কর্ডোভা জামে মসজিদ, স্পেন (৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া শাসক প্রথম আব্দুর রহমানের নির্দেশে মসজিদটি নির্মিত হয়। )
খেলাফতে বনূ উমাইয়া (৪১-১৩২ হিজরী, ৬৬১-৭৫০ খ্রিস্টাব্দ)
খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের পর হযরত মু’আবিয়া রাযি. এর হাতে উমাইয়া খেলাফতের সূচনা হয়। শামকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত এ খেলাফত হিজরি ৪১ সালে আমীরুল মুমিনীন হযরত মু’আবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে মুসলিম উম্মাহকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করে। যাত্রা শুরু হয় নব্বই বছরের একটি সুদীপ্ত ইতিহাসের, যেখানে ইসলামী দাওয়াহ, জিহাদ, প্রশাসনিক সংস্কার এবং সভ্যতার বিকাশের উজ্জ্বল দিগন্ত উন্মোচিত হয়। উমাইয়া শাসকরা আরব ও ইসলামী সংস্কৃতিকে প্রসারিত করেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখেন।
উমাইয়া খেলাফত কাল ছিল এমন এক পর্ব, যেখানে মুসলিম উম্মাহর শক্তি, সভ্যতা, দাওয়াহ ও নেতৃত্ব বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিল।অল্পদিনের ব্যবধানে উমাইয়া খলিফারা মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। তাদের আমলে ককেশাস, মধ্য এশিয়া, সিন্ধু, মরক্কো ও স্পেন মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। উমাইয়া খেলাফতের সীমানা ছিল ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গমাইল, এবং প্রায় ৬২ মিলিয়ন মানুষ তাদের শাসনাধীন ছিল, যা তখনকার পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯ শতাংশ। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে উমাইয়া খেলাফত ছিল ইতিহাসের পঞ্চম বৃহৎ সাম্রাজ্য।
৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ১৪ জন উমাইয়া খলিফা দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট ছিলেন সাহাবি হযরত মু’আবিয়া (রা.), যিনি চার খলিফার অধীনে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে খলিফা হন। মু’আবিয়া (রা.)ুএর সময়ে এশিয়া মাইনর (আধুনিক তুরস্ক) অঞ্চলে বিজয় অভিযান সম্পন্ন হয় এবং আফ্রিকার কার্তেজ, কারউন, তেলেমসেন, বাইজার্ট ও মিসরের অংশবিশেষ মুসলিমদের অধীনে আসে।
আবদুল মালিক বিন মারওয়ান এর আমলে তিনি রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নতুন অভিযান শুরু করেন, আফ্রিকার তিউনিস, দালিলি, তানজাহ, কারতাজনাহ বিজয় করেন এবং বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। এ সময় মুসলিম বাহিনী মধ্য এশিয়ার খোরাসান অতিক্রম করে কাবুল পর্যন্ত পৌঁছায়।
খলিফা ওয়ালিদ ইবনু আবদুল মালিক এর আমলে মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা ইউরোপ স্পর্শ করে। তিনি স্পেনের বিস্তৃত অঞ্চল জয় করেন এবং মধ্য এশিয়ার বুখারা, সমরকন্দ, তাসখন্দ, ফারগানা ও সিন্ধু অঞ্চলও মুসলিমদের অধীনে আসে। সোলাইমান ইবনু আবদুল মালিক কনস্টান্টিনোপল শহর অবরোধ করেন এবং কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী শহরগুলো জয় করেন। হিশাম ইবনু আবদুল মালিক স্পেন ও পর্তুগাল বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনীকে ফ্রান্সের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন, যদিও তারা সেই বিজয় ধরে রাখতে পারেনি।
আর ন্যায়পরায়ণতা, তাকওয়া ও নববী আদর্শের উজ্জ্বল প্রতীক উমর ইবনু আবদুল আজিজ (৯৯ু১০১ হি.) তাঁর অল্প সময়ের খেলাফতকে নবজাগরণের আলোয় রূপ দেন। এধারার শেষ খলিফা মারওয়ান সানী এর আমলে আব্বাসীয় আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে, ১৩২ হিজরিতে উমাইয়া খেলাফতের দীর্ঘ নব্বই বছরের বিজয়ী অধ্যায় সমাপ্ত হয়।
এইভাবে সেই ‘বিজয়ী সাম্রাজ্য’, যা দাওয়াহ, জিহাদ ও সভ্যতার আলো ছড়িয়েছিল, ইতিহাসের পাতায় মহিমা রেখে শেষ হয় এবং পরবর্তীতে আব্বাসীয় খেলাফতের উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা ঘটায়।
