মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
পবিত্র মক্কা নগরী। মুমিনের হৃদয়ের স্পন্দন। ভালোবাসার কানন। আল্লাহর মহব্বত নিবেদনের পবিত্র স্থান। এখানেই জন্মগ্রহণ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রবের নিদর্শন হয়ে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে পবিত্র কাবা। পাশেই বিশাল এলাকা জুড়ে হারাম শরীফ। শুভ্র চাদরে আবৃত তাওয়াফকারীদের বিচরণে সদা-সর্বদা মুখরিত থাকে।
হাজরে আসওয়াদ নামক কালো পাথরটি এখনো মানুষের গুনাহের কালিমা টেনে নেয়। মাকামে ইবরাহীমে সংরক্ষিত আছে ইবরাহীম আ. এর মুবারক পায়ের ছাপ। পাশেই পবিত্র যমযম কূপ। আজো হাজীগণ আবে যমযমে তৃপ্ত হয়ে আল্লাহর শোকর আদায়ে অশ্রুসিক্ত হোন। সাফা-মারওয়া আজো মা হাজেরার কুরবানীর সাক্ষী হয়ে দণ্ডায়মান। ‘ফাজ্জীন আমীক’ থেকে দলে দলে ছুটে আসার ধারা অদ্যবধি অব্যাহত আছে। কেউ সওয়ার হয়ে, আবার কেউ পায়ে হেঁটে। একবার সফর করে পরিতৃপ্ত হওয়া অসম্ভব। যে একবার আসে, তার বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। দূর দূরান্ত থেকে বৃক্ষহীন এই তৃষিত মরুতে মানুষ ভীড় জমায়। সারা বিশ্বের সকল মুসলিমের হৃদয় থেকে অনুরাগ উদ্বেলিত হয়। সবার মন ব্যাকুল থাকে কাবার মায়ায়। এ যেন মুসলিম জাতি পিতার হযরত ইবরাহীম আ. এর দু‘আর বাস্তব প্রতিফলন। হযরত ইবরাহীম আ. মক্কা নগরীর ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু‘আ করেছিলেন,
رَبَّنَا إنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنْ النَّاسِ تَهْوِي إلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنْ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার কতিপয় সন্তানকে আপনার সম্মানিত ঘরের আশপাশে এমন এক উপত্যকায় এনে বসবাস করিয়েছি, যেখানে কোনো ক্ষেত-খামার নেই। হে আমাদের প্রতিপালক! (এটা আমি এজন্য করেছি) যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং আপনি মানুষের অন্তরে তাদের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে দিন এবং তাদেরকে ফলমূলের জীবিকা দান করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। -সূরা ইবরাহীম; আয়াত ৩৭।
কালো গিলাফের দিকে তাকিয়ে থাকাও ইবাদত। প্রতিদিন একশ বিশটি রহমত নাযিল হয়। তাওয়াফকারীদের জন্য ষাটটি। মুসল্লীদের জন্য চল্লিশটি। আর দৃষ্টিপাতকারীদের ভাগ্যে থাকে বিশটি রহমত। (কানযুল উম্মাল; হাদীস ৩৪৬৩০) এসব রহমতের ভাগিদার হওয়া বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। সুযোগ পেলে কেউ হাতছাড়া করতে চায় না। স্বয়ং নবীজী ছাড়তে চাননি পবিত্র মক্কা। হিজরতের সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে কাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, তুমি দুনিয়ার সর্বোত্তম স্থান। আল্লাহর নিকট অতীব প্রিয়। আমাকে বের করা না হলে কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। -সুনানে নাসাঈ; হাদীস ৪২৫২।
আল্লাহ তা‘আলা কাবা শরীফ ও তৎসংলগ্ন পুরো হারাম শরীফকে বিরাট মর্যাদা দান করেছেন। পৃথিবীর শুরু থেকে এ শহরকে সম্মানিত করেছেন। যে হতভাগা এই কাবার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এর সম্মান রক্ষা করা মুসলমানদের যিম্মাদারী। এই যিম্মাদারী পালনে কোনো ত্রুটি হলে নেমে আসতে পারে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক আগেই সতর্ক করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন,
لا تزال هذه الأمة بخير ما عظموا هذه الحرمة حق تعظيمها فإذا تركوها وضيعوها هلكوا
অর্থ : আমার উম্মত যতদিন পর্যন্ত পরিপূর্ণরূপে এই শহরের সম্মান রক্ষা করতে পারবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে। যেদিন তারা এর সম্মান নষ্ট করবে, জেনে রেখো, সেদিন তাদের ধ্বংস অনিবার্য। -মুসনাদে আহমদ; হাদীস ১৯০৪৯।
আল্লাহ তা‘আলা এ জায়গার এমন আযীমুশ্বান মর্যাদা দান করেছেন যা অন্য কোনো জায়গার ব্যাপারে বর্ণিত পাওয়া যায় না।
- এখানে এক রাকাআত নামায পড়লে এক লক্ষ রাকাআত নামাযের সওয়াব লাভ হয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৪০৬।
- এখানে শুধু মুসলমানরা প্রবেশ করতে পারে। অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ। -সূরা তাওবা; আয়াত ২৮।
- কোনো প্রাণীকে ধাওয়া করা, আঘাত করা বা কষ্ট দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১২৮৪।
- এ জায়গায় উৎপন্ন কোনো গাছ, ঘাস বা কাঁটা উপড়ানো যায় না। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১২৮৪।
- যে ব্যক্তি হেরেমে প্রবেশ করবে, সে সব ধরনের আপদ বিপদ থেকে নিরাপদে থাকে। তাকে গ্রেফতার করা, আঘাত করা বা যেকোনো ধরনের কষ্ট দেয়া হারাম হয়ে যায়। -সূরা আলে ইমরান; আয়াত ৯৭।
- কিয়ামতের আগে দাজ্জালের ফেতনা বড় ভয়াবহ হবে। দাজ্জাল পুরো পৃথিবী চষে বেড়াবে। কিন্তু মক্কা মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৮৮১।
এরকম আরও অনেক বৈশিষ্ট্যের কারণে এ হারাম শরীফ আমাদের কাছে সম্মানের ভূমি। পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকে এ নগরী সম্মানিত। কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত হয়ে থাকবে। নেককার মানুষরা এর সম্মান রক্ষায় যত্নবান হয়। তবে নাফরমান ও বদকার লোকেরা এর সম্মান রক্ষায় যত্নবান হতে পারে না। বরং তারা ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত হয়। এমনকি কিয়ামতের আগে যখন এই কাবা ভেঙ্গে ফেলা হবে, তখন কোনো ভালো মানুষ এ ন্যাক্কারজনক কাজে অংশগ্রহণ করবে না। বরং আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত এক হাবশী লোক যার পায়ের পাতা চিকন হয়ে গেছে, সে কাবা ঘর ভাঙ্গার জন্য কোদাল হাতে তুলে নিবে। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৫৯৬।
এই কিবলা হেফাযত করা আমাদের যিম্মাদারী। তার আশপাশের হারাম শরীফের দেখাশোনা করাও নৈতিক দায়িত্ব। সবসময় তাওয়াফ অব্যাহত রাখা আমাদের কর্তব্য। মক্কাকে কেন্দ্র করে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজের ব্যবস্থাপনা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। সবসময় হারাম শরীফের দ্বার উন্মুক্ত রাখা চাই। তাওয়াফ, নামায, যিকির আযকারে গুঞ্জরিত থাকবে এই পবিত্র ভূমি। হারাম শরীফে এসব ইবাদত করতে বাধা দিলে কঠিন শাস্তির ধমকি বর্ণিত আছে। পবিত্র কুরআন শরীফে আছে,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُولَئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থ : সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে আল্লাহর নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং তাকে বিরান করার চেষ্টা করে? এরূপ লোকের তো অধিকারই নেই যে, তাতে ভীত-বিহ্বল না হয়ে প্রবেশ করবে। এরূপ লোকদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্চনা এবং তাদের জন্য আখেরাতে রয়েছে মহা শাস্তি। -সূরা বাকারা; আয়াত ১১৪।
আমরা যেন ওসব শাস্তির মুখোমুখি না হই, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ওসব হুশিয়ারী বাণী মনে রেখে বাইতুল্লাহকে ইবাদতমুক্ত বিরান ঘর হওয়া থেকে হেফাযত করতে হবে। মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়ার ব্যাপারে আরও কঠিন হুশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
إنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِي جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَاءً الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
অর্থ : নিশ্চয়ই (সেই সব লোক শাস্তির উপযুক্ত) যারা কুফর অবলম্বন করেছে এবং যারা আল্লাহর রাস্তা ও মসজিদুল হারাম যাকে আমি স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতদের জন্য সমান বানিয়েছি, তার থেকে অন্যদেরকে বাধা দেয়। যে এখানে কোনো ধরনের যুলুম করে সীমালঙ্ঘন করবে, তাকে আমি মর্মন্তুদ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো। -সূরা হজ; আয়াত ২৫।
কুরআন-হাদীসের আলোকে পবিত্র কাবা খোলা রাখার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে গেল। আবার কাবায় প্রবেশ করতে না দেয়ার ভয়াবহতাও বুঝে আসল। কিন্তু বর্তমানে কি এসব বিধানাবলী পালন করা হচ্ছে? একদিকে কুরআন, আর আরেকদিকে সৌদি সরকার, উভয়ের সিদ্ধান্তের মাঝে কোনো মিল দেখা যায় না। এইতো কিছুদিন আগে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত প্রথম আলো পত্রিকায় আসল। সেখানে আছে, ‘করোনা মহামারির মধ্যে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশিদের হজে যাওয়া বন্ধ করেছে সৌদি আরব। এতে এবারও বাংলাদেশিদের হজ করা হচ্ছে না।
শনিবার আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব সরকার এবার করোনা ভাইরাস বিধিনিষেধের কারণে শুধু তাদের নাগরিক এবং দেশটিতে বসবাসরত লোকজনকে হজ করার সুযোগ দেবে। এ বছর সর্বমোট ৬০ হাজার মানুষ হজ করতে পারবেন।’ (সূত্র : প্রথম আলো; ১৩ জুন ২০২১)
বর্তমানে কোভিড-১৯ এর কারণে হারাম শরীফে প্রবেশাধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। এই সংকোচনের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে হয় না। এটা আমরাও স্বীকার করি যে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্ব করোনার ভয়াল থাবার শিকার। এটা আমাদের যুগের নতুন রোগ। যুগে যুগে নিত্য নতুন রোগের আবির্ভাব হয়েছে। সেই ধারায় করোনাও একটি রোগ। মানুষের রোগ-ব্যাধি যা হয়, সব আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। তাঁর নির্দেশেই হয়। তার হুকুম ছাড়া অন্য কোনো কিছুর দখল থাকতে পারে না। হাদীস শরীফে পরিষ্কার বর্ণিত আছে,
لا عدوى ولا طيرة ولا هامة ولا صفر
অর্থ : রোগের নিজস্ব কোনো সংক্রমণ শক্তি নেই। পাখি উড়িয়ে কল্যাণ অকল্যাণ নির্ধারণ করার কোনো ভিত্তি নেই। হুতোম পেঁচার ডাক শুনে অশুভ নির্ধারণ করার কোনো ভিত্তি নেই। সফর মাসেরও বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। -সহীহ বুখারী; হাদীস ৫৭৫৭।
এ হাদীসের আলোকে আমরা বলতে পারি, করোনা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এর দোহাই দিয়ে মসজিদ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। মসজিদ বন্ধ রাখলে ভুল সিদ্ধান্ত হবে। কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনা থাকার পর এত বড় ভুলের শিকার হওয়া বোধগম্য নয়। মুসলমানদের ঈমানী কেন্দ্রভূমির শাসকদের এ ব্যাপারে আরও চিন্তা করা উচিৎ।
করোনার যখন উৎপত্তি হয়, তখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের এলাকার অনেক কিছুই বন্ধ রেখেছিল। মাসের পর মাস লকডাউন ছিল অনেক দেশেই। সবাই ঘরে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন সবাই বুঝতে পারছে যে, লকডাউন দিয়ে সবকিছু অকেজো করে দেয়া অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে এখন সব দেশের বাসিন্দারা। যেসব দেশে বিপুল জনগণ করোনায় মারা গেছে, তারাও আজ লকডাউনের বিরোধিতায় মিছিলে নেমেছে। ইতালীয়ানদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসা চাঞ্চল্যকর তথ্য এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
একসময় সব দেশে অনেক কিছু বন্ধ রাখা হলো। এখন সবখানে সব প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত। গুটি কয়েক ভীতু টাইপের মানুষ ছাড়া এখন সবাই ঘরের বাইরে। সামাজিক দূরত্ব এখন একটি অফিসিয়াল ব্যাপার মাত্র। এর বাস্তবতা বলতে কিছু নেই। যমযমের পানি সব রোগের শেফা। এই পানি পান করলে করোনা থেকে বাঁচার আশা আছে। কিন্তু ওই কুপের পবিত্র পানি হাতে নেয়ার সুযোগ না পেলে কীভাবে রোগমুক্ত হওয়ার আশা করা যায়।
সুতরাং যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কাবার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের করণীয় হল এই দায়িত্বের সৎ ব্যবহার করা। গত বছর মানুষ স্বাধীনভাবে হজ আদায় করতে পারেনি। এ বছরও সবার জন্য অনুমতি হয়নি। দু‘আ কবুল হওয়ার এসব পবিত্র ভূমি বন্ধ না করে সব বান্দাদের সেখানে যেতে দেয়া উচিৎ। যদি সব নেক বান্দারা এসব জায়গায় একত্রিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু‘আ করতে পারত, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই খুশি হতেন। মহামারির সময় বান্দাদের রোনাযারী আল্লাহর গোসসা ঠাণ্ডা করে দিত। আমাদের গুনাহের কারণে যে আযাব এসেছে, ওই গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার পাথর হাজরে আসওয়াদের কাছে যেতে দেয়া উচিৎ। আমরা গুনাহমুক্ত হতে পারলে এসব মহামারি থেকে জাতি মুক্তি পাবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু এভাবে পুরো হজ বন্ধ করে দিয়ে মক্কা মদীনা বিরান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই সঠিক নয়। তাই সব দেশের মুসলমানরা মিলে আরব শাসকদেরকে হজের অনুমতি দেয়ার জোরদার আহ্বান করা দরকার। তাদেরকে বুঝানো উচিৎ, এই কাবার প্রতিবেশী হওয়ার বিরাট সৌভাগ্য জুটেছে তাদের ভাগ্যে। এই ভাগ্যের কদর করা চাই। মসজিদে হারামের চাবি হাতে পেয়েছি বলে যখন তখন বন্ধ করার সুযোগ নেই। তালা খোলার জন্য এই চাবি দেয়া হয়েছে; তালা বন্ধ করার জন্য দেয়া হয়নি। কোনো আশেক বান্দা হারাম শরীফে ঢুকে গেলে তার উপর জরিমানা চাপিয়ে দেয়ার জন্য শাসক বানানো হয়নি। কাবার চাবি যাদের হাতে থাকবে, তাদের উদ্দেশ্যে অনেক আগেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন,
يا بني عبد مناف ، من ولي منكم من أمور الناس شيئا ، فلا يمنعن أحدا طاف بالبيت وصلى أية ساعة شاء من ليل أو نهار
অর্থ : হে বনী আবদে মানাফ! তোমাদের মধ্যে যারা মানুষের শাসক হবে, তারা যেন কখনোই এই বাইতুল্লায় রাত দিনের যেকোনো সময় মানুষকে তাওয়াফ করতে বা নামায পড়তে বাধা না দেয়। -সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৮৬৮।
এ বছরও হজের মাস শুরু হয়ে গেছে। শাওয়াল বিদায় হয়ে গেল। যিলকদ মাস শুরু হয়ে গেল। এখনো দুই মাস সময় আছে। হজের সময় আগের ঈমানী প্রাণ আবার ফিরে আসুক। মক্কার পবিত্র ভূমি লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইকের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠুক। মদীনায় মুষলধারে সালাত সালামের বৃষ্টি বর্ষণ হোক। সবার জন্য উন্মুক্ত হোক হারামাইন শরীফাইন। কাবার অধিবাসীদের প্রতি এটিই আমাদের নিবেদন।