মুহাম্মাদ ইরফান জিয়া
দু’জন লোক। একজন মুসলমান। নাম বিশর। অন্যজন ইয়াহুদী।
দু’জনের মধ্যে কোনো এক বিষয়ে ঝগড়া হলো। প্রচণ্ড ঝগড়া।
ইয়াহুদী বললো, চলো আমরা ফায়সালার জন্যে নবীজীর কাছে যাই। কিন্তু বিশর বললো, না- চলো আমরা ইয়াহুদী নেতা কা’বের কাছে যাই।
আশ্চর্য! ইয়াহুদী চাইছে নবীজীর কাছে যেতে। আর মুসলমান হয়েও সে কিনা চাইছে ইয়াহুদী নেতার কাছে যেতে?
আসলে বিশর ছিলো শুধু নামেই মুসলমান। ভেতরে ভেতরে মুনাফিক। আর এই ঝগড়ার মধ্যে সেই ছিলো অপরাধী। তার জানা ছিলো, তদন্তের পর নবীজী তার বিপক্ষেই রায় দেবেন। এ কারণে সে নবীজীর কাছে না গিয়ে ইয়াহুদী নেতার কাছে যেতে চাইলো।
আর ইয়াহুদী ছিলো সত্যের পক্ষে। তার পূর্ণ আস্থা ছিলো নবীজীর ওপর। সে জানতো নবীজী অবশ্যই ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা করবেন। আর ইনসাফের রায় তার পক্ষেই যাবে। বিচারক নির্ধারণ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কতক্ষণ বচসা হলো। অবশেষে তারা উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক হিসেবে মানতে সম্মত হলো।
মামলা গড়ালো নবীজীর দরবারে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘটনার তদন্ত করলেন। তারপর ফায়সালা করলেন ইয়াহুদীর পক্ষে। কিন্তু মুনাফিক বিশর ফায়সালা মানতে অস্বীকৃতি জানালো।
সে মনে মনে এক নতুন ফন্দি আটলো। ভাবলো, বিষয়টির ফায়সালা হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে দিয়ে করাতে হবে। তিনি ইয়াহুদীদের প্রতি কঠোর। আর আমাকে বাহ্যিকভাবে সবাই মুসলমানই মনে করে। সুতরাং উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মুসলমান হিসেবে আমার পক্ষেই ফায়সালা করবেন।
সব ভেবে বিশর ইয়াহুদীকে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু -এর কাছে যাওয়ার প্রস্তাব করলো। ইয়াহুদী রাজী হলো। দু’জন উপস্থিত হলো উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু -এর কাছে।
ইয়াহুদী প্রথমেই হযরত উমরকে বললো, ‘প্রিয়নবী ইতোমধ্যে আমাদের ব্যাপারটা জেনেছেন। আমার পক্ষে ফায়সালাও করেছেন। কিন্তু বিশর নবীজীর ফায়সালা মানতে চাইছে না।’ উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বিশরকে প্রশ্ন করলেন, ‘ব্যাপারটা কি আসলেই এমন?’ বিশর বললো, ‘হ্যাঁ’।
উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, দাঁড়াও আমি একটু ঘর থেকে আসছি। তিনি একটি তরবারী নিয়ে ঘর থেকে বেরুলেন। এক আঘাতে হত্যা করে ফেললেন মুনাফিককে। তারপর বললেন, ‘প্রিয় নবীর ফায়সালায় যে সন্তুষ্ট হয় না তার উপযুক্ত শাস্তি এটাই।’
*সূরা নিসা, আয়াত: ৬৫, তাফসীরুল কুরআনিল আজীম লিবনি কাসীর: ২/৩৯০, আত তাফসীরুল মাজহারী: ২/১৪৮।