নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্য

মুফতী ইবরাহীম হাসান


আল্লাহ তাআলা জীবন যাত্রার ভারসাম্য রক্ষার সবিশেষ তাগিদে মানুষকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ ও মহিলা। সন্দেহ নেই এ উভয় শ্রেণী মানুষ হিসেবে ও মনুষ্যত্বের সার্বিক বিচারে সমান। তাদের মাঝে মানুষ হিসেবে কোনো তারতম্য নেই। কিন্তু তার পরও স্বতঃসিদ্ধ যে, এ উভয় শ্রেণীর মাঝে

শারীরিক গঠন, শক্তি সামর্থ্য, আকর্ষণ-বিকর্ষণ, সতর ও পর্দাসহ বেশ কিছু বিষয়ে বড় ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান। পার্থক্যের এ দিকটাকে বাহ্যিক জীবন যাপনে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তেমন ইবাদতের ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেসব ইবাদত পালনে নারী-পুরুষের পার্থক্যের বিষয়টি শরীয়ত কর্তৃক সুস্পষ্ট সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নামায। হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য এবং আইম্মায়ে কেরামের ঐকমত্যে এ পার্থক্য প্রমাণিত। এজন্য সুদীর্ঘ তেরোশত বছর যাবত মানুষ নারী-পুরুষের পার্থক্য মেনেই নামায আদায় করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইদানীং অনেক ভাই জনসাধারণের মাঝে এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মিডিয়ার কল্যাণে (?) তারা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে নারী-পুরুষের নামাযের কোনো পার্থক্য নেই এর অদ্ভুত পয়গাম।

তাই এখন সময়ের আবশ্যিক দাবী হয়ে উঠেছে নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্য বিষয়ক শরয়ী প্রমাণগুলো উম্মতে মুসলিমার সামনে উপস্থাপন করা। সে দাবী পূরণের লক্ষ্যেই বক্ষমান নিবন্ধের অবতারণা।

নামাযের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সর্বসম্মত কিছু পার্থক্য

১. পুরুষ বিনা প্রয়োজনে মাথা খালি রেখে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে। কিন্তু নারীরা বিনা প্রয়োজনে খালি মাথায় নামায পড়লে নামায বাতিল হয়ে যায়।

২. পুরুষের সতর নাভী থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত। আর মহিলার সতর সমস্ত শরীর।

৩. পুরুষের জন্য মসজিদে নামায পড়া উত্তম; মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়া উত্তম।

৪. পুরুষের উপর নামায ফরয এবং জামাআত সুন্নাতে মুআক্কাদা। আর মহিলার উপর নামায ফরয কিন্তু জামাআত সুন্নাতে মুআক্কাদা নয়।

৬. পুরুষ মহিলার ইমাম হতে পারে। কিন্তু মহিলা পুরুষের ইমাম হতে পারে না।

৭. পুরুষ ইমাম হলে মুক্তাদীদের সামনে দাঁড়াতে হয়। আর মহিলা ইমাম হলে মুক্তাদীদের মাঝে দাঁড়াতে হয়। (উল্লেখ্য, নারীদের ইমামতি তখন মাকরূহের সাথে অনুমোদিত, যখন মুক্তাদী নারী হয়।)

৮. পুরুষ কর্তৃক ইমামকে লুকমা দিতে হলে সুবহানাল্লাহ বলে লুকমা দিবে। আর মহিলা কর্তৃক ইমামকে লুকমা দিতে হলে হাতের উপর হাত মেরে লুকমা দিবে।

৯. পুরুষের জন্য সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে আসা উত্তম। আর মহিলার জন্য সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে আসা হারাম।

১০. পুরুষের উপর জুমুআর নামায ফরয। আর মহিলার জন্য জুমুআ ফরয নয়।

উপরোক্ত নামায বিষয়ক মাসআলাসমূহে দেখা যাচ্ছে, নারীদের সতর ও পর্দার বিশেষ বিবেচনা করতে গিয়ে বেশ কিছু জায়গায় শরীয়ত নারীদের জন্য স্বতন্ত্র বিধান নির্ধারণ করেছে। খোদ গাইরে মুকাল্লিদ আলেমরাও মহিলাদের নামাযের পার্থক্যের এ বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর ভিত্তিতেই তাদের ফতওয়া প্রস্তুত হয়ে আছে।

১১. পুরুষদের উপর দুই ঈদের নামায ওয়াজিব। কিন্তু নারীদের উপর ওয়াজিব নয়।

হাদীসের আলোকে মহিলাদের হাত উঠানোর পদ্ধতি

عن وائل بن حجر قال جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال فساق الحديث وفيه يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها.

১. অর্থ : হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাযি. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে ওয়াইল ইবনে হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা বুক বরাবর হাত উঠাবে। (আলমুজামুল কাবীর লিত ত্ববারানী; হা.নং ২৮, মাজমাউয যাওয়াইদ; হা.নং ১০৩)

عن ابن عباس أنه سئل عن صلاة المرأة فقال تجتمع وتحتفر.

২. অর্থ : মহিলার নামায সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, খুব জড়োসড়ো হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা.নং ২৭৭৮)

সুতরাং হাত যদি কান পর্যন্ত উঠানো হয় তাহলে সেটা জড়োসড়ো হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায়ের পরিপন্থী হবে।

حدثنا هشيم قال أنا شيخ لنا قال سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة قال حذو ثدييها. ২৪৭১

৩. অর্থ : আতা ইবনে আবী রবাহ রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, মহিলা নামাযে কিভাবে হাত উঠাবে। উত্তরে তিনি বলেন, বুক বরাবর। (প্রাগুক্ত; হা.নং ২৪৭১)

عن بن جريج قال قلت لعطاء تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل قال لا ترفع بذلك يديها كالرجل وأشار فخفض يديه جدا وجمعهما إليه جدا وقال ان للمرأة هيئة ليست للرجل وإن تركت ذلك فلا حرج. ২৪৭৪

৪. অর্থ : ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আমি আতা ইবনে আবী রবাহ রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, নারী কি তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষের ন্যায় হাত উঠাবে? উত্তরে তিনি বললেন, না, মহিলা তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষের ন্যায় হাত উঠাবে না। কার্যত দেখাতে গিয়ে তিনি হাত দ্বারা ইশারা করলেন। তিনি উভয় হাত খুব নীচু করে রাখলেন এবং উভয় হাত খুব মিলিয়ে রাখলেন। সাথে সাথে এ-ও বললেন, মহিলার নামাযের পদ্ধতি পুরুষের মতো নয় এবং যদি সে হাত না উঠায় এতেও কোনো ক্ষতি নেই। (প্রাগুক্ত; হা.নং ২৪৭৪)

يحيى بن ميمون قال حدثني عاصم الأحول قال رأيت حفصة بنت سيرين كبرت في الصلاة وأومأت حذو ثدييها ووصف يحيى فرفع يديه جميعا.

৫. অর্থ : ইয়াহইয়া ইবনে মাইমূন বলেন, আমাকে আসেম আহওয়াল রহ. বলেছেন যে, আমি হাফসা বিনতে সীরীনকে দেখেছি, তিনি নামাযের শুরুতে তাকবীর বলেছেন এবং হাতদ্বয় বুক পর্যন্ত উঠিয়ে ইশারা করেছেন। অতঃপর ইয়াহইয়া ইবনে মাইমূন উভয় হাত মিলিয়ে বুক বরাবর উঠিয়ে দেখান। (প্রাগুক্ত; হা.নং ২৪৭৫)

عن حماد أنه كان يقول في المرأة إذا استفتحت الصلاة ترفع يديها إلى ثدييها.

৬. অর্থ : হাম্মাদ রহ. মহিলাদের ব্যাপারে মাসআলা বলতেন যে, মহিলা যখন নামায শুরু করবে তখন হাত বুক পর্যন্ত উঠাবে। (প্রাগুক্ত; হা.নং ২৪৭৩)

عن زيد بن عبد ربه بن زيتون قال رأيت أم الدرداء ترفع كفيها حذو منكبيها حين تفتتح الصلاة.

৭. অর্থ : যায়েদ ইবনে আব্দে রাব্বিহী ইবনে যাইতুন বলেন, আমি উম্মে দারদাকে দেখেছি, তিনি নামাযের শুরুতে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। (প্রাগুক্ত; হা.নং ২৪৭০)

عن الزهري قال ترفع يديها حذو منكبيها.

৮. অর্থ : ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী রহ. বলেন, মহিলা হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে। (প্রাগুক্ত; হা.নং ২৪৭২)

শেষের দুটি বক্তব্যে হাত উঠানোর শেষ সীমারেখা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ হাত উঠানোর ক্ষেত্রে মহিলাদের আঙ্গুলের মাথা কাঁধ পর্যন্ত উঠবে; এর উপরে নয়।

زجر النبي صلى الله عليه و سلم أن تصل المرأة برأسها شيئا.

৯. অর্থ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে তাদের হাত মাথা পর্যন্ত উঠাতে নিষেধ করেছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক; হা.নং ৫০৭০)

হাদীসের আলোকে নারীদের রুকূ-সিজদার পদ্ধতি

عن عبد الله بن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الأخرى وإذا سجدت الصقت بطنها في فخذيها كأستر ما يكون لها وإن الله تعالى ينظر إليها ويقول يا ملائكتي أشهدكم أني قد غفرت لها.

১. অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলা যখন নামাযে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর (বাম) উরুর উপর রাখে। অতঃপর যখান সিজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে, যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তাকে দেখে বলেন, ওহে আমার ফেরেশতা! তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (সুনানে কুবরা; হা.নং ৩০১৪)

উক্ত হাদীসে ৪টি বিষয় প্রতীয়মান। (১) নারীরা প্রথমে বসবে, অতঃপর সিজদায় যাবে। (২) বসাবস্থায় উরুদ্বয় মিলিয়ে রাখবে। (৩) সিজদারত অবস্থায় পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। (৪) যে নারী তার শরীর জড়োসড়ো করে সিজদা করে আল্লাহ তার প্রতি এতো খুশি হন যে ফেরেশতাদেরকে সাক্ষী রেখে তাকে ক্ষমা করে দেন।

عن أبي سعيد الخدري صاحب رسول الله صلى الله عليه و سلم عن رسول الله صلى الله عليه و سلم أنه قال خير صفوف الرجال الأول وخير صفوف النساء الصف الأخر وكان يأمر الرجال أن يتجافوا في سجودهم ويأمر النساء ينخفضن في سجودهن.

২. অর্থ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদেরকে সিজদায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা করে রাখার নির্দেশ দিতেন এবং নারীদেরকে নির্দেশ দিতেন, যেন তারা সিজদায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুটিয়ে রাখে। (সুনানে কুবরা বাইহাকী; হা.নং ৩০১৪)

عن يزيد بن أبي حبيب أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل.

৩. অর্থ : ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রাযি. বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে) বললেন, যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা নারী এক্ষেত্রে পুরুষের মতো নয়। (মারাসীলে আবু দাউদ; হা.নং ৮৪, সুনানে কুবরা বাইহাকী; হা.নং ৩৩২৫)

عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفر ولتضم فخذيها.

৪. অর্থ : হযরত আলী রাযি. বলেন, নারী যখন সিজদা করবে তখন যেন জড়োসড়ো হয়ে সিজদা করে এবং উরু (পেটের সাথে) মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা.নং ২৭৭৭, জামিউল আহাদীস ২৯/২৯২)

حديث السجود الرجل يؤخى والمرأة تحتفز.

৫. অর্থ : সিজদা সংক্রান্ত হাদীসে এসেছে যে, পুরুষ তার পেট যমীন এবং উরু থেকে উঁচু রাখবে আর নারী জড়োসড়ো হয়ে থাকবে। (আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/১৭)

উপরোক্ত হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য দ্বারা এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয় যে, নারী-পুরুষের সিজদা পদ্ধতি এক নয়; বরং বহুলাংশে ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষ যমীনে বাহু বিছিয়ে দিবে না এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা বাহু যমীনে বিছিয়ে দিবে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড়োসড়ো করে মিলিয়ে রাখবে।

সাথে সাথে নামাযে নারীদের শরীর আবৃত থাকা শরীয়তের উদ্দিষ্ট বিষয় এই মূলনীতির দাবি হলো, রুকূ-সিজদায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রাখা নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রাখা পর্দা বিধানের পরিপন্থী। সুতরাং মারফূ হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনে ইযামের বক্তব্য, ইজমায়ে উম্মত এবং শরীয়তের মূলনীতির আলোকে প্রমাণ হলো, নারী-পুরুষের সিজদার পদ্ধতি এক নয়।

কেউ কেউ বলেন রুকূ-সিজদায় নারী-পুরুষের পদ্ধতিগত ভিন্নতা নেই। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রাখার এবং কোমর উঁচু রাখার ব্যাপারে যে সকল হাদীস এসেছে নারীরাও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং নারীরা পুরুষের মতোই সিজদা করবে। এদের প্রতি আমাদের আবেদন হলো, আমরা যেমনিভাবে আমাদের মতের পক্ষে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করেছি আপনারাও আপনাদের দাবীর সপক্ষে সহীহ, সরীহ, মারফূ মুত্তাসিল গাইরে মুতাআরিয হাদীস উপস্থাপন করুন। তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।

হাদীসের আলোকে নারী-পুরুষের বসার পদ্ধতি

নামাযে নারীদের বসার পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে تورك (তাওয়াররুক) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। تورك এর শাব্দিক অর্থ নিতম্বে ভর দিয়ে বসা। পরিভাষায় تورك এর ৩টি ব্যাখ্যা রয়েছে। যথা,

১. ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে পা খাড়া রাখা এবং বাম নিতম্বের উপর বসা।

২. উভয় পা ডান দিকে এমনভাবে বের করে দেয়া যাতে ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও বাম পায়ের টাখনু যমীনের সাথে লেগে থাকে এবং বাম পায়ের পিঠ যমীনমুখী করে বাম নিতম্বের উপর বসা।

৩. ডান পা বিছিয়ে বাম পা ডান পায়ের উরু এবং নলার মাঝ বরাবর নীচ দিয়ে ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর বসা। (আশশরহুল মুখতাসার আলা বুলুগিল মারাম ৩/১০৯)

عن ابن عمر أنه سئل كيف كن النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه قال : كن يتربعن ثم أمرن أن يحتفزن.

১. অর্থ : হযরত ইবনে উমর রাযি. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় নারীরা কিভাবে নামায আদায় করত? উত্তরে তিনি বললেন, প্রথমে তারা আসন করে বসতো। পরবর্তীতে তাদেরকে নিতম্বের উপর বসার আদেশ করা হয়েছে। (শরহু মুসনাদি আবী হানীফা ১/২৬৩, জামিউল মাসানীদ ১/৪০০)

عن عبد الله بن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الأخرى.

২. অর্থ : হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীরা যখন নামাযে বসবে তখন এক উরু অপর উরুর উপর রাখবে। (সুনানে কুবরা বাইহাকী; হা.নং ৩০১৪, জামিউল আহাদীস ১/২০)

عن أبي سعيد الخدري صاحب رسول الله صلى الله عليه و سلم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يأمر الرجال أن يفرشوا اليسرى وينصبوا اليمني في التشهد ويأمر النساء أن يتربعن.৩০১৪

৩. অর্থ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদেরকে বাম পা বিছিয়ে রাখতে এবং ডান পা খাড়া রাখতে নির্দেশ দিতেন। আর নারীদেরকে تربع তথা দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসতে আদেশ দিতেন। (সুনানে কুবরা বাইহাকী; হা.নং ৩০১৪, আততাবউইবুল মউযূঈ লিল আহাদীস)

عن خالد بن اللجلاج قال كن النساء يؤمرن أن يتربعن إذا جلسن في الصلاة ولا يجلسن جلوس الرجل على أوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة أن يكون منها الشيء.

৪. অর্থ : হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ রহ. বলেন, নারীদেরকে আদেশ কর হতো যেন তারা দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে; পুরুষদের মতো না বসে। আবরণীয় কোনো কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নারীদেরকে এমনটি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা.নং ২৭৮৩)

সুতরাং পূর্বোল্লিখিত হাদীস এবং সাহাবীদের বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত যে, নারী-পুরুষের সিজদার পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন।

কারো মতে নারী-পুরুষের বসার পদ্ধতি এক ও অভিন্ন। এ বিষয়ে তাদের সবচে শক্তিশালী এবং একমাত্র দলীল হলো, হযরত উম্মে দারদা রহ. এর বর্ণনা। বর্ণনাটি হলো,

كانت أم الدرداء تجلس في صلاتها جلسة الرجل وكانت فقيهة.

অর্থ : হযরত উম্মে দারদা রহ. (তাবেয়ী) নামাযে পুরুষের ন্যায় বসতেন এবং তিনি ফকীহ ছিলেন। (আততারীখুস সগীর আলআওসাত; হা.নং ৯০৬)

তারা লক্ষ্য করেনি যে, এই বর্ণনা দ্বারাই নারী পুরুষের বসার পদ্ধতিগত ভিন্নতাই প্রমাণিত হয়। কেননা উভয়ের বসার পদ্ধতি এক হলে (جلسة الرجل) পুরুষের মতো বসা কথাটির কোনো প্রয়োজন থাকে না। তাই এ বর্ণনা থেকেও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাবেয়ী উম্মে দারদা রহ. (মৃত্যু ৮০হি.) এর যামানায় নারী-পুরুষের বসার পদ্ধতি এক ছিলো না। তথাপি তিনি পুরুষদের মতো বসতেন। এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা হওয়ায় তা ইতিহাসে পাতায় উঠে এসেছে।

উম্মে দারদা রহ. সম্পর্কিত বর্ণনাটি বুখারী শরীফে সূত্র ছাড়া সংক্ষেপে এসেছে। এ বর্ণনাটি সূত্রসহ বিস্তারিতভাবে বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এসেছে। বর্ণনাটি হলো,

قال حرب الكرماني نا عمرو بن عثمان نا الوليد بن مسلم عن ابن ثوبان عن أبيه عن مكحول أن أم الدرداء كانت تجلس في الصلاة جلسة الرجل إلا إنها تميل على شقها الأيسر وكانت فقيهةً.

অর্থ : মাকহুল থেকে বর্ণিত, উম্মে দারদা নামাযে পুরুষদের মতো বসতেন। তবে তিনি বাম দিকে হেলে থাকতেন এবং তিনি ফকীহ ছিলেন। (ইবনে রজব হাম্বলী, ফাতহুল বারী ৬/৬৫)

উক্ত হাদীসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। (১) উম্মে দারদা পুরুষদের মতো বসতেন। (২) পুরুষদের মতো সোজা না বসে বাম দিকে হেলে থাকতেন। এই দুটি বিষয়ে একটু চিন্তা করলেই এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি পুরুষদের মতো ডান পা খাড়া করে রাখতেন। কিন্তু বাম পা ডান দিক দিয়ে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর বসতেন। যে কারণে তিনি বাম দিকে হেলে থাকতেন। আর এটাইতো হাদীসে বর্ণিত মহিলাদের বসার পদ্ধতি تورك (তাওয়াররুক)। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, ডান পা খাড়া করে রাখতেন। সুতরাং এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত, নারীদের বসার পদ্ধতি পুরুষদের মতো নয়।

যদি উম্মে দারদা রহ. এর বর্ণনা এটুকু নেয়া হয় যেটুকু ইমাম বুখারী এনেছেন এবং এর এ মর্ম গ্রহণ করা হয় যে, নারী হুবহু পুরুষের মতো বসবে, যেমনটি গাইরে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা গ্রহণ করেছেন তাহলে তাদের বর্ণিত মর্মটি ফাতহুল বারীতে বর্ণিত উম্মে দারদা রহ. এর বিস্তারিত বর্ণনা, পূর্বে উল্লিখিত মহিলাদের বসার পদ্ধতি সম্পর্কিত একাধিক হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের পরিপন্থী হয়ে যায়। অতএব তাদের বর্ণিত এ মর্ম গ্রহণ করা সঠিক হবে না। সুতরাং جلسة الرجل (পুরুষের মতো বসা) এর ঐ মর্মই গ্রহণ করা হবে যা উম্মে দারদা রহ. এর সম্পর্কে বর্ণিত বিস্তারিত বর্ণনা, মহিলাদের বসার পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস এবং আসারে সাহাবীর পরিপন্থী না হয়। আর সেটা হলো, উম্মে দারদা রহ. এর বসাকে পুরুষের বসার সাথে অংশ বিশেষের তুলনা করা হয়েছে যে, তিনি পুরুষের মতো ডান পা খাড়া করে আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখতেন। এটা উদ্দেশ্য নয় যে, হুবহু পুরুষের মতো বসতেন। যেমন কোনো মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলা হয় সে বাঘের মতো। এর অর্থ সে সাহসের দিক দিয়ে বাঘের মতো। এটা নয় যে, তার বাঘের মতো চারখানা পা ও একটি লেজ আছে।

যদি কিছু সময়ের জন্য মেনে নেয়া হয় যে, উম্মে দারদা রহ. হুবহু পুরুষের মতো বসতেন, তাহলে আমরা বলবো যে, তিনি হয়তো কোনো ওযরের কারণে এভাবে বসতেন। আর ওযরগ্রস্ত ব্যক্তি নামাযে তার সুবিধা মতো যখন যেভাবে ইচ্ছা বসতে পারে। তাই উম্মে দারদা রহ. সম্পর্কে এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তিনি চারজানু তথা আসন দিয়ে বসতেন।

حدثني إبراهيم بن أبي عبلة قال رأيت أم الدرداء تصلي متربعة. (مشكل الآثار للطحاوي – ১১ / ৩৯৫)

অথচ গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের নিকটও চারজানু হয়ে বসা নারী-পুরুষ কারো জন্যই সুন্নাত নয়। সুতরাং বুঝা গেল, তিনি ওযরের কারণেই কখনো পুরুষের মতো বসতেন, আবার কখনো চারজানু হয়ে বসতেন। এজন্যই ইবনে রজব হাম্বলী রহ. লেখেন,

وأما الإمام أحمد فصرّح بأنه لا يذهب إلى فعل أم الدرداء.

অর্থ : ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. স্পষ্টভাবে বলেন যে, উম্মে দারদা রহ. এর আমলকে মাযহাব বানানো যাবে না। (ইবনে রজব হামবলী, ফাতহুল বারী; ৬/৬৫)

আবার এ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, তিনি تربع করতেন মানে নারীদের মতো تورك করতেন। উম্মে দারদা একজন তাবেয়ী। ৮০ হিজরীতে তার মৃত্যু হয়। আর গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের নিকট তাবেয়ী এবং সাহাবীর বক্তব্য এমনকি স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইজতিহাদ প্রসূত সিদ্ধান্তও দলীলযোগ্য নয়। তাহলে কীভাবে তারা একজন তাবেয়ীর ব্যক্তিগত কর্মকে মারফূ হাদীসের বিপরীতে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেন?

গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে আমাদের দুটি নিবেদন

১.      নামাযে বৈঠকের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলের জন্য تورك (তাওয়াররুক) সুন্নাত এ ব্যাপারে সহীহ, সরীহ, মারফূ মুত্তাসিল হাদীস উপস্থাপন করুন।

২.      নামাযে নারী-পুরুষের বসার পদ্ধতি এক, এ ব্যাপারে সহীহ, সরীহ, মারফূ হাদীস পেশ করুন।

ফিকহের আলোকে নারী-পুরুষের নামায

ফিকহে ইসলামী হলো কুরআন ও সুন্নাহরই ব্যাখ্যা ও তার ব্যবহারিক কর্মপদ্ধতি। কুরআন-হাদীসে বিদ্যমান সরীহ আহকামের সংকলন, বিন্যাস এবং মুজমাল আহকামের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণই হলো ফিকহে ইসলামীর মূল আলোচ্য বিষয়।

ফিকহে ইসলামীর চারটি বিশ্লেষণ ও সংকলন উম্মতের মাঝে প্রচলিত। আর তা হলো, ফিকহে হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে হাম্বলী এবং ফিকহে শাফিয়ী। দালিলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন মাসআলার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে মতবৈচিত্র সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নারীদের নামাযের ব্যাপারে চার ফিকহের ভাষ্য ও বক্তব্য এক ও অভিন্ন।

ফিকহে হানাফী :

ইমাম আবু হানীফা রহ. এর প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন,

أحب إلينا أن تجمع رجليها في جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل.

অর্থ : আমাদের নিকট নারীদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো, উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষদের মতো এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবে না। (ইমাম মুহাম্মাদ রহ., কিতাবুল আসার ১/২৫৮)

আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষèবী রহ. বলেন,

وهذا كله فى حق الرجال واما فى حق النساء فاتفقوا على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر لانه استر لها… وفى المضمرات ناقلا عن الطحاوى المرأة تضع يديها على صدرها لأن ذلك استر لها.

অর্থ : নারীদের ব্যাপারে সকলে একমত যে, তাদের জন্য সুন্নাত হলো, বুকের উপর হাত রাখা। কারণ এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর। (আসসিআয়াহ ১/১৫৬)

ফিকহে মালেকী : মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাসআলকারাফী রহ. বলেন,

وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل.

অর্থ : নামাযের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মতো কি না, এ বিষয়ে ইমাম মালেক রহ. থেকে উল্লেখ আছে যে, নারীরা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথা সম্ভব জড়োসড়ো হয়ে বসবে। রুকূ, সিজদা এবং বৈঠক কোনো ক্ষেত্রেই ফাঁকা ফাঁকা হয়ে বসবে না। পুরুষের পদ্ধতি ভিন্ন। (ইমাম কারাফী, আযযাখীরা ২/১৯৩, আযযাখীরা ফী ফিকহিল হাম্বলী ১০/৪৩)

ফিকহে শাফিয়ী : ইমাম শাফিয়ী রহ. বলেন,

وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها.

অর্থ : আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। এজন্য আমার নিকট পছন্দনীয় হলো, সিজদা অবস্থায় নারীরা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমনভাবে আদায় করবে যেন সতরের চূড়ান্ত হিফাযত হয়। অনুরূপ রুকূ, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হিফাযত হয়। (ইমাম শাফিয়ী রহ., আল-উম্ম ১/১৩৮)

ফিকহে শাফিয়ীর বিদগ্ধ ভাষ্যকার ইমাম বাইহাকী রহ. বলেন,

وجماع ما يفارق المرأة فيه الرجل من أحكأم الصلاة راجع إلى الستر وهو أنها مأمورة بكل ما كان أستر لها والأبواب التي تلي هذه تكشف عن معناه وتفصيله وبالله التوفيق.

অর্থ : নামাযের বিভিন্ন বিধানে ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর নামাযের (পদ্ধতিগত) ভিন্নতার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো সতর। অর্থাৎ নারীর জন্য শরীয়তের বিধান হলো ঐ সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা যা তার পর্দার জন্য অধিক উপযোগী। (ইমাম বাইহাকী রহ. সুনানে কুবরা ২/২২২)

ফিকহে হাম্বলী : ইমাম ইবনে কুদামা মাকদিসী হাম্বলী রহ. বলেন,

فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها.

অর্থ : তাকবীরের সময় নারীরা হাত উঠাবে কি উঠাবে না, এ সম্পর্কে কাযী (আবু ইয়ালা) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. থেকে দুটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। প্রথম বর্ণনানুযায়ী হাত তুলবে। কেননা খাল্লাল রহ. হযরত উম্মে দারদা ও হযরত হাফসা বিনতে সীরীন রহ. থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। তাউসের বক্তব্যও অনুরূপ। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার বিধান রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও বিধান রয়েছে। যেমন পুরুষরা করে থাকে। এ হিসেবে নারীরা হাত উঠাবে তবে সামান্য। ইমাম আহমাদ ইবনে হামবল রহ. বলেন, তুলনামূলক কম পরিমাণে হাত উঠাবে। দ্বিতীয় বর্ণনাটি হলো, নারীদের জন্য হাত উঠানোর বিধান নেই। কেননা হাত উঠালে কোনো অঙ্গকে ফাঁকা করতেই হয়। আর নারীদের জন্য এর বিধান দেয়া হয়নি। বরং রুকূ-সিজদাসহ পুরো নামাযে নারীরা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। (আলমুগনী ফী ফিকহিল ইমাম আহমাদ ইবনে হামবল ১/৫৪৭, কিতাবাতুল মুগনী ৬৮/১৩২)

উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হাম্বলী মাযহাবে নারীদের হাত উঠানো নিয়ে ইখতিলাফ আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ইখতিলাফ নেই যে, রুকূ-সিজদা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হবে। আর যে মতে হাত উঠানোর কথা বলা হয়েছে সেখানেও খুব সামান্য পরিমাণ হাত উঠাতে বলা হয়েছে। যার ফলে সতর রক্ষার্থে সতর্কতা অবলম্বনেরই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের অনেক ফতওয়া এবং বই খুঁজে নামায সম্পর্কে যা পাওয়া যায় তা হলো, নারী-পুরুষের নামাযে পদ্ধতিগত কোনো ভিন্নতা নেই। নারী-পুরুষ সকলের নামাযের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন। দলীল হিসেবে তারা صلوا كما رأيتمونى اصلى (অর্থ) তোমরা নামায আদায় করো যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখ হাদীসটি পেশ করে। নিম্নে তাদের এ বক্তব্যের উপর কিছু পর্যালোচনা তুলে ধরা হলো।

মূল আলোচনার পূর্বে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো। কখনো দেখা যায় যে, একটি বক্তব্য পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ। কিন্তু যখন ঐ বক্তব্যের আগ পিছ কাটছাঁট করে সেটাকে উপস্থাপন করা হয় তখন দেখা যায় বক্তার মর্ম এবং উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে গেছে। যেমন কেউ বললো, আমি আল্লাহ তাআলাকে ঈসা আ. এর পিতা মানি না, কথাটি সঠিক। কিন্তু যদি কেউ মাঝ থেকে ঈসা আ. এর পিতা এ অংশটুকু বাদ দিয়ে এভাবে উপস্থাপন করে যে, আমি আল্লাহ তাআলাকে মানি না। আর প্রচার করতে থাকে যে, অমুক কাফের হয়ে গেছে। সে আল্লাহকে অস্বীকার করে। সে বলেছে, আমি আল্লাহকে মানি না। তাহলে এটাতো চরম মিথ্যা বৈ কিছুই না। এমনিভাবে কেউ যদি বলে, আমি ঈসা আ. কে শেষ নবী মানি না। কিন্তু কেউ যদি শেষ শব্দটি বাদ দিয়ে প্রচার করে বেড়ায় যে, অমুক কাফের হয়ে গেছে। কারণ সে ঈসা আ. কে নবী হিসেবে মানে না। অথচ সেতো বলেছে ঈসা আ. কে শেষ নবী মানে না; আর এটাতো সে ঠিকই বলেছে।

এক খ্রিস্টান পণ্ডিত দাবী করলো যে, আল্লাহই ঈসা মাসীহ। তার দাবীর স্বপক্ষে সে কুরআনের আয়াত পেশ করলো, إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ (অর্থ) নিশ্চয়ই আল্লাহ ঈসা ইবনে মারয়াম। সাধারণ মুসলমানরা এ অবস্থা দেখে তো পেরেশান। কিন্তু এরই মধ্যে এক আলেম দাঁড়িয়ে বললেন, পণ্ডিত সাহেব! একটু আগে পরেও দেখে নিন না! কারণ إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ এটি আয়াতের একটি অসম্পূর্ণ অংশক; পরিপূর্ণ আয়াত নয়। পূর্ণ আয়াত হল, لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ (অর্থ) অবশ্যই কাফের হয়ে গেছে ঐ সকল লোক যারা বলেছে আল্লাহ তিনি ঈসা ইবনে মারয়াম।

উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যই যথাযথ ছিল। কিন্তু যখন কাটছাঁট করা হলো তখন বক্তার মর্ম এবং উদ্দেশ্য একেবারেই উল্টে গেলো। ঈমানী বাক্য কুফুরী বাক্যে পরিণত হয়ে গেলো।

প্রিয় পাঠক! গাইরে মুকাল্লিদ ভাইরাও صلوا كما رأيتمونى اصلى উক্ত হাদীসের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন। হযরত মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাযি. এর বর্ণনাটি দীর্ঘ ছিলো। তারা সেখান থেকে বর্ণনার সামান্য অংশ জনসম্মুখে পেশ করছে। যদি পূর্ণ হাদীস উল্লেখ করা হয় তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে হাদীসের মর্ম ও উদ্দেশ্য একটি আর গাইরে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা প্রচার করছে অন্যটি।

হাদীসটি ইমাম বুখারী রহ. এভাবে উল্লেখ করেছেন,

حدثنا مالك أتينا إلى النبي صلى الله عليه وسلم ونحن شببة متقاربون فأقمنا عنده عشرين يوما وليلة وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم رحيما رفيقا فلما ظن أنا قد اشتهينا أهلنا أو قد اشتقنا سألنا عمن تركنا بعدنا فأخبرناه قال ارجعوا إلى أهليكم فأقيموا فيهم وعلموهم ومروهم. (وذكر أشياء أحفظها أو لا أحفظها) وصلوا كما رأيتموني أصلي فإذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم أحدكم وليؤمكم أكبركم. অর্থ : মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাযি. বলেন, আমরা কজন সমবয়সী যুবক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসি। আমরা তাঁর দরবারে বিশ দিন ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু দয়াপরবশ এবং রহমদিল ছিলেন, তাই যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের স্ত্রী এবং সন্তানাদির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। তখন তিনি আমাদের রেখে আসা পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমরা তাঁকে তাদের বিষয়ে জানালাম। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে অবস্থান করো। তাদেরকে (দীন) শিখাও এবং তাদেরকে আদেশ দাও। (আবু কিলাবা) বলেন, মালেক ইবনে হুওয়াইরিস বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যার কিছু আমার মনে আছে এবং কিছু ভুলে গিয়েছি। মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদেশের কথাও বলেছেন যে, তোমরা পুরুষরা নামায পড়ো যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখো। যখন নামাযের সময় হবে তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে বড়ো সে নামায পড়াবে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৬০৫)

হাদীসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সহীহ বুখারীর দুই বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা আইনী রহ. এবং হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,

১. উক্ত হাদীসসমূহে أهل (পরিবার) বলে শুধু ঐ যুবকদের স্ত্রীরা উদ্দেশ্য কিংবা স্ত্রী ও সন্তান উভয়ই উদ্দেশ্য। আল্লামা আইনী রহ. লেখেন (৮/৩৫৩), اشتاقوا الى اهليهم واولادهم তারা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এমনিভাবে উমদাতুল কারীর অন্যত্র আছে, والمراد بالاهل زوجات او اعم من ذلك আহল দ্বারা স্ত্রী উদ্দেশ্য অথবা ব্যাপক।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লেখেন, والمراد باهل كل منهم زوجته او اعم من ذلك অর্থাৎ আহল দ্বারা তাদের প্রত্যেকের স্ত্রী উদ্দেশ্য অথবা এর উদ্দেশ্য আরো ব্যাপক।

২. مروهم তোমরা তাদেরকে আদেশ দাও এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লেখেন, আদেশের বিষয়টি ব্যাপক। এতে করণীয় ও বর্জনীয় উভয় ধরনের বিধান শামিল। (ফাতহুল বারী ৯/৩৯৮)

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে কিছু কাজ করার ও কিছু কাজ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সে করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো কি তার বর্ণনা উক্ত হাদীসে নেই। হতে পারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে নারীদের পদ্ধতিতে নামায আদায় করার আদেশ দিয়েছেন এবং পুরুষদের মতো নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

উল্লেখ্য, مروهم, علموهم এবং فاقيموا فيهم উক্ত বাক্যসমূহে পুরুষ সূচক সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ পূর্বে أهل শব্দটি পুরুষ সূচক শব্দ।

৩. হযরত মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাযি. তার শাগরেদ আবু কিলাবা রহ. কে যা শিখিয়েছেন এবং তারও মনে আছে এমন তিনটি বিধানের বর্ণনা উপরোক্ত হাদীসসমূহে বিদ্যমান, যার দুটির সম্পর্ক পুরুষের সাথে। যেমন, (ক) صلوا كما رأيتمونى اصلى তোমরা পুরুষরা ঐভাবে নামায আদায় করো যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখো। (খ) وليؤمكم اكبركم তোমাদের মধ্যে যে বড়ো সে যেন ইমামতি করে। আর তৃতীয় বিধানটির সম্পর্ক নারীদের সাথে। অর্থাৎ مروهم فليصلوا صلاة كذا وصلاة كذا فى حين كذا তোমরা (পুরুষরা) তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) আদেশ দাও যেন তারা অমুক নামায অমুক সময় পড়ে এবং অমুক নামায অমুক সময় পড়ে। পূর্বোক্ত তিনটি হুকুমের তিনটিই অস্পষ্ট। কারণ, মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাযি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায দেখেছেন। তার জন্য صلوا كما رأيتمونى اصلى এ হুকুমটি স্পষ্ট। কিন্তু যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেনি তাদের জন্য যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখ এই হুকুমটি অস্পষ্ট। ফলে তাদের জন্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায পড়তেন আর তা উক্ত হাদীসসমূহে নেই। এমনিভাবে আযান কে দিবে তার বৈশিষ্ট্যেও উক্ত হাদীসসমূহে উল্লেখ নেই। ইমাম বড়ো হওয়ার মাপকাঠি তার বর্ণনাও নেই যে, বয়স হিসেবে বড়ো নাকি ইলমের দিক দিয়ে বড়ো? তো এটাও অস্পষ্ট রইলো। এ বিষয়গুলোর ন্যায় নারীদেরকে যে সকল বিষয়ের আদেশ করা হয়েছে বিশেষ করে নামায বিষয়ক করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলোর উল্লেখ নেই উক্ত হাদীসসমূহে। সুতরাং এ বিধানগুলো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য ঐ সকল হাদীস সামনে রাখতে হবে, যাতে এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

প্রিয় পাঠক! হাদীসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সামনে রাখার পর আপনিও যদি একটু চিন্তা করেন তাহলে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের দাবী صلوا كما رأيتمونى اصلى হাদীসে নারী-পুরুষ সকলকে হুবহু একই পদ্ধতিতে নামায পড়ার আদেশ দেয়া হয়েছে উক্ত হাদীসের আলোকেই ভুল বলে প্রমাণিত। কারণ,

১. صلوا এটি একটি আদেশ সূচক শব্দ, যার পূর্বে উক্ত হাদীসে আরো ৪টি আদেশ সূচক শব্দ রয়েছে। যেমন,

(ক) ارجعوا তোমরা ফিরে যাও।

(খ) فاقيموا فيهم তোমরা তাদের মাঝে অবস্থান করো।

(গ) علموهم তোমরা তাদেরকে শিখাও।

(ঘ) مروهم তোমরা তাদেরকে আদেশ করো।

এর পরের আদেশ সূচক বাক্যটি হলো, صلوا তোমরা নামায পড়ো। এর পরেও আরো দুটি আদেশ সূচক বাক্য আছে। فاذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم احدكم وليؤمكم اكبركم যখন নামাযের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্য থেকে কোনো একজন আযান দিবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড়ো সে নামায পড়াবে। এই ৭টি আদেশ সূচক বাক্যের মধ্য থেকে صلوا এর পূর্বের ৪টি এবং পরের ২টি বাক্যে সম্বোধিত ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষ; নারী নয়। ফিরে যাওয়ার আদেশ, পরিবারে থাকার আদেশ, শিখানোর আদেশ, হুকুম করার আদেশ, আযান দেয়ার আদেশ এবং ইমামতির আদেশ পুরুষকে দেয়া হয়েছে। এমনিভাবে صلوا كما رأيتمونى اصلى এ আদেশও পুরুষদেরকেই দেয়া হয়েছে; নারীদেরকে নয়। অতএব যদি নারীদেরকে صلوا كما رأيتمونى اصلى উক্ত হুকুমের আওতাভুক্ত ধরা হয় তাহলে বাকী ৬টি হুকুমেরও আওতাভুক্ত ধরতে হবে। কারণ সবগুলো হুকুমের সম্বোধিত ব্যক্তি একই।

আর যদি নারীদেরকে উক্ত হুকুমের আওতাধীন ধরা হয়, তাহলে প্রশ্ন হবে মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাযি. এর কাফেলায় কি কোনো নারী ছিলো? অবশ্যই না। আর যদি কিছুক্ষণের জন্য মেনে নেয়া হয় যে নারী ছিল, তাহলে প্রশ্ন হবে, তাদের আহল কারা যাদের কাছে তারা ফিরে যাবে? যাদের মাঝে তারা অবস্থান করবে? যাদেরকে তারা ইতাআতের আদেশ দিবে? এবং যখন নামাযের সময় হবে তখন কি নারীরা আযান দিবে? মহিলাদের যে বড়ো সে ইমামতি করবে? সুতরাং যদি صلوا উক্ত হুকুমে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন দাবী করা হয়, তাহলে বাকী ৬টি হুকুমের ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষের বরাবর হতে হবে।

কেমন হবে যদি গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের মসজিদে একদিন পুরুষ আযান দেয় আরেকদিন নারী আযান দেয়! একদিন বড়ো পুরুষ ব্যক্তি ইমামতি করে আরেকদিন বড়ো নারী ইমামতি করে আর তার পিছে নারী-পুরুষ সবাই ইকতিদা করে!

অতএব এ ৬টি বিধানের মধ্যে নারী শামিল না হলে পুরুষদের নামাযের পদ্ধতিতেও নারীরা শামিল হবে না। সুতরাং নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি এক নয়; বরং ভিন্ন ভিন্ন, যার বিশদ বর্ণনা বহু হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য, ইমাম চতুষ্টয়ের ঐকমত্য এবং উম্মতের অবিচ্ছিন্ন আমল আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।

আমাদের এ আলোচনার সমর্থনে শাইখ আতিয়্যা মুহাম্মাদ সালেম রহ. এর বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরছি। শাইখ আতিয়্যা মুহাম্মাদ সালেম তার বিখ্যাত গ্রন্থ শরহু বুলুগিল মারাম-এ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং অন্যান্য পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করেন, যাতে পুরুষকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা করে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতঃপর পুরুষের জন্য مجافات তথা নামাযে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রাখা জরুরী এর স্বপক্ষে তিনি صلوا كما رأيتمونى اصلى হাদীসটি দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। শেষে তিনি লিখেছেন,

ونبهنا على ان هذا بالنسبة للرجال دون النساء.

অর্থ : আমরা এ বিষয়ে সতর্ক করছি যে, নামাযে রুকূ-সিজদাসহ অন্যান্য অবস্থায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রাখার বিধান পুরুষদের জন্য; নারীদের জন্য নয়। (শরহু বুলুগিল মারাম ৬৪/১০)

২. মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাযি. থেকে বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ হাদীস সামনে রেখে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, নারী-পুরুষের নামাযের হুকুম ভিন্ন ভিন্ন। পুরুষের জন্য নির্দেশ হল صلوا كما رأيتمونى اصلى। আর নারীদের ব্যাপারে নির্দেশ হলো, مروهم فليصلوا بصلاة كذا في حين كذا

যখন কোনো পুরুষকে বলা হবে তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো নামায পড়ো তখন সে জানতে চাইবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায পড়তেন? তখন তাকে পুরুষের নামাযের পদ্ধতি সম্বলিত বিশদ বর্ণনা বলে দিতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে যখন কোনো নারীকে নামায পড়ার আদেশ দেয়া হবে তখন সে জানতে চাইবে কিভাবে সে নামায পড়বে? আর নারীদের পদ্ধতি উক্ত হাদীসে বর্ণিত নেই। অতএব তাকে নারীদের নামাযের পদ্ধতি সম্বলিত বিশদ বর্ণনা বলে দিতে হবে। আর পূর্বে আমরা নারীদের নামাযের পদ্ধতি সম্বলিত বিশদ বর্ণনা উল্লেখ করেছি।

যদি গাইরে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা উপরোক্ত ব্যাখ্যা মানতে না পারেন তাহলে তারা صلوا كما رأيتمونى اصلى এবং فليصلوا بصلاة كذا এর বিশদ বর্ণনা এবং আবু কিলাবা রহ. যা ভুলে গেছেন তার বর্ণনা দয়া করে বলবেন কি?

৩. নারী-পুরুষের নামাযে পদ্ধতিগত কোনো ভিন্নতা নেই এটা গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের ব্যক্তিগত মতামত। কোনো হাদীস বা কুরআনের ভাষ্য নয়। আর তাদের নিকট তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিগত মতও দলীলযোগ্য নয়। তাহলে তাদের ব্যক্তিগত মতামত কিভাবে দলীল হয়? তাদের মত কি তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতের চেয়ে ঊর্ধ্বে? (নাউযুবিল্লাহ)। যদি তা না হবে তাহলে তারা কেনো ব্যক্তিগত মতকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে?

৪. যদি গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের কথা মতো صلوا كما رأيتمونى اصلى নারী-পুরুষ সকলেই এ বিশেষ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে আমরা বলবো, এটা কি উম্মতের মতামত নাকি হাদীস? যদি এটা উম্মতের মতামত হয়ে থাকে তাহলে এর উপর আমল করা যাবে না। কারণ আপনারা তো কারো মতকে দলীলযোগ্য মনে করেন না।

আলোচনার এ পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও ইমাম চতুষ্টয়ের ঐকমত্যের প্রমাণ উপস্থাপন করার পর আমরা দেখবো, আমাদের যে গাইরে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতিগত ভিন্নতা অস্বীকার করেন এবং সকলের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন হওয়ার কথা বলেন, তাদের আলেমগণ এ বিষয়ে কি ফতওয়া দিয়েছেন?

উলামায়ে আহলে হাদীসের ফতওয়া

১. হযরত বারা রাযি. থেকে বর্ণিত মারফূ হাদীস (যখন তুমি সিজদা করবে হাত যমীনে রাখবে এবং কনুই যমীন থেকে উঠিয়ে রাখবে) এর ব্যাখ্যায় বুলুগুল মারাম-এর ব্যাখ্যাকার গাইরে মুকাল্লিদ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আসসানআনী লিখেন,

وهذا في حق الرجل لا المرأة، فإنها تخالفه في ذلك لما أخرجه أبو داود في مراسيله عن زيد بن أبي حبيب أن النبي صَلّى الله عَلَيْهِ وَسَلّم مرَّ على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة في ذلك ليست كالرجل قال البيهقي وهذا المرسل أحسن من موصولين فيه.

অর্থ : কনুই পর্যন্ত যমীন থেকে পৃথক করে উঠিয়ে রাখার নির্দেশ পুরুষদের জন্য; নারীদের জন্য নয়। কেননা নারীর বিধান পুরুষের বিধানের পরিপন্থী (নারী কনুই যমীন থেকে উঠিয়ে রাখবে না; যমীনের সাথে মিলিয়ে রাখবে)। এর দলীল হিসেবে ঐ হাদীস যা ইমাম আবু দাউদ রহ. তার মারাসীলে উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমরা সিজদা করবে তখন তোমাদের কিছু অংশ যমীনের সাথে মিলিয়ে রাখবে (তখন বাহু এবং কনুই যমীনে বিছিয়ে দিবে)। কেননা এক্ষেত্রে নারী পুরুষের মতো নয়। (সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম ১৪/১৩০)

২. প্রসিদ্ধ গাইরে মুকাল্লিদ আলেম ফকীহ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল হক হাশেমী (মৃত্যু ১৩৯২হি.) রুকূ, সিজদা এবং বৈঠকে নারী-পুরুষের পার্থক্যের উপর نصب العمود فى تحقيق مسئلة تجافى المرأة فى الركوع والسجود والقعود নামক একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ সংকলন করেন। এতে তিনি ইবনে হাযাম যাহেরী এবং জমহুর উলামায়ে কেরামের অবস্থান উল্লেখ করে লিখেন,

واولى الاقوال عندى بالاختيار قول من قال ان المرأة لا تجافى الركوع والسجود والقعود بل تضم بعض اللحم الى بعض وتضم بعض اللحم الى الارض لان ذلك استر لها.

অর্থ : আমার নিকট ঐ সকল ব্যক্তিদের বক্তব্য অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য যারা বলেন, নারীরা রুকূ, সিজদা এবং বৈঠকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রশস্ত করে রাখবে না; বরং কতক অঙ্গ কতক অঙ্গের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং শরীরের কিছু অংশ (বাহু এবং কনুই) যমীনে বিছিয়ে দিবে। কেননা এ পদ্ধতি তার পর্দার জন্য অধিক উপযোগী। (নসবুল উমূদ; পৃষ্ঠা ৫২)

৩. সুপ্রসিদ্ধ আহলে হাদীস আলেম নওয়াব ওয়াহিদুজ্জামান তার গ্রন্থে লিখেন,

وصلوة المرأة كصلوة الرجل فى جميع الاركان والادب الا ان المرأة ترفع يديها عند التحريم الى ثدييها ولا تخوى فى السجود كالرجل بل تنخفض وتضم بطنها بفخذيها واذا حدث حادث تصفق.

অর্থ : নামাযের সকল আরকানের আদবের ক্ষেত্রে নারীদের নামায পুরুষদের নামাযের ন্যায়। তবে নারীরা তাকবীরে তাহরীমার সময় তার হস্তদ্বয় বুক বরাবর উঠাবে এবং সিজদায় পুরুষের ন্যায় শরীর উঁচু করে রাখবে না, বরং নীচু রাখবে। আর উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। যখন নামাযে লুকমা দেয়ার প্রয়োজন হবে তখন এক হাতের উপর অপর হাত মারবে (মুখে কিছু বলবে না)। (নুযূলুল আবরার মিন ফিকহিন নাবিয়্যিল মুখতার ১/৮৫, মিরআতুল মাফাতীহ ৩/২০৭)

৪. গাইরে মুকাল্লিদ মুফতী মাওলানা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহ. কে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, নারীরা নামাযে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কি জড়োসড়ো করে মিলিয়ে রাখবে? উত্তরে তিনি মারাসীলে আবু দাউদ-এবং বাইহাকীর সূত্রে ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীবের হাদীস উল্লেখ করে লিখেন, এর উপরই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এবং মাযহাব চতুষ্টয়ের আমল চলে আসছে। অতঃপর তিনি মাযহাব চতুষ্টয়ের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে রুকূ-সিজদায় নারীর জড়োসড়ো হয়ে থাকার সূত্র নকল করে লিখেন,

সারকথা, রুকূ-সিজদায় নারীদের জড়োসড়ো হয়ে থাকা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখা বহু হাদীস এবং মাযহাব চতুষ্টয়ের জমহুর উলামায়ে কেরামসহ অন্যান্যদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। এর অস্বীকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ এবং জমহুর উলামায়ে কেরামের আমল থেকে বেখবর। (ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস ৩/১৪৯, ফাতাওয়া গযনবিয়্যাহ; পৃষ্ঠা ২৭-২৮)

নারীদের নামাযের এমন কিছু অবস্থা আছে যার ব্যাপারে সুস্পষ্টরূপে হাদীসে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো বর্ণনা নেই। সে সকল অবস্থার বর্ণনা ফুকাহায়ে কেরাম নামাযে নারীদের শরীর ঢেকে রাখা শরীয়তের উদ্দিষ্ট বিষয় এ মূলনীতির আলোকে নির্ধারণ করে শরীয়তের চাহিদা পূরণ করে দিয়েছেন। আর যখন নামাযে নারীদের শরীর ঢেকে রাখা উদ্দিষ্ট বিষয় হিসেবে পরিগণিত, তখন স্বভাবতই নারীদের নামাযের পদ্ধতি পুরুষের নামাযের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

নামাযের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্যের বিস্তারিত বিবরণ

১.      পুরুষ তাকবীরে তাহরীমার সময় এভাবে হাত উঠাবে যে, হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকবে। আঙ্গুলসমূহ কান বরাবর এবং আঙ্গুলের মাথা কানের উপরাংশ বরাবর থাকবে। আর নারীরা তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাতের তালু বুক বরাবর রাখবে এবং আঙ্গুল কাঁধ বরাবর রাখবে।

২.      তাকবীরে তাহরীমার সময় চাদর পেঁচানো থাকলে পুরুষ তা থেকে হাত বের করে রফয়ে ইয়াদাইন করবে। তবে ওযরের কারণে বের না করারও অনুমতি আছে। আর নারীরা চাদর ইত্যাদি থেকে হাত বের করবে না; বরং চাদর বা হিজাবের ভিতরে হাত রেখেই রফয়ে ইয়াদাইন করবে।

৩.     পুরুষ তাকবীরে তাহরীমার সময় হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিকভাবে রাখবে। একেবারে মিলিয়েও রাখবে না আবার একেবারে ফাঁকা করেও রাখবে না। আর নারীরা তার আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখবে।

৪.      পুরুষ দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরবে এবং বাকি তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর রেখে দিবে। আর নারীরা ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল সোজা করে বাম হাতের উপর রেখে দিবে; বাম হাত ধরবে না।

৫.      পুরুষ কিয়াম অবস্থায় নাভীর নীচে হাত বাঁধবে। আর নারীরা বুকের উপর হাত বাঁধবে।

৬.     স্বাভাবিক অবস্থায় দাঁড়ানোর সময় পুরুষ দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল থেকে এক বিঘাত পর্যন্ত ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা দুপা মিলিয়ে রাখবে।

৭.     পুরুষ একাকী জাহরী নামায পড়লে উচ্চশব্দে কিরাআত পড়া উত্তম; ওয়াজিব নয়। আর নারীদের জন্য কিরাআত উচ্চশব্দে কিরাআত পড়া মাকরূহ।

৮.     পুরুষ ইমাম হলে জাহরী নামাযে উচ্চশব্দে কিরাআত পড়া ওয়াজিব। আর নারীরা ইমাম হলে উচ্চশব্দে কিরআত পড়া মাকরূহে তানযীহী।

৯.      পুরুষ রুকূতে এ পরিমাণ ঝুঁকবে যে, হাতের তালু হাঁটুর উপরে থাকবে এবং আঙ্গুলসমূহ হাঁটুর নীচে থাকবে। আর নারীরা এ পরিমাণ ঝুঁকবে যে, হাতের তালু রানের উপর থাকবে আর আঙ্গুলের মাথা হাঁটুর উপরে থাকবে।

১০.    পুরুষ রুকূতে তার হাত দ্বারা হাঁটুর উপর ভর দিবে। কিন্তু নারীরা হাত দ্বারা হাঁটুর উপর ভর দিবে না।

১১.    পুরুষ রুকূতে হাতের আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা করে হাঁটু আকড়ে ধরবে। নারীরা না তার আঙ্গুল ফাঁকা রাখবে না হাঁটু আকড়ে ধরবে; বরং আঙ্গুল মিলানো অবস্থায় রেখে দিবে।

১২.    পুরুষ রুকূতে বাহু এবং কনুই পাজর থেকে পৃথক রাখবে। আর নারীরা বাহু এবং কনুই পাজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে।

১৩.    পুরুষ রুকূতে মাথা এবং নিতম্ব বরাবর রাখবে। আর নারীরা রুকূতে মাথা সামান্য উঁচু করে রাখবে।

১৪.    পুরুষ রুকূতে হাঁটু, পায়ের নলা এবং উরু একেবারে সোজা রাখবে। আর নারীরা রুকূতে হাঁটু সামান্য বাঁকা রাখবে।

১৫.    পুরুষ সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু এরপর হাত রাখবে। আর নারীরা প্রথমে বসবে এরপর উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে সিজদা করবে।

১৬.    পুরুষ সিজদায় হাত হাঁটু থেকে দূরে রাখবে। আর নারীরা হাঁটুর কাছেই হাত রাখবে।

১৭.    পুরুষ সিজদায় বাহু পাজর এবং বগল থেকে দূরে রাখবে এবং বগল ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা বাহু বগলের সাথে মিলিয়ে রাখবে; ফাঁকা করবে না।

১৮.    পুরুষ সিজদায় হাত যমীনে বিছিয়ে রাখবে না। আর নারীরা তার হাত যমীনে বিছিয়ে রাখবে।

১৯.    পুরুষ সিজদায় উভয় পা দাঁড় করিয়ে রাখবে। আর নারীরা উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে রাখবে।

২০.    পুরুষ সিজদায় পায়ের আঙ্গুল যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখবে। আর নারীরা পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখবে না।

২১.    পুরুষ সিজদায় পায়ের নলা এবং উরু সোজা করে রাখবে। আর নারীরা ডান পায়ের নলা বাম পায়ের নলার উপরে রাখবে এবং উরু সোজা করে রাখবে না।

২২.    পুরুষ সিজদায় কোমর উঁচু করে রাখবে। আর নারীরা পুরুষদের মতো কোমর উঁচু করে রাখবে না।

২৩.    পুরুষ সিজদায় পেট উরু থেকে, উরু নলা থেকে এবং নলা যমীন থেকে পৃথক রাখবে। আর নারীরা সিজদায় পেট উরুর সাথে এবং পায়ের নলা যমীনের সাথে মিলিয়ে রাখবে।

২৪.    পুরুষ দুই সিজদার মাঝে এবং বৈঠকের সময় ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে বাম পায়ের উপর বসবে। আর নারীরা উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর বসবে।

২৫.    পুরুষ সিজদা থেকে উঠে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। আর নারীরা সিজদা থেকে উঠে প্রথমে বসবে, এরপর পা সোজা করে পরে দাঁড়াবে।

২৬.    পুরুষ সিজদায় স্বাভাবিকভাবে শরীর ফাঁকা রাখবে। আর নারীরা যথাসম্ভব শরীর জড়োসড়ো করে গুটিয়ে রাখবে।

২৭.    পুরুষ সিজদায় পা, পায়ের নলা, কোমর এং কাঁধ সোজা করে রাখবে। ডান-বামে হেলিয়ে রাখবে না। আর নারীরা উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে সামান্য বাম দিকে হেলে সিজদা করবে।

২৮.    পুরুষ বৈঠকের সময় পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখবে। আর নারীরা পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে রাখবে না।

২৯.    পুরুষ বৈঠক অবস্থায় হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক রাখবে। একেবারে মিলিয়ে কিংবা একেবারে ফাঁকা করে রাখবে না। আর নারীরা তার আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখবে।

৩০.   পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে ফরয নামায পড়া উত্তম। বিনা প্রয়োজনে ঘরে পড়া মাকরূহ। আর নারীর জন্য ঘরে পড়া উত্তম; মসজিদে যাওয়া মাকরূহ।

৩১.    পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া জরুরী। আর নারীর জন্য একাকী নামায পড়া উত্তম। ঘরে বা মসজিদে জামাআতে নামায পড়া মাকরূহ।

৩২.    পুরুষের জন্য সামনের কাতারে নামায পড়া উত্তম। আর নারীর জন্য এমনটি উত্তম নয়।

৩৩.   পুরুষদের কাতার বাচ্চাদের কাতারের সামনে হবে। আর নারীদের কাতার বাচ্চাদের কাতারের পিছে হবে।

৩৪.    পুরুষের জন্য একাকী কাতারের পিছনে দাঁড়ানো মাকরূহ। আর নারীর জন্য মাকরূহ নয়।

৩৫.    পুরুষ মুসল্লী ইমামকে সুবহানাল্লাহ বলে লুকমা দিবে। আর নারী যবানে নয় বরং হাতের পিঠে হাত মেরে লুকমা দিবে।

৩৬.   পুরুষ সিজদা থেকে নারীর আগে মাথা উঠাবে। আর নারী পুরুষের পরে মাথা উঠাবে।

৩৭.   পুরুষ মুআযযিন এবং মুকাব্বির হতে পারে। কিন্তু নারী মুআযযিন বা মুকাব্বির হতে পারে না।

৩৮.   পুরুষ ইমামের জন্য সুন্নাত হলো মুক্তাদীদের সামনে দাঁড়ানো। আর নারী ইমাম হলে মুক্তাদীদের মাঝে দাঁড়াবে।

৩৯.    পুরুষের জামাআতের জন্য আযান ইকামত দেয়া সুন্নাত। আর নারীদের জামাতের জন্য আযান ইকামত দেয়া সুন্নাত পরিপন্থী।

৪০.    পুরুষ নারী-পুরুষ সকলের ইমাম হতে পারে। আর নারী পুরুষের ইমাম হতে পারে না। (আব্দুল হাই লক্ষèবী, আসসিআয়া, উমদাতুল ফিকহ)

সর্বশেষ নিবেদন এই যে, শরীয়তের কোনো স্বীকৃত বিধান সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রদানের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। কিন্তু এই ভয়াবহ কাজই এখন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। এজন্য দীনদার ভাই-বোনদের অবশ্য কর্তব্য হলো, তথাকথিত আলেম, মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমগুলোর যে কোনো কথা বা লেখায় প্রভাবিত না হওয়া। যেসব ক্ষেত্রে সংশয় সৃষ্টি হবে সেসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞ ও খোদাভীরু আলেমের শরণাপন্ন হবেন। মূলত আমাদের সকলকে আল্লাহর দরবারে হাযির হতে হবে এবং প্রতিটি কথা ও কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে।

তথ্যসূত্র :

১. কুরআনুল কারীম

২. সহীহ বুখারী

৩. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা

৪. মুসন্নাফে আব্দুর রায্যাক

৫. সুনানে কুবরা বাইহাকী

৬. মারাসীলে আবু দাউদ

৭. আলমুজামুল কাবীর লিত ত্ববারানী

৮. মাজমাউয যাওয়াইদ

৯. জামিউল আহাদীস

১০. আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস

১১. আশশরহুল মুখতাসার আলা বুলুগিল মারাম

১২. শরহু মুসনাদি আবী হানীফা

১৩. জামিউল মাসানীদ

১৪. আততাবউইবুল মউযূঈ লিল আহাদীস

১৫. আততারীখুস সগীর আলআওসাত

১৬. ইবনে রজব হাম্বলী, ফাতহুল বারী

১৭. মুশকিলুল আসার লিত ত্বহাবী

১৮. ইমাম মুহাম্মাদ রহ., কিতাবুল আসার

১৯. আসসিআয়াহ

২০. ইমাম কারাফী, আযযাখীরা

২১. আযযাখীরা ফী ফিকহিল হাম্বলী

২২. ইমাম শাফিয়ী রহ., আল-উম্ম

২৩. আলমুগনী ফী ফিকহিল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল

২৪. কিতাবাতুল মুগনী

২৫. উমদাতুল কারী

২৬. সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম

২৭. নসবুল উমূদ

২৮. নুযূলুল আবরার মিন ফিকহিন নাবিয়্যিল মুখতার

২৯. মিরআতুল মাফাতীহ

৩০. ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস

৩১. ফাতাওয়া গযনবিয়্যাহ

৩২. উমদাতুল ফিকহ

লেখক : প্রধান মুফতী, মাহাদুল বুহুসিল ইসলামিয়া, বসিলা, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

মুহাদ্দিস, জামিআ রাহমানিয়াআরাবিয়া, মুহাম্মাদপুর, ঢাকামুহতামিম, জামিআ বাইতুলআমান মিনার মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *