মুফতী হাফিজুর রহমান
আপনি মানুষ না ভগবান? এভাবে তুলনা করা একজন মুসলিমের জন্য আদৌ বিধিসম্মত নয়। কারণ আল্লাহর সাথে যেমন মানুষকে শরীক করা যায় না, তদ্রূপ ভগবানের সাথেও শরীক করা যায় না। কারণ মুসলিম পরিভাষায় ভগবান বলতে কিছু নেই। ইসলামী আইন মতে ভগবানে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ভগবান শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো, ঐশ্বর্যাদি ষড়গুণসম্পন্ন। ভগ অর্থ ১. ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এ ছয়টি ভগ বা গুণ। এই ছয় গুণের অধিকারীই ভগবান। ২. সৌভাগ্য, সৌন্দর্য। ৩. মাহাত্ম্য। ৪. ধর্ম। ৫. মোক্ষ। ৬. যোনি। ৭. গুহ্যদেশ। ৮. সূর্য। ৯ চাঁদ। ১০. পূর্ব ফল্গুনী নক্ষত্র। ভগাঙ্কুর : যোনিমুখ। ভগবান : ষড় গুণের অধিকারী, ভগবতী স্ত্রী।- বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান ৯১৫-৯১৬।
পারিভাষিক অর্থে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ষড় গুণের অধিকারী সত্তাকেই ভগবান জ্ঞান করে থাকে। আর এর স্ত্রী লিঙ্গ হলো ভগবতী তথা দুর্গা দেবি।- সংসদ বাংলা অভিধান ৪৬১।
শব্দ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ভগবান শব্দটি সংকীর্ণ বিশেষ একটি অর্থ বহন করে। আর এটি নিছক কোনো বাংলা শব্দই নয়; বরং এটি একটি সনাতনী (হিন্দু) ধর্মীয় শব্দ। হিন্দুরা বিশ্বাস করে ভগবান হলো, ঐশ্বর্যাদি ষড়গুণ সম্পন্ন বিশেষ এক সত্তা। এবং এর স্ত্রী হলো, ষড়গুণ সম্পন্না দুর্গা দেবি। সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা তাদের ভগবান বা ঈশ্বরের পরিবর্তে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করে না। কারণ তারা বিশ্বাস করে তাদের ঈশ্বর বা ভগবান ও মুসলিমদের আল্লাহ একই গুণে গুণান্বিত নয়।
আমরা আল্লাহ নামে যে পবিত্র সত্তাকে বিশ্বাস করি সে সত্তার গুণ বা বৈশিষ্ট্য সসীম নয়; অসীম। এবং আমাদের আল্লাহর কোনো স্ত্রী নেই। আর ভগবান শব্দটি যেহেতু বিশেষ একটি ধর্মজনগোষ্ঠীর ধর্মীয় পারিভাষিক শব্দ তাই এ শব্দটিকে আভিধানিক অর্থে ব্যবহার করে আল্লাহ উদ্দেশ্য নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পারিভাষিক অর্থকে পারিভাষিক অর্থেই ব্যবহার করতে হয়; সমাজে সেটাকে আভিধানিক অর্থে ব্যবহার করা যায় না। যেমন ধর্ষণ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো, নির্যাতন করা। আর পারিভাষিক অর্থ হলো, বলপূর্বক কোনো নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। সুতরাং এখন কেউ কাউকে অত্যাচার করে বলতে পারবে না, আমি তাকে ধর্ষণ করেছি।
সারকথা একজন মুসলিম ভগবান শব্দ বলতে ও লিখতে পারে না। ভগবানকে সত্য মনে করে তার সাথে মানুষের তুলনা করা যাবে না। তেমনিভাবে কল্পিত কিংবা অসত্য মনে করেও তার সাথে মানুষের তুলনা করা যাবে না।