অনুষ্ঠিত হলো ১৪৪৪-৪৫ হিজরী শিক্ষাবর্ষের প্রথম অভিভাবক সম্মেলন

গত ১৭ই মুহাররম মোতবেক ৫ই আগস্ট শনিবার অনুষ্ঠিত হলো চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রথম অভিভাবক সম্মেলন। বেলা এগারোটা হতে পবিত্র কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয় সম্মেলনটি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সম্মেলন চলে। মা’হাদের নিজস্ব ভবন আল-মদীনা জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের প্রধান মেহমান ছিলেন, জামি‘আ ইসলামিয়া দারুল উলূম ও বাইতুল আমান মিনার মসজিদ মাদরাসার সম্মানিত মুহতামিম, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস এবং মা’হাদুল বুহুসিল ইসলামিয়ার প্রধান মুফতী ও মজলিসে শূরার প্রধান হযরত মুফতী ইবরাহীম হাসান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম।

একজন তালিবুল ইলমকে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলার জন্য যেমন শিক্ষককে অবিরাম মেহনত করে যেতে হয়। তেমনি অভিভাবককেও হতে হয় কৌশলী। মেনে চলতে হয় কিছু করণীয় ও বর্জনীয়। মূলত এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মনে করিয়ে দেওয়া হয় অভিভাবক হিসেবে পালনীয় বিষয়গুলো। সেই সাথে অভিভাবকগণের সুপরামর্শও গ্রহণ করা হয়। ফলে এ ধরনের সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষক-অভিভাবক উভয়েরই ব্যাপক ফায়দা হয়।

সম্মেলনের শুরুতে মা’হাদের নির্বাচিত তালিবুল ইলমগণ পর্যায়ক্রমে কুরআনে কারীম তিলাওয়াত, আসমাউল হুসনা (আল্লাহ তা‘আলার সুন্দরতম নিরানব্বই নাম) এবং মুনাজাতে মাকবূল পাঠ করে। এভাবে বরকতময় সম্মেলনটি শুরু হয়ে যায়।

আলোচনা পর্ব শুরু হয় সোয়া এগারোটা থেকে। মা’হাদের সম্মানিত উস্তায হযরত মাওলানা সাঈদুর রহমান মুমিনপুরী দামাত বারাকাতুহুম কুরআন ও হাদীসের আলোকে দ্বীনী ও দুনিয়াবী শিক্ষার মধ্যকার পার্থক্য ও দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

এরপর বয়ান পেশ করেন মা’হাদুল বুহুসিল ইসলামিয়ার মুহতারাম শিক্ষাসচিব হযরত মাওলানা মুফতী হাফিজুর রহমান দামাত বারাকাতুহুম। তিনি তার আলোচনার মাধ্যমে ‘মাদরাসা পক্ষ’ ও ‘অভিভাবক পক্ষ’ এ দুই পক্ষের সমন্বিত চেষ্টাতেই যে একজন ছাত্র উন্নতির পথে এগিয়ে যায় সে বিষয়টি স্পষ্ট করেন।

অতঃপর মা’হাদ পরিচালনা পরিষদের সদস্যবৃন্দের পক্ষ হতে পর্যায়ক্রমে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করেন মা’হাদের সম্মানিত অর্থসম্পাদক হযরত মাওলানা আরিফ হুসাইন সাহেব এবং মা’হাদের সভাপতি হযরত মাওলানা মাসউদুর রহমান সাহেব।

বারোটা বিশ মিনিট থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা মা’হাদের সম্মানিত মুদীর হযরত মাওলানা মুফতী মাহমূদুল আমীন দামাত বারাকাতুহুম দ্বীনি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও অভিভাবকদের করণীয়গুলো তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আপনার সন্তানকে আলেম বানালে পরকালে তো উপকৃত হবেনই; দুনিয়াতেও ফায়দা পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনি যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবেন তখন এ আলেম সন্তানই আপনার সেবা করে করবে। তার শেখা কুরআন ও হাদীস তাকে আপনার সেবা করতে বাধ্য করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সন্তানকে মাদরাসায় দিয়েছি শুধু আমাদের উপকারের জন্য নয়; গোটা জাতির ফায়দার জন্য। জাতির ফরযে কিফায়া আদায় করার জন্য। কিন্তু তাই বলে আমাদের যে উপকার হবে না, তা কিন্তু নয়। এ সন্তান আমাকে না নিয়ে তো জান্নাতেই যাবে না।

এরপর নামাযের পূর্ব পর্যন্ত অভিভাবকবৃন্দের অভিব্যক্তি শোনা হয়। তাদের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম কথা বলার জন্য আবেদন জানানো হয় জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার সম্মানিত উস্তায হযরত মাওলানা আবূ বকর সিদ্দীক সাহেব দামাত বারাকাতুহুমকে। মা’হাদের শিক্ষা-দীক্ষার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, গত বছর আমাকে বোর্ডের পক্ষ থেকে মুহাম্মদপুরস্থ কয়েকটি মাদরাসার পড়া-শোনার মান যাচাইয়ের যিম্মাদারী দেওয়া হয়। সে সুবাদে মা’হাদে আসি। এখানে এসে সত্যি আমি বিমুগ্ধ হই। আমরা সবাই দু‘আ করি, আল্লাহ যেন এতে দিনদিন উন্নতি দান করেন।

অভিভাবকবৃন্দের পক্ষ হতে বুশরা বিনতে রাজিয়া সুলতানা মহিলা মাদরাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ সাহেবও কিছু অভিব্যক্তি পেশ করেন।

যোহরের নামাযের পর এ সম্মেলনের প্রধান মেহমান হযরতুল আল্লাম মুফতী ইবরাহীম হাসান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম নসীহত পেশ করেন। তিনি বলেন, বাবা সহযোগিতা করছে; কিন্তু মা করছে না, তাহলে সন্তান দুনিয়াতে আসবে কী করে? ঠিক উস্তাদগণ প্রাণান্তকর মেহনত-মুজাহাদা করছেন; কিন্তু অভিভাবকগণ সাহায্য করছেন না, এতে কিন্তু সন্তানকে আদর্শবান বানানো যাবে না। তাই সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

মা’হাদের নির্মানাধীন ভবনে সবাইকে হালাল অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একসময় আমরা এ মুহাম্মদপুর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। এ উদ্দেশ্যে কিছু জায়গাও সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার রহমতে তাঁর এক বান্দা একাই প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার জায়গা মসজিদ-মাদরাসার জন্য দান করলেন। তিনি তো জায়গা দান করেছেন। এরপর ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণই আপনাদের দান-অনুদানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবানীতে কাজ যখন শুরু হয়েছে তো শেষও হবে, ইনশাআল্লাহ। আমাদের করণীয় হলো, যতটা সম্ভব আমরা নিজেদেরকে এর সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করি। এখনও অনেক ছাত্র আলাদা ভবনে রয়ে গেছে। এর ফলে একেতো মাসে মাসে ভাড়া দিতে হচ্ছে। তাছাড়া পড়া-শোনার উন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে। তাই অতিদ্রুত সকল ছাত্রকে এখানে আনার ব্যবস্থা করা দরকার। সেজন্য আমরা সকলে একটু ফিকির করি। পরিচিতজনদের কাছে বিষয়টি পেশ করি। আমার মাধ্যমে যারা আসবেন তাদের সমপরিমাণ সওয়াব আল্লাহ আমাকেও দান করবেন, ইনশাআল্লাহ। হযরতের বয়ান শেষ হওয়ার পর দু‘আর মাধ্যমে সম্মেলন সমাপ্ত হয়। অতঃপর মাদরাসার পক্ষ থেকে সবাইকে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করা হয়। বিদায়ের সময় একাডেমিক ক্যালেন্ডার ও অভিভাবকগণের করণীয় সংবলিত পর্চা প্রদান করা হয়।

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *