সুলতান হাসান মসজিদ, কায়রো, মিশর (সুলতান আন নাসির হাসান কর্তৃক বাহরি মামলুক আমলে ১৩৫৬-৬৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মসজিদটি নির্মিত হয়।)
মামলুক সালতানাত (৬৪৮-৯২৩ হিজরী, ১২৫০-১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ)
মামলুক সালতানাত ছিল মধ্যযুগের মিশর, লেভান্ট, তিহামাহ ও হেজায জুড়ে বিস্তৃত একটি সাম্রাজ্য। এই সালতানাত ১২৫০ সালে আইয়ুবীয় রাজবংশের পতনের পর থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই শতাব্দী ধরে মিশর ও সিরিয়াসহ বৃহৎ মুসলিম ভূখণ্ড শাসন করে।
১২৫৮ সালে হালাকু খানের হাতে বাগদাদের পতন এবং আব্বাসীয় খেলাফতের ধ্বংস মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্বহীন করে দেয়। এই বিপর্যয়ের পর মোঙ্গলরা দ্রæত সিরিয়া দখল করে মিশরের দিকে এগোতে থাকে। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দের আইন জালুতের যুদ্ধে মামলুক সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুয ও রুকনুদ্দীন বাইবার্সের নেতৃত্বাধীন মামলুক বাহিনীর কাছে সর্বপ্রথম মোঙ্গলীয় বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। এই পরাজয়ে মঙ্গোলদের অপরাজেয় সুনাম ভেঙে যায় এবং তাদের পশ্চিমমুখী অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়াও ১২৮১ সালে এবং ১২৯৯ সালে মামলুক বাহিনীর সাথে মঙ্গোলদের যুদ্ধ হয় এবং মামলুক বাহিনী মঙ্গোলদের বিশাল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। সর্বশেষ এবং সবচেয়ে সিদ্ধান্তমূলক সংঘর্ষটি ঘটে ১৩০৩ সালে মারজ আল-সুফ্ফার প্রান্তরে। এখানে মামলুক সুলতান আল-নাসির মুহাম্মদের সেনাবাহিনী মঙ্গোলদের শক্তিশালী বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে।
আইন জালুতের বিজয়ের পর মামলুক সুলতান রুকনুদ্দীন বাইবার্স কায়রোতে আব্বাসীয় খলিফার পুত্র আবুল কাসিম আহমদকে আনুষ্ঠানিকভাবে খলিফার আসনে বসিয়ে ইসলামী বিশ্বের ধর্মীয় নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করেন। যদিও এই খলিফাগণ প্রতীকী ছিলেন, কিন্তু এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে ধর্মীয় ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক বৈধতা বজায় থাকে এবং সেই ব্যবস্থার প্রকৃত অভিভাবক ছিল মামলুক সুলতানাতগণ।
১৫১৬ সালে উসমানীয় সুলতান সুলতান সেলিম প্রথম মারজ দাবিকের যুদ্ধে মামলুকদের পরাজিত করেন এবং পরের বছর ১৫১৭ সালে রিদানিয়ার যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মামলুক সালতানাতের বিপর্যয় ঘটে এবং ইতি ঘটে ২৬৭ বছরের দাপুটে শাসনের।
