মুসলিম শাসন আমল-৬

শাহজাহান মসজিদ, পাকিস্তান (এটি বর্তমান পাকিস্তানের একটি সুবিখ্যাত মসজিদ। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে মসজিদটি নির্মিত হয়।)

মোগল শাসন (৯৩২-১২৭৪ হিজরী, ১৫২৬-১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ)

১৫২৬ সালে সম্রাট বাবরের হাতে মোগল সম্রাজ্যের সূচনা হয়। আজকের আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ অবধি ছিল মোগল সম্রাজ্যের সীমানা ব্যাপ্তি। পিতার দিক থেকে বীর তৈমুরলঙ্গ এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন সম্রাট বাবর। চেঙ্গিস খানের জন্মভূমি ছিল মোঙ্গল জাতি অধ্যুষিত মোঙ্গলিয়া। এ মোঙ্গল শব্দ থেকেই মোগল শব্দটির উৎপত্তি। চেঙ্গিস খানের সাথে সম্পৃক্তির সূত্র ধরেই সম্রাট বাবর প্রবর্তিত সাম্রাজ্য মোগল সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সম্রাট বাবরের হাতে গড়ে উঠা মোগল সম্রাজ্য জুড়ে পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশেই ইসলামী ভাবধারা অটুট ছিল।

সম্রাট বাবর ব্যক্তি জীবনে দীন অনুরাগী একজন বাদশা হিসেবে পরিগণিত ছিলেন। তার রাজ্য ব্যবস্থাপনার বৃহদাংশ জুড়ে ইসলামী ভাবধারা ফুটে উঠত। তবে বাবর পৌত্র সম্রাট আকবারের শাসনমলে ইসলামী ভাবধারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আকবর পুত্র জাহাঙ্গীরের শাসনমলে ইসলামী ভাবধারা ধীরে ধীরে ফিরে আসতে শুরু করে।

সম্রাট শাহজাহান পুত্র আলমগীরের শাসনামলে ইসলামী ভাবধারার অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটে। তাঁর তত্ত্বাবধানে রচিত ইসলামী আইনগ্রন্থ ‘ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া’ তাঁর অমর কৃতি। মোগল সম্রাজ্য শুধু রাজনৈতিকভাইে শক্তিশালী ছিল না; বরং সম্রাজ্যের পরিবর্তন, সংস্কৃতি, সমাজ জীবন ও স্থাপত্যের উন্নয়নে তাদের ছিল অসাধারণ স্বাক্ষর।

মোগল শাসকদের অমর কীর্তিগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম হল, কাবুলীবাগ মসজিদ, বাবরি মসজিদ, কিলা-ই-কোহনা মসজিদ, ওয়াজির খান মসজিদ, মোতি মসজিদ, দিল্লীর জুমআ মসজিদ, দিল্লীর লালকেল্লা, দেওয়ানে খাস, দেওয়ানে আম।
তবে ধর্মানুরাগের পাশাপাশি স্থাপত্যশিল্পের প্রতি ছিল মোগল সম্রাটদের অতিশয়াসক্তি। ফলে অমিত অর্থ ব্যয়ে তাজমহল এবং ময়ূর সিংহাসনের মতো অপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করতে গিয়ে তারা বড় ধরনের শরীয়া লঙ্ঘনের সম্মুখীন হন।

সম্রাট আলমগীরের পরবর্তী সময়গুলোতে বৃটিশ বেনিয়াদের কূটচাল, মোগল সম্রাটদের অদূরদর্শিতা এবং স্বদেশ বিরোধী দুষ্টচক্রের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে মোগল সম্রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। সর্বশেষ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের নির্বাসনের মধ্য দিয়ে মোগল সম্রাজ্যের বেদনা বিধুর পরিসমাপ্তি ঘটে।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *