মুফতী হাফিজুর রহমান
মাযহাব অর্থ কুরআন হাদীসের ব্যাখ্যাগত মত ও পথ। একেকটি আয়াত বা হাদীস থেকে বিধান আহরণের ক্ষেত্রে একাধিক অভিমত বের হয়ে এসেছে। বিধানগত ভিন্ন ভিন্ন এ অভিমতগুলোই এক কালে মাযহাব নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এটা শতসিদ্ধ কথা, একজন ব্যক্তির জন্য একই সাথে একাধিক মত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কারণ হানাফী মাযহাবে নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথা বলা হয়। অন্য দিকে হাম্বলী মাযহাবে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বলা হয়।
তো নামাজে হাত বাঁধার ক্ষেত্রে এ দুটি মাযহাব একত্রে মেনে চলা সম্ভব নয়। তবে বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক মাযহাব মেনে চলা সম্ভব। অর্থাৎ এক বিষয়ে এক মাযহাব, অন্য বিষয়ে অন্য মাযহাব অনুসরণ করা।
ফিকহের পরিভাষায় এ প্রক্রিয়াকে তালফীক বলা হয়। আর তালফীক করা সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মতে জায়েয নয়। কারণ এক বিধানের ক্ষেত্রে একজনের অভিমত গ্রহণ এবং অন্য বিধানের ক্ষেত্রে অন্যজনের অভিমত গ্রহণ- এভাবে গ্রহণ বর্জনের বিষয়টি মূলত প্রাধান্যজ্ঞান সাপেক্ষ বিষয়।
এর জন্য দীনী বিষয়ে সুগভীর পাণ্ডিত্ব ও ব্যুৎপত্তি অর্জনের প্রয়োজন। বর্তমানে এ পর্যায়ের যোগ্যমান ব্যক্তিদের সন্ধান লাভ করা বিষম দুরূহ ব্যাপার। আমাদের মত সাধারণ লোকেরা যেহেতু এ পর্যায়ের যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারিনি
তাই আমাদের জন্য নির্দিষ্ট একটি পথ অনুসরণের মাঝেই দীনী নিরাপত্তা নিহিত রয়েছে। আমাদের মত লোকেরা মত গ্রহণের উন্মুক্ত সুবিধা গ্রহণ করলে দীন চর্চার বিষয়টি সুবিধা চর্চায় রূপান্তরিত হয়ে একটি খেলনা বস্তুতে পরিণত হবে।
তাছাড়া যেসব উলামায়ে কেরাম তালফীককে বৈধতা দান করেন তাদের নিকট কেবল ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গই তালফীক করতে পারবেন যারা দীনী ইলমের ব্যাপারে গভীর পাণ্ডিত্ব ও ব্যুৎপত্তির অধিকারী হবেন।
সাথে সাথে প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে মুক্ত থেকে নিছক আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে সুযোগ সন্ধানী বা সুবিধা গ্রহণের মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ থেকে একাধিক ব্যাখ্যার মধ্য হতে নিজের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করবে।
সুতরাং সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য একটি মাযহাবকে মেনে চলার মাঝেই সতর্কতা নিহিত রয়েছে।
আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/ ৯০,উসূলুল ইফতা ২১৩,আদ্দুররুলমুখতার ১/৭৫, কামূসুল ফিকহ ২/৫৩৪, তাকলীদ কি শরঈ হাইসিয়াত, ৮০।