মুফতী মাওলানা মাহমূদুল আমীন
যদি কেউ আহবান করে, ‘অভিশপ্ত হওয়ার মানসে আমাদের সেবা গ্রহণ কর’ তাহলে অনেকেই হয়ত শাণিত বাক্যে আহবানকারীকে ভর্ৎসণা করবেন।
যদি বলা হয় ‘ এসো আমাদের কাছে, রক্তনদীর মাঝে ভাসিয়ে তোমার মস্তককে প্রস্তরাঘাতে চুর্ণ বিচুর্ণ করা হবে’। তাহলে হয়তো আঁতকে উঠবেন। তাদের থেকে যোজন যোজন দূরে থাকবেন।
যদি কেউ আপনাকে ডেকে বলে ‘এসো এমন কাজ করি, যাতে আমাদের জনপদটা ভয়াবহ দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে যায়’ তাহলে হয়তো বজ্রমুষ্ঠিতে তাকে আক্রমনে তেড়ে যাবেন।
যদি কোন ব্যক্তি জনসমাজকে ‘মায়ের সাথে ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে’ তাহলে গোটা সমাজ হয়তো তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
আর বিশ্বস্থ কেউ যদি সংবাদ দেয় ‘রাজধানীর পথে পথে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহবান চলছে’ তাহলে অনেকেই হয়তো চমকে উঠবেন। ঈমানের দাবী পূরণে এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
কিন্তু প্রিয় পাঠক! চরম দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সুদ নামক মহামারীর বাতবরণে উল্লেখিত সবগুলোই আজ প্রকাশ্যে ব্যাপকভাবে চলছে। কুরআন ও হাদীসের দিকে তাকালে প্রতিভাত হয় যে, শুধু উল্লেখিত বিষয়গুলোই নয় আরো বহুপাপ কর্মের ধারক হলো ‘সুদ’।
সুদের কয়েকটি অভিশাপ কুরআন-হাদীসের আলোকে নিম্নে তুলে ধরা হল :
১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না করো তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। (সূরা বাকারা- ২৭৯)
২. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
যারা সুদ খায় তারা ঐ ব্যক্তির ন্যয় দণ্ডায়মান হবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা উন্মাদ করে দিয়েছে। এটা এ কারণে যে তারা বলে, ক্রয় বিক্রয় তো সুদের মত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকার- ২৭৫)
৩. আবূ জুহাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে ব্যক্তি সুদ দেয় উভয়ের উপরই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। সহীহ বুখারী; হা.নং ৫৯৬২)
৪. অন্য এক হাদীসে রয়েছে,
যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে ব্যক্তি সুদ দেয়, যে ব্যক্তি সুদের সাক্ষী হয় এবং যে ব্যক্তি সুদের লেখক হয় সবার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৩৩৩৩)
৫. সামুরা ইবনে জুন্দুব রাযি. বর্ণনা করেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি রাতে স্বপ্ন দেখি, দু-ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমার হাত ধরল এবং আমাকে তারা একটি পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা হাঁটছিলাম, সহসা এক রক্ত নদীর তীরে গিয়ে উপস্থিত হলাম। নদীটির মাঝে এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান রয়েছে। তার সম্মুখে পাথর। নদীর তীরে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল। রক্ত নদীতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি যেই নদীর তীরে উঠার জন্য সামনে অগ্রসর হয় নদীর তীরে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি অমনি তার মুখে পাথর মেরে তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। এমনিভাবে যখনি সে তীরে উঠে আসতে চায় তখনি তার মুখে পাথর মেরে পেছনে পাঠিয়ে দেয়। আমি বললাম, ব্যাপারটি কি? তখন তারা বললেন, রক্ত নদীর মাঝে যে ব্যক্তিটিকে দেখছেন সে হলো সুদখোর। (সহীহ বুখারী; হা.নং ২০৮৫)
৬. হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সুদের তেহাত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্য হতে সর্বনি¤œ এবং সহজতম স্তর হলো, আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ; হা.নং ২২৬৫)
৭. আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রায়শই দীর্ঘ ভ্রমণে থাকে এবং কেশ থাকে এলোমেলো এবং আকাশ পানে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম এবং ভরণ পোষণও হারাম। এব্যক্তির দু‘আ কিভাবে কবুল হবে। (সুনানে তিরমিযী; হা.নং ২৯৮৯)
যুদ্ধ বিগ্রহ বেশী হোক বা অল্প, বড় কিংবা ছোট সব সময়ই তা অপছন্দনীয়, ক্ষতিকর ও পরিত্যাজ্য। সুস্থ বিবেকবান জ্ঞানী মানুষ কখনোই যুদ্ধ সংঘাতকে পছন্দ করতে পারে না। কারণ এর দ্বারা জান-মাল, ইজ্জত-সম্মান নষ্ট হয়। মানুষের জীবন সম্মুখীন হয় চরম হুমকির। আর সে যুদ্ধও যদি হয় কোন অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য, চিরক্ষমতাবান ও শক্তিধর কোন মহা পরাক্রমশালীর সাথে তাহলে কোন মানুষ তা যুদ্ধ বলবে না। বরং তাকে আত্মহত্যা বলাই শ্রেয় মনে করবে। কিন্তু ইচ্ছায় অনিচ্ছায় জেনে না জেনে আজ আমরা সবাই সে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। মহান রাজাধিরাজ, মহাপরাক্রমশালীর সাথে এক যুদ্ধের জীবন আমাদের চলছে। আর সুদের সাথে যেকোন ধরনের সম্পৃক্ততা এই হুকুমের আওতাধীন।
সুতরাং আয়াত ও হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সুদের যে কোন ধরনের সংমিশ্রণ এই ভয়াবহ যুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। আর কোন জাতি যতদিন পর্যন্ত সুদের কারবারে লিপ্ত থাকবে ততদিন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে না। কারণ পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হচ্ছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বৃদ্ধি করেন’। (সূরা বাকারা- ২৭৬) তাই ‘খেলাপি কমলে সুদ কমবে’ এ কথা বলে সুখের ঢেকুর তোলার কোন অর্থ থাকে না। আর পত্রিকায় এ জাতীয় প্রতিবেদন দিয়ে খেলাপি কমিয়ে সুদ কমানোর ব্যবস্থা করা আর তাতে ব্যবসায় লাভবান হবে বলে মনে করার কোন সুযোগ থাকে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসায়কে হালাল আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা- ২৭৫) সুতরাং হারাম জিনিস দিয়ে হালাল জিনিসকে লাভবান করার চেষ্টা করা তরল বিষ দিয়ে শরবত বৃদ্ধি করারই নামান্তর। এ বিষ শরবত বৃদ্ধি করবে বটে, তবে পানকারীর প্রাণ নিয়ে তবেই ক্ষান্ত হবে।
সম্মানীত পাঠক! সুদ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে এমন সুষ্পষ্ট ভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কি কোন মুমিনের পক্ষে আদৌ সুদী লেন-দেন করা সম্ভব?। পরকাল সম্পর্কে যার সামান্য বিশ্বাসও আছে সুদী লেন-দেনের আহবান শুনলে সেও ভয়ে আঁতকে উঠার কথা নয় কি?। অথচ আজ সুদী প্রতিষ্ঠানে কেউ চাকরী পেলে তার এবং তার বাব-মায়ের গর্বে যেন যমীনে পা পড়ে না। সুদী প্রতিষ্ঠানে অর্থ রেখে বন্ধু মহলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেও সামন্য দ্বিধাবোধ করে না। আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে, পরকালকে জলাঞ্জলী দিয়ে এবং জাহান্নামের লেলিহান শিখার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মতুষ্ট হওয়া কোন মুমিনের পক্ষে কি সম্ভব?।
আজ রাস্তার মোড়ে মোড়ে, টিভির পর্দা এবং পত্রিকার পাতা জুড়ে সুদীপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের সয়লাব। উপরে উল্লেখিত আয়াত-হাদীস হতে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, সুদের দিকে আহবান করার অর্থ হলো ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার, জাহান্নামের লেলিহান শিখার এবং নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারের দিকে আহবান করা’। শুধু একজন মুসলমানই নয়, কোন সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ কি এমন কাজ করতে পারে?। তাহলে কেন মুসলিম দেশের রাজপথে, মুসলমান মালিকানাধীন মিডিয়ার পাতায় এমন আহবান চলছে?। কেন মুসলমানরা আরো নতুন নতুন সুদী ব্যংকের অনুমোতি নিচ্ছে?। আর আমরাও বা কেন সুদ প্রবাহে গা ভাসিয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছি? সুদের বিরুদ্ধে ব্যপকভাবে আওয়াজ উচ্চকিত করছি না?
অনেকে মনে করে এবং কেউ কেউ মুখে বলেও ফেলে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে সুদ হারাম ছিল বর্তমানে হারাম নয়। একথা বলার মাধ্যমে প্রকারান্তরে তারা কুরআনের চিরন্তনতাকেই অস্বীকার করে ফেলছে (নাউযু বিল্লাহ)। আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূলের নির্দেশ অন্য কারো পক্ষে রহিত করা সম্ভব নয়। হযরত উমর রা: বলেন: সর্বশেষে সুদের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার আগেই পরপারে চলে গেছেন। সুতরাং তোমরা সুদ এবং সন্দেহযুক্ত লেন-দেনও পরিত্যাগ কর। ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২২৬৭)।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ত্বীবী রহ. লিখেছেন. সুদের বিধান এখনো বিদ্যমান, রহিত নয়। সুদের বিধান সুষ্পষ্ট, অস্পষ্ট নয়। এজন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজনবোধ করেন নি। (মিরকাতুল মাফাতীহ:৯/৩১৩)
অনেকে আবার বলে থাকে ‘বর্তমান সময়ে সুদী লেন-দেন থেকে বেচেঁ থাকা অসম্ভব’।
একথা বলা আল্লাহ তা‘আলাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করার শামিল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা কাউকে সাধ্যাতীত কাজের হুকুম করেন না’। (সূরা বাকারা, আয়াত:২৮৬) সুতরাং সুদী লেন-দেন থেকে বেচেঁ থাকা অসম্ভবই হত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা সুদ হারাম হওয়ার শাশ্বত ঘোষণা অবতীর্ণ করতেন না।
কেউ কেউ আবার ব্যাংক ও সুদী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বলে থাকেন ‘ এটাতো ব্যবসার মতই’। তারা একটি বার চিন্তা করে দেখছেন না যে,তাদের একথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যমনার কাফেরদের কথারই প্রতিধ্বনি। কুরআনের ভাষায়: ‘ যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে: ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদেরই মত! অথচ আল্লা’হ্ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন’। (সূরা বাকারা,আয়াত:২৭৫)
সুতরাং পার্থিব জীবনে সফলতা অন্বেষী, জান্নাত অভিলাষী এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশী প্রতিটি ব্যক্তিরই সুদী লেন-দেন থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাকা আবশ্যক।
সুদের উদ্ভাবক
আল্লাহর ক্রোধানলে পতিত অভিশপ্ত ঈয়াহুদীরাই হল সুদের উদ্ভাবক। তাদের নবীগণ তাদেরকে সুদী লেন-দেন থেকে বারণ করা সত্ত্বেও দুনিয়া লোভী ঈয়াহুদী গোষ্ঠী সুদকে পরিত্যাগ করে নি। ফলে তারা অভিশপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
বনী-ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়মতনয় ঈসার মুখে অভিস¤পাত করা হয়েছে। এটা একারণে যে, তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমা লংঘন করত। (সুরা মা-ইদা,আয়াত:৭৮)
‘সুতরাং ইয়াহুদীদের জুলুমের কারণে আমি তাদের উপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেককে তাদের বাধা প্রদানের কারণে। আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। (সূরা নিসা : ১৬০-১৬১)।
যুগ যুগ ধরে ঈয়াহুদীরা পৃথিবীর কোনায় কোনায় সুদখোর মহাজনের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। আধুনিক সুদ ব্যবস্থার অন্যতম পরিকল্পনাকারী এবং ধারকও এ অভিশপ্ত জাতি।
অভিশপ্তদের পরিকল্পিত পথে হেঁটে হেঁটে আমরাও আজ আল্লাহর অভিশাপে নিপতিত।
সমাজ জীবনে সুদের প্রভাব:
সমাজ জীবনে সুদের কয়েকটি প্রভাব নিম্নে তুলে ধরছি:-
১. আত্মিক ক্ষতি: যারা সুদ খায় তাদের অন্তরে কৃপণতা, নির্দয়তা, অর্থলিপ্সা, বস্তুলিপ্সা প্রভৃতি বদগুণ স্থান করে নেয়।
২. সুদের সামাজিক ক্ষতি : সুদ ভিত্তিক সমাজ মানে অশান্তির দাবানলে দগ্ধ সমাজ। যে সমাজে সহমর্মিতা , সহানুভূতি, হৃদ্যতা ও পরোপকারিতা অনুপস্থিত। যে সমাজের অধিকাংশ বিত্তবান বড়ই চিত্তহীন। গরীব-দুঃখীদের প্রতি নিঃস্বার্থ সহায়তা যেন সোনার হরীণ। বলাবাহুল্য যে, এমন সমাজে কখনো ঐক্য-স্থিতি টিকে থাকতে পারে না। এর সদস্যরা অনৈক্য ও অশান্তির দিকে ঝুঁকে থাকে সদা সর্বদা। সুদী লেন-দেনের ফলে সমাজে আল্লাহর আযাব-গযব নাযিল হয়। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে।
৩. সুদের অর্থনৈতিক ক্ষতি : সুদ শোষণের হাতিয়ার। সুদ অর্থনৈতিক সমতাকে ধ্বংস করে দেয়। অর্থব্যবস্থা বরকতহীন হয়ে অন্তসারশূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক অস্থিরতার জন্য সুদ-ই সবচে বেশী দায়ী।
আমাদের করণীয়:
১. সুদী লেন-দেন সম্পূর্ণ বর্জন করা এবং অতীতের জন্য খালেছ ভাবে তওবা করা।
২. সুদী প্রতিষ্ঠানের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করা। আল্লাহ তা‘আলাই রিযিকদাতা । সুতরাং রিযিকের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা রিযিকদাতা। (সূরা যারিয়াত:৫৮)
আর পৃথিবীতে যত বিচরণশীল প্রাণী আছে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ্ নিয়েছেন। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে। (সুরা হুদ:৬)। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যথেষ্ট। সুদী প্রতিষ্ঠানের থেকে পৃথক হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যাবোধ করলে হক্কানী অভিজ্ঞ মুফতীর পরামর্শ নেয়া।
৩. আর্থিক বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুদী পন্থা ও সুদী প্রতিষ্ঠান পরিত্যাগ করা। সুদমুক্ত বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা।
৪. কারেন্ট একাউন্ট বা চলতি হিসাবের ক্ষেত্রেও সুদবিহীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ রাখা।
৫. শুধু ইসলাম/শরীয়ত নাম দেখলেই তাতে বিনিয়োগ না করা বরং অভিজ্ঞ কোন মুফতী সাহেবের মাধ্যমে তাদের পরিচালনা পদ্ধতি যাচাই করে এরপর তাদের সাথে লেন-দেন করা।
৬. সুদী প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্তহারী বিজ্ঞাপনে মোহিত না হয়ে বরং ব্যথিত হওয়া। বর্তমান সুদী ঋণকে সহজলভ্য করার জন্য ক্রেডিট কার্ড সহ বিভিন্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এগুলোতে কখনোই ধোঁকায় না পড়া।
৭. সুদের বিরুদ্ধে মানুষকে দাওয়াত দেয়া। সুদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষদেরকে সজাগ করা। সুদের বিরুদ্ধে সাধ্য অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহ তা‘আলার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলবে আর কোন মুমিন নীরব বসে থাকবে, এটা অসম্ভব। সাধ্যানুযায়ী আমর বিল মা‘রূফ এবং নাহি আনিল মুন্কার করাও ফরয।
৮. সুদ যখন সর্বব্যাপি হয়ে যাবে তখন কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে। এজন্য যথাসাধ্য মানুষদের সুদ খাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।
৯. হারাম কোন খাবার যাতে আমার বা আমার পরিবারের কারো পেটে না যায় এদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ঐ শরীরের জন্য জান্নাতকে হারাম করেছেন যে শরীরকে হারাম দ্বারা খাদ্য দেয়া হয়। (ইতহাফুল খিয়ারাহ: হাদীস নং-৭৮৩৬)।
১০. সুদের বিপরীতে ইসলামী সুষম অর্থব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠা কল্পে আলেম-উলামা ও দীনদার সম্প্রদায়ের কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই, তাহলে সুদ একদিন আমাদেরকেও হয়তো বেষ্টন করে নেবে এবং দুনিয়া-আখিরাতের বরবাদি ডেকে আনবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম ইরশাদ করেছেন: এমন এক যমানা আসবে যখন প্রায় সবাই সুদ খাবে। যদি সুদ নাও খায়,সুদের বাষ্প হলেও তাদের গায়ে লাগবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৩৩১) আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সুদের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুন। সুদের অভিশাপ থেকে আমাদের দেশকে হিফাযত করুন। গোটা বিশ্ববাসীকে সুদের ব্যাধি থেকে মুক্ত করুন। সারা বিশ্বে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করে দিন। আমীন।
চমৎকার লিখনী। অস্পষ্টতা নাই মাশাআল্লাহ । আমাদের দিল অন্তর নরম করে বোঝার চেস্টা করা উচিত। মহান আল্লাহ সহায় হোন। কোন একটা পৃষ্ঠায় “হাদিস অস্বীকার কারীদের” বিরুদ্ধে লেখা চাই। জাযাকাল্লাহ