায় পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বয়ং মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী রহ. চরম সত্যটি তুলে ধরে বলেন, মুসলমানদের যে শ্রেণীটিকে সাধারণত শিক্ষিত বলা হয়ে থাকে এবং হিন্দুস্তানী মুসলমানদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় বলে গণ্য করা হয় তাদের সকলেই সরকারী কলেজ ভার্সিটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লেখা পড়া করে এসেছে, যেগুলোতে ইসলামী ইতিহাস পাঠ্যভুক্ত নয়, আর পাঠ্যভুক্ত থাকলেও সেগুলো ইতিহাস নয়; অন্য কিছু। যেগুলোকে ইসলামী ইতিহাস বলে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তারীখুল ইসলাম, মাওলানা আকবর শাহ খান নজীবাবাদী ১/২৬ মূল উর্দু, যাকারিয়া বুকডিপো, দেওবন্দ, সাহারানপুর, ইউপি
গ্রন্থ রচনায় নানামাত্রিক ত্রুটি বিচ্যুতি হতে পারে এ কথার স্বীকৃতি দিয়ে মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী রহ. বলেন, আমি আমার জ্ঞানগত দীনতার কথা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, পদে পদে হোঁচট খাওয়াটাই স্বাভাবিক এবং ভুলত্রুটি থেকে সর্বোতভাবে মুক্ত থাকাটা অত্যাশ্চার্য ব্যাপার বলে পরিগণিত হতে পারে। যারা ভুলত্রুটি নিরসনের উদ্দেশ্যে এর সমালোচনা করবেন আমি তাদেরকে উপকারী বন্ধু বলেই গণ্য করবো।- তারীখুল ইসলাম, মাওলানা আকবর শাহ খান নজীবাবাদী ১/৩০ মূল উর্দু, যাকারিয়া বুকডিপো, দেওবন্দ, সাহারানপুর, ইউপি
মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী রহ. আরো বলেন, ইতিহাস গ্রন্থসমূহের মধ্য থেকে তারীখে তাবারী, তারীখুল কামিল, তারীখে মাসউদী, তারীখে আবুল ফিদা, তারীখে ইবনে খালদুন, তারীখুল খুলাফা প্রভৃতি গ্রন্থের মধ্যে সাধারণভাবে যা কিছু বিবৃত হয়েছে তাই লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি। তারীখুল ইসলাম, মাওলানা আকবর শাহ খান নজীবাবাদী ১/৫০ মূল উর্দু, যাকারিয়া বুকডিপো, দেওবন্দ, সাহারানপুর, ইউপি
মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী রহ. এর ইতিহাস গ্রন্থের তথ্যগ্রন্থ তারীখে তাবারী, তারুখুল কামিল, তারীখে মাসউদী, তারীখে আবুল ফিদা, তারীখে ইবনে খালদুন, তারীখুল খুলাফা গ্রন্থগুলো অনুসন্ধান করার সুযোগ আমাদের হয়েছে। এ গ্রন্থগুলোতে আয়িশা রা. এর মৃত্যু সম্পর্কিত উক্ত ঘটনাটি উল্লিখিত হয় নি। তদ্রূপ ইবনুল জাওযী রহ. লিখিত সুবিশাল ইতিহাস গ্রন্থ ‘আলমুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূকি ওয়াল উমাম’ও আমাদের দেখার সুযোগ হয়েছে। ওখানেও এ জাতীয় কোনো তথ্যের অস্তিত্ব নেই। উমর রেযা কাহহালা রহ. আ’লামুন নিসা ফী আলামাইল আরাব ওয়াল ইসলাম নামক নারী মনীষীদের নিয়ে ৫/৬ খণ্ডের একটি গন্থ রচনা করেছেন। সেখানে তিনি ১২০ পৃষ্ঠা ব্যাপী আয়িশা রা. এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সেখানেও এ জাতীয় কোনো তথ্যের কোনো সন্ধান নেই। সুতরাং একথা খুব সহজেই বলা যায় যে আয়িশা রা. এর ইন্তেকাল সম্পর্কিত নজীবাবাদী আহরিত তথ্যটি শিয়া আশ্রিত ইতিহাস থেকেই আহরিত হয়েছে। অতএব তথ্যটিকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সুযোগ নেই।
মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী রহ. তারীখুল ইসলাম গ্রন্থটি ভূমিকায় ইতিহাস বিষয়ক নানা ধরনের তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন। কিন্তু সেখানে তিনি ইতিহাসের চোরাবালি শিয়া বর্ণনা সম্বন্ধে কিছু বলেন নি। অথচ এ আলোচনাটিও সেখানে আসা প্রয়োজন ছিলো। বস্তুত এটি একটি স্বতন্ত্র আলোচ্য বিষয়। এর উপর স্বতন্ত্র অভিসন্ধর্ভ তৈরি হতে পারে। এবং বিষয়টি বড় সড় একটি গ্রন্থেরও দাবি রাখে।
আয়িশা রা. এর স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছেন
সায়্যিদ সুলাইমান নদভী রহ. আয়িশা রা. কে নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ঢাউস সাইজের একটি গ্রন্থ রচনার প্রয়াস পেয়েছেন। সেখানে তিনি আয়িশা রা. এর মৃত্যুকালীন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, মুয়াবিয়া রা. এর শাসনামলের শেষকাল ছিলো আয়িশা রা. এর জীবনের পড়ন্ত বিকাল। এসময় তাঁর বয়স হয়েছিলো সাতষট্টি বছর। আঠারো হিজরী বর্ষের রমাযান মাসে তিনি অসুস্থ হন। কয়েক দিন অসুখে কষ্ট পান। কেউ ভালোমন্দ জানতে চাইলে বলতেন ভালো আছি। তাবাকাতে ইবনে সাদ 7/42। যারা দেখতে আসতেন তারা সান্ত্বনা দিতেন, সুসংবাদ দিতেন ও ভালো ভালো কথা শোনাতেন। আর তিনি বলতেন, হায়, আমি যদি পাথর হতাম! হায়, আমি যদি গাছ হতাম! হায়, আমি যদি লতাপাতা হতাম! তাবাকাতে ইবনে সাদ 7/42। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এসময় এসে দেখা করার অনুমতি চাইলেন। আয়িশা রা. ভাবলেন, তিনিও হয়তো এসে প্রশংসা করবেন ও সুসংবাদ দিবেন। তাই অনুমতি দিতে চাইলেন না। শেষে ভাতিজার অনুরোধে অনুমতি দিলেন। অনুমতি পেয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ভেতরে এলেন। এসে বললেন, অনন্তকাল আপনি উম্মুল মুমিনীন হয়ে থাকবেন। আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী ছিলেন। প্রিয়তমের সাক্ষাত পেতে শুধু প্রাণটা বের হতে বাকি। আপনার মাধ্যমেই আমরা তায়াম্মুমের অনুমতি পেয়েছি। আপনাকে কেন্দ্র করে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। মসজিদে মেম্বরে রাত দিন সে আয়াতগুলো পঠিত হচ্ছে। আয়িশা রা. বললেন আব্বাসের বেটা! আমাকে এসব বন্দনা থেকে মুক্ত রাখো। আমি তো এটাই চাইতাম যে আমার অস্তিত্বই যদি না হতো। তাবাকাতে ইবনে সাদ 7/42।
মৃত্যুশয্যায় আয়িশা রা. ওয়সয়ত করেছিলেন, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে কবরে দিবে না। আমি রাসূলের অবর্তমানে বড় অপরাধ করেছি। আমাকে অন্য স্ত্রীদের সঙ্গে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করবে। রাতেই দাফন করে দিবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯১, তাবাকাতে ইবনে সাদ 7/42। সকালের অপেক্ষা করবে না। একজন বলললো, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবুবকর রা. প্রমুখের সাথে সমাহিত হলেই তো ভালো হতো। তিনি বলেন, এভাবে তো নতুন প্রথার সূচনা হবে।
আটান্ন হিজরীর রমাযান মাসের সতেরো তারিখ রাতে বিতর নামাযের পর আয়িশা রা. প্রিয় প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানান। কান্নার আওয়ায শুনে আনসারীগণ বেরিয়ে এলেন। জানাযায় এতো ভীড় হলো যে বর্ণনাকারীগণ বলেন, রাতে আমরা কখনো এত লোকসমাগম দেখি নি। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, নারীদের প্রচণ্ড ভীড়ে সেদিন ঈদের দিন বলে ভ্রম হচ্ছিলো। তাবাকাতে ইবনে সাদ ৮/৭৭। উম্মে সালামা রা. কান্নার আওয়ায শুনে বললেন, আয়িশা রা. এর জন্য জান্নাত ওয়াজিব। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তম স্ত্রী ছিলেন। মুসনাদে তায়ালিসির বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁকে রহম করুন। তিনি তাঁর পিতার পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন। তখন আবু হুরায়রা রা. মদীনায় অবস্থান করছিলেন। তিনি বিচারকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। তিনিই জানাযা পড়ান। কাসেম ইবেন আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান, আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক, উরওয়া ইবনে যুবায়ের, আব্দুল্ল ইবনে যুবায়ের প্রমুখ ভ্রাতুষ্পুত্র ও ভাগ্নেগণ সমাধিতে অধিষ্ঠিত করেন। ওয়াসিয়ত অনুযায়ী তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত করা হয়। মদীনায় এক অবর্ণনীয় বিষণ্নতা ছেয়ে যায়। নবী পরিবারের আরো একটি আলোকবর্তিকা নিভে গেলো। তাবিয়ী মাসুরুক রহ. বলেন, যদি একটি কথা আমার মনে না থাকতো তবে আমি উম্মুল মুমিনীনের জন্য শোকের আসর বসাতাম। তাবাকাতে ইবনে সাদ ৮/৭৭। বহিরাগত কিছু লোক এক মদীনাবাসীকে জিজ্ঞেস করেছিলো, আয়িশা রা. এর মৃত্যুশোক মদীনাবাসীকে কেমন আচ্ছন্ন করেছিলো? লোকটি উত্তর দিয়েছিলো, সন্তানমাত্রই (প্রত্যেক মুসলমান) মাতার মৃত্যুশোকে মুহ্যমান ছিলেন। তাবাকাতে ইবনে সাদ ৮/৭৭।-সীরাতে আয়িশা রা. সায়্যিদ সুলাইমান নদভী রহ. কৃত, মাওলানা শফিকুল ইসলাম অনূদিত, রাহনুমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত পৃ. ২২৬-২২৮
সারকথা শিয়া পরিবেশিত একক তথ্য ও বর্ণনা আমাদের জন্য গ্রহণের কোনোই সুযোগ নেই। কারণ তাতে মিথ্যার মিশেল থাকে। উপরন্তু শিয়াদের এজাতীয় একরোখা তথ্যগুলোকে সত্য মনে করা হলে আয়িশা রা. কে যিনাকারিণী মানতে হবে, বর্তমান কুরআনকে অস্বীকার করতে হবে এবং আবুবকর, উমর রা. সহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামকে কাফের বলতে হবে। আলইয়াযু বিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক সত্যটি গ্রহণের তাওফীক দান করুন।