রকিবুল ইসলাম, দ্বিতীয় বর্ষ
৩১ মে ২০১৩ খ্রি.
আজ শুক্রবার। রক্তেভেজা মে মাসের শেষ দিন। হৃদয়টা বেশ ভারাক্রান্ত। রক্তের আখরে লেখা মে শব্দটির আজ শেষ রজনী। শাপলা ফুলের ছোপ ছোপ রক্ত আজও আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়। জানিনা হৃদয়ের এ ক্ষত কোন দিন শুকোবে কি না। অদ্য এ রজনিতে আরেকটি বেদনা জেগে উঠলো হৃদয়ের গভীরে। নিয়ম মতো বাদ ঈশা তা’লীম হলো। খুব আগ্রহ ভরে তা’লীম শুনলাম। তা’লীম শেষে উস্তাদ মহোদয় উপস্থিত হলেন। কয়েকটি বিষয়ে কথা বললেন। আচমকা একটি কথায় হৃদয়টা নড়ে উঠলো। উস্তাদে মুহতারাম বললেন, বাতায়ন তৃতীয় সংখ্যার জন্য তোমাদের রোজ নামচা লেখার সময় এসেছে। তবে দ্বিতীয় বর্ষেও যারা রয়েছো তাদের দিনলিপিতে যেন ফুটে উঠে বিদায়ের সুন্দর অনুভূতি। বিদায় শব্দটিতে চমকে উঠি। হঠাৎ যেন পূর্ণিমা রাতের চাঁদটাকে আড়াল করে ফেললো একখ- কালো মেঘ। যেন গা ছমছম করা এক ভয়াল রাতে নৈশব্দ দাঁড়িয়ে আছে। দু’টি বৎসরের মধুর স্মৃতিগুলো দু’চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো। এই তো সেদিনের কথা। দরসে হাদীসের ক্বলা ক্বলা সুর মূর্ছনা শেষে পা বাড়িয়ে ছিলাম নব অংকুরিত এক ফুল কাননে। নতুন ইলমের তৃষ্ণায় ছিলাম কাতর। নতুন কিছু পাবার আশায় তড়পানি ছিল হৃদয় জুড়ে। নতুন মালিরা বেরিয়ে এলেন নিত্য নতুন পুষ্প হাতে। হরেক রকমের ফুলের সুবাসে বিমোহিত হলাম। পরম আদরে আমাদের সঙ্গ দিলেন ইলম-জ্ঞানের উজ্জ্বল মোহনায়। ভোলা যাবে না কখনো তাদের শ্রমগাঁথা। জ্ঞান মনীষা পুষ্প কানন হে মা’হাদ! তোমার শাখার প্রথম পল্লব ছিলাম আমরা ক’জন। আমাদের বুকে নিয়ে তোমর পথ চলা ছিল শুরু। আজ তোমার দেহ সৌষ্ঠব বেড়ে উঠছে লকলকিয়ে। সময়ের প্রয়োজনে তুমি আমাদের ঝাঁকিয়ে ফেলে দিবে তোমার সতেজ দেহ থেকে। এত এত আদর করলে। এত এত মমতা দেখালে! তোমার একটুও কি মায়া হবে না আমাদের তরে? আজ তোমার পায়ের তলায় অমিত সম্ভাবনার চর জেগেছে। তুমি হুহু করে বেড়ে উঠবে অনন্য উচ্চতায়। তোমার দেহ জুড়ে জেগে উঠবে সারি সারি ইলমী প্রাসাদ। তোমার অপার সম্ভাবনার দিনে আমরা চলে যাবো তোমায় ছেড়ে। জানি তুমি সুখে থাকবে। তোমার কানন জুড়ে থৈ থৈ করবে স্বর্গীয় ফুল। ফুল পাখিদের সুর মূর্ছনায় মুখরিত রবে তোমার আঙ্গিনা। শুধু এই আমরা থাকব না। হয়তো তোমার হৃদয় থেকে মুছে যাবো একদিন। কিন্তু আমাদের হৃদয়ের সবুজ প্যারায় তোমার স্মৃতি থাকবে চির অম্লান। এই কাননের সবুজ আঙ্গিনায় যাদের ভ্রাতৃত্ব ভালবাসায় সিক্ত ছিলাম। সারাটা সময় তাদের উদার ভালবাসা চির সবুজ হয়ে থাকবে আমাদের হৃদয়ে। ভুলা যাবে না সেসব পবিত্র চেহারার কথা যারা বেদনা বিধুর এ সঙ্গীন সময়ে ফুল কাননে মালি হয়েছেন। হৃদয় মন উজাড় করে ঋদ্ধ করেছেন পুষ্প উদ্যান। আপনাদের উন্মুখতায় আমরা নন্দিত ছিলাম। বিদায়ের সাঁঝ বেলা এসে আপনাদের বড় মনে পড়ে। প্রার্থনা মাগি আপনাদের ধারে। নববী দিশাগুলো যেন ছড়িয়ে দিতে পারি পৃথিবী বলয়ের দূর দিগন্তে। বেদন বিধুর এ বিদায় ক্ষণে এতটুকুই আমাদের শেষ বাসনা। কবির ভাষায়,
সালাম লও হে বিদায় বেলা চলছি আপন নীড়ে,
বিরহ বারি ঝরছে অঝোর হৃদয় নয়ন জুড়ে।
বেঁচে থাকি যদি জীবনের তরে ফলবে মিলন রেখা,
মরে যাই যদি দুঃখ নিয়ো না পরকালে হবে দেখা।