মাওলানা আমীরুল ইসলাম
কল্যাণময় মাসের শুভাগমন
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমাযান মাসের আগমন হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমাযান এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য এ মাসে রোযা (রাখা) কে ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের ফটকগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের কপাটগুলো রুদ্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এ মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেয়। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে সত্যিকার অর্থে হতভাগা। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৭১৪৮, সুনানে নাসাঈ; হাদীস ২১০৫, সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৬৮২, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৬৪২।
মুসলিমদের জন্য সর্বোত্তম মাস
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলমানদের জন্য রমাযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আগমন করে নি এবং মুনাফিকদের জন্য রমাযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষ-ত্রুটি খোঁজে বেড়ায়। এ মাস মুমিনের জন্য অফুরন্ত প্রাচুর্য, আর মুনাফিকদের জন্য ক্ষতির কারণ। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা; হাদীস ৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা; হাদীস ১৮৮৪।
রোযা রাখা আবশ্যক
তালহা বিন উবাইদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, জনৈক আরব বেদুইন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমার উপর কি রোযা ফরজ করেছে আমাকে বলুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমাযান মাসের রোযা। তবে কিছু নফল রোযা আছে, সেগুলো ফরজ নয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯১।
চাঁদ দেখে রোযা রাখো
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা রমাযানের চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখবে। আর যখন শাওয়ালের চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখা বন্ধ রাখবে। তবে আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা পূর্ণ করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৯।
রমাযান মাস কুরআন শিক্ষার মাস
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত জিবরীল আ. রমাযান মাসের শেষ অবধি প্রতি রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আ.কে কুরআন শোনাতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৬৪।
রমাযানের শুভাগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন রমাযান মাসের আগমন ঘটে, তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে- জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর একটি বর্ণনায় এসেছে- রহমত তথা দয়া অনুগ্রহের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৮৯৮, ১৮৯৯, সহীহ মুসলিম; হাদীস ১০৭৯, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৮৬৮৪।
রমাযান মাসে দুষ্ট জিন ও শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেন, যখন রমাযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়; তার একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়; তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- “হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! ক্ষান্ত হও।” আর আল্লাহ তা‘আলা এ মাসের প্রতিরাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। -সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৬৮২, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ১৮৭৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৬৪২।
রমাযান জাহান্নামীদের মুক্তি লাভের মাস
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা রমাযান মাসে প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর তা প্রতিরাতেই হয়ে থাকে। -সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৬৪৩, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২২২০২, শুআবুল ঈমান, বাইহাকী; হাদীস ৩৬০৫।
দু‘আ কবূলের মাস
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমাযান মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনীতে আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর প্রত্যেক বান্দার একটি করে দু‘আ কবূল করা হয়। -মুসনদে আহমাদ; হাদীস ৭৪৫০, সুনানেইবনেমাজা; হাদীস ১৬৪৩।
রমাযান মাসে একটি ওমরা হজ্জ সমতুল্য
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেন, রমাযান মাস এলে ওমরা পালন করবে। কেননা এ মাসের একটি ওমরা হজ্জ সমতুল্য। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৭৮২, সহীহ মুসলিম; হাদীস ১২৫৬, সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ১৯৯০, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২০২৫, সুনানে নাসাঈ; হাদীস ২১০৯, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ২৯৯৪।
রমাযান মাস দান সাদাকার সর্বোত্তম সময়
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দাতা ছিলেন। রমাযানে তাঁর দানের হাত আরো প্রসারিত হত। -সহীহ বুখারী; হাদীস : ১৯০2।
রোযার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা প্রদান করবেন
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়; একটি পুণ্যের প্রতিদান দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, তবে রোযা (র প্রতিদান) আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। আর সে একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে ও পানাহার ত্যাগ করেছে। -সহীহ মুসলিম; হাদীস ১১৫১, সহীহ বুখারী; হাদীস ১৮৬৬, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৯৭১৪, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৬৩৮, সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৭৬৪।
রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট মৃগনাভির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৯০৪, সহীহ মুসলিম; হাদীস ১১৫১, সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ২৩৬৩, সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৭৬৪, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৬৩৮, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৯৯৯৯।
রোযা আর্থিক ও পারিবারিক বিপর্যয় লাঘব করবে
হুযাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিনটি জিনিস ব্যক্তির পারিবারিক ও আর্থিক ক্ষতি দূরীভূত করবে- (১) নামায, (২) রোযা ও (৩) দান। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৮৯৫।
রোযাদার জান্নাতের রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে
হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ? অতঃপর সকল রোযাদারের প্রবেশ সম্পন্ন হলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম; হাদীস ১১৫২, সুনানে নাসাঈ; হাদীস ২২৩৭, সুনানে ইবনেমাজাহ; হাদীস ১৬৪০, সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৭৬৫, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২২৮১৮।
রোযা জান্নাত লাভের উপায়
হযরত হুযাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় রোযা রেখে মৃত্যুবরণ করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২৩৩২৪।
রোযাদারের দুটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে- (১) যখন সে ইফতার করে তখন সে আনন্দিত হয়। (২) যখন সে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাত করবে তখন সে তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে। -সহীহ বুখারীতকদ; হাদীস ১৯০৪।
রোযাদার জান্নাতে তৃষ্ণার্ত হবে না
হযরত সাহাল ইবনে সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতে রোযাদারগণের জন্য একটি বিশেষ দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। রোযাদারগণ ব্যতীত অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।… যে ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে পানীয় পান করবে। আর যে পানীয় পান করবে, সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। -সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৭৬৫, সুনানে নাসাঈ; হাদীস ২২৩৬, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২২৮৪৩।
রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।… অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৬৬২৬, মুস্তাদরাকে হাকেম; হাদীস ২০৩৬।
রোযাদারের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে পুণ্যের আশায় রোযা রাখবে, তার জীবনের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। -সহীহ বুখারী; হাদীস ১৯৬৯, সহীহ মুসলিম; হাদীস ৭৬০, সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ১৩৭২, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৭২৮০।
রোযা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ইরশাদ করেন, সবরের মাস (রমাযান মাস)এর রোযা এবং প্রতি মাসে তিন দিন (আইয়্যামে বীয) -এর রোযা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২৩০৭০, মুসনাদে বায্যার; হাদীস ১০৭৫, সহীহ ইবনে হিব্বান; হাদীস ৬৫২৩।
রোযাদারের দু‘আ কবুল হয়
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির দু‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না- (১) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু‘আ, (২) ইফতারকালে রোযাদারের দু‘আ ও (৩) মজলুম ব্যক্তির দু‘আ। -সুনানে তিরমিযী; হাদীস ২৫২৫, মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ৮০৪৩।
আল্লাহ তা‘আলা রোযাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন
১। হযরত আবূ মুসা রাযি. হতে বর্ণিত, আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোযার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। -মুসনাদে বাযযার; হাদীস ১০৩৯, মাজমাউয যাওয়াইদ; হাদীস ৫০৯৫।
২। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। কিয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোযাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না। -মুসনাদে বাযযার; হাদীস ৮১১৫, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৫০৯৩
রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ
১। হযরত জাবির রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব। -মুসনাদে আহমদ; হাদীস ১৪৬৬৯, শু‘আবুল ঈমান বাইহাকী; হাদীস ৩৫৭০।
২। উসমান ইবনে আবিল আস রাযি. বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের (শত্রুর আঘাত হতে রক্ষাকারী) ঢালের মত। -মুসনাদে আহমদ; হাদীস ১৬২৭৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা; হাদীস ২১২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান; হাদীস ৩৬৪৯, সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৬৩৯।
৩। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা হল (জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের) ঢাল এবং সুরক্ষিত দুর্গ। -মুসনাদে আহমদ; হাদীস ৯২২৫, বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান; হাদীস ৩৫৭১।
রোযা ব্যক্তিকে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ বানিয়ে দেয়
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর রমাযানের রোযা ফরয করেছেন, আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ’র নামাযকে সুন্নাত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযানের সিয়াম ও কিয়াম আদায় করবে, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যভূমিষ্ঠ হয়েছিল। -মুসনাদে আহমদ; হাদীস ১৬৬০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হাদীস ৭৭৮৭, মুসনাদে বাযযার; হাদীস ১০৪৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা; হাদীস ২২০১, সুনানে নাসায়ী; হাদীস ২৫১৮।
রোযাদার পরকালে সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে
হযরত আমর ইবনে মুররা আলজুহানী রাযি. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি এ কথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল, আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, যাকাত প্রদান করি, রমাযান মাসের সিয়াম ও কিয়াম আদায় করি তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব? তিনি বললেন, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে। -মুসনাদে বাযযার; হাদীস ২৫, সহীহ ইবনে খুযাইমা; হাদীস ২২১২, সহীহ ইবনে হিববান; হাদীস ৩৪২৯।
রোযাদারের দু‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. র্বণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযাদারের দু‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হাদীস ৮৯৯৫।
রোযা জান্নাত লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম
আবূ উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললাম, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যে আমল আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখো। কারণ রোযার সমপর্যায়ে কিছুই নেই। আমি আরেক দিন এসে আবার এ কথাটি বললাম, তখনো তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখো। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২২১৪৯, সহীহ ইবনে খুযাইমা; হাদীস ১৮৯3।