মা’হাদ প্রতিবেদন
চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্ররা যেন মা’হাদে অবস্থান, দরসগ্রহণ ও আমল-আখলাক সহ সকল বিষয়ে নিয়ম, শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতার প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হতে পারে, সেজন্যে ভর্তির কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সব ছাত্র ও শিক্ষকবৃন্দের উপস্থিতিতে ১৭ জুন ২০১৯ রোজ সোমবার অনুষ্ঠিত হয় কানুনের মজলিস। মা’হাদের আসাতিযায়ে কেরামের পাশাপাশি এ মজলিসে উপস্থিত ছিলেন, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার নায়েবে মুফতী ও সিনিয়র শিক্ষক, মা’হাদের ইলমে ইকতিসাদের উস্তাদ মুফতী সাঈদ আহমাদ দা.বা.।
এ মজলিসের উদ্বোধনী আলোচনায় মা’হাদের সম্মানিত মুদীর মুফতী মাহমূদুল আমীন সাহেব ছাত্রদের উদ্দেশ্যে করা মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবী রহ. এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। নদবী রহ. সেখানে বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর ঘর মসজিদের মিম্বারের পাশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নামে কসম করে বলছি,তোমাদের প্রত্যেকে একেকটি হীরকখণ্ডের অধিকারী। আর সেই হীরকখণ্ড হলো, তোমাদের জীবনের সুপ্ত যোগ্যতা। শিক্ষাগ্রহণের যোগ্যতা, আনুগত্যের যোগ্যতা এবং উত্তম থেকে উত্তম হওয়ার যোগ্যতা।
মুদীর সাহেব আরো বলেন, ‘কেউ যদি সত্যিকারের ছাত্র হতে চায় তাহলে তাকে প্রথম দিন থেকেই নিজে ভালো হওয়া ও নিজে যোগ্য হওয়ার ধারণা দূর করতে হবে।’
মা’হাদের আমীনুত তালীম মুফতী হাফীজুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা যারা মাদরাসায় পড়াশোনা করতে এসেছি তাদেরকে পুরো পৃথিবীতে চলমান স্রোতের সাথে মোকাবিলা করে আসতে হয়েছে। কারণ, পুরো পৃথিবীতে এখন চলছে অন্যায়ের জয়জয়কার। ভালো এবং ন্যায়নীতি আজ পৃথিবী থেকে বিলুপ্তপ্রায়। এমন সময়ে হক ও হক্কানিয়াতের ঝাণ্ডা উত্তোলন করার জন্যে আমরা মাদরাসায় আসার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের এই আসা যেন গতানুগতিক না হয়। আমাদের হৃদয়ে যেনো এই স্রোতের বিপরীত চলার মূল উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি চিরজাগরুক থাকে।’
মা’হাদের চতুর্থ তলায় আয়োজিত এ মজলিসে আরো বক্তব্য রাখেন, মা’হাদের নাযেমে দারুল ইকামা মাওলানা মাহমূদুল হাসান খুলনাবী সাহেব। মা’হাদের সম্মানিত উস্তাদ, মাওলানা মাহমূদ বিন ইলইয়াস সাহেব, মাওলানা সুহাইল সাহেব ও মাওলানা সাঈদুর রহমান সাহেব।
এ মজলিসের সর্বশেষ আলোচনায় মুফতী সাঈদ আহমাদ সাহেব দা. বা. বলেন, আমাদের ভেতর আর বাহির এক রাখতে হবে। কোন কিছু মনে একরকম রেখে মুখে ভিন্নভাবে প্রকাশ করা যাবে না। ঈমানদারের সিফাত হলো তার বহ্যিক অবস্থা আর আভ্যন্তরীণ অবস্থা এক থাকে; বরং ভেতরটা বাহির থেকে উত্তম থাকে। তিনি আরো বলেন, ‘গোনাহ মানুষ সাধারণত চার কারণে করে থাকে। ক.শয়তানের ধোঁকা। খ.নফসের প্ররোচনা। গ.অসৎসঙ্গ। ঘ.গোনাহের অভ্যাস।
প্রথম তিনটির ব্যাপারে মানুষ সতর্ক থাকলেও শেষোক্তটির ব্যাপারে তারা উদাসীন। অথচ গোনাহ ছাড়তে হলে গোনাহের অভ্যাস ত্যাগ করা খুবই জরুরী। এবিষয়ে আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত। আমরা মনে করি, মানুষ অভ্যাসের দাস। সুতরাং তার যদি কোন একটা জিনিসের অভ্যাস হয়ে যায়, তাহলে সেটা পরিত্যাগ করা প্রায় অসম্ভব। এই ধারণা দূর করার জন্যেই আল্লাহ তা‘আলা রমাযানের রোজাকে ফরজ করেছেন। উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন অভ্যাসের দাস না হয়ে অভ্যাসকে নিজের দাস বানাতে সক্ষম হয়।
বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে বলছি। আমরা যে রমাযানে রোযা রাখি তা দ্বারা উদ্দেশ্য কি উপবাস? তা কিন্তু নয়। উপবাস থাকাটা রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। উপবাস উদ্দেশ্য হলে বলা হতো, রমাযানের বাইরে তো তিনবার খাওয়া হয়, সুতরাং রমাযানে একবারের বেশি খাওয়া যাবে না। এরকম আদেশ হলে উপবাসকে রমাযানের উদ্দেশ্য বলা যেতো। কিন্তু যেহেতু রোজার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষের অভ্যাসকে পরিবর্তন করার সবক দেওয়া এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। সে জন্যে রাতে বান্দা যতোই খাওয়া-দাওয়া করুক না কেন, তাকে কিছুই বলা হবে না।
এ কারণেই দেখা যায়, রমাযান ছাড়া আমরা সাধারণত তিন বেলা খাবার খাই। সকাল, দুপুর, রাত। রমাযানে এসেও দেখা যায় আমরা তিনবেলাই খাচ্ছি। সাহরী, ইফতার, রাতের খাবার। রমাযান এসে শুধু এতটুকু করছে যে, খাবারের ব্যাপারে আমাদের আগের সময় তথা অভ্যাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এ পরিবর্তন দ্বারা মানুষকে একথা বোঝানো হচ্ছে যে, খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে যখন অভ্যাসকে পরিত্যাগ করা সম্ভব, সুতরাং অন্যান্য বিষয়েও অভ্যাসকে পরিত্যাগ করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে যখন সে অভ্যাস হয় মন্দকাজ বা গোনাহের অভ্যাস তখন তো সেটা পরিত্যাগ করা জরুরী হয়ে পড়ে।’ মুফতী সাঈদ আহমাদ সাহেবের আলোচনা শেষে তাঁর দু‘আর মাধ্যমে মজলিসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।